Select Page

সালতামামি ২০০৩: ২০ লাখ টাকা করে গচ্চা দেয় ২৫টি সিনেমা

সালতামামি ২০০৩: ২০ লাখ টাকা করে গচ্চা দেয় ২৫টি সিনেমা

কয়েক বছরের ধারাবাহিকতায় ২০০৩ সালও ঢালিউডের জন্য একটি ব্যর্থতার বছর। ৭৯টি সিনেমা মুক্তি পায়। তবে মূল ব্যবসা করে বি গ্রেডের কাটপিস সমৃদ্ধ ছবিগুলো। প্রথম আলোর সালতামামি থেকে জানা যায়, ২০ লাখ টাকা করে গচ্চা দেয় ২৫টি সিনেমা, ১০ লাখ টাকা করে গচ্চা করে অন্য ৩০টি সিনেমা। মুক্তি পাওয়া স্মরণীয় সিনেমার মধ্যে রয়েছে ‘মনের মাঝে তুমি’ ও ‘দুই বধূ এক স্বামী’।

প্রতিবেদনের শুরুতে বলা হয়, ২০০৩ সাল বাংলা চলচ্চিত্রের সবচেয়ে মন্দার বছর। এ বছর অবস্থা এত নাজুক যে ব্যবসাসফল ১০টি ছবির নাম খুঁজে পাওয়া যায় না। ঢাকা ও ঢাকার বাইরের সিনেমা হলের মালিক, বুকিং এজেন্ট ও প্রযোজকদের মতে, এবারের ব্যবসা এতটাই খারাপ যে, অনেক প্রযোজকই ছবি নির্মাণ ছেড়ে চলে গেছেন।

প্রথম সারির তারকাদের চেয়ে দ্বিতীয় সারির তারকারা একচেটিয়া ব্যবসা করেছেন। এর মধ্যেও শাবনূর, পূর্ণিমা, মান্না ও ফেরদৌস ‘সুস্থ বিনোদনের’ ছবি করেছেন বলে জানায় পত্রিকাটি। ৭৯টি ছবির মধ্যে এই ধারার ছিল মাত্র ২০টি। এর মধ্যে বেশির ভাগ বাবসায়িকভাবে মার খেয়েছে।

নির্মাতাদের মতে, সুস্থ ধারার ছবির সঙ্গে অসুস্থ বিনোদনের একাধিক ছবিকে মুক্তির সুযোগ করে দেওয়া হয়েছিল। তাই সব সুস্থ ছবি সাফল্যের মুখ দেখেনি।

প্রথম আলো উল্লেখকৃত সাফল্যের মুখ না দেখা ছবির মধ্যে ছিল শহীদুল ইসলাম খোকনের ‘চাই ক্ষমতা’, আবুল কালাম আযাদের ‘তুমি শুধু আমার’, ‘তুমি বড় ভাগ্যবতী’, আরিফ মাহামুদের ‘খেয়া ঘাটের মাঝি’, শাহাদাৎ খান পরিচালিত ‘জামাই-শ্বশুর’, শিল্পী চক্রবর্তীর ‘অন্তরে ঝড়’, মনতাজুর রহমান আকবরের ‘বউয়ের সম্মান’, আমজাদ হোসেন পরিচালিত ‘প্রাণের মানুষ’ এবং মৌসুমী পরিচালিত ‘কখনো মেঘ কখনো বৃষ্টি’।

২০০৩ সালে ঢালিউডের বড় পরিচালকরা সুবিধা করতে পারেননি। আমজাদ হোসেনের ‘প্রাণের মানুষ’ ব্যবসায়িক সাফল্য পায়নি। মতিন রহমান কোনো ছবিই নির্মাণ করতে পারেননি। সোহানুর রহমান সোহান ব্যস্ত ছিলেন দুটি ছবির কাজ নিয়ে। কিন্তু কোনো সুপাহিট ছবি উপহার দিতে পারেননি। শহীদুল ইসলাম খোকনও ছিলেন ফ্লপ।

তবে সুস্থ ধারার বিনোদনের যে ছবিগুলো সুপারহিট ও মোটামুটি হিট হয়েছে সেই ছবিগুলো হলো— মনের মাঝে তুমি, দুই বধূ এক স্বামী, মিনিস্টার, ভিলেন, স্বপ্নের ভালোবাসা, অমানুষের ভালোবাসা, হাছন রাজন, সম্রাট, অন্ধকার, বউ-শাশুড়ির যুদ্ধ ও প্রেম সংঘাত।

প্রতিবেদনে বলা হয়, এর বাইরে অশ্লীল দৃশ্য সংযোজন করে ব্যবসা করেছে একাধিক অসুস্থ ছবি। সেগুলোর নাম প্রকাশ করা হয়নি।

২০০৩ সালে ৭৯টি ছবি মুক্তি পেয়েছে এগুনোর পেছনে প্রযোজকদের গড় লগ্নি ১ কোটি টাকা। ৭৯ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে ৭৯ কোটি টাকা ঘরে তুলে আনতে পারেননি প্রযোজকরা। ২৫টি ছবি ২০ লাখ টাকা করে মোট ৫ কোটি টাকা লোকসান দিয়েছে। আবার ৩০টি ছবির ১০ লাখ টাকা করে ৩ কোটি টাকা গচ্চা দিয়েছেন। ১০টি সুপারহিট ছবি ঘরে তুলে এনেছে ১৫ কোটি টাকা। আর ১৪টি ছবি কোনো রকমে টাকা তুলে এনেছে।

তার মানে হচ্ছে, ৭৯টি ছবি নির্মাণে প্রযোজকরা ৭৪ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে ঘরে তুলেছেন ৭৬ কোটি টাকা। এ থেকে প্রমাণিত হয়, ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি দিনকে দিন রুগ্ন শিল্প হয়ে পড়ছে।

আরো বলা হয়, ২০০৩ সালে চলচ্চিত্র শিল্পে দেখা গেছে নানা আন্দোলন। কিন্তু কাজের কাজ কোনো কিছুই হয়নি। যেমন গুড় রয়েছে, তেমনি গুড়ে বালিও রয়েছে। বোদ্ধাদের মত হচ্ছে, এই শিল্পকে বাঁচাতে হলে সরকারকে বেশি করে খোঁজ নিয়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে।

সেরা ব্যবসাসফল ১০টি— মতিউর রহমান পানুর যৌথ প্রযোজনার ‘মনের মাঝে তুমি’ (রিয়াজ ও পূর্ণিমা); এম আই মানিকের ‘দুই বধু এক স্বামী’ (মান্না, শাবনূর ও মৌসুমী); মনতাজুর রহমান আকবরের ‘টপ সম্রাট’ (মান্না, জুমেলিয়া ও আহমেদ শরীফ); ইস্পাহানি আরিফ জাহানের ‘ভিলেন’ (মান্না ও পূর্ণিমা); আজাদী হাসনাত ফিরোজের ‘বউ-শাশুড়ির যুদ্ধ’ (শাবনূর ও ফেরদৌস); কাজী হায়াতের ‘অন্ধকার’ (কাজী মারুফ ও রত্মা); জিল্লুর রহমানের ‘স্বপ্নের ভালোবাসা’ (শাবনূর ও রিয়াজ); মাসুম পারভেজ রুবেলের ‘অন্ধকারে চিতা’ (রুবেল ও সোহেল রানা);  এম এ আউয়াল পিন্টুর ‘অমানুষের ভালোবাসা’ (প্রিন্স ও হুমায়ূন ফরীদি); রাজু চৌধুরীর ‘টোকাই থেকে হেরো’  (আমিন খান ও কেয়া)।

•   ২০০৩ সালের ২৫ ডিসেম্বর সংখ্যা প্রথম আলোয় প্রকাশিত প্রতিবেদনটি করেছিলেন কামরুজ্জামান বাবু। বিএমডিবির জন্য ফয়সাল বারী সংগৃহীত পেপার কাটিং থেকে লিখিত।


মন্তব্য করুন