Select Page

সালমান ও তার পরিচালকদের গল্প: প্রথম পর্ব

সালমান ও তার পরিচালকদের গল্প: প্রথম পর্ব

salman shah

১৯৯৩ সালে সেরা প্রাপ্তি ছিল ‘চৌধুরী সালমান শাহরিয়ার ইমন’ যাকে সবাই ‘সালমান শাহ‘ নামে আমরা চিনি। আজ থেকে শুরু করলাম আরও একটি সিরিজ যেখানে ‘সালমান শাহ‘ এর অভিনীত ছবির পরিচালকদের কথা তুলে ধরা হবে অর্থাৎ সালমান তাঁর চলচ্চিত্র জীবনে কোন কোন পরিচালকদের সঙ্গে কাজ করেছেন সে ব্যপারে পাঠকদের একটা ধারনা দেয়া হবে যা পরবর্তীতে সেই সময়ের তাঁর একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী ওমর সানীর পরিচালকদের কথাও আগামীতে জানানো হবে। এতে পাঠকদের একটা অন্যরকম প্রতিযোগিতার স্বাদ দেয়া হবে যাতে সহজেই বুঝা যাবে যে কে বেশী পরিচালকদের ভরসা ছিল।

১. কেয়ামত থেকে কেয়ামত

১৯৯৩ সালের ঈদুল ফিতরের ছবিগুলোর মাঝে মুক্তি পায় সোহানুর রহমান সোহান এর রেকর্ড পরিমান ব্যবসাসফল ছবি ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ যা ছিল ভারতের আমির -জুহির ‘কেয়ামত সে কেয়ামত’ ছবির বাংলা সংস্করন বা রিমেক। যা পরিচালক ও প্রযোজক ভারত থেকে মুল ছবির প্রযোজক ও পরিচাকের অনুমতি নিয়েই ছবিটি তৈরি করেন। সোহান তখন ইন্ডাস্ট্রির নবীন একজন পরিচালক যিনি বাংলাদেশের ৮০র দশক থেকে ৯০ দশক এর সবচেয়ে সেরা পরিচালক এ জে মিন্টুর সহকারী পরিচালক হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করেছিলেন এবং মিন্টুকেই যিনি ‘গুরু’ মানেন। ৯২ সালে ‘বেনাম বাদশাহ’ দিয়ে সোহান পরিচালকের খাতায় নাম লিখান যেটি ছিল সেই সময়ের অন্যতম ব্যবসাসফল ছবি। প্রথম ছবিতেই সোহান বুঝিয়ে দিয়েছিলেন গুরু মিন্টুর যোগ্য একজন ছাত্রই ছিলেন তিনি। সোহানের ছবি দিয়ে কাজ শুরু করলেও সালমান কে কখনও গুরু এ জে মিন্টুর ছবিতে পাওয়া যায়নি। যা সালমান এর নিজেরও একটা আক্ষেপ ছিল মিন্টুর ছবিতে কাজ না করার জন্য।

‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ ছবির প্রযোজনা সংস্থা ‘আনন্দমেলা চলচ্চিত্র যার কর্ণধার ছিলেন প্রযোজক সুকুমার রঞ্জন ঘোষ যিনি ব্যক্তিগতভাবে মুন্সিগঞ্জের বিক্রমপুর আসনের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য। যিনি পরবর্তীতে একইভাবে ‘সাজন’ রুবেল, ইলিয়াস কাঞ্চন ও মৌসুমি এবং ‘আমার ঘর আমার বেহেস্ত’ শাকিল খান ও পপি কে নিয়ে ছবি তৈরি করেন যার পরিচালক এই সোহানুর রহমান সোহান। ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ ছবিতে সোহান নবাগত ২ তরুন তরুণীকে নিয়ে কাজ করে ১০০% সফল হয়েছিলেন। যে ছবিটি ছিল তজাম্মেল হক বকুল এর ‘বেদের মেয়ে জ্যোৎস্না’ ছবির পর রেকর্ড করা ব্যবসা সফল ছবি যা দেখতে সারা বাংলার সব মানুষ হলে হুমড়ি খেয়ে পড়েছিল। প্রথমবার যে সকল হলে ছবিটি মুক্তি পায় তাঁর অধিকাংশ হলেই পুরো ৪ সপ্তাহ হাউসফুল ব্যবসা করে অর্থাৎ সিনেমা হল মালিকরা ছবিটি পুরো ১ মাস প্রদর্শন করতে বাধ্য হয়। ছবির গান সবগুলো ছিল সুপারহিট। এই ছবির পর সালমান কে আর কখনও সোহানের ছবিতে পাওয়া যায়নি কিন্তু মৌসুমিকে একাধিকবার সোহানের ছবিতে কাজ করতে দেখা গেছে।

২. অন্তরে অন্তরে

‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ ছবির সুপারহিট সালমান মৌসুমির ২য় সুপারহিট ছবি শিবলি সাদিক এর ‘অন্তরে অন্তরে’। ‘অন্তরে অন্তরে ‘ ছবির আলম খানের গানগুলো ছিল সেই সময়ের রেডিও ও টেলিভিশনের ছায়াছবির গানের মধ্য তুমুল জনপ্রিয় গান। ছবিটি পারিবারিক ও রোমান্টিক প্রেমের ছবি। শিবলি সাদিক মুলত সামাজিক অ্যাকশন ও পারিবারিক গল্পের ছবির এক নিপুন কারিগর। সেই সময় শিবলি সাদিক এর নামটা বক্স অফিসে আলাদা সমীহ জাগানিয়া একটি নাম। যে ছবির পরিচালকের নাম শিবলি সাদিক থাকে সেই ছবি প্রেক্ষাগৃহের মালিকরা চোখ বন্ধ করে নিয়ে যেতো। কারন শিবলির ছবির দর্শক তখনও ঘরে ঘরে ছিল। শিবলি সাদিক একবারে নতুন কিন্তু বক্স অফিসে তোলপাড় করা জুটি ‘সালমান – মৌসুমি’ কে নিয়ে এমন দুর্দান্ত একটি গল্পের ছবি বানালেন আর সাথে শিবলির বন্ধু সঙ্গীত পরিচালক আলম খানের মিষ্টি সুরের গান ছবিতে দিয়ে দিলেন যার ফলাফল সালমান – মৌসুমি জুটির টানা ২ য় সুপারহিট ছবি। প্রথম ছবির পিতা পুত্র অর্থাৎ রাজীব – সালমান এবার আলাদা রাজীব এই ছবিতে মৌসুমির পিতা যিনি একজন জমিদারের বিশ্বস্ত প্রজা ও গরীব জেলে। আর সালমান জমিদার বাড়ীর বিদেশ ফেরত নাতী।

রাজীব এই ছবিতে পজিটিভ চরিত্রের এক দুর্দান্ত অভিনেতা। শিবলি সাদিক কাহিনীকে এতো চমৎকার ভাবে গেথেছিলেন যে পুরো ছবিটি শেষ না হওয়া পর্যন্ত দর্শক হল থেকে বের হয়নি।

সালমান এর পরেও আরও একাধিক ছবিতে শিবলি সাদিকের সাথে কাজ করেছিলেন যা আমাদের পরবর্তী পর্বে আপনাদের জানানো হবে। সালমান শাহ কে নিয়ে সেই সময়ের প্রবীণ ও তরুন পরিচালকরা সবাই আশা দেখতে শুরু করলেন যেখানে ছবি বানানোর হিড়িক পরে যায় যা পুরো ইন্ডাস্ট্রিকে বদলে দেয়। একদিকে প্রবীণ নায়ক নায়িকা যেমন- জসিম, আলমগীর, ইলিয়াস কাঞ্চন, রুবেল শাবানা, চম্পা, দিতি ববিতা সবাই ব্যস্ত আবার সালমান, নাইম, শাবনাজ, ওমরসানী , মৌসুমিরাও ব্যস্ত । যার ফলে দর্শকরা দুর্দান্ত অনেক ছবি দেখার সুযোগ পায়।

আগামী পর্বে জানবেন জহিরুল হক এর ‘তুমি আমার’ ও মোহাম্মদ হান্নান এর ‘বিক্ষোভ’।


About The Author

ফজলে এলাহী (কবি ও কাব্য)

আমি ফজলে এলাহী পাপ্পু, কবি ও কাব্য নামে লিখি। স্বর্ণযুগের বাংলাদেশী চলচ্চিত্র এবং বাংলা গানকে এ যুগের সকলের কাছে পৌছে দেয়ার আগ্রহে লিখি।

Leave a reply