সালমান ও তার পরিচালকদের গল্প: দ্বিতীয় পর্ব
(প্রথম পর্ব) প্রিয় বন্ধুরা আজ আপনাদের জানাবো ৯০ দশকের বাংলা ছায়াছবির জনপ্রিয় নায়ক সালমান শাহ এর দুটি ছবির পরিচালকদের গল্প।
‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত‘ ও ‘অন্তরে অন্তরে‘ ছায়াছবি দুটি সুপারহিট হওয়ার সুবাদে সালমান- মৌসুমি জুটির চাহিদা আকাশতুঙ্গে। ঠিক এমন সময়ই কি এক অজানা কারনে সালমান – মৌসুমি আর জুটি বাঁধতে রাজী হননি। তাঁরা দুজনেই নিজেদের চেনাতে সিদ্ধান্ত নিলেন যে আর একসঙ্গে কোন ছবিতে অভিনয় করবেন না যা পরবর্তীতে মাত্র আরও ২ টি ছবি ছাড়া দুজনের দেখা একসঙ্গে দর্শকরা পায়নি। ফলে পরিচালকগন বেশ বিপাকে পড়ে যান, কারন ঐ সময় মৌসুমি ছাড়া প্রতিষ্ঠিত সব অভিনেত্রীই ছিলেন ইন্ডাস্ট্রিতে সালমানের সিনিয়র যারা তখন জনপ্রিয়তার তুঙ্গে। বিশেষ করে চম্পা ও দিতি। এদের সাথে জুটি করেও লাভ হবেনা। সালমান হয়ে পড়েন মৌসুমি বিহীন একা।
ঠিক তখনই প্রয়াত অভিনেতা ও পরিচালক জহিরুল হক সিদ্ধান্ত নেন যে ইন্ডাস্ট্রির আরেক নতুন মুখ ‘শাবনুর‘কে নিয়ে সালমান এর সাথে ছবি বানাবেন। উল্লেখ্য শাবনুর এর প্রথম ছবি প্রয়াত এহতেশাম এর ‘চাঁদনী রাতে’ ছবিটি বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পরে যার বিপরীতে ছিলেন আরেক নবাগত নায়ক ‘সাব্বির’। ‘চাঁদনী রাতে’ ছবিটি আমি ও আমার বন্ধুরা অর্ধেক দেখে হল থেকে বের হয়ে আসি ভালো না লাগার কারনে। তখন শাবনুর স্কুল পড়ুয়া একজন অভিনেত্রী যার মাঝে কিশোরীপনা স্পষ্ট লক্ষণীয় ছিল। যাই হোক, সালমান প্রথমেই রাজী হয়ে গেলেন কিন্তু আপত্তি ছিল প্রযোজকের যার দায়িত্ব নিলেন পরিচালক জহিরুল হক। তিনি প্রযোজককে আশস্থ করলেন যে ছবিটি ব্যবসা সফল হবেই।
প্রবীণ পরিচালকের সাথে নবীন সালমান ও শাবনুর এর এটাই প্রথম কাজ। ছবিটি ছিল পুরোটাই রোমান্টিক ছবি যেখানে সালমান বন্ধুদের কাছ থেকে ধার করা কাপর চোপড়, গাড়ী ইত্যাদি ব্যবহার করে নিজেকে একজন ধনির ছেলে হিসেবে শাবনুর এর সামনে তুলে ধরেন যা পরবর্তীতে প্রকাশ পায় সম্পূর্ণ মিথ্যে ও অভিনয়। আসলে সালমান ধনী পরিবারের সন্তান নয় যা নিয়ে কাহিনীতে ব্যাপক গণ্ডগোল লাগিয়ে দেন বুদ্ধিমান ও অভিজ্ঞ পরিচালক জহিরুল হক। জহিরুল হক হচ্ছেন সেই পরিচালক যিনি ৮০র দশকে সারেন্ডার, বিজয়, জনি ওস্তাদ এর মতো ব্যবসা সফল ছবি উপহার দিয়েছিলেন। ‘তুমি আমার‘ ছবি ১৯৯৪ সালে মুক্তি পাওয়া মাত্রই আমরা সব সালমান-সানী ভক্তরা হলে ভিড় করি। টিকেট নিয়ে স্কুল পড়ুয়া ছাত্ররা কালোবাজারিদের উপর চড়াও হয়, যার ফলে সিনেমার মারামারি বাস্তবে শুরু হয়ে যায় হলের বাহিরেই। আবার এক স্কুলের ছেলেরা অন্য স্কুলের ছেলেদের উপর হামলা চালায় কাউনটার থেকে আগে টিকেট সংগ্রহ করা নিয়ে। কে কার আগে টিকেট কিনবে সেটা নিয়েই ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া, ধস্তাধস্তি শুরু হলো। অবশ্য এইসব দৃশ্য তখন হলের নিত্যদিনের সকালের শোতে দেখা যেতো যা কারনে হলের দর্শকদের খুব বেশী আতংকিত হতে দেখা যায়নি। মাঝে মাঝে বিকেলের শোতে ও এইরকম দু চারটা ঘটনা ঘটে ঘটতো।
যে কথা বলছিলাম সেই কথা ফিরে আসি। ‘তুমি আমার ‘ ছবিটি মুক্তির পর যথারীতি সুপারহিট। অর্থাৎ নবাগত সালমানের একটানা ৩ টি সুপারহিট ছবি দিয়ে প্রযোজক, পরিচালকদের আস্থা অর্জন করলেন আর অন্যদিকে শাবনুর পেলেন প্রথম সুপারহিট ছবির স্বাদ এবং বুঝে গেলেন যে নিজের ক্যারিয়ার বাঁচাতে ও সাজাতে সালমান এর সাথে জুটি বাঁধা ছাড়া কোন বিকল্প নেই। অর্থাৎ শাবনুর নিজের ক্যারিয়ার গড়তেই সালমান কে ব্যবহার করতে লাগলেন। কারন দর্শক সালমান এর জন্য ছবি দেখতে যায় শাবনুর জন্য নয় এটা স্পষ্ট। আমরা যারা সেই সময় হলে নিয়মিত যেতাম তাঁরা কেউ শাবনুর এর ছবি এসেছে এই জন্য যেতাম না, সবাই সালমানের নতুন ছবি সেইজন্যই যেতাম।
ছবির সাথে সাথে প্রয়াত মেধাবী সঙ্গীত পরিচালক আবু তাহের এর সুরে ছবির গানগুলো বিশেষ করে কুমার বিশ্বজিতের কণ্ঠে ও ২য় বার রুনা লায়লার কণ্ঠের ‘জ্বালাইয়া প্রেমের বাত্তি কোথায় তুমি থাকোরে”
শেখ ইশতিয়াকের কণ্ঠের ” তুমি আমার ভালোবাসার গান’ আগুন ও কনক চাপার কণ্ঠে ‘ আমার জন্ম তোমার জন্য ‘ ও ‘দেখা না হলে একদিন’ গানগুলি ছিল সেই সময় চরম হিট যা বিটিভির ছায়াছন্দে ও রেডিওর ছায়াছবির গানের নিয়মিত প্রচারিত হতে থাকে। উল্লেখ্য এর আগে জহিরুল হক এর ছবিগুলোর গান থাকতো আলম খানের সুর করা কিন্তু এই প্রথম জহির তাঁর বন্ধু আলম খান এর ব্যস্ততার কারনে আবু তাহের কে নিয়ে গানের কাজ করেন আর আবু তাহেরও তাঁর সেই আস্থার প্রতিদান দিয়েছেন ছবির সবগুলো গানকে চমৎকার সুর করে। সেই থেকে শুরু হলো বাংলা চলচ্চিত্রের একটি সুপারহিট জুটি সালমান – শাবনুর এর জন্ম এবং শুরু হয়ে গেলো একটি অঘোষিত লড়াই যার একদিকে সালমান-শাবনুর অন্যদিকে মৌসুমি – ? সেটার জন্য আগামী পোস্ট পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। যাদের কারনে সেই সময় ইন্ডাস্ট্রি ও দর্শক ২ দিকে ভাগ হয়ে যায় আর চলতে থাকে এক যুদ্ধ……..।ফলাফল কিছু অসাধারন ছবি। তুমি আমার ছবির সাফল্যর পরপরেই পরিচালক জহিরুল হক সালমান-শাবনুর জুটিকে নিয়ে ৭০র দশকের সুপারহিট খান আতাউর রহমান এর ‘সুজন সখী’ (ফারুক কবরী) রিমেক বানানোর ঘোষণা দেন যা পরবর্তীতে তিনি শেষ করে যেতে পারেননি। ছবিটির শুটিং শুরু করার পরপরেই পরিচালক জহিরুল হক মৃত্যুবরণ করেন যার ফলে ছবিটির কাজ থেমে যায়। পরবর্তীতে পরিচালক তমিজ উদ্দিন রিজভি ছবিটির কাজ শেষ করে পরিচালক জহিরুল হক এর নাম দিয়েই ছবিটি মুক্তি দেন।
তিন তিনটি রোমান্টিক/প্রেমের ছবির পর এই প্রথমবার দর্শকরা নতুন এক সালমান কে দেখলো। যে সালমান নিজের ক্রেজ তৈরি করেছিলেন রোমান্টিক ছবির নায়ক হিসেবে সেই সালমান এবার এলেন অ্যাকশন ছবির নায়ক হয়ে। পরিচালক মোহাম্মদ হান্নান তিন সুপারহিট রোমান্টিক ছবির নায়ক সালমান কে নিয়ে তৈরি করেন বাংলাদেশের অন্ধকার ছাত্র রাজনীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ স্বরূপ ‘বিক্ষোভ‘ ছবিটি। যার মধ্য দিয়ে কিভাবে মেধাবী ছাত্রদের রাজনৈতিক নেতারা নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করছেন সেই সত্যিকারের চিত্রটি পরিচালক সাহসের সাথে ফুটিয়ে তোলেন এ যেন আমাদের দেশে ঘটে যাওয়া কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্মম সত্যিকারের চিত্র।
ছবির নায়িকা সেই আগের ‘তুমি আমার‘ খ্যাত শাবনুরকেই বেছে নিলেন কারন মৌসুমি সালমান বিরোধ এবং মৌসুমির সাথে ইতিমধ্যে দর্শকরা অন্য একজনকে গ্রহন করে নিয়েছে তাই পরিচালক হান্নান কোন ঝুঁকি না নিয়েই শাবনুরকে সালমান এর বিপরীতে নিয়েই শুরু করেন ‘বিক্ষোভ’ ছবিটি। ছবির প্রযোজনা সংস্থা বি.এম ফিল্মস এর এটি ছিল প্রথম ছবি যা নিবেদন করেছিলেন আলেয়া বেগম ও সালেহা রাব্বি। ছবিটি মুক্তি পাওয়ার পর যথারীতি সালমান ঝড়ে হলগুলো ‘হাউসফুল’ হয়ে ছবি প্রদর্শন করতে থাকে। টিকেটের চড়া মূল্য এবং আবারো হল কাউনটারে দর্শকদের ধস্তাধস্তি ও মারামারি। তবুও ছবির ব্যবসায় কোন আচর পড়েনি। এই ছবিতে সালমান কলেজের একজন মেধাবী ছাত্র যার পিতা রাজীবের ‘রাজনীতিতে একটা কথা আছে’ কথাটির প্যাঁচে পড়ে প্রান হারান। সালমান তখন শিশু। যখন বড় হন তখন রাজীব দেশের একজন রাজনৈতিক নেতা যিনি সালমানের কলেজের সন্ত্রাসী জহির উদ্দিন পিয়ার এর আশ্রয় ও প্রশ্রয়দাতা। যার সন্ত্রাসের কারনে কলেজের সাধারন শিক্ষার্থীরা অসহায় হয়ে পড়ে। একসময় সবাই প্রতিবাদ করতে শুরু করে।
উল্লেখ্য যে এই ছবিতে মঞ্চ ও টেলিভিশনের শক্তিশালি অভিনেতা জহির উদ্দিন পিয়ারের দুর্দান্ত ও ভয়ানক অভিনয় দর্শকদের নজর কাড়ে। রাজীবের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নাসির খান কোণঠাসা তাই একসময় সালমানকে নিজের দলে ভেড়াতে সক্ষম হোন এবং রাজীবের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেন। এখানে শাবনুর চরিত্রটি শুধু নায়কের সাথে থাকার জন্য থাকা একটি চরিত্র যার বিশেষ কোন ভুমিকা নেই বললেই চলে।
ছবির চিত্রনাট্য এতো শক্তিশালী ছিল যে দর্শকরা ছবি শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত একবারও অনুমান করতে পারেনি ছবির শেষ পর্যন্ত কি হবে? একদিকে ছবির নাটকীয়তা, অন্যদিকে অভিনেতা অভিনেত্রীদের দুর্দান্ত অভিনয় ও একের পর এক দুর্দান্ত গানগুলো দিয়ে ছবিটি ছিল ঠাসা। অথচ আজকের এতো ঢাকঢোল পেটানো ও দাওয়াত দিয়ে প্রিমিয়াম শো দেখানো ছবি গুলোর মাঝে তাঁর ছিটেফোটা পাওয়া যায়না। ভালো গল্প ও গানের ছবি হলে ঢাকঢোল পেটানো লাগেনা এবং প্রিমিয়াম শো করে সাংবাদিকদের টাকা দিয়ে ছবির প্রচার করা লাগেনা তাঁর প্রমান ‘বিক্ষোভ’। পরিচালক হান্নান প্রমান করেছিলেন যে শুধু সালমানের টানেই নয় ছবির গল্প ও চিত্রনাট্য ছিল শক্তিশালি, গান ছিল চমৎকার যার কারনে দর্শকরা ছবিটিকে গ্রহন করেছিল। ছবিতে পরিচালক আমাদের খ্যাতনামা আরেক সুরকার আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল এর হাতে ছবির গানগুলোর দায়িত্ব দেন। বুলবুল ১০০ তে ১০০ পেয়েই তার পুরো দায়িত্ব সফল্ভাবে সম্পন্ন করেন। উপরে ছবির জনপ্রিয় তিনটি গান ছাড়াও আরও দুটি গান ছিল । একটি হলো আগুন ও কনকচাপার কণ্ঠের ‘তোমাকে আমি যেন জীবন দিয়ে ভালবাসতে পারি’
অন্যটি হলো রুনা লায়লার একক কণ্ঠে ‘ ওগো মোর জীবনসাথী’ গানটি। সবগুলো গানের গীতিকার ও সুরকার ছিলেন আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল। এই ছবির ব্যবসায়িক সফলতার পরেও সালমান কে আর এই ধরনে সামাজিক অ্যাকশন ছবিতে খুব বেশী দেখা যায়নি। সালমান আবারো যথারীতি রোমান্টিক প্রেমের ছবিতে কাজ করতে শুরু করেন। আসলে মোহাম্মদ হান্নান এর ছবিটি ছিল এমন যে এখানে সালমান না হয়ে যদি তখনকার জনপ্রিয় নায়ক মান্না, ওমরসানী বা রুবেল কেও নেয়া হতো তাহলেও ছবিটি ব্যবসাসফল হতো। কারন এর গল্প ও গাঁথুনি ছিল খুব মজবুত যার কারনে ছবিটি দেখে দর্শকরা চরম মজা পেয়েছিল। আর তখন এই ধরনের রাজনৈতিক গল্পের ছবির বাজারও ছিল চরম। যার প্রমান এর ২ বছর আগের ছবি কাজী হায়াত ‘ত্রাস’, ‘চাঁদাবাজ’, নাদিম মাহমুদ এর ৯৩ তে নাদিম মাহমুদ এর ‘আখেরি হামলা’ ছবিগুলো। প্রথমদিন ‘বিক্ষোভ’ ছবিটির হাউস্ফুল দেখে সবাই সালমান এর জন্য ভিড় করেছে মনে হলেও পরবর্তীতে তা পাল্টে যায়। ছবির কাহিনীর কারনেই দর্শক ছবিটি লুফে নেয়। তবে সালমানের যে কোন অবদান নেই সেটা আমি বলছি না, এখানে দর্শকরা আগের শান্তশিষ্ট প্রেমিক সালমানের বদলে এক নতুন প্রতিবাদী কলেজ ছাত্র সালমানকে দেখতে পায়। যিনি রোমান্টিক ছবির মতোই এখানেও সফল। তবে সালমানের অনেক দর্শক মনে মনে সালমানকে অ্যাকশন নায়ক হিসেবে গ্রহন করেনি যা সালমান নিজেও বুঝতে পেরেছিলেন। মোহাম্মদ হান্নান এর সাথে সালমানের সেটাই প্রথম এবং শেষ ছবি ছিল। জীবিত অবস্থায় মোহাম্মদ হান্নান সালমান শাবনুর জুটিকে নিয়ে আর কাজ করেননি।
আজো স্মৃতির পটে ছবিটি হলে দেখার দিনটির কথা বারবার মনে পড়ে আর চোখে সেইসব আনন্দ ও উত্তেজনা নিয়ে বদ্ধ হল ঘরে একের পর এক সিগারেট টানার দৃশ্যগুলো চোখে ভাসে, যেখানে আমরা সব বন্ধুরা ছিলাম চরম টেনশনে। ধন্যবাদ জানাই পরিচালক মোহাম্মদ হান্নান কে এমন একটি চমৎকার সুন্দর ছবি আমাদের উপহার দেয়ার জন্য।
আপনার লেখার মধ্যে বার বার শাবনূরকে ছোট করার চেষ্টা এটি স্পষ্ট করে যে শাবনূর সে সময় এতোটাই গুরুপ্তপূর্ন ছিলো যে আপনি তা না পারছেন কইতে, না পারছেন সইতে … যাই হোক, যদিও সেসময় আমি অনেক ছোট তবে এতোটুকু মনে আছে যে সালমান-শাবনূর জুটি হিসেবেই এদেশের মুভি দর্শকদের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছিলো … তাছাড়া সালমানের যেমন পাগল ভক্ত ছিলো, শাবনূরেরও তেমনি ছিলো … দুজনের মধ্যে আমি তুলনা করতে যাবো না … তবে দুজনের একজনকে বড় করতে গিয়ে আরেকজনকে ছোট করা অযৌক্তিক … আর একজন শাবনূর ভক্ত হিসেবে এটুকু বলবো, সালমানের মৃত্যুর পরে শাবনূরের জনপ্রিয়তা এতোটুকু কমেনি, বরং দিন দিন বেড়েছে … শাবানার পরে শাবনূরই একমাত্র নায়িকা যিনি সমসাময়িক নায়কদের চেয়েও বেশী জনপ্রিয় ছিলো … সালমান-শাবনূর যূগ হয়তো আমরা দেখিনি, তবে সালমানবিহীন শাবনূরের প্রবল জনপ্রিয়তা নিজের চোখেই দেখেছি … সূতারং, একজন জনপ্রিয় তারকাকে নিয়ে লিখতে গিয়ে অন্য একজন তারকাকে ছোট না করুন তো সবার জন্যই মঙ্গল …
আপনাদের মতো ভক্তদের সাথে তর্ক করে লাভ নেই তারপরেও দুটি কথা না বললেই নয়। আমি আমার লিখায় শাবনুরকে ছোট করেছি কোথায়? আপনি নিজেই বলেছেন সেইসময়ে আপনি ছোট ছিলেন আর মানুষের মুখে শাবনুরের জনপ্রিয়তা কথা শুনেছেন । ভাইরে আমি রাজ্জাক আলমগির,জসিম, ওয়াসিম, ফারুক বুলবুল জাফর ইকবাল ,সোহেল রানা, ইলিয়াস কাঞ্চন সহ বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের লম্বা একটা সময় নিজের চোখে দেখেছি। আমরা সেইসময় সিনেমা হলে যেতাম সালমান, সানি, রুবেল , মান্না, জসিম, সোহেল রানা, আলমগিরের জন্য । শাবনুর তখন জাস্ট একজন নতুন নায়িকা। তুমি আমার ছবিতে শাবনুরের বদলে যদি শাবনাজ, শাহনাজও থাকতো তাহলেও যেতাম এবং তুমি আমার ছবি সুপারহিটই হতো। কারণ শাবনুর তখন কোন ফ্যাক্টর হয়নি । বরং শাবনুর চাঁদনী রাতে ছবির ব্যর্থতার পর ক্যারিয়ার রক্ষার জন্য নবীন কারো সাথে জুটি বেঁধে নিজের পায়ের মাটি শক্ত করতে ব্যস্ত। শাবনুরের যে ‘দুনিয়ার বাদশা’ ছবির কথা বলছেন সেটা কার? বাদল খন্দকার যদি আমিন খানের সাথে শাবনুরকে না আনতেন তাহলেও দুনিয়ার বাদশা ছবির কিছু হতো না । কারণ আমিন খানের প্রথম ছবি ‘অবুঝ দুটি মন ‘ সুপারহিট হওয়ায় আমিন খানকে নিয়ে বাদল খন্দকার শাবনুরের সাথে একটা জুটি বাধার চেষ্টা করে দেখেছেন । দিলিপ সোম আমিন খানের সাথে শাবনুরের হৃদয় আমার বানালেন এবং সফলও হলেন সেখানে শাবনুরের কোন অবদান নেই কারণ ছবিগুলো নায়ক প্রধান ছবি ছিল ।
শাবনুর ভালো অভিনেত্রী সন্দেহ নেই কিন্তু শাবানার পরের অবস্থান যা বললেন সেটা নিয়ে দ্বিমত আছে কারণ ববিতা নামের আরও একজন নায়িকা আমাদের আছেন যার জনপ্রিয়তা , অভিনয় দক্ষতা শাবনুরের চেয়ে অনেক অনেক বেশী ।