সালমান শাহর বৈশিষ্ট্যেে ওমর সানী
অমর নায়ক সালমান শাহ মৃত্যুর আগে অসমাপ্ত কিছু ছবিতে কাজ করেছিল। কিছু ছবিতে অল্প কাজ করেছিল সালমান কিন্তু শেষ করে যেতে পারেনি। অসমাপ্ত কাজের সেই ফুটেজগুলো পরিচালকরা সংরক্ষণও করেননি যেটা দুঃখজনক।
সালমান শাহ-র অসমাপ্ত একটি ছবি ছিল উত্তম আকাশ পরিচালিত ‘কে অপরাধী।’ এ ছবিতে সালমান কিছু অংশের কাজ করে গিয়েছিল। সালমানের মৃত্যুর পর ছবিটি নতুন করে শুরু করা হয় ওমর সানী-কে নায়ক করে। এছাড়া মনতাজুর রহমান আকবর পরিচালিত ‘কুলি’ ছবিতেও সালমান কিছু কাজ করে গিয়েছিল। এ ছবিটিও পরে নতুন করে ওমর সানীকে দিয়ে করানো হয়। এ দুটি বাদে সালমানের কাজ করার কথা ছিল এমন দুটি ছবি ‘মধুর মিলন’ ও ‘অধিকার চাই’-তেও ওমর সানী নায়ক ছিল পরে। বলা যায় সালমানের অসমাপ্ত ও কাজ করার কথা ছিল এমন ছবির বেশিরভাগ নায়কই ওমর সানী। এসব ছবিতে ওমর সানীকে রাখা হয়েছিল সালমানের বৈশিষ্ট্যে। কিভাবে হয়েছিল সেটা বলার জন্যই এ লেখা।
প্রথমেই বলে নেয়া হচ্ছে ওমর সানী-ও আমাদের ইন্ডাস্ট্রির নায়ক এবং সফল। তার প্রতি সম্মান রেখেই এ বিশ্লেষণটি করা হচ্ছে। সালমানের বৈশিষ্ট্যকে সবচেয়ে বেশি ফলো করা হয়েছে ‘কে অপরাধী’ ছবিতে। এ ছবিটি সালমানের মৃত্যুর পরবর্তী বছর ১৯৯৭ সালের সেপ্টেম্বরে মুক্তি পায়। ছবির প্রথম কাস্ট ছিল সালমান শাহ ও শাবনূর পরের কাস্টে শাবনূরের নায়ক হয়ে আসে ওমর সানী। বলে রাখা ভালো ওমর সানীর ক্যারিয়ারের বেস্ট পারফরম্যান্সের ছবিগুলোর মধ্যে ‘প্রেমগীত’-এর পরেই ‘কে অপরাধী’-র নাম আসে। অবশ্যই ‘কে অপরাধী’ ছবিতে সানী অসাধারণ অভিনয় করেছে। এমনকি দর্শক তাকে পছন্দ করেছিল এ ছবিতে। অভিনয় ও দর্শক পছন্দের পেছনে সালমানের বৈশিষ্ট্যে সানীকে প্রেজেন্ট করার কারণ রয়েছে। বিষয়টা খুব সূক্ষ্মভাবে খেয়াল করতে হবে। যেমন –
১. এ ছবিতে সানীর লুক দেয়া হয়েছিল সালমানের লুকে। সালমানের যে স্টিল ইমেজগুলো পাওয়া যায় অসমাপ্ত অংশের সেখানে সালমানকে যে লুকে দেখানো হয়েছে সানীকেও হুবহু সেভাবে দেখানো হয়েছে।
২. সানীর হেয়ার স্টাইলে যে নিজস্বতা ছিল ঘাড় পর্যন্ত লম্বা চুলের সেটাকে কিছুটা পরিবর্তন করে সালমানের লুকে আনা হয়।
৩. সানীর অ্যাডভোকেটের চরিত্রটিকে গম্ভীর করে তোলা হয়েছে। সালমান যে ব্যক্তিত্বসম্পন্ন অভিনয় করত ঠিক সেভাবেই সানীকে দিয়ে অভিনয়টা করানো হয়েছে। অহেতুক কোনো চিৎকার বা বডি ল্যাংগুয়েজ ছিল না।
৪. সানীর চিরাচরিত স্লো ডায়লগ ডেলিভারির সমস্যাটা এ ছবিতে ছিল না কিংবা বাম হাতে এগিয়ে দিয়ে যেভাবে অভিনয় করত বেশিরভাগ ছবিতে সেটাও ছিল না। সালমানের মতো সাবলীল ডায়লগ ডেলিভারি দিয়েছিল বা পরিচালক সানীকে সেভাবে দেখিয়েছে।
এই বৈশিষ্ট্যগুলোকে ফলো করে ‘কে অপরাধী’ ছবিতে ওমর সানী সম্পূর্ণ নতুনভাবে আবিষ্কৃত হয়। তখন যারা সিনেমাহলে ছবিটি দেখেছিল তাদের মধ্যে সচেতন দর্শকরা একবাক্যে সালমান শাহ-র বৈশিষ্ট্যে ওমর সানীকে পেয়েছিল। সবচেয়ে ভালো বিষয় হচ্ছে ওমর সানী এ সুযোগটির সদ্ব্যবহার করেছিল মানে পারফরম্যান্স কাজে লাগিয়েছিল। আর এভাবেই সানীর ক্যারিয়ারে ‘কে অপরাধী’ তার ওয়ান অফ দ্য বেস্ট ছবি হয়ে যায়।
‘কে অপরাধী’ ছাড়াও যদি বলি সালমানের অল্প কাজ করে যাওয়া ‘কুলি’ এবং কাজ করার কথা ছিল এমন দুটি ছবি ‘মধুর মিলন, অধিকার চাই’-তেও সালমানের দু’একটি বৈশিষ্ট্য মেলে। এছাড়া ৯৭-৯৮ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘রঙিন নয়নমনি, মিথ্যা অহংকার, শান্তি চাই, লাট সাহেবের মেয়ে, তুমি সুন্দর’ এ ছবিগুলোতেও ওমর সানী-কে পরিবর্তিত দেখা গেছে। মানে সালমানের মৃত্যুর আগে সানী যে ধরনের ছবি বা অভিনয় করত সালমানের মৃত্যুর পরে সেটাতে সুস্পষ্ট একটা পরিবর্তন আসে। সানীর লুক, অভিনয়, বডি ল্যাংগুয়েজে একটা সাবলীল বিষয় ফুটে ওঠে। নিজেকে পরিবর্তন করে কাজ করার চেষ্টা দেখা যায়। এই চেষ্টাটা তার নিজের ছিল অথবা পরিচালকরা তাকে সালমানের বৈশিষ্ট্যে দেখাতে চাইত।
ওমর সানী খলনায়কে আসে ২০০০ পরবর্তী সময়ে এর আগে তার একটা গ্যাপ ছিল অভিনয়ে। ৯৭-৯৮ সালে তার যে সালমান শাহ-কে ফলো করে নিজের একটা ট্রান্সফরমেশন ঘটেছিল সেটাকে বেশিদিন ধরে রাখতে পারেনি এটাও সত্য। ঐ দুই বছরই ছিল এরপর একটা গ্যাপ এবং খলনায়কে ফিরে আসে। তাই বলা যায়, সালমানের বৈশিষ্ট্যে ওমর সানী নতুনত্ব দেখিয়েছিলো নিজের বা পরিচালকদের ইচ্ছায়।