Select Page

সালমান শাহ এবং তাঁর আধুনিকতা

সালমান শাহ এবং তাঁর আধুনিকতা

সময়ের চেয়ে এগিয়ে থাকাই হলো আধুনিকতা। কথাবার্তায়, চলনে-বলনে, পোশাক-পরিচ্ছদে, চিন্তা-চেতনায় এগিয়ে থাকাই আধুনিকতা। অমর নায়ক সালমান শাহ এর সবকিছুই ধারণ করেছিল তাই সে আধুনিক নায়ক হয়ে উঠেছিল।

বাংলাদেশের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে নব্বই দশক সময়টা সম্পূর্ণ ভিন্ন ছিল। এ সময়টিকে টোটাল ফিল্মের ইতিহাস থেকে সহজেই আলাদা করা যায়। নব্বইয়ের শুরুতে নাঈম-শাবনাজ জুটিকে দিয়ে যে আধুনিক প্রজন্মের যাত্রা শুরু হয়েছিল তার পূর্ণতা আসে সালমান শাহ-র আগমনে। সালমান শাহ এ প্রজন্মের শ্রেষ্ঠ আবিষ্কার ছিল।

সালমান শাহ-র ফিল্মি ক্যারিয়ার শুরুর পর পত্রিকায় যে ইন্টারভিউগুলো এসেছিল তার মধ্যে তাঁর কথাবার্তার মধ্যে আধুনিকতা ছিল। কাউকে ফলো করে নয় নিজের মতো স্বাতন্ত্র্য তৈরি করে নিজের একক পরিচয় তৈরি করে মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য হবার স্বপ্নের কথা বলত এবং তাঁর ক্ষেত্রেই সেটাই হয়েছে। মাত্র ২৭টি ছবি ও সাড়ে তিন বছরের ক্যারিয়ারেই সেটা করতে পেরেছিল। নিজের জগতে নিজেই রাজার মতো ছিল আর দর্শকের কাছে গ্রহণযোগ্যতা ছিল আকাশচুম্বী। প্রথম ছবি ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ মুক্তির পরেই এ ছবির যে পরিমাণ ভিউ কার্ড প্রকাশ হয়েছিল আর কোনো ছবির এত ভিউ কার্ড প্রকাশ হয়নি। ভিউ কার্ডের কথা কেন আসছে? কারণ নব্বইতে এটি ছিল সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছানোর সবচেয়ে সহজ একটি ফিল্মি মাধ্যম। অলিতে গলিতে দোকানে পাওয়া যেত, ছেলেমেয়েরা কিনত। গ্রহণযোগ্যতার একটা সহজ নমুনা ছিল এটি। সমসাময়িক নায়কদের থেকে তাঁর প্রজন্মে সবচেয়ে বেশি পারিশ্রমিকও অল্প সময়ে নিত সালমান।

পোশাক-পরিচ্ছদের আধুনিকতায় সালমান শাহ বাংলাদেশের ফিল্মের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ফ্যাশন আইকনে পরিণত হয়েছে। জাফর ইকবাল শুরুটা করলেও সালমান সেটাকে পূর্ণতা দিয়েছে কারণ তাঁর আধুনিকতা হয়েছে অগ্রবর্তী ও পরবর্তী প্রজন্ম মিলিয়ে। সালমানের নামটি সবচেয়ে বেশি পৌঁছেছে সালমানের পরবর্তী প্রজন্মে। তাঁর পোশাক-পরিচ্ছদের সাথে আধুনিকতার বিষয়টি ছিল এই যে তাঁকে সেসব পোশাকে রাজপুত্রের মতো লাগত। তাঁকে যেমন মানাত সেটা আর কারো ক্ষেত্রে এতটা ফ্যাশনেবল লাগত না সেটা তার লুক ও ব্যতিক্রমী হিরোইজমের জন্য। একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকার মতো একটা ইমেজ তৈরি করেছিল। তাঁকে দেখলেই নায়ক মনে হয় এটা তো সবচেয়ে ব্যতিক্রমী ব্যাপার ছিল।

সালমান শাহ-র পর্দা উপস্থিতি বা অভিনয়েও আধুনিকতা ছিল। দর্শকের মধ্যে এ ধারণাটি পোক্ত হয়ে গিয়েছিল এ ছবিতে সালমান শাহ আছে। নামটা এভাবে বলা হত ‘সালমান শাহ-র ছবি’। তার মানে তাঁর নামটাই ব্র্যান্ডে পরিণত হয়েছিল। এই ব্র্যান্ডে পরিণত হওয়াটা তো আধুনিকতা অবশ্যই। তাঁর অভিনয়কেও তাঁর ছবিতে অনেক তারকা থাকার পরেও সহজেই আলাদা করা যেত এবং দর্শকের মধ্যে আগ্রহ ছিল সালমান শাহর অভিনয় আলাদাভাবে তাদেরকে কি দিচ্ছে সেটা। তাঁর এক্সপ্রেশনের গভীরতা, হাসি-কান্না সবকিছুই দর্শকের মধ্যে বাড়তি আগ্রহের বিষয় ছিল। নব্বই দশকীয় চলচ্চিত্রে আগের সময়ের নায়কদের থেকে পরিবর্তনের যে হাওয়া তার পূর্ণতাই ছিল সালমান শাহ। এই পরিবর্তনই তো আধুনিকতা।

সবকিছুকে ছাপিয়ে গেছে তাঁর সর্বশেষ যে আধুনিকতা আর সেটা হলো প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে তাঁর প্রভাব। ২০০০ পরবর্তী চলচ্চিত্রে যাদের প্রতিষ্ঠা এবং নব্বইয়ের শেষের দিকে যাদের আগমন সেই রিয়াজ, ফেরদৌস, শাকিল খান, শাকিব খান তাদের প্রত্যেকেরই ফিল্মে আসার পেছনে স্বপ্ন বা কারণ ছিল সালমান শাহ। তাঁকে দেখেই তারা ফিল্মে আসে কারণটা হলো সালমানই তাদের কাছে সেই স্বপ্নটা তৈরি করে দিতে পেরেছিল। এর বাইরে দর্শকের কাছেও যারা সালমানের সময়ে ছিল না, ২০২৪-এ দাঁড়িয়েও যারা সালমানের ব্যতিক্রমী প্রভাবকে জানার, বোঝার এবং মানার মতো মন তৈরি করে ফেলেছে তাদের কাছেও সালমান শাহ আধুনিক।

হ্যাঁ, রাজ্জাক থেকে শুরু করে শাকিব খান পর্যন্ত যত তারকা নাম করেছে ফিল্মে তাদের সবার পরেও একজন সালমান শাহ বিশেষভাবে থেকে গেছে, রেখাপাত করেছে সবার মনে। এই বিশেষভাবে থেকে যাবার বা আমাদেরকে প্রভাবিত করার যে বিষয়টা সালমান শাহ এখানেও আধুনিক। আফসোস তাঁর এতভাবে থেকে যাওয়াটা সে দেখে যেতে পারল না!

এতকিছুর পরে সালমান শাহ নামটিই যথেষ্ট এবং আজকের পরিপ্রেক্ষিতে হয়ে গেছে ‘দ্য সালমান শাহ’।


লেখক সম্পর্কে বিস্তারিত

বাংলাদেশের চলচ্চিত্র গত শতকে যেভাবে সমৃদ্ধ ছিল সেই সমৃদ্ধির দিকে আবারও যেতে প্রতিদিনই স্বপ্ন দেখি। সেকালের সিনেমা থেকে গ্রহণ বর্জন করে আগামী দিনের চলচ্চিত্রের প্ল্যাটফর্ম গড়ে উঠুক। আমি প্রথমত একজন চলচ্চিত্র দর্শক তারপর সমালোচক হিশেবে প্রতিষ্ঠিত হবার স্বপ্ন দেখি। দেশের সিনেমার সোনালি দিনের উৎকর্ষ জানাতে গবেষণামূলক কাজ করে আগামী প্রজন্মকে দেশের সিনেমাপ্রেমী করার সাধনা করে যেতে চাই।

মন্তব্য করুন