সাল অনুযায়ী শাকিবের দুই দশক
ঢাকাই সিনেমায় আকাশছোঁয়া জনপ্রিয়তা নিয়ে রাজত্ব করছেন শাকিব খান। ২৮ মে তার ক্যারিয়ারের দুই দশক পূর্তি হলো। এ উপলক্ষে জেনে নিন সাল অনুযায়ী শাকিবের হিট-ফ্লপ ও উল্লেখযোগ্য সিনেমার ঠিকুজী।
১৯৯৯ : নবীন শিল্পীদের কারিগর সোহানুর রহমান সোহানের ‘অনন্ত ভালোবাসা’ সিনেমা দিয়ে নায়ক হিসেবে অভিষিক্ত হন। নায়িকা ছিলেন মৌসুমীর বোন নবাগতা ইরিন জামান। ছবিটি ব্যবসায়িকভাবে সফল না হলেও পরিচালকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন।
একই বছরেই তখনকার অন্যতম জনপ্রিয় নায়িকা পপির বিপরীতে ‘দুজন দুজনার’ ছবিতে ও পূর্ণিমার বিপরীতে ‘আজকের দাপট’ সিনেমায় অভিনয় করেন। দুটি ছবিই বাণিজ্যিক ভাবে সেভাবে চলেনি। নায়ক হিসেবে চলচ্চিত্রে আসতে তাকে বেশ কাটখড় পোহাতে হয়েছিল,নৃত্য পরিচালক আজিজ রেজাই তাকে চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেন।
২০০০ : জনপ্রিয় পরিচালকদের দৃষ্টি আকর্ষণের ফলে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় বছরেই মোট ৬ টি সিনেমা মুক্তি পায়। বছরের প্রথম ছবি মুনমুনের বিপরীতে ‘বিষে ভরা নাগিন’ দিয়ে প্রথম সুপারহিটের দেখা পান শাকিব খান। সিনেমাটির পরিচালক ছিলেন খ্যাতনামা নির্মাতা দেলোয়ার জাহান ঝন্টু।
আরেক জনপ্রিয় নির্মাতা মালেক আফসারীর সুপারহিট ছবি ‘হীরা চুনি পান্না’তেও তিনি ছিলেন বিশেষ নায়ক। ইস্পাহানী আরিফ জাহানের শাবনূর ও ডিপজল থাকা সত্ত্বেও ‘গোলাম’ ছবিতে নাম ভূমিকায় অভিনয় করাটা বেশ চমকপ্রদ ব্যাপার। এটিও ব্যবসায়িকভাবে সফল ছিল। তবে অশ্লীলতার সেই সময়ে উপরোক্ত তিনটি সিনেমাই সমালোচিত হয়েছিল। যেখানে প্রতিষ্টিত তারকারাই অশ্লীলতায় যুক্ত হয়ে গিয়েছিলেন সেখানে এই নবীন নায়কের সিনেমা করে যাওয়াটাই হয়তো বড় ব্যাপার ছিল।
নিজের চুক্তিবদ্ধ প্রথম ছবি ‘সবাই তো সুখী হতে চায়’ ও জানের জান মুক্তি পায়। তবে সব ছাপিয়ে যায় বছরের শেষে শাবনূরের বিপরীতে ‘ফুল নেবো না অশ্রু নেবো’তে অভিনয় করেন। এফ আই মানিকের এই পরিছন্ন ছবিটি সুপারহিট ব্যবসা করে,তবে বিশেষ ভাবে উল্লেখ্য হয়ে থাকবে ‘আমার হৃদয় একটি আয়না’র মত তুমুল সাড়াজাগানো গানের জন্য,এই গান দিয়েই তিনি মধ্যবিত্ত দর্শকদের কাছে পরিচিত হয়ে উঠেন।
২০০১ : শাকিব তখন সিনেমাতে অভিনয় করাটাই মুখ্য হিসেবে দেখেছিলেন,শুরু থেকেই সিনেমার সংখ্যা বাড়ানোর দিকে বেশি মনোযোগ দিয়েছিলেন। সেই সুবাদে এই বছর মোট ১১টি ছবি মুক্তি পায়। মুক্তি পাওয়া ছবি গুলোর মধ্যে ঠেকাও মাস্তান,কঠিন শাস্তি,দুই নাগিন বেশ ভালো ব্যবসা করে।
তবে আলোচিত ছিলেন স্বপ্নের বাসর সিনেমায় ‘কিছু কিছু মানুষের জীবনে’ গানটির জন্য,এটি সেই বছরের অন্যতম জনপ্রিয় গান ছিল। তখন তাকে সিনেমা পাইয়ে দেবার ক্ষেত্রে মুনমুন,পপি ও সুস্থ ধারার সিনেমায় শাবনূর বিশেষ ভূমিকা পালন করেন।
২০০২ : এই বছর রেকর্ড সংখ্যক ১৯ টি সিনেমা মুক্তি পায়, সুস্থ ধারার সিনেমার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যবসা করে ‘ও প্রিয়া তুমি কোথায়’, এই সিনেমায় মূল ভূমিকায় ছিল শাবনূর- রিয়াজ জুটি। একক নায়ক হিসেবে ‘পড়েনা চোখের পলক’ ছবিটিও ব্যবসায়িক ভাবে সফল ছিল। এছাড়া মুক্তি পায় সবার উপরে প্রেম,মুখোশধারী,উত্তেজিত,স্ত্রীর মর্যাদা,জুয়াড়ী,ওরা দালাল সহ বেশকিছু ছবি।
২০০৩ : প্রবাদপ্রতিম নির্মাতা আমজাদ হোসেনের ‘প্রাণের মানুষ’ এ শাবনূর- ফেরদৌসের সঙ্গে অভিনয় করে সমাদৃত হন, মেরিল প্রথম আলো পুরস্কারে সমালোচকদের রায়ে মনোনয়ন পর্যন্ত পেয়েছিলেন। তৎকালীন স্থুল অশ্লীল সিনেমার ভিড়ে পরিচ্ছন্ন সিনেমার জন্য অপেক্ষা করতেন এই সিনেমা সেটাই প্রকাশ করে। শাবনূরের বিপরীতে ‘প্রেম সংঘাত’ ছবিটি হিট হয়। এছাড়া মুহম্মদ হান্নানের জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত ছবি ‘সাহসী মানুষ চাই’ তে প্রধান নায়ক তিনিই ছিলেন। এছাড়া মুক্তি পায় নয়ন ভরা জল,বড় মালিক হিংসা প্রতিহিংসা সহ মোট ১২টি ছবি।
২০০৪ : কুখ্যাত সন্ত্রাসী এরশাদ শিকদারের জীবনী থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে নির্মিত সিনেমা ‘খুনী শিকদার’ এ নাম ভূমিকায় অভিনয় করেন শাকিব। অশ্লীলতার দায়ে অভিযুক্ত হলেও শাকিবের অভিনয় বেশ সমাদৃত হয়,ছবিটিও বেশ ভালো ব্যবসা করে। এছাড়া মুক্তি পায় আজকের সমাজ, হৃদয় শুধু তোমার জন্য,নষ্ট,মায়ের হাতের বালা সহ বেশকিছু ছবি।
২০০৫ : নিজের বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারের টার্ণিং পয়েন্ট ধরা হয় এই বছরটিকে। হাছিবুল ইসলাম মিজানের সুপারহিট ছবি ‘আমার স্বপ্ন তুমি’তে নিজের ক্যারিয়ারের সেরা অভিনয় করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেন। এই সিনেমার পরপরই পরিচালকরা তাকে নতুন ভাবে ভাবতে শুরু করেন। পাশাপাশি চাষী নজরুল ইসলামের ‘সুভা’তে পূর্ণিমার বিপরীতে অভিনয় করেও বেশ প্রশংসিত হন। এছাড়া বাধা ও সিটি টেরর ছবিতেও নিজের অভিনয়ের জায়গা ভালোভাবে করিয়ে নিয়েছিলেন। তবে এই বছরেই বেশকিছু অশ্লীলতা সিনেমার জন্য সমালোচিত হন।
২০০৬ : আগের বছর যে শুভ সূচনা হয়েছিল সেটারই দারুণ প্রতিফলন ঘটে এই বছর। ডিপজলের প্রযোজনায় বছরের সেরা চারটি ব্যবসাসফল সিনেমা চাচ্চু, কোটি টাকার কাবিন, দাদীমা ও পিতার আসন সিনেমার নায়ক ছিলেন তিনি, এই ছবিগুলোর মধ্য দিয়েই অপুর সঙ্গে জুটি গড়ে উঠে। এর মধ্যে তারকাবহুল পিতার আসন ছবিতে অভিনয়ের জন্য সমাদৃত হন।
এই বছর তাঁর আরো মুক্তি পাওয়া ঢাকাইয়া পোলা বরিশাইল্যা মাইয়া, মায়ের মর্যাদা, রঙ্গীন রসের বাইদানী ছবিগুলোও বেশ ভালো ব্যবসা করে। এই সাফল্যে অশ্লীল সিনেমা আর করবেন না বলে সিদ্ধান্ত নেন।
২০০৭ : এই বছর আমার প্রানের স্বামী, কাবিন নামা, কথা দাও সাথী হবে, কঠিন প্রেম, তোমার জন্য মরতে পারি, ডাক্তার বাড়ি, এক বুক জ্বালা-সহ বেশ কিছু সিনেমার দারুণ সাফল্যে বাংলা সিনেমার সেই বছরের শীর্ষ নায়ক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হন।
অপু বিশ্বাসের সঙ্গে জুটি বেঁধে একের পর এক ছবি করতে থাকেন,সঙ্গে শাবনূরকে নিয়েও জুটি বাঁধেন। ‘আমার প্রাণের স্বামী’তে অভিনয়ের স্বরুপ মেরিল প্রথম আলো পুরস্কারে সমালোচকদের রায়ে সেরা অভিনেতার পুরস্কার লাভ করেন। আগের তিনটি ছবিতে দেবর-ভাবীর চরিত্রে অভিনয় করলেও ‘তুই যদি আমার হইতে রে’ সিনেমায় প্রথম মৌসুমীর বিপরীতে অভিনয় করেন, এক বুক জ্বালা সিনেমায় ছিলেন ভাই-বোনের চরিত্রে অভিনয় করেন ।
২০০৮ : মান্নার অকাল মৃত্যু ও রিয়াজের প্রতি পরিচালকেরা আস্থা হারালে শাকিব খান হয়ে উঠেন একক আধিপত্য বিস্তারকারী নায়ক। একের পর এক সিনেমার সাফল্য পেয়েছে,এ যেন নিজের সঙ্গে নিজের প্রতিদ্বন্দ্বিতা। বিশেষ করে ‘প্রিয়া আমার প্রিয়া’র বিরাট সাফল্যে দর্শক মহলে দারুন ভক্তকূল গড়ে উঠে,সুপারস্টারের খেতাব পান,নিজের পারিশ্রমিক ও বেশ বাড়িয়ে ফেলেন। এই সিনেমার ‘নি:শ্বাস আমার তুমি’ গানটা অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়,এই সিনেমায় তাঁর নায়িকা ছিলেন সাহারা।
সেই বছরে একে একে সাফল্যের পালকে যুক্ত হয় এক টাকার বউ, মনে প্রাণে আছো তুমি, আমার জান আমার প্রাণ, সন্তান আমার অহংকার সহ বেশকিছু সিনেমা। ‘তুমি স্বপ্ন তুমি সাধনা’ সিনেমায় শাকিবের মৃত্যুদৃশ্য সইতে না পেরে ভক্তরা সিনেমা হলে ভাংচুর চালান,পরবর্তীতে সিনেমার শেষে কাহিনী পরিবর্তন করা হয়।
‘প্রিয়া আমার প্রিয়া’ সিনেমার জন্য প্রথমবারের মত দর্শকজরিপে মেরিল প্রথম আলো পুরস্কার অর্জন করেন,পাশাপাশি ‘যদি বউ সাজো গো’ সিনেমার জন্য পান বাচসাস পুরস্কার। এই বছর মোট সিনেমা মুক্তি পায় ১৪টি।
২০০৯ : নিজের সেই একক রাজত্বে প্রায় ১৭ টি সিনেমা মুক্তি পায় শাকিব খানের। সবচেয়ে বেশি ব্যবসা করেছে শাবনূর ও সাহারার সঙ্গে ‘বলবো কথা বাসর ঘরে’, এছাড়া অপু বিশ্বাসের সঙ্গে জান আমার জান, মায়ের হাতে বেহেশতের চাবি খুব ভালো ব্যবসা করে।
‘মন যেখানে হৃদয় সেখানে’ ও সাহেব নামে গোলাম সিনেমায় শাকিবের অভিনয় প্রশংসিত হয়,এই ছবি দুইটিও ব্যবসাসফল। লাক্স তারকা মিমকে নিয়ে অভিনয় করেন ‘আমার প্রাণের প্রিয়া’ সিনেমায়,এই সিনেমায় ‘কি যাদু করেছো বলোনা’ গানটি বেশ জনপ্রিয়তা পায়। এতগুলো সিনেমা মুক্তির পাশাপাশি আলোচিত শরৎসাহিত্য ‘দেবদাস’ ও মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক সিনেমা ‘এইতো প্রেম’ এ চুক্তিবদ্ধ হয়ে মধ্যবিত্ত দর্শকদের কাছে আলোচিত হন।
‘স্বামী স্ত্রীর ওয়াদা’ সিনেমার ‘একটা চাঁদ ছাড়া রাত আঁধার কালো’ গানটি প্রশংসিত হয়,এই গানটিই তিনটি জাতীয় পুরস্কার লাভ করে। তবে মনে বড় কষ্ট, ভালোবাসা দিবি কিনা বল-সহ কিছু সিনেমায় অভিনয়-সহ নানা কারনে সমালোচিত হন,সঙ্গে এফডিসিতে অপু বিশ্বাসের সঙ্গে দ্বন্ধে জড়িয়ে পড়ে একসাথে সিনেমা করবেন না বলে সিদ্ধান্ত নেন।
২০১০ : এই বছর মুক্তি পায় নিজের ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা সিনেমা ‘ভালোবাসলেই ঘর বাঁধা যায় না’,ছবিটি ছিল সেই বছরের সবচেয়ে ব্যবসাসফল সিনেমা পাশাপাশি তিনি নিজে প্রথমবারের মত জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন, সিনেমাটি ৭ টি শাখায় জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করে। জাতীয় পুরস্কারের পাশাপাশি এই সিনেমার সুবাদে মেরিল প্রথম আলো পুরস্কার, বাচসাস পুরস্কার লাভ করেন।
অপু বিশ্বাসের সঙ্গে দ্বন্ধ ভুলে আবার একসাথে সিনেমায় অভিনয় শুরু করেন। এছাড়া নাম্বার ওয়ান শাকিব খান, বলো না তুমি আমার, চাচ্চু আমার চাচ্চু ,পরান যায় জ্বলিয়া রে, জীবন মরনের সাথী-সহ বেশ কিছু সিনেমা বেশ ভালো রকমের ব্যবসা করে। তবে গড়পড়তা অভিনয়,সিনেমাগুলোর নকল গল্পের দূর্বল ও অসামঞ্জস্য নির্মাণ,অঙ্গভঙ্গির জড়তা,ফিটনেস সমস্যা, বিশেষ নায়িকা প্রীতি র অভিযোগ খোদ সাধারণ দর্শক মহল থেকেই আসা শুরু করে। এই বছর মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমার সংখ্যা ছিল ১৮ টি।
২০১১ : এই বছরের মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমাগুলোর সঙ্গে দর্শক চাহিদার প্রত্যাশা না মিটায় কোনো ছবিই বড় সাফল্য পায়নি। শাকিব অভিনীত সিনেমাগুলোর মধ্যে মনের জ্বালা, তোর কারণে বেঁচে আছি ,টাইগার নাম্বার ওয়ান-সহ কিছু ছবি বাণিজ্যিক সফলতা পায়।
মাটির ঠিকানায় তাঁর অভিনয় বেশ প্রশংসিত হয়, ছবিটিও বেশ বাণিজ্যিক সফল হয়। পূর্বের অভিযোগ গুলো তিনি না খন্ডিয়ে নিজের মত করেই এগিয়ে চলছিলেন। মালেক আফসারীর ‘মনের জ্বালা’য় প্রথম প্লেব্যাক করেন। এই বছর তাঁর মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমার সংখ্যা ১৪টি পাশাপাশি ঘোষণা দেন বছরে অভিনীত সিনেমার সংখ্যা কমিয়ে দিবেন।
২০১২ : ‘খোদার পরে মা’ সিনেমা দিয়ে দ্বিতীয়বারের মত জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন,সিনেমাটিও ছিল দারুণ ব্যবসাসফল। এছাড়া মাই নেম ইজ সুলতান, এক টাকার দেনমোহর, এক মন এক প্রাণ,সন্তানের মত সন্তান-সহ মোট সিনেমা মুক্তি পায় ১৩ টি। ‘আই লাভ ইউ’ সিনেমার এলব্যাম সফল হলেও সিনেমাটি ফ্লপ হয়। দর্শকদের থেকে অভিযোগ গুলো দিন দিন আরো প্রকট হয়ে উঠে। ডন নাম্বার ওয়ান-সহ বেশকিছু সিনেমা দেখে তাঁর যে শক্ত ভক্তকূল তাঁরা পর্যন্ত সমালোচনা করতে থাকেন।
২০১৩ : এই বছর তাঁর অভিনীত সিনেমাসমূহের মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত ছিল ‘পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেমকাহিনী’,এই সিনেমায় তাঁর বিপরীতে ছিলেন জয়া আহসান। প্রচারে ভিন্নতা আনার কারণে সিনেমাটি বেশ আলোচনায় ছিল,বেশ ভালো ব্যবসা করে।
এই বছরেই মুক্তি পায় মাহিয়া মাহির বিপরীতে একমাত্র সিনেমা ‘ভালোবাসা আজকাল’,জাজ মাল্টিমিডিয়ার সঙ্গেও ছিল এটি প্রথম ছবি। অনেকদিন নানা কারনে আটকে থাকার পর মুক্তি পায় আলোচিত ছবি ‘দেবদাস’, সিনেমাটি দর্শকদের অত্যন্ত হতাশ করে। দেবদাসের মত বিখ্যাত চরিত্রটির ওজন বুঝতে পারেননি শাকিব খান, বেশ সমালোচিত হন। সব মিলিয়ে এই বছর মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমার সংখ্যা ১১ টি।
২০১৪ : বছরের সশুরুতে ‘রাজত্ব’ সিনেমা দিয়ে নতুনভাবে আলোচনায় এসেছিলেন বটে তবে সেটা ফলপ্রসু হয়নি। ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মত প্রযোজনায় আসেন শাকিব খান। অপু বিশ্বাস ও ববিকে নায়িকা বানিয়ে নির্মিত ‘হিরো- দ্য সুপারস্টার’ বেশ বাণিজ্যিক সফল হলেও নকল গল্পের জোড়াতালি ও দূর্বল নির্মাণের কারণে সমালোচনার মুখে পড়ে। মুক্তিপ্রাপ্ত অন্যান্য ছবিগুলোর দশাও ছিল একই রকম।
২০১৫ : ‘আরো ভালোবাসবো তোমায়’ সিনেমার জন্য তৃতীয়বারের মত জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন, তবে এই পুরস্কার নিয়ে দর্শক মহলে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। সবচেয়ে বেশি ব্যবসা করে অপু বিশ্বাসের সঙ্গে ‘লাভ ম্যারেজ’। শাকিবের একমাত্র মুক্তিযুদ্ধের ছবি ‘এইতো প্রেম’ প্রায় অর্ধযুগ পর মুক্তি পায়। এই ছবিটিও দর্শকদের ভীষণ ভাবে হতাশ করে। দর্শকদের সমালোচনা আরো বাড়িয়ে দেয় ‘রাজাবাবু’র মত অতি দূর্বল সিনেমার মুক্তির পর। এই বছর শিল্পী সমিতির নির্বাচনে সভাপতি নির্বাচিত হন।
২০১৬ : প্রায় অর্ধযুগের দৈন্যতা কাটিয়ে জাজ মাল্টিমিডিয়া ও ভারতের এসকে মুভিজের তত্ত্বাবধানে ‘শিকারি’ সিনেমা দিয়ে দারুণভাবে প্রত্যাবর্তন করেন শাকিব খান। এর আগে যৌথ প্রযোজনার ছবি করলেও এই ছবিটি দিয়ে তিনি অত্যন্ত আলোচিত হন। এফডিসি কেন্দ্রিক নির্মাতাদের দূর্বলতা ছাপিয়ে দর্শকরা এই নব শাকিবকে ভালোভাবে গ্রহণ করে, সিনেমাটি বড় রকমের সাফল্য পায়। এই সিনেমা দিয়ে দর্শক জরিপে বেশ প্রতিদ্বন্ধিতার মধ্য দিয়ে সপ্তমবারের মত মেরিল প্রথম আলো পুরস্কার লাভ করেন।
বাকি সিনেমাগুলোর মধ্যে ‘রানা পাগলা-দ্য মেন্টাল’ মুক্তির আগে আলোচিত হলেও সেভাবে সাড়া ফেলেনি, সম্রাট ছবিটিরও একই চিত্র, রাজা ৪২০ ও পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেমকাহিনী ২ করে ব্যাপক সমালোচিত হন। এইদিকে অপু বিশ্বাসের হঠাৎ অর্ন্তধান হয়ে যাওয়ার কারনে প্রশ্নের মুখে পড়ে শাকিব খান। অপু বিশ্বাস আড়ালে চলে যাবার পর ‘বসগিরি’ ছবিতে চুক্তিবদ্ধ হন সংবাদ উপস্থাপিকা বুবলী,পা শাপাশি ‘শ্যূটার’ ছবিতেও চুক্তিবদ্ধ হয়। এরপর ই দুইজনের সম্পর্কের গুঞ্জন শুরু। বসগিরি হিট হলেও শ্যূটার ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে।
২০১৭ : আগের বছরের ব্যাপক সাফল্যের সুবাদে একই প্রযোজনা সংস্থার ব্যানারে যৌথ প্রযোজনায় ‘নবাব’ সিনেমায় অভিনয় করেন। এটি পূর্বের ছবি থেকে আরো বেশি ব্যবসা করে, যদিও একাধিক সিনেমার গল্পের মিশ্রণের কারণে সমালোচিত হয়। জাজের সিনেমা সঠিকভাবে যৌথ প্রযোজনা হয় না, যার কারনে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র মহল থেকে প্রতিবাদ আসে। শাকিব স্বাভাবিক ভাবেই নবাব সিনেমাটিকে সার্পোট দেন, যার কারণে শুরু হয় দ্বন্ধ।
শিল্পী সমিতির নির্বাচনে বিতর্ক ভূমিকা পালন করেন, এক পর্যায়ে এফডিসি থেকে নিষিদ্ধ পর্যন্ত হয়। ‘তোর প্রেমেতে অন্ধ হলাম’ ও ‘না জানি কোন অপরাধে’র গান সমৃদ্ধ ‘সত্তা’য় অভিনয় করে সমাদৃত হন শাকিব খান, এছাড়া মুক্তি পায় রাজনীতি, রংবাজ, অহংকার সিনেমা। তবে বড় ধাক্কাটা পান একটি টিভি চ্যানেলে সন্তান-সহ অপু বিশ্বাসের লাইভে আসা নিয়ে। ব্যাপক ভাবে সমালোচিত হন তিনি, সন্তানকে স্বীকৃতি দিলেও অপু বিশ্বাসের সঙ্গে বিচ্ছেদ ঘটে।
২০১৮ : এই বছরটা সুপারস্টার শাকিব খানের জন্য সুখকর ছিল না। মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমার মধ্যে কোনো ছবিই খুব ভালো ব্যবসা করতে পারেনি। ‘ক্যাপ্টেন খান’ ছবিটা সন্তোষজনক ব্যবসা ছিল কিছুটা, সুপারহিরো প্রত্যাশামাফিক ছিল না। বরং আমি নেতা হবো’র মত দুর্বল সিনেমায় অভিনয় করে নিন্দিত হন। তবে সাফটায় মুক্তি পাওয়া কলকাতার ছবি ‘ভাইজান এলো রে’ বেশ ভালো চলেছে বলে জানা যায়, চালবাজ ও নাকাব সেভাবে সাড়া ফেলেনি।
২০১৯ : প্রায় পাঁচ বছর বিরতি দিয়ে আবার তিনি প্রযোজনায় এসেছেন। মালেক আফসারীর পরিচালনায় সিনেমার নাম ‘পাসওয়ার্ড’,আসন্ন ঈদে ছবিটি মুক্তি পাবে। এই নিয়ে বেশ প্রচারণা চালাচ্ছেন তিনি, এটি ঈদের সবচেয়ে আলোচিত ছবি। নায়িকা হিসেবে আছেন এই মুহূর্তে তাঁর সবচেয়ে আস্থাভাজন নায়িকা বুবলি। একই সাথে মুক্তি পাবে ‘নোলক’, সিনেমাটি শুরু থেকেই আলোচনায় ছিল। মাঝে বিতর্ক উঠলেও সিনেমাটি অবশেষে মুক্তি পাচ্ছে, নায়িকা হিসেবে আছেন ববি। এছাড়া এখনো শ্যুটিং শুরু না হলেও একাধিক ছবিতে চুক্তিবদ্ধ আছেন। শ্রীঘ্রই কাজ শেষ করে মুক্তি দিবেন ছবিগুলো।
আজ বাংলা চলচ্চিত্রের এখন পর্যন্ত সর্বশেষ সুপারস্টার শাকিব খানের ২০ বছর পূর্ণ হল। এখনো তিনি উজ্জ্বল আছেন,হল মালিকরা তাঁর সিনেমা চালিয়ে স্বস্তির নি:শ্বাস ফেলেন,নিজের যোগ্যতায় গড়েছেন দারুন ভক্তশ্রেণী। তবে একজন সুপারস্টারের যে মনোভাব নিয়ে চলা উচিত তিনি সেগুলো করছেন না, নানা কারণে বিতর্কিত হচ্ছেন। এইগুলি এড়িয়ে চললেই তিনি নিজেকে আরো গ্রহণযোগ্য করে তুলতে পারতেন। আশা করি নিজেকে শুধরানোর চেষ্টা করবেন।
বাংলা চলচ্চিত্রের একজন দর্শক হিসেবে তাঁর কাছে প্রত্যাশা,গত ২০ বছরে অসংখ্য সুপারহিট সিনেমার নায়ক আপনি। এই মুহুর্তে এসে এমন কিছু সিনেমা করুণ, যেগুলো আপনাকে আজ থেকে যুগ যুগ পর আপনাকে স্বাতন্ত্র্য করে রাখবে।