সিকোয়েন্সে সিকোয়েন্সে পূর্ণিমা
এক.
সুভা রাতের আঁধারে বেরিয়ে আসে ঘর থেকে। হাঁটতে থাকে একা। তার জায়গায় অন্য কাউকে দেখার যন্ত্রণা সহ্য করার থেকে নিরুদ্দেশ যাত্রাই ভালো। ভাষাবিশিষ্ট বউ হতে না পারার বাস্তবতায় সে স্ত্রীর অধিকার হারায় সুভা। গান বাজতে থাকে সুভা বা পূর্ণিমার অনবদ্য স্যাড এক্সপ্রেশনে। বাজতে থাকে রবীন্দ্রসঙ্গীত –
‘আমার সকল দুখের প্রদীপ
জ্বেলে দিবস গেলে করব নিবেদন
আমার ব্যথার পূজা হবে সমাপণ’
ছবি: সুভা
দুই.
চন্দরার (পূর্ণিমা) ফাঁসির সময় ঘনিয়ে এসেছে। ছিদাম (রিয়াজ) দেখা করতে চায়। চন্দরাকে ডাকার জন্য যায়, জানতে চায় সে দেখা করবে কিনা চন্দরার উত্তর ‘মরণ’। স্বামীর মিথ্যা জবানবন্দিতে স্ত্রীর ফাঁসি হচ্ছে তাই চন্দরা মরণকেই ভালো মনে করে। চন্দরা চরিত্রে পূর্ণিমার অভিনয় ছিল অসাধারণ।
ছবি: শাস্তি
তিন.
রিয়াজ শিল্পী আর পূর্ণিমা তার প্রেমে পড়েছে। কনসার্টে গেছে গান শুনতে। রিয়াজ গাইছে –
‘ভালোবাসব বাসব রে বন্ধু তোমায় যতনে
আমার মনের ঘরে চান্দের আলো চুইয়া চুইয়া পড়ে’
রিয়াজের রোমান্টিকতার সাথে দর্শকসারিতে পূর্ণিমার মিষ্টি হাসির রোমান্টিকতা মিলেমিশে একাকার।
ছবি: হৃদয়ের কথা
চার.
ছোটবেলার ভালোবাসার বেনুকে (রিয়াজ) খুঁজে পায় আনু (পূর্ণিমা) কিন্তু পরিচয় দেয় না। পরিচয় না দিয়ে ভালোবাসে। ‘চুপি চুপি কিছু কথা’ গানে রিয়াজ পেছনে বসা আর পূর্ণিমার চুল ঠিক করে দিচ্ছিল রিয়াজের বোন। পূর্ণিমা আয়নার মধ্যে কৌশলে পেছনে বসা রিয়াজকে দেখছে। একবারের পর দুইবার দেখার সময় রিয়াজের বোন খেয়াল করে আর বোঝায় পেছনে কি। বোন ঠিকই বুঝতে পারে তার ভাইকেই সে ভালোবাসে। পূর্ণিমার তখনকার অভিনয় যে কাউকে রোমান্টিক করে দেবে।
ছবি: মনের মাঝে তুমি
পাঁচ.
পূর্ণিমা তার ঘরে শুয়ে আছে। ছাদ দিয়ে দোলনা তৈরি করে রিয়াজ দুলছে। পূর্ণিমা টের পেয়ে বিস্মিত। তারপর ফুলের বৃষ্টিতে পূর্ণিমা সিক্ত হতে থাকে। ফুল তো নয় যেন ভালোবাসাই ঝরে পড়ছে। এ এক অসাধারণ রোমেন্টিক দৃশ্য। পূর্ণিমার রোমান্টিক এক্সপ্রেশনগুলো দৃশ্যটিকে রঙিন করে তোলে।
ছবি: আকাশছোঁয়া ভালোবাসা
ছয়.
রিয়াজকে আগে থেকেই ভালোবাসত পূর্ণিমা কিন্তু রিয়াজ ভালোবাসে শাবনূরকে। এটা জানার পর পূর্ণিমা বিদেশে যাবার জন্য সিদ্ধান্ত নেয়। যাবার দিন চিঠি পাঠায় রিয়াজের কাছে সেটা শাবনূর পড়ে এবং রিয়াজকে শাবনূরই এয়ারপোর্টে নিয়ে যায় পূর্ণিমার সাথে দেখা করার জন্য। পূর্ণিমা কষ্ট নিয়ে চলে যাচ্ছে দেখে শাবনূর তার হাতেই তুলে দিতে চায় রিয়াজকে তখন পূর্ণিমা বলে-‘যে ভালোবাসা আমার কাছে এমনি এমনি আসেনি কোনো দানের মাধ্যমে তা পাওয়াতে কোনো আনন্দ নেই সে তোমারই থাকুক।’ তারপর পূর্ণিমা চলে যায়। স্যাক্রিফাইসিং রোলে পূর্ণিমার অভিনয় হৃদয় স্পর্শ করে।
ছবি: নিঃশ্বাসে তুমি বিশ্বাসে তুমি
সাত.
মাজেদ (রিয়াজ) রাজাকার সাব্যস্ত হবার পর তাকে হত্যা করা হয় এবং সেজান (রিয়াজ) তার জায়গায় আসে। পূর্ণিমা সেজানকেই নিজের স্বামী মনে করে এবং আচরণেও পরিবর্তন দেখতে পায়। মাজেদের রাজাকার পরিচয় জানাজানি হয়ে যায় তখন সেজানকে মেরে ফেলার প্রস্তুতি নেয় গ্রামের মাথারা। সেজান সব সত্য বলে মাহফুজকে। মাহফুজ পূর্ণিমাকে সব সত্য বলে দেয়ার জন্য বলে কিন্তু রিয়াজ রাজি হয় না কারণ জানলে সে কষ্ট পাবে। পূর্ণিমাকে তখন অশ্রুসজল চোখে দেখা যায় জানালার ধারে। সব সত্য জেনে যায়। অসাধারণ অভিনয়।
ছবি: মেঘের পরে মেঘ
আট.
পূর্ণিমার বোনকে আত্মহত্যা থেকে বাঁচিয়ে তার স্বামী সেজে রিয়াজ পূর্ণিমার বাড়িতেই যায়। পূর্ণিমার সাথে রিয়াজের প্রেম তার আগেই হয়েছে। পূর্ণিমা তাদের বাড়িতে গিয়ে রিয়াজকে দেখে কষ্ট পেয়ে দূরে থাকে। একদিন তার দাদু এটিএম শামসুজ্জামান গল্পে গল্পে রিয়াজের অবস্থা তুলে ধরে তখন পূর্ণিমা বলে গল্পটা তার খুব পরিচিত মনে হয়। রিয়াজ তখন পেছন থেকে বলে গল্পের ছেলেটা সে। পূর্ণিমার ভুল ভেঙে যায়। ঐ সময় রিয়াজের দিকে ছুটে যাওয়া পূর্ণিমার অভিনয় ছিল অসাধারণ।
ছবি: জামাই শ্বশুর
নয়.
পূর্ণিমা নেশা করে, নেশার জন্য টাকা চায় অনেকের কাছে। বাবার কাছে না পেলে মারুফের কাছ থেকে টাকা নেয়। পূর্ণিমার মাদকাসক্ত আচরণ একদম বাস্তব।
ছবি: ওরা আমাকে ভালো হতে দিলো না (জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত)
দশ.
রিয়াজ-পূর্ণিমা পরস্পরকে ভালোবাসে কিন্তু দেখেনি। অনেকদিন পর প্রথমবান রিয়াজ দেখা করতে আসছে। পূর্ণিমা পথের মধ্যে ফুলের বিছানায় শুয়ে আসে। ফুল দিয়ে সে ঢাকা। রিয়াজ এসে মুখের ওপর থেকে ফুলগুলো সরিয়ে দেয়। তারপর বলে-‘কী অপূর্ব! চোখ খোলো আমি তোমাকে দেখলাম এবার তুমি আমাকে দেখবে না?’ চোখ খোলে পূর্ণিমা। ফুলের পাপড়িতে ঢাকা পূর্ণিমার মুখ কী যে রোমান্টিক তখন দেখতে!
ছবি: চিরদিন আমি তোমার
এগারো.
এই বাগদিপাড়ার সোবাই হামাকে চায়রে ভোলা আর তু হামাকে চাইলি না?
পূর্ণিমার ব্যতিক্রমী চরিত্র ছিল কুন্তি। ভিন্ন ভাষায় কথা বলা আর অন্যরকম অভিনয়ে ছবির আকর্ষণীয় চরিত্রে পরিণত হয়েছে।
ছবি: রাক্ষুসী
বারো.
শুধু তার গান আসে ভেসে
বাতাসে বাতাসে…♥♪
গানে আরিফিন শুভকে ভালোবেসে মনে করে লালপরী পূর্ণিমা হাতটা সামনে বাড়িয়ে দেয় আর সে দৃশ্য যেন অসহ্য রোমান্টিক।
ছবি: ছায়াছবি