Select Page

শব্দ শুনেই বলে দিতে পারবেন- এটা বাঙলাদেশের সিনেমা

শব্দ শুনেই বলে দিতে পারবেন- এটা বাঙলাদেশের সিনেমা

 

নব্বই দশকে এসে স্টিরিওটাইপ কাস্টিংয়ের উদাহরণ হয়ে যান অনেক কালজয়ী সিনেমার অভিনেতা আনোয়ার হোসেন

যদিও বলছি বাঙলাদেশের সিনেমা মূলত ভারতীয় সিনেমার অতি দুর্বল সংস্করণ। তবে এই কথা অস্বীকার করার উপায় নেই, বাঙলাদেশের সিনেমার মৌলিক বৈশিষ্ট্যও আছে। পৃথিবীর আর কোন দেশের সিনেমাতে আপনি এমনটা দেখতে পাবেন না। বিশেষ করে আমি ১৯৯০ থেকে পরবর্তী তিন দশকের সিনেমার কথাই বলতে চাই।

আপনি যদি নব্বই দশকের দুই-তিনটা বাঙলাদেশের সিনেমা দেখে নিতে পারেন, তবে পৃথিবীর যে কোন প্রান্তেই আপনি থাকেন না কেন, সিনেমার শব্দ শুনেই বলে দিতে পারবেন- এটা বাঙলাদেশের সিনেমা। যেমন ধরুন, নায়ক হয়তো তার কষ্টের শৈশবের কথা বলছে, কিংবা প্রেমিকাকে নিজের অসহায়ত্বের কথা বলছে, তো সে কথার পেছনে আ..আআআআ.. বলে একটা নারী কণ্ঠ বেদনার মিউজিক সমেত বেজে উঠবে। এমন আবহ সঙ্গীত আপনি পৃথিবীর আর কোন দেশের সিনেমায় পাবেন না।

তারপর ধরেন, সিনেমার মারামারির যে শব্দ! ঢিশ্যুম ঢিশ্যুম কিংবা ইয়া ঢিশ্যুমারি। এই ধরণের শব্দ আর কোন দেশের সিনেমায় আপনি শুনবেন না। মারামারির এই শব্দগুলো প্রায় সব সিনেমায় একই হলেও শহীদুল ইসলাম খোকনের সিনেমায় এ শব্দগুলো ছিলো একটু ব্যতিক্রম। যেমন ঘুষি দিলে আর আরদের সিনেমায় ঢিশ্যুম শব্দ হলেও, শহীদুল ইসলাম খোকনের সিনেমায় ধুম করে শব্দ হতো।

আর একটা বিষয় আপনি খেয়াল করলে দেখবেন— বাঙলাদেশের সিনেমার নায়কগুলো একই রকম নায়ক, আর ভিলেনগুলোও যুগ যুগ ধরে একই রকম ভিলেন থেকে গেছে। সিনেমার প্রথম থেকেই আপনি দেখবেন, যে ভিলেন, সে একই রকমভাবে সিনেমার শেষ অবধি ভিলেনগিরি করে গেছে। ফলত নায়কগুলো চিরকাল নায়ক, ভিলেনগুলো চিরকাল ভিলেন থেকে যায়, অভিনেতা হতে পারেনি।

এমন স্টেরিওটাইপ! ধরেন নায়কের মা যদি ভালো হয় এবং গরীব হয়, তবে সে চরিত্রে থাকবে খালেদা আক্তার কল্পনা, আর যদি ধনী হয় এবং মন্দ তবে থাকবে রীনা খান। এইভাবে সিনেমাগুলোতে প্রত্যেকের চরিত্র ফিক্সড দেখা যায়। ব্যতিক্রম অতি অল্প। তো ওইসব সিনেমার নির্মাতারা শুধু মেধাহীন, অলস, অশিক্ষিতই ছিলো না, ছিলো চরম পর্যায়ের নির্দয়ও। না হলে এক আনোয়ার হোসেনকে কতবার মেরে ফেলেছে ওরা। যেন আনোয়ার হোসেনের জন্মই হয়েছিলো সিনেমায় কাঁদতে কাঁদতে ভেঙে পড়ে মরে যাওয়ার জন্য। প্রথম প্রথম দুর্ঘটনায়, গাড়ি চাপা পড়ে আনোয়ার হোসনকে মরতে দেখলেও, শেষে এতোটুকু আয়োজনও তারা আনোয়ার হোসেনের জন্য রাখেনি। বেচারাকে সিনেমার পর সিনেমায় বুক চেপে হার্ট অ্যাটাক করে মরে যেতে হয়েছে।


Leave a reply