‘সিসি ক্যামেরায় সালমানকে দেখেই বুঝলাম হিরো পেয়ে গেছি’, মুখোমুখি সোহানুর রহমান সোহান
এই সময়ের বাংলাদেশের নামী চলচ্চিত্র পরিচালকদের অন্যতম সোহানুর রহমান সোহান। একের পর এক হিট ছবি উপহার দিয়ে যাচ্ছেন ইন্ড্রাস্টিকে। তার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান হলো তার হাত ধরে চলচ্চিত্রে এসেছে এক ঝাঁক নতুন মুখ। সেই সব মুখ চলচ্চিত্রাঙ্গনকে শাসনও করছে অনেকটা সময়। বর্তমানে তরুণদের হাতে কলমে চলচ্চিত্রের বিভিন্ন বিষয় শিক্ষা দেয়ার জন্য প্রতিষ্ঠা করেছেন ‘ইউনির্ভাসাল পারফর্মিং আর্ট’। সেখান থেকে অভিনয়, পরিচালনা, চিত্রগ্রাহনসহ নানান বিষয়ে সার্টিফিকেট কোর্স করানো হবে। এর পাশাপাশি নতুন চারটি মুখ নিয়ে তিনি তৈরি করছেন নতুন চলচ্চিত্র ‘ভালোলাগার চেয়ে একটু বেশি’। এছাড়া পালন করছেন পরিচালক সমিতির সহ-সভাপতির দায়িত্ব।
সম্প্রতি সালমান শাহের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে বাংলা মুভি ডাটাবেজ (বিএমডিবি)-র পক্ষ থেকে এই গুনী পরিচালকের মুখোমুখি হন নাজমুল হাসান দারাশিকো। সে সাক্ষাতকারে তিনি সালমান শাহ, চলচ্চিত্রের বর্তমান অবস্থা ও ভারতীয় চলচ্চিত্র আমদানিসহ নানা বিষয়ে কথা বলেন। নিচে পাঠকদের জন্য তার চুম্বক অংশ তুলে দেয়া হলো-
কেয়ামত থেকে কেয়ামত ছবি তৈরীর গল্প বলুন-
আমি চলচ্চিত্রে কাজ শুরু করেছিলাম শিবলি সাদিকের অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে। আমার ওস্তাদও নতুন মুখ নিয়ে কাজ করতেন। নতুন ছেলেমেয়েদের খুঁজে বের করে তাদেরকে প্রস্তুত করে তারপর ছবির কাজ শুরু করতেন। তাদেরকে ভালোভাবে তৈরি করা হত, তারাও তৈরি হত, ফলে নিজের মত করে কাজ করা সম্ভব হত। শিষ্য হিসেবে আমিও উনার পথ অনুসরণ করলাম।
সেসময় আমরা যাদের নিয়ে ছবি বানাতাম – রোমান্টিক ছবি হোক বা অ্যাকশন, তাদের বয়স পঁচিশের বেশী ছিল। দেখা যেত ত্রিশ বছরের কেউ স্টুডেন্ট চরিত্রে অভিনয় করছে, কিন্তু এই বয়সে কেউ স্টুডেন্ট থাকে না। এই ব্যাপারটা আমার চোখে লাগত। আমিও চাইতাম যেন চরিত্রের সাথে মানানসই অল্প বয়সী অভিনেতা জোগাড় করে নিতে, প্রয়োজনে তৈরি করে নিতে হবে। আমার ছবির জন্য আমি প্রথমে শাবনাজ-নাঈমকেই নিতে চেয়েছিলাম। ছবিটা করার জন্য আমি যখন তাদের কাছে অফার নিয়ে গেলাম তখন তারা ফিরিয়ে দিল। আমি সাইনিং মানিও নিয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু সেসময় তারা তাদের ছবি ‘দিল’ মুক্তির জন্য অপেক্ষা করছিল। তাদের ইচ্ছা ছিল ছবি মুক্তি পেলে তাদের পারিশ্রমিক কিছুটা বাড়াবে। এ কারণে তারা ছবিটি করতে রাজি হল না। আমার মনটা খারাপ হয়ে গেল।
আমি প্রযোজকের সাথে কথা বললাম। তিনি বললেন – সাইনিং মানি আমার কাছেই রেখে দিতে এবং খুঁজে দেখতে নতুন কাউকে পাওয়া যায় কিনা। আমারও জিদ চেপে গেল। আমি খুঁজতে লাগলাম নতুন কাউকে পাওয়া যায় কিনা। তখন একদিন দৈনিক বাংলা পত্রিকায় একটা মেয়ের ছবি দেখলাম – মাথার চুল সামনের দিকে ঢেকে রেখেছে। আমার পাশে ফটোগ্রাফার বন্ধু ছিল, তাকে দেখালাম। সে বলল মেয়েটাকে সে দেখেছে – তার এই একটা লুকই ভালো। কিন্তু আমার মাথায় ঘুরতে লাগল সেই মেয়ের চেহারা।
মুশফিকুর রহমান গুলজার তখন সাপ্তাহিক সিনেমা পত্রিকায় কাজ করে। সেই প্রত্রিকার সূত্র ধরে একদিন আমরা মৌসুমীদের বাসায় গেলাম। আমার পরিচয় গোপন রেখেই কথাবার্তা বললাম, সিনেমায় কাজ করার আগ্রহ আছে কিনা জানতে চাইলাম। দেখলাম সে খুব দ্বিধান্বিত – করবে কি করবে না নিজেও নিশ্চিত না। আমরা চলে এলাম। তারপর গুলজারকে বললাম টেলিফোনে আমার পরিচয় দিয়ে জানতে আমার ছবিতে কাজ করতে চায় কিনা। গুলজার কথা বলল – মৌসুমী রাজি না। কিন্তু এই পরিচয়ের সূত্র ধরে মৌসুমীদের সাথে আমাদের একটা সম্পর্ক তৈরী হয়ে গেল। ফোনে কথা হত, বাসায় যাওয়া হত, তার মা দাওয়াত করে খাওয়াতেন। দুই আড়াই মাস পরে একদিন গভীর রাতে মৌসুমীর ফোন পেলাম – হ্যা, সে রাজি। পরের রাতেই তাদের বাসায় গিয়ে মৌসুমীকে সাইন করিয়ে নিলাম।
মৌসুমীর গ্রুমিং চলতে লাগল, কিন্তু আমরা নায়ক খুজে পাচ্ছিলাম না। প্রাচী হোটেলে বসে আমরা ছেলে দেখি, কিন্তু পছন্দের কাউকে পাই না। একদিন প্রযোজক একটি ছবি দেখিয়ে বললেন – এই ছেলেটি কাজ করতে আগ্রহী। ছবি দেখে আমার খুব একটা পছন্দ হল না, কিন্তু যেহেতু প্রযোজক বলেছেন, তাই আমি তার ল্যান্ডফোন নাম্বার জোগাড় করে ফোন দিলাম। ফোন ধরল কেয়ারটেকার। বলল, ইমন বাসায় নেই। কখন ফিরবে জানে না। রাত করে ফিরে, কখনো কখনো ফিরেও না। যার রাতে বাসায় ফেরা ঠিক নেই তাকে সিনেমায় নেয়া কেমন হবে ভেবে আমি আগ্রহ হারিয়ে ফেললাম।
তখন ম্যাকডোনাল্ডস নামে একটা রেস্টুরেন্ট ছিল। একদিন সেখানে বসে এরকম এক ছেলের সাথে কথা বলছিলাম। হঠাৎ কি মনে হল আমি রেস্টুরেন্ট থেকে ইমনদের বাসায় ফোন করলাম। তখন দেড়টা-পৌনে দুটা বাজে। আমি জিজ্ঞেস করলাম আমার সাথে এখন দেখা করতে পারে কিনা। সে বিশ মিনিট সময় লাগবে বলল এবং এই সময়ের মাঝেই পৌছে গেল। সে যখন হোটেলে ঢুকছে তখন আমি সিসি ক্যামেরায় তাকে দেখতে দেখতে বুঝে গেলাম সিনেমার জন্য হিরো আমি পেয়ে গেছি।
কথাবার্তা বলে ওখান থেকেই রিকশায় তাদের বাসায় গিয়ে ওর মার সাথে কথা বলে সিনেমার জন্য সাইন করিয়ে নিলাম। এভাবেই সালমান শাহ ও মৌসুমীকে নিয়ে কেয়ামত থেকে কেয়ামত ছবির কাজ শুরু হল।
সালমান শাহ নামকরণ কিভাবে হল?
ওর নাম হল শাহরিয়ার চৌধুরী ইমন। কাজ শুরু করার পর ওর নাম নিয়ে খেলতে শুরু করলাম। খেলতে খেলতেই শাহরিয়ার থেকে শাহ, শাহরিয়ার ইমন থেকে মিলিয়ে সালমান – সব মিলিয়ে সালমান শাহ। মৌসুমীর নাম আমরা পাল্টে শারমিন রেখেছিলাম, কিন্তু মৌসুমীর নানী আমাদের অনুরোধ করলেন নাম যেন না পাল্টাই। নামটা তার খুব পছন্দের ছিল। তাই মৌসুমীর নাম আর পাল্টানো হল না, মৌসুমী নামেই সে পরিচিত হল।
মৌসুমীকে নিয়ে আপনি পরেও ছবি নির্মান করেছেন কিন্তু সালমান শাহ-কে নিয়ে আর কোন ছবি নির্মান করেন নি কেন?
আসলে কেয়ামত থেকে কেয়ামত মুক্তির পর একটা ঘটনা ঘটে যার ফলে সালমানকে নিয়ে আর কোন ছবি নির্মাণে আগ্রহ বোধ করি নি। কেয়ামত থেকে কেয়ামত যখন খুবই জনপ্রিয়তা পেল, তখন বরিশালে অভিরুচি সিনেমা হলের পক্ষ থেকে আমাদের একটা সম্বর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হল। আমরা সালমান শাহ, তার মা, মৌসুমি, তার মা, সাংবাদিকসহ বরিশালে গেলাম। অভিরুচি সিনেমার মালিক জানালেন, এক বাসায় কয়েকজনের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সালমান শাহ ও মৌসুমী এবং তাদের পরিবারকে সেখানে পাঠিয়ে আমরা হোটেলে সবার থাকার আয়োজন করছি এমন সময় ফোন এল। কি ব্যাপার? ঝামেলা হয়েছে। দ্রুত গেলাম সে বাসায়। গিয়ে দেখি ওখানে দুটো রুমের একটিতে অ্যাটাচড বাথরুম, অন্যটিতে অ্যাটাচড বাথরুম নেই। মৌসুমী এবং তার মা-কে অ্যাটাচড বাথরুমসহ রুমটি দেয়া হয়েছে বলে ঝামেলা হচ্ছে। আমি বললাম – যেহেতু মৌসুমী ও তার মা দুজনেই মেয়ে – তারা অ্যাটাচড বাথরুমসহ রুমে থাকলেই বেশি ভালো। সালমানের মা প্রয়োজনে সে বাথরুম ব্যবহার করতে পারে। কিন্তু সালমান যেহেতু পুরুষ তাই অ্যাটাচড বাথরুম না হলেও চলবে। কিন্তু সেসময় সালমান খুব দুর্ব্যবহার করে আমার সাথে। আমি খুব কষ্ট পেয়েছিলাম। ফলে অনুষ্ঠান ভালোভাবে শেষ করে ঢাকায় ফিরে এলেও সালমানকে নিয়ে ছবি নির্মানে আগ্রহ বোধ করি নি।
বছর কয়েক পড়ে সালমানের মৃত্যুর কয়েকমাস আগের ঘটনা। শুটিং করতে গিয়ে সালমান আহত হয়েছিল। তার সাথে দেখা করতে গেলাম। তখন সালমান আমার হাত ধরে বলেছিল – ‘সোহান ভাই, মান অভিমান তো অনেক হল। এইবার বাদ দেন। আপনার ছবিতে অভিনয় করতে চাই আমি’। বেঁচে থাকলে সালমানকে নিয়ে আবারও কাজ করতাম। এই যে, অনন্ত ভালোবাসা সিনেমা যেটা শাকিব করল, সেই সিনেমাটিই সালমানকে নিয়ে করার ইচ্ছা ছিল।
সালমান শাহ’র মৃত্যুর ষোল বছর পরেও তার জনপ্রিয়তা আকাশচুম্বী। পরিচালকের দৃষ্টিকোণ থেকে এর পেছনে কি কারণ বলে আপনি মনে করেন?
পরিচালকের দৃষ্টিকোণ থেকে যদি বলি – উদাহরণ দিয়ে বলি। গত পাঁচ সাত বছরে শাকিব খানের সামনে দাড়াবার মত কেউ ছিল না। এই শাকিব খান যদি পাঁচ বছর আগে মারা যেত তাহলে সারাদেশে আলোড়ন তৈরি হত। সে সময় সারাদেশে শাকিবের প্রতি ভালোবাসা ছিল। এখন সময়ের ব্যবধানে এই ভালোবাসা কিছুটা পড়তির দিকে। এখনো যদি শাকিব খান সব ছবি করে, এটা শাকিব খানকে উদ্দেশ্য করেই বলছি, যদি সে সিলেক্টিভ না হয়, নিজের জনপ্রিয়তাকে ধরে রাখার মত বেছে বেছে ছবি না করে তাহলে তার জনপ্রিয়তা আস্তে আস্তে কমবে। বোম্বের দিকে তাকালে দেখা যায় আমির খান, সালমান খান বা শাহরুখ খানরা কিন্তু এখন বেছে বেছে ছবি করছে। আমির খান বছরে-দুই বছরে একটা ছবি করে, দর্শকরাও সারা বছর ধরে সে ছবির জন্য অপেক্ষা করে। শাকিবেরও উচিত এখন গ্যাপ দিয়ে দিয়ে ছবি করা। তার ছবির জন্য চাহিদা তৈরী করে সে চাহিদা পূরণ করা।
তো, সালমান শাহ যখন মারা গেল তখন তার জন্য সারা বাংলাদেশের মানুষের ভালোবাসা ছিল। সে গ্যাপ দিয়ে দিয়ে ছবি করছিল, দর্শকের চাহিদা তৈরী করে তা পূরণ করছিল। ফলে হঠাৎ মারা যাওয়ায় তার জনপ্রিয়তা কমার সুযোগ পায় নি, যেটা শাকিবের ক্ষেত্রে তৈরী হচ্ছে।
সালমান ভক্তরা আশা করেন সালমান শাহর নামে কোন সড়ক বা ফ্লোর বা কোন কিছুর নামকরণ করা হোক। মান্না’র নামে ফ্লোর আছে, জসিমের নামে আছে, কিন্তু সালমানের নামে কোন কিছুর নামকরণ করা হয় নি। কেন?
সালমান একজন সুপারস্টার। কিন্তু মান্না বা জসিমের সাথে তার তুলনা করা চলে না। বাংলাদেশের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে মান্নার অবদান অনেক, এটা কেউ অস্বীকার করতে পারে না। জসিমের অবদানও অন্যরকম। তার সাথে মান্না বা সালমান শাহর তুলনা চলে না, সে তাদের চেয়ে সিনিয়র। তাছাড়া সালমানের অনেক নেগেটিভ দিক সম্পর্কেও আমরা জানি, যেটা দর্শকরা জানে না। তারপরও কোন সরকার যদি কখনো মনে করে সালমান শাহর নামে কোন কিছুর নামকরণ করা হোক, তবে করতে পারে।
হে পরিচালক, সালমানের নেগেটিভ থাকতে পারে, মানুষ হিসেবে এটা অস্বাভাবিক না। শেষ প্রশ্নের জবাবে আপনার মতামতে স্পষ্ট যে আপনারা সালমানের ব্যাপারে উদাসীন…
নইলে “তারপরও” শব্দটা ব্যবহার করতেন না…
* “নেগেটিভ দিক” হবে…
Negative dik takbe India r Salman Khan er teke ki besi chilo? Indian ra tho Murderer Salman k Puja kore ar amra Akta floor er nam ditei kapi… faltu industry bd te shame
Faltu Director
Mr porichalok shoan apni Manna er sate salmanshar tulona korlen kintu salmanshar moto acting korte hole manna ke koiek koti bar jonmo nite hobe salman er acting sob somoy all time best amar mote manna josim salman er dharer kache o aste parbena
চোর রহমান তো দেখছি সালমানের নামে বিভিন্ন নেগেটিভ কথা বার্তা বলে গেলো … যাই হোক, চোর রহমান ভারতের সালমান খানের নামকে দুই ভাগ করলো … প্রথম ভাগ দিয়ে সালমান শাহ্, দ্বিতীয় ভাগ দিয়ে শাকিব খান … এই সব চোরের সাথে সালমান যে দ্বিতীয় বার আর ছবি করতে চাইনি এটিই বোধ হয় তার জন্য কাল হয়ে দাড়িয়েছিলো …