Select Page

সুভাষ দত্তের মৃত্যুবার্ষিকী রবিবার

সুভাষ দত্তের মৃত্যুবার্ষিকী রবিবার

Suvash-Datta

চলচ্চিত্র পরিচালক, অভিনেতা, প্রযোজক, চিত্রনাট্যকার ও শিল্প নির্দেশক সুভাষ দত্তের মৃত্যুবার্ষিকী রবিবার। ২০১২ সালের ১৬ নভেম্বর তিনি ঢাকায় মারা যান। বিএমডিবি পরিবারের পক্ষ থেকে তার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা।

সুভাষ দত্ত ১৯৩০ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি দিনাজপুরের মুনশিপাড়ার মামাবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈতৃক বাড়ি বগুড়ার চকরতি গ্রামে। তিনি পঞ্চাশের দশকের গোড়ার দিকে চলচ্চিত্র নির্মাণের কৌশল শিখতে বোম্বের একটি পাবলিসিটি স্টুডিওতে ৩০ টাকা মাসিক বেতনে কাজ শুরু করেন। ১৯৫৩ সালে ভারত থেকে ঢাকায় ফিরে যোগ দেন প্রচার সংস্থা এভারগ্রিনে। এর পর চলচ্চিত্রের পোস্টার আঁকার কাজ নেন। ১৯৫৬ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত দেশের প্রথম সবাক চলচ্চিত্র ‘মুখ ও মুখোশ’ এর পোস্টার ডিজাইনার ছিলেন তিনি। ১৯৫৮ সালে এহতেশামের ‘এ দেশ তোমার আমার’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। ষাটের দশকের শুরুর দিকে বহুল আলোচিত ‘হারানো দিন’ চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেন। এর পর চলচ্চিত্রে কৌতুকাভিনেতা হিসেবে অভিনয় করে প্রশংসা লাভ করেন।

১৯৫৭ সালে ওয়ারীতে ভারতীয় হাইকমিশনের উদ্যোগে একটি চলচ্চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। সেখানে দেখানো হয় সত্যজিৎ রায়ের ‘পথের পাঁচালী’। এটি দেখেই তিনি চলচ্চিত্র নির্মাণে অনুপ্রাণিত হন। ১৯৬৩ সালের মে মাসে নির্মাণ শুরু করেন ‘সুতরাং’। এটি ১৯৬৪ সালে মুক্তি পায়। এ ছবিতে তিনি নায়ক ছিলেন। তার বিপরীতে অভিনয় করেন নবাগতা কবরী। এটি বাংলাদেশের প্রথম চলচ্চিত্র হিসেবে আন্তর্জাতিক সম্মাননা লাভ করে। ১৯৬৮ সালে জহুরুল হক ও প্রশান্ত নিয়োগির লেখা কাহিনী নিয়ে ‘আবির্ভাব’ পরিচালনা করেন এবং এর একটি চরিত্রে অভিনয়ও করেন।

১৯৭১ সালে স্বাধীনতাযুদ্ধকালে ঢাকায় পাকিস্তানী সেনাবাহিনী একবার আটক করে সুভাষ দত্তকে। তবে কয়েকটি উর্দু ছবিতে অভিনয় করার সুবাদে পাকিস্তানী ক্যাপ্টেন তাকে ছেড়ে দেন। স্বাধীনতাযুদ্ধের পটভূমিতে নির্মিত ‘অরুণোদয়ের অগ্নিসাক্ষী’ তার নির্মিত অন্যতম সেরা ছবি হিসেবে বিবেচিত হয়। ১৯৭৭ সালে আলাউদ্দিন আল আজাদের বিখ্যাত উপন্যাস ‘২৩ নম্বর তৈলচিত্র’ অবলম্বনে ‘বসুন্ধরা’ নির্মাণ করেন। চলচ্চিত্রটি প্রশংসিত হয়। ১৯৭০ এর দশকের শেষদিকে ডক্টর আশরাফ সিদ্দিকীর লেখা গল্প ‘গলির ধারের ছেলেটি’ অবলম্বনে নির্মাণ করেন ‘ডুমুরের ফুল’। তার সর্বশেষ চলচ্চিত্র ‘ও আমার ছেলে’ ২০০৮ সালে মুক্তি পায়। এ ছাড়া তিনি বেগম রোকেয়ার জীবন ও কর্ম নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণের ইচ্ছাপোষণ করলেও তা পূরণ করে যেতে পারেননি। চলচ্চিত্র ছাড়াও সুভাষ দত্ত মঞ্চ নাটকে অভিনয় করেছেন।

তার পরিচালিত চলচ্চিত্র হলো- সুতরাং, আবির্ভাব, কাগজের নৌকা, পালাবদল, আলিঙ্গন. আয়না ও অবশিষ্ট, বিনিময়, আকাঙ্ক্ষা, বসুন্ধরা, অরুণোদয়ের অগ্নিসাক্ষী, ডুমুরের ফুল, সকাল সন্ধ্যা, ফুলশয্যা, আবদার, নাজমা, সবুজ সাথী, স্বামী-স্ত্রী এবং ও আমার ছেলে।

চলচ্চিত্রে অবদানের জন্য সুভাষ দত্ত অনেক পুরস্কার ও সম্মাননা লাভ করেন। ১৯৬৫ সালে ফ্রাংকফুর্ট চলচ্চিত্র উৎসবে ‘সুতরাং’ দ্বিতীয় শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রের পুরস্কার লাভ করে। এ ছাড়া মস্কো চলচ্চিত্র উৎসব (১৯৬৭, ১৯৭৩ ও ১৯৭৯) ও নমপেন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে (১৯৬৮) পুরস্কৃত হয় তার চলচ্চিত্র। ১৯৬৫ সালে পেয়েছেন শ্রেষ্ঠ সহ-অভিনেতার পুরস্কার। ১৯৭৭ সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে তার প্রযোজিত ও পরিচালিত ‘বসুন্ধরা’ সেরা পরিচালক ও প্রযোজকসহ ৫টি পুরস্কার লাভ করে। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রশিল্পে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশ সরকারের একুশে পদকে ভূষিত হন। ২০০৩ সালে পেয়েছেন মেরিল-প্রথম আলো আজীবন সম্মাননা।


Leave a reply