সুযোগ এলেই জ্বলে উঠেন রওনক হাসান
তথাকথিত বিশাল ফ্যানবেজ নেই তার, নাটকে নেই মিলিয়ন মিলিয়ন ভিউ। আছে মেধা ও নিজেকে ছাপিয়ে যাওয়ার তীব্র চেষ্টা। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, এই অভিনেতাকে নিয়ে যতটা এক্সপেরিমেন্ট হওয়ার কথা ছিল, তার সিকিভাগও হয়নি বলতে গেলে। তবুও তার দক্ষতা বা মেধা চেপে রাখা যায়নি। তার জলজ্যান্ত প্রমাণ রওনক হাসান।
২০০৬ সাল থেকে টেলিভিশন ইন্ডাস্ট্রিতে নিয়মিত কাজ করা এই অভিনেতাকে নিয়ে যতটা কাজ হওয়া উচিত ছিলো বা হওয়া উচিত সেটা হচ্ছে না। আবার এটাও সত্য যে, অল্প কাজের মধ্য দিয়ে বরাবরই দর্শকদের কাছাকাছি থাকেন তিনি।
দুই যুগের বেশি সময় ধরে টেলিভিশন ইন্ডাস্ট্রিতে অভিনেতা হিসেবে একের পর এক নান্দনিক কাজ উপহার দিয়েছেন তিনি। ‘নোয়াশাল’-এর মতো ব্যাপক জনপ্রিয় কাজ যেমন তার ঝুলিতে তেমনি ‘দ্বন্দ্ব সমাস’ ‘ভিডিওম্যান’ ‘মইষাল’ ‘রাতারগুল’, ‘ফুলমতি’, ‘অনুগমন’, ‘মায়াবতী’র মতো ক্ল্যাসিক কাজ উপহার দিয়েছেন তিনি। সাম্প্রতিক সময়ের ‘যে শহরে ভালোবাসা নেই’, ‘লেখকের মৃত্যু’, ‘আড়াই মন স্বপ্ন’-এর মতো নান্দনিক কাজ নিয়ে নতুন করে আলোচনায় রওনক হাসান। তবে ‘হ্যামলেটের ফিরে আসা’ নাটকের মধ্য দিয়ে প্রমাণ করেছেন যে, সুযোগ পেলে এখনো জ্বলে উঠার সামর্থ্য রাখেন তিনি।
সাহিত্য নিয়ে আমাদের দেশে আগে অনেক কাজ হলেও এই সময়ে এসে তেমনভাবে কাজ হচ্ছেনা। এ নাটকে শেক্সপিয়ারের ’হ্যামলেট’ অবলম্বনে দুই শক্তিশালী অভিনেতা মোশাররফ করিম ও রওনক হাসান একে অন্যের সাথে পাল্লা দিয়ে অভিনয় করেছেন। স্বীকৃতি হিসেবে চ্যানেল আই ডিজিটাল মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড- ২০২০ এ সেরা অভিনেতা হন রওনক।
সাম্প্রতিক কাজের মধ্যে, রওনক হাসানের পরিচালনায় ‘মা’ নাটকটিও ব্যাপকভাবে প্রশংসা পায়। এছাড়া তার প্রথম ধারাবাহিক ‘বিবাহ হবে’ বেশ ভালো সাড়া জাগিয়েছে। কাহিনীচিত্র ‘মাছ’-এ রওনক হাসান আবারো প্রমাণ করলেন কোয়ালিটি ম্যাটারস।
টেলিভিশন মিডিয়াতে রওনক হাসানের শুরুটা হয়েছিল ২০০৪ সালে, নাট্যকার হিসেবে। ঠিক এক বছরের মাথায় অভিনেতা হিসেবে হাজির হন তিনি। অবশ্য আগে থেকেই দেশের প্রথম সারির থিয়েটার সংগঠন নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ের সঙ্গে জড়িত ছিলেন।
ইদানীং টেলিভিশন নাটকে উপস্থিতি কম কেন জানতে চাইলে এক আলাপচারিতায় অভিনেতা জানিয়েছিলেন, ‘সেই ২০০৬ সাল থেকেই নিয়ম করে প্রতিমাসে ২০/২৫ দিন শ্যুটিং করেছি আমি। অনেক নাটক, টেলিফিল্মে কাজ করেছি। আমার জায়গা থেকে আমি সবসময় নিজের সেরাটাই দেবার চেষ্টা করেছি। কতোটুকু পেরেছি সেটা দর্শকেরা ভালো বলতে পারবেন। আর কাজ কম করছি তাও না। কারণ পছন্দসই চরিত্র বা গল্প নিয়ে কাজ হচ্ছে হাতেগোনা। সেই অল্পের মধ্যেও আমি কাজ করছি সেটাও তো কম না।’
ওটিটি নিয়ে রওনক হাসান কী ভাবছেন জানতে চাইলে বলেন, ‘আসলে এখন সত্যি সত্যিই আমি চলচ্চিত্র এবং বিনোদনের নতুন মাধ্যম ওটিটিতে ভিন্নধর্মী কাজের প্রতি একটু বেশি মনোযোগী। কারণ এখানে গল্প, চিত্রনাট্য এবং চরিত্রে ভিন্নতা বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আর একজন অভিনেতা কখনোই নিজের কাজে পরিপূর্ণ তৃপ্তি পায় না। অভিনয়ের বিষয়ে আমি ভীষণ লোভী বলা যায়। একটা কাজ শেষে সবসময়ই আমার মনে হয় আরো ভালো করা যেতো! আরো আরো পারফেক্ট চাই। আর ওটিটি আসার কারণে এখন কাজের স্কোপ বেড়েছে একথা অস্বীকার করার উপায় নাই। তবে আমাদের মান ধরে রাখার ব্যাপারে মনোযোগী হতে হবে। ভালো কনটেন্ট এবং নির্মানে মুন্সিয়ানা ছাড়া এই সময়ে দেশ এবং দেশের বাইরের দর্শকদের ধরে রাখাটা কষ্টকর হবে।’
নিজের অভিনয় নিয়ে রওনক হাসান তৃপ্ত কিনা জানতে চাইলে বলেন, আসলে নিজেই নিজের কাজ নিয়ে তৃপ্ত কিনা সেটা বলা মুশকিল। তবে গল্পকার, পরিচালক, সম্পাদক সহ সহশিল্পী ও সংশ্লিষ্ট প্রায় সকলেই যদি ভালো বলে তাহলে কিছুটা পরিতৃপ্ত তো পাওয়া যায়। তবে দর্শকদের কাছে ভালো লাগলেই আমি খুশি, তাদের মন্তব্য বা মতামত আমাদের কাজের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
তৌকীর আহমেদ পরিচালিত ‘স্ফুলিঙ্গ’ সিনেমায় অভিনয় করেছিলেন রওনক। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে দুইটা সময়ের দুই প্রজন্মের গল্প নিয়ে নির্মিত এই সিনেমায় তার অভিনয় প্রশংসা কুড়িয়েছিলো। লকডাউনে কাজের পরিধি কমলেও রওনক হাসান এর মাঝেই পাঁচটি সিনেমায় অভিনয় করেছেন তাও ভিন্ন ভিন্ন চরিত্রে এবং ব্যতিক্রমী গল্পে। সামনেই দীপংকর দীপনের নতুন সিনেমা ‘অন্তর্জাল’। সাইবার ক্রাইম থ্রিলার ঘরানার এই সিনেমায় আইসিটি মন্ত্রীর ভূমিকায় দেখা যাবে রওনক হাসান। এছাড়া আকরাম খানের পরিচালনায় ‘নকশী কাঁথার জমিন’, নুর ইমরান মিঠুর ‘পাতাল ঘর’ সিনেমার কাজও শেষ করেছেন।
রওনক হাসান বলেছিলেন, ‘অনেকটা সময় পার করে এসে এখন মাঝে মাঝেই যে চিন্তাটা মাথায় ঘুরপাক খায় তা হলো— আমি যে ছিলাম সেই পদচিহ্নটা রেখে যেতে হবে, তাই এখন সেই পথেই ভাবছি এবং সেভাবেই ব্যতিক্রমী গল্প আর চরিত্রে কাজ করার চেষ্টা করছি।’