সৃজিতের প্রস্তাবে ভয় পেয়েছিলেন চঞ্চল চৌধুরী
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ওয়েব সিরিজ ‘কারাগার’ ও চলচ্চিত্র ‘হাওয়া’ নিয়ে ঢাকার পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গেও আলোচনায় আছেন চঞ্চল চৌধুরী। চলতি মাসে কলকাতায় অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে সম্মাননাও পেয়েছেন তিনি। এবার চঞ্চল অভিনয় করতে যাচ্ছে কিংবদন্তি নির্মাতা মৃণাল সেনের বায়োপিকে। ‘পদাতিক’ নামের ছবিটি পরিচালনা করছেন সৃজিত মুখার্জি। কলকাতার এ নির্মাতা ঢাকার অভিনেত্রী রাফিয়াৎ রশিদ মিথিলার স্বামী। তার পরিচালনায় এর আগে অভিনয় করেছেন ঢাকার জয়া আহসান।
ছবিতে অবশ্য মৃণালের ব্যক্তিগত এবং পরিচালনার জীবনই বেশি থাকবে। ১৯৬৯ থেকে ১৯৭৩ সময়কালে তার বানানো কলকাতা ট্রিলজি ছবির অনেকটা জুড়ে থাকবে। ছবিতে থাকবেন মনামী ঘোষ এবং সম্রাট চক্রবর্তীও।
সৃজিত এই জীবনীচিত্রটি করতে চেয়েছিলেন ওয়েব সিরিজে। লকডাউনের সময় তিনি চিত্রনাট্য লিখেও ফেলেছিলেন। তার পরে ছবি বানানোর সিদ্ধান্ত নেন। স্বভাবতই সিরিজের তুলনায় দৈর্ঘ্য কমাতে হয়েছে। সৃজিতকে সাহায্য করেছেন মৃণালের পুত্র কুণাল সেন।
তবে মৃণালের ভূমিকায় চঞ্চলকে নেওয়া নিঃসন্দেহে বড় পদক্ষেপ। সপ্তাহখানেক আগে বিষয়টি চূড়ান্ত হয়েছে। কেন চঞ্চল? সৃজিতের কথায়, “প্রথমত দু’জনের মুখের মিল আছে। সেটা কাকতালীয়। কিন্তু মৃণালবাবুর মতোই চঞ্চলের চোখের দৃষ্টি অত্যন্ত ধারালো এবং সজাগ। তা ছাড়াও মৃণালবাবুর রাজনীতি চেতনা, তার যাপন এবং দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গেও চঞ্চলের প্রচুর মিল। সেটা কাকতালীয় হতে পারে। কিন্তু মিলটা আছে।’’
‘পদাতিক’ প্রসঙ্গে চঞ্চল বলছেন, ‘‘আমি তো প্রথমে খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম! কিন্তু লোভও হচ্ছিল। সৃজিত’দা প্রায় ছ’মাস আগে আমাকে মৃণাল সেনের চরিত্রে অভিনয় করার কথা বলেন। আমি মাঝখানে ধরি মাছ, না ছুঁই পানি ভাব করে এড়িয়ে যাচ্ছিলাম। যদি উনি রেগে গিয়ে আমায় বাদ দিয়ে দেন! কিন্তু উনি নাছোড়বান্দা। আমাকে বারবার অভয় দিয়েছেন। সাহসও দিয়েছেন। অনেক করে বুঝিয়েছেন যে, এই চরিত্রে আমিই ঠিকঠাক। আর আমিও ভাবলাম, যখন কাজটা করতেই হবে, তখন ডুব দিয়েই দিই। বাঁচি কী মরি, সেটা তার পর দেখা যাবে!’’
ঠিক সেই কারণেই এই ছবিকে মৃণালের ‘বায়োপিক’ বা ‘জীবনীচিত্র’ বলতে চান না চঞ্চল। তার কথায়, ‘‘তা হলে আমার উপর চাপটা কম হবে। জীবনীচিত্রে অভিনয় করার সমস্যা হল, আপনি যতই খেটেখুটে নিজেকে তৈরি করে অভিনয় করুন না কেন, লোকে ছবি দেখতে বসে তুলনা করবেই। সেটা খুব চাপের। তাই আমি বলতে চাইছি, এটা মৃণাল সেনের জীবন থেকে ইন্সপায়ার্ড। অনুপ্রাণিত। সৃজিত’দাও তেমনই বলেছেন। পোস্টারেও এই শব্দটা লেখা হচ্ছে। সেজন্য আমার উপর চাপটা একটু কম আছে।’’
চঞ্চলের আরও বক্তব্য, ‘‘সৃজিত’দা নিশ্চয়ই একেবারে হুবহু বায়োপিক না-বানিয়ে নিজের সৃষ্টিশীলতা এবং কল্পনা মিশিয়ে ছবিটা বানাবেন। অন্তত আমাকে তো উনি তেমনই বলেছেন। নইলে একটা লোকের সঙ্গে আর একটা লোকের হুবহু মিল কী করে হবে! আর সেই মানুষ যদি মৃণাল সেনের মতো বিখ্যাত হন, তা হলে তো লোকে তার চরিত্রে অভিনয়কারী শিল্পীকে আরও বেশি করে খুঁটিয়ে দেখবে।’’
কী ভাবে নিজেকে তৈরি করছেন মৃণালের চরিত্রের জন্য? চঞ্চল বলছেন, ‘‘চরিত্রটা করি বা না করি, বিষয়টা নিয়ে প্রথম থেকেই চিন্তাভাবনা শুরু করি। কারণ, সবচেয়ে আগে হল মগজ। মগজটা তো ঠিক করতে হবে। এই ছবিটা নিয়ে সৃজিত’দার সঙ্গে প্রাথমিক কথাবার্তা কথা হয়েছিল ছ’মাস আগে। তার পরে শেষ এক-দেড়মাস আরও অনুশীলন করেছি। সৃজিত’দা আমাকে চিত্রনাট্য পাঠিয়েছেন। মৃণালবাবুর প্রচুর ছবি, ফুটেজ পাঠিয়ে দিয়েছেন। সেগুলো নিয়মিত দেখছি। আসলে এই ধরনের একটা চরিত্রে অভিনয় করার জন্য অন্তত ছ’মাসের প্রস্তুতি প্রয়োজন। কিন্তু আমার হাতে অতটাও সময় নেই। তবুও চেষ্টা করছি। যাতে লোকে অন্তত এটুকু বুঝতে পারেন যে, মৃণাল সেনের চরিত্রে অভিনয়ের যোগ্যতা আমার আছে।’’
আগামী বছর মৃণাল সেনের জন্মশতবার্ষিকীতে গুণী এ পরিচালককে সম্মান জানাতেই তিনটি সিনেমার কাজ চলছে টালিউডে।
/আনন্দবাজার পত্রিকা অবলম্বনে