Select Page

কী ছিল ফ্যাব ফেস্টে?

কী ছিল ফ্যাব ফেস্টে?

বিজ্ঞাপন, নাটক, ওটিটির পাশাপাশি সিনেমা নির্মাণের সঙ্গে যুক্ত কলাকুশলীদের নতুন সংগঠন ‘ফিল্ম অ্যালায়েন্স অব বাংলাদেশ’ বা ফ্যাব। শুক্রবার (৩০ ডিসেম্বর) বাংলা একাডেমিতে তারা আয়োজন করে ‘ফ্যাব ফেস্ট’। এ শীর্ষক সম্মেলনে ছিলেন বিভিন্ন প্রজন্মের নির্মাতা, চিত্রনাট্যকার, চিত্রগ্রাহক, প্রযোজক, কনটেন্ট ক্রিয়েটর, লেখক, গণমাধ্যমকর্মী ও দৃশ্যসংস্কৃতির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা। এ উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকি। ছিলেন করপোরেট ব্যক্তিত্বরাও। এ নিয়ে বিস্তারিত তথ্য জানিয়েছে বাংলা ট্রিবিউন ও ছবি ফ্যাবের ফেসবুক থেকে।

সকাল সাড়ে ৯টায় ফ্যাব ফেস্টের উদ্বোধন করেন অভিনেত্রী ফেরদৌসী মজুমদার, সাহিত্যিক ফরিদুর রেজা সাগর, চলচ্চিত্রকার মসিউদ্দিন শাকের ও মোরশেদুল ইসলাম। স্বাগত বক্তব্য দিয়েছেন নির্মাতা নাসির উদ্দীন ইউসুফ। উদ্বোধনী পর্বে গান পরিবেশন করেন আরমীন মুসা, তনুশ্রী দাস, রেজাউল করিম, ইউসুফ আলী খান, আহনাফ খান প্রমুখ।

আয়োজকদের ‘চিন্তা লেনদেনের উৎসব’ বলেলেও এটি মূলত মূলত সিনেমা বা দৃশ্যশিল্পের নীতিমালা ‘সংস্কার’ এবং বাংলা কনটেন্টের বর্তমান সময়কে ‘নতুন করে সংজ্ঞায়িত’ করার লক্ষ্যে আয়োজিত। এখানে গল্প বলার স্বাধীনতা, এফডিসি সংস্কার, নীতিমালা সময়োপযোগী করাসহ বিভিন্ন দাবি তুলে ধরেছেন নির্মাতা-কুশলীরা।

উদ্বোধনের পর ‘বাংলাদেশি সিনেমা অ্যাট আ ক্রস রোড: হাউ রিফর্ম ক্যান প্রোপেল আস’ শীর্ষক একটি আলোচনা পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে নূর সাফা জুলহাজের সঞ্চালনায় আলোচনায় অংশ নেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এমপি, নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, কামার আহমাদ সাইমন, পিপলু আর খান ও ব্যারিস্টার মঈন গণি।

সেন্সর বোর্ডের নীতিমালার আধুনিকায়ন জরুরি বলে মনে করেন নির্মাতা কামার আহমাদ সাইমন। তিনি বলেন, ‘নানা দুর্ঘটনা এড়াতে এবং পরবর্তী সময়ে নিয়ন্ত্রণ করতে চালু হয়েছিল সেন্সর আইন। এখন যুগের মেজাজটা বুঝতে হবে, না হলে নতুন কিছু তৈরি হবে না। আমাদের ও নতুন নির্মাতাদের কিছু অভিমান তো আছেই, তাই আমরা কাঁটাতারের পেছনে (প্রেস ক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন) বসেছিলাম।’

ব্যারিস্টার মঈন গণি বলেন, ‘চলচ্চিত্রকাররা হয়তো মনে করছেন দেশের লিগ্যাল ফ্রেমওয়ার্কটা আপনাদের কন্ট্রোল করতে চাচ্ছে। কিন্তু এই যুগে সেটা খুব একটা সম্ভব না। হলিউড, বলিউড ফেডারেল সিস্টেমে গ্রো করেছে। চলচ্চিত্রকারদের আলোচনায় বসতে হবে নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে।’

সঞ্চালক নূর সাফা জুলহাসের মতে, জাতীয় পর্যায়ে একটি ফিল্ম কমিশন গঠন করা প্রয়োজন। যেখান থেকে নির্মাণ সংক্রান্ত যাবতীয় অনুমতি পাওয়া যাবে। এই কথার সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেন নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীও। তার ভাষ্য, ‘আমি যদি এখন মেট্রোরেল নিয়ে একটা কাজ করতে চাই, তাহলে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে ঘুরতে হবে। কিন্তু যদি ফিল্ম কমিশন থাকে, তাহলে এক জায়গায়ই সব সমস্যার সমাধান পাবো।’

গল্প বলার স্বাধীনতা চেয়ে ফারুকী বলেছেন, ‘আমি নেটফ্লিক্সে যে গল্প দেখি, সেটা কেন চরকি বা হইচইতে দেখতে পারবো না। নেটফ্লিক্সের নির্মাতা যে স্বাধীনতা নিয়ে সিনেমা বানান, আমি আমার দেশের কনটেন্ট সেখানে দিতে চাইলে সে স্বাধীনতায় বানাতে পারব না। এ সময় সেই স্বাধীনতা প্রয়োজন।’

এছাড়া সিনেমা বানানোর জন্য সরকার যে অনুদান দেয়, সেখানেও কিছুটা সংস্কারের পরামর্শ দেন ফারুকী। তার মতে, অন্তত অর্ধেক অনুদান নতুন নির্মাতাদের দেওয়া উচিত। তাহলে ভালো ভালো গল্প উঠে আসবে পর্দায়।

নির্মাতাদের এসব কথার বিপরীতে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘সরকার আছে আপনাদের সাহায্য করতেই। কখনই ভাববেন না, সরকার আরেকটা পক্ষ। আমরা হাত বাড়িয়ে রেখেছি। আর শিল্পীদের নামে মামলা হলেই যেন কোনো শিল্পীকে গ্রেপ্তার করা না হয়, সে বিষয়টি আমি দেখবো। যেন আগে কথা বলে নেয়। আর আপনাদের এ কথাগুলো আমার যেখানে পৌঁছানো দরকার, সেখানে পৌঁছে দেবো।’

বেলা সাড়ে ১১টা থেকে অনুষ্ঠিত হয় ‘গোয়িং ওয়াইল্ড, গোয়িং জেনর’ শীর্ষক আলোচনা। এতে উপস্থিত ছিলেন অভিনেতা ও প্রযোজক ইরেশ যাকের, নির্মাতা সৈয়দ আহমেদ শাওকী, নুহাশ হুমায়ূন ও মোহাম্মদ তাওকীর ইসলাম। পর্বটি সঞ্চালনা করেন নির্মাতা তানিম নূর ও চিত্রসমালোচক সাদিয়া খালিদ রীতি।

এরপর দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে বাংলাদেশের প্রামাণ্যচিত্র নিয়ে আলোচনায় অংশ নেন প্রামাণ্যচিত্র নির্মাতা মানজারে হাসীন মুরাদ, নির্মাতা শবনম ফেরদৌসী, প্রামাণ্যচিত্র নির্মাতা হুমায়রা বিলকিস ও এলিজাবেথ ডি কস্তা। পর্বটি সঞ্চালনা করেন তারেক আহমেদ।

দুপুরের পর অনুষ্ঠিত হয় ‘হাউ পরাণ অ্যান্ড হাওয়া ব্রট ডাউন দ্য হাউজ’ শীর্ষক কেস স্টাডি। এটি সঞ্চালনা করেন ‘আয়নাবাজি’ খ্যাত অমিতাভ রেজা চৌধুরী। তার সঙ্গে সেশনে অংশ নেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের অ্যাডিশনাল সেক্রেটারি (ফিল্ম) ড. জাহাঙ্গীর আলম, প্রযোজক এশা ইউসুফ, নির্মাতা রায়হান রাফী ও ‘হাওয়া’র নির্বাহী প্রযোজক শিমুল চন্দ্র বিশ্বাস।

অমিতাভ রেজা জানান, আগামী তিন সপ্তাহের মধ্যেই চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনকে (এফডিসি) সংস্কারের জন্য পরামর্শমূলক প্রস্তাব দেওয়া হবে। তার ভাষ্য, ‘এফডিসিতে এখন আর কাজ করা হয় না কারণ, সেখানকার মেশিনারিজ ভালো না। ক্যামেরা থাকলে লেন্স বা ফিল্টার নাই, কালার গ্রেডার থাকলেও মনিটর নেই। যাবতীয় সংস্কার নিয়ে একটা প্রস্তাবনা দেবো আমরা। সেটা ফ্যাবের ফেসবুকেও প্রকাশ করা হবে।’

চলচ্চিত্র মুক্তির জন্য সেন্সর বোর্ডের ছাড়পত্র নিতে হয়। এই প্রক্রিয়ায় কিছু অর্থও খসাতে হয় প্রযোজককে। নিয়মটি বাতিলের দাবিও ওঠে আলোচনায়। তবে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের অ্যাডিশনাল সেক্রেটারি (ফিল্ম) ড. জাহাঙ্গীর আলমের মতে, ‘এনওসি নিতে ১৫ হাজার টাকা লাগে। আমার মনে হয় না, সেটা বেশি টাকা না। এফডিসির এমডির সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তিনি বলেছেন, যদি মন্ত্রণালয় এটা অফ করতে বলে, তাহলে করে ফেলব। তবে প্রযোজক সমিতি, পরিচালক সমিতির সদস্য হতে হয় সম্ভবত। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, এগুলোর দরকার নেই।’

বিকাল সোয়া তিনটা থেকে চারটা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয় ‘স্টে লোকাল, গো গ্লোবাল: প্রডিউসারস পারসপেক্টিভ’ শীর্ষক আলোচনা। যেখানে অংশ নেন নির্মাতা রেজওয়ান শাহরিয়ার সুমিত, পরিচালক-প্রযোজক আবু শাহেদ ইমন, নির্মাতা-প্রযোজক আরিফুর রহমান ও প্রযোজক আদনান ইমতিয়াজ আহমেদ। পর্বটি সঞ্চালনা করেন প্রযোজক সারা আফরীন।

সন্ধ্যায় ‘কনটেন্ট অ্যাজ কারেন্সি’ শীর্ষক আলোচনার সঞ্চালনা করেন প্রযোজক গাউসুল আলম শাওন। এ পর্বে কথা বলেন বিটিআরসির চেয়ারম্যান শ্যামসুন্দর সিকদার, একাত্তর টিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোজাম্মেল বাবু, এইচএসবিসি বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাহবুব উর রহমান, স্টার সিনেপ্লেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহবুব রহমান, টফির পরিচালক আবুল মুকিত আহমেদ, পরিচালক আশফাক নিপুণ প্রমুখ।

এরপর কালজয়ী সিনেমা ‘ঘুড্ডি’র স্মৃতিচারণায় অংশ নেন নির্মাতা সৈয়দ সালাহউদ্দিন জাকী, অভিনেতা রাইসুল ইসলাম আসাদ ও অভিনেত্রী লায়লা আজাদ নূপুর।

রাত সাড়ে আটটার দিকে অনুষ্ঠিত হয় ‘কুড়া পক্ষীর শূন্যে উড়া’ সিনেমার বিশেষ প্রদর্শনী। এরপর সিনেমাটির নির্মাতা মোহাম্মদ কাইউম ও শিক্ষক মানস চৌধুরী প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশ নেন।

ফ্যাব ফেস্ট-এ সমাপনী বক্তব্য দেন বরেণ্য অভিনেতা তারিক আনাম খান। তার বক্তব্যের মধ্য দিয়েই সমাপ্তি ঘটে দেশের প্রথম ক্রিয়েটিভ সামিটের। 


মন্তব্য করুন