Select Page

সেরা কমেডিয়ান মতি

সেরা কমেডিয়ান মতি

পর্দায় তো সবাই অভিনয় করে, তবে কার অভিনয়ে দর্শক মন খুলে হাসে?

অবশ্যই একজন কমেডিয়ানের অভিনয়ে দর্শকেরা প্রাণ খুলে হেসে মনের তৃপ্তি মিটায়, অনেকে আবার হাসতে হাসতে গড়াগড়িও খায়। নিজে না হেসে অন্যকে হাসানো পৃথিবীর কঠিনতম কাজ। এই কাজটি যারা আমাদের সিনেমাতে অতীতে করে গেছেন তাদের মধ্যে অন্যতম মতি

ভালো নাম মতিউর রহমান, ১৯৩৩ সালের ৩ অক্টোবর ময়মনসিংহের বাঘমারাতে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। পড়াশোনা বেশি দুর করতে পারেননি, এসএসসিতে এসে থেমে যায় শিক্ষাজীবন।

সৈয়দ আওয়াল পরিচালিত ‘অপরিচিতা’ ছবির মাধ্যমে প্রথম পর্দায় আসেন মতি, সেটা ১৯৬৮ সালের কথা। এরপর প্রায় পাঁচ বছর তাকে আর কোন চলচ্চিত্রে দেখা যায়নি। তার দ্বিতীয় ছবিটি ছিল ১৯৭৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত আলমগীর কুমকুমের ‘আমার জন্মভূমি’। আর এখান থেকেই শুরু মতির চলচ্চিত্রে উত্থানের যাত্রা। একের পর এক ছবি করে গেছেন তিনি, প্রথম দিকে খল চরিত্রে অভিনয় করলেও পরে কমেডিয়ান হয়েই দর্শকদের মনের আসনে নিজেকে পোক্ত করেছেন।

দিলারার সঙ্গে মতি

নিজের সময়ে মতি ছিলেন খুবই জনপ্রিয় একজন কৌতুক অভিনেতা, বিশেষ করে আশির দশক পুরোটাই ছিল তার একার দখলে। ছবিতে মতি আছে আর দর্শক হাসবে না এমনটা কেউ ভাবতেই পারতো না। কমেডিতে মতির একটি বিশেষ গুন ছিল— প্রায় ছবিতেই একটি ছন্দ ব্যবহার করতেন, আর তা দিয়েই তিনি পুরো আড়াই ঘণ্টা হাসির বন্যা বইয়ে দিতেন। আর সেরকম তিনটি ছন্দের কথা এই মুহূর্তে মনে পড়ছে— ‘কিসের মধ্যে কী, পান্তা ভাতে ঘি’, ‘বাপরে বাপ কী লম্বা সাপ, একবার কামড় দিলে দশবার ডাকাবে বাপ’ ও ‘নাম আমার মতি, করি না কারো ক্ষতি’৷

অসংখ্য ছবিতে অভিনয় করা মতির উল্লেখ্যোগ্য কিছু ছবির মধ্যে আছে— বন্ধু, শাহাজাদা, নদের চাঁদ, চন্দ্রালেখা, তাজ ও তলোয়ার, রাজকন্যা, গাংচিল, সুলতানা ডাকু, মধু মালতী, সওদাগর, রাজ সিংহাসন, হাইজ্যাক (খল চরিত্র),  মানিক রতন (খল চরিত্র), লালু ভুলু, সিকান্দার, আবেহায়াত, পদ্মাবতী, সোনাই বন্ধু, রাজ কপাল, চোর, সতী নাগকন্যা, রঙিন রূপবান, রক্তের বন্দী, রাজ ভিখারি, নাগ মহল, খামোশ, রঙিন রাখাল বন্ধু, চন্দনা ডাকু, জুলুম, নাগ জ্যোতি, প্রহরী, পয়সা পয়সা, কোহিনূর, বাহাদুর, জলপরী, জালিম, আন্দাজ, নূরী, ঈদ মোবারক, ওয়াদা, কোরবানী, কুচ বরণ কন্যা মেঘ বরণ কেশ, শিশমহল, আমিই শাহেন শাহ, বজ্রমুষ্টি, ববি, সাগর কন্যা, হুংকার ও লড়াকু।

ফারুকের সঙ্গে মতি

একটা সময় মতির জনপ্রিয়তা এতটাই ছিল, বড় বড় সব পরিচালকদের প্রায় ছবিতেই তাকে দেখা গেছে। বিশেষ করে এফ কবির চৌধুরী, ইবনে মিজান, শহীদুল ইসলাম খোকনদের মতো সেরা পরিচালকদের প্রতিটি ছবিতেই মতি ছিলেন উজ্জ্বল, দারুণ একটি জুটি গড়ে উঠেছিল তাদের মধ্যে। শুধু কমেডিতেই নয়… গানেই মতির উপস্থিতি ছিল দেখার মতো। অনেক ছবিতে সকণ্ঠে গানও গেয়েছিলেন তিনি। কোন কোন গান জনপ্রিয়তাও পেয়েছিল, যার মধ্যে ‘সতী নাগকন্যা’র ‘ও পরানের সঙ্গীরে তুই ভঙ্গি না করিয়া’ গানটি উল্লেখযোগ্য।

মতির বিষয়ে একটি কথা অনেকেরই অজানা। তিনি একটি ছবিতে নায়ক চরিত্রে অভিনয় শুরু করেছিলেন, কিন্তু পরবর্তীতে তা আর সম্পূর্ণ হয়নি।

বাংলা চলচ্চিত্রের লাখ লাখ দর্শকদের হাসির জোগান দেওয়া মতি ১৯৯৩ সালের ১৬ নভেম্বর চলে যান না ফেরার দেশে। গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে তাকে স্মরণ করছি।

ছবি সংগ্রহ: আজাদ আবুল কাশেম


Leave a reply