Select Page

সোনালী রোদ্দুর : কন্যা উৎসর্গের গল্প

সোনালী রোদ্দুর  : কন্যা উৎসর্গের গল্প

পূর্ণদৈর্ঘ্য বাংলা ছায়াছবি : কন্যাদান
পরিচালক : দেলোয়ার জাহান ঝন্টু
শ্রেষ্ঠাংশে : সালমান শাহ, লিমা, শাবানা, আলমগীর, দিলদার, আনোয়ার হোসেন, হুমায়ুন ফরীদি প্রমুখ।
উল্লেখযোগ্য গান : মায়ের কোলে যেন চাঁদ নেমে এলো।
মুক্তি : ৩ মার্চ ১৯৯৫– অপুকে আমার কোলে দাও।
– সাবধানে যেও।
– কিচ্ছু হবে না।
বলতে বলতে লঞ্চের ছাদে সালমান শাহ এক পা-দু পা করে সামনে যেতেই একটা কিছুর সাথে পা লেগে হোঁচট খায় আর অমনি ফুটফুটে বাচ্চাটা টুপ করে নদীর পানিতে পড়ে যায়। গ্রামের ক্লাবে প্রথমবার এ ছবি দেখার সময় মেয়েরা ডুকরে কাঁদতে থাকে ঐ বাচ্চাটার জন্য বিশেষ করে মায়েরা। সন্তান হারালে মা-ই তো সবচেয়ে আগে বড় আঘাতটা পায়। মায়ের সাথে সন্তানের নাড়ির বন্ধন বলে কথা! ছবি না শেষ করে অনেকে উঠে গিয়েছিল এ মর্মান্তিক দৃশ্য দেখে। সালমান শাহ ও লিমা দুজনই ‘অপু’ বলে চিৎকার করে ওঠে কিন্তু ততক্ষণে সব শেষ!

‘কন্যাদান’ ছবির মেমোরেবল বিষয় অপু। সালমান-লিমার ভালোবাসার বিয়ের পর তাদের প্রথম সন্তান অপুকে নিয়ে যখন আনন্দের দিন কাটছিল ঠিক সেসময় এই অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা ঘটে। লিমা হয় পাগল। সালমান তাকে মেন্টাল হসপিটালে শিফট করে। ডাক্তার থাকে শাবানা। তার কাছেই চিকিৎসা হয়।

‘টমেটোর ছেলে গোলআলু’ এটি ‘কন্যাদান’ ছবির অত্যন্ত পরিচিত সংলাপ। ছবিতে মজার একটা সিকোয়েন্সে দেখা যায় সালমান শাহ তার ছেলে অপুর সাথে খেলছে। বাবা-ছেলের কাণ্ড দেখে যে কেউ মিশে যাবে তাদের মাঝে। একেবারে জীবন্ত। তখন সালমান এ সংলাপটা বলে।

সালমান শাহ’র লুক পরিবর্তনের প্রথম ছবি এটি। গোঁফওয়ালা, চশমাপরা ফরমাল গেটআপে সালমানকে আলাদা ব্যক্তিত্বে দেখা যায়। এন্ট্রি সিনেই তাকে ফর্মাল দেখা যায়। তবে ফ্ল্যাশব্যাকে লিমার সাথে প্রেম, বিয়ে, ভ্রমণ এসবের সময় তাকে গোঁফে দেখা যায় না। পরের বছর মুক্তিপ্রাপ্ত ‘স্বপ্নের পৃথিবী’ ছবিতেও তাকে প্রথমদিকে গোঁফওয়ালা দেখা যায়। সালমানকে নতুন যে কোনো গেটআপেই স্মার্ট, স্টাইলিশ লাগত ‘কন্যাদান’ তার একটা উদাহরণ।

পাগলদের পরিবেশ বোঝানোর কিছু লং সিকোয়েন্স আছে ছবিতে। দীর্ঘক্ষণ ধরে দিলদার পাগলের নানা কীর্তিকলাপ দেখাচ্ছে শাবানাকে। শাবানা হাসতে হাসতে শেষ। দিলদারের পাশাপাশি আরো অনেকে মনের মানুষকে খুঁজে খুঁজে প্রলাপ করতে থাকে। সিকোয়েন্সগুলোতে বুঝিয়ে দেয় মানুষ পাগল হলেও তার একটা লুকানো গল্প থাকে যে গল্পটা সে কারণে-অকারণে অন্যকে শোনাতে চায়।

শাবানা-আলমগীর জুটির অন্যতম ছবি এটি। এ জুটির অনেক ছবি আছে। শাবানা ডাক্তার আলমগীর শিক্ষক চরিত্রে। তারা নিঃসন্তান। তাদের জীবনকে অপ্রত্যাশিতভাবে রাঙিয়ে দিতে আসে সালমান-লিমার দ্বিতীয় সন্তান। তাদের মেয়েক শাবানাকে দেয়া হয় মানবিক দিক থেকে। মেয়ে মা পাবে সেজন্য। সে সেখানেই বড় হয় কিন্তু সালমান বুঝতে পারেনি এর ফলাফলটা কি হবে। লিমা সুস্থ হয়ে গেলে নিজে বাড়ি গিয়ে সালমানকে অবাক করে দেয়। পেটে কাটা দাগ দেখে সন্দেহ হয় তারপর জানতে পারে মেয়ের কথা। মেয়েকে ঘিরে শুরু হয় ড্রামা।

ফ্যামিলি ড্রামার উপাদানই হচ্ছে দ্বন্দ্ব। এটা ছাড়া জমে না। মা কখনো সন্তানকে ছাড়তে চায় না। লিমা মেয়েকে জোর করে নিতে এলে দরজা বন্ধ করে থাকে শাবানা। শাবানার কোল থেকে পাষাণ হৃদয় হয়ে আলমগীরই এনে দেয়। শাবানা তখন পাথরের মতো হয়ে যায়। মেয়ে তো লিমাকে চেনে না তাই মা মানতে রাজি নয়। ওদিকে শাবানাও মেয়ের শোকে পাগল হয়। ফ্যামিলি ড্রামা জমে ওঠে। ‘মায়ের কোলে যেন চাঁদ নেমে এলো’ গানটি সুপরিচিত গান এ ছবির। শাবানা মেয়ে পেয়ে মাতৃত্বের স্বাদ পাওয়ার আনন্দে গানটি গায়। কথা, সুর অসাধারণ।

আলমগীর এবং সালমান শাহ দুজনের কাছেই কৌশলে টাকা খায় খলনায়ক হুমায়ুন ফরীদি। তাদেরকে ফাঁদে ফেলতে তথ্য ফাঁসের আশ্রয় নেয়। একটা দৃশ্যে ক্লাসরুমে আলমগীরকে থাপ্পড় মারে ফরীদি তার পুরনো অপমানের বদলা নিতে। সেখানে উপস্থিত ছাত্র-ছাত্রীরা তেড়ে উঠলে তাদেরকে শান্ত হতে বলে আলমগীর। খুব টাচি ছিল।

কন্যাকে দান শেষ পর্যন্ত কন্যার মাতৃত্বের কারণেই করে দেয় সালমান শাহ-লিমা দুজনই। লিমা জানায় সে আবার মা হতে চলেছে তাই নিঃসন্তান মা শাবানাকে দিয়ে দেয় তার মেয়েকে। তাদের দুজনের স্যাক্রিফাইসিং মেন্টালিটিতে ছবির গল্প পূর্ণতা পায়।

‘কন্যাদান’ ফ্যামিলি ড্রামায় উপভোগ্য বাণিজ্যিক ছবি। বিনোদনের শর্ত পূরণ করেও মানবিক বিষয়কে ধারণ করতে পেরেছে ছবিটি। কন্যাকে দান শেষ পর্যন্ত কন্যার মাতৃত্বের কারণেই করে দেয় সালমান শাহ-লিমা দুজনই। লিমা জানায় সে আবার মা হতে চলেছে তাই নিঃসন্তান মা শাবানাকে দিয়ে দেয় তার মেয়েকে। তাদের দুজনের স্যাক্রিফাইসিং মেন্টালিটিতে ছবির গল্প পূর্ণতা পায়।

‘কন্যাদান’ ফ্যামিলি ড্রামায় উপভোগ্য বাণিজ্যিক ছবি। বিনোদনের শর্ত পূরণ করেও মানবিক বিষয়কে ধারণ করতে পেরেছে ছবিটি।


Leave a reply