স্টার সিনেপ্লেক্স থেকে ঈদের সিনেমা নামিয়ে দেয়ায় ক্ষুব্ধ নির্মাতারা
ঈদুল ফিতরের সিনেমাগুলো গত কোরবান ঈদের মতো ব্যবসা না করলেও স্টার সিনেপ্লেক্সে অন্তত দুটি সিনেমার দৈনিক টিকিট বিক্রি গড়ে লাখ টাকা; ওয়েব সাইট ট্রাকিং থেকে এ তথ্য জানা যাচ্ছে। তবে তা অপ্রতুল হিসেবে দেখছে মাল্টিপ্লেক্স চেইনটি। তাই চতুর্থ সপ্তাহ থেকে নেমে যাচ্ছে ঈদের সব রিলিজ। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন একাধিক সিনেমার নির্মাতা।
হিমেল আশরাফ, গিয়াস উদ্দিন সেলিম ও মিশুক মনি
‘কাজলরেখা’র পরিচালক গিয়াস উদ্দিন সেলিম আজ ১ মার্চের বিকেল সাড়ে চারটার টিকিট বুকিংয়ের স্ক্রিনশট শেয়ার করে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। যেখান প্রায় হাউসফুল দেখা যাচ্ছে বুকিং।
তিনি লেখেন, ‘বসুন্ধরায় আজকের সাড়ে ৪টার শো। তারপরও আগামী শুক্রবার থেকে বিদেশি ছবির জন্য কাজলরেখার কোন শো নাই। কেন? ঈদের অন্য সিনেমাগুলোও নামিয়ে দেয়া হচ্ছে। অন্তত ৪০ শতাংশ শো বরাদ্দ দেশি সিনেমার জন্য রাখার অনুরোধ করছি।’
এবারের ঈদে প্রত্যাশার তুলনায় কম হলেও এগিয়ে থাকা সিনেমা হলো ‘রাজকুমার’। সেই ছবির পরিচালক হিমেল আশরাফ লেখেন, ‘ঠিক গত সপ্তাহে টিকিট বিক্রিতে ১ নাম্বারে ছিল যেই সিনেমা, সেই সিনেমার কোন শো পরের সপ্তাহে নেই, একটা শোও না! ঈদের সবগুলো বাংলা সিনেমা উধাও হয়ে গেল! প্রতিদিন ৫০টার উপরে শো স্টার সিনেপ্লেক্সের। এর মধ্যে একটা শো পাওয়ার যোগ্যতা নেই ঈদের কোনো সিনেমার? অথচ আজকে সন্ধ্যার রাজকুমার, কাজলরেখা শোর টিকেট অনলাইনে চেক করে দেখেন, ৬০ শতাংশ অলরেডি সোল্ড আউট। এখনো ৪ ঘণ্টা বাকী! আমি আজকে সন্ধ্যার শো স্ক্রিনশট দিলাম যেখানে রাজকুমারের ৮৫ শতাংশ টিকিট সোল্ড আউট।’
হিমেল আরো লেখেন, ‘আগামী শুক্রবার থেকে বসুন্ধরা স্টার সিনেপ্লেক্সে ৬টা বিদেশি সিনেমা চলবে যেখানে বাংলা সিনেমা চলবে ১টা। ১৬টা শো বিদেশি সিনেমার, ৪টা শো বাংলা সিনেমার! বাংলাদেশের সিনেমা হল, বাংলাদেশের মানুষই দর্শক, বাংলা সিনেমার দর্শক থাকার পরেও বাংলা সিনেমা নাই! এই দেশের সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি ঘুরে দাড়াতে অনেক পথ বাকী, অনেক…।’
ঈদের সবচেয়ে প্রশংসিত সিনেমা ‘দেয়ালের দেশ’-এর নির্মাতা মিশুক মনিও বিষয়টি নিয়ে মন্তব্য করেন। সঙ্গে স্টার সিনেপ্লেক্সের লভ্যাংশ ভাগাভাগি নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
ঈদে মুক্তি পাওয়া বেশির ভাগ সিনেমায় স্টার সিনেপ্লেক্সে শো পেয়েছিল
তিনি লেখেন, ‘বাংলা সিনেমার বিপ্লব ঘটানো নিয়ে অনেক বড় বড় বুলি আওড়াতে দেখি অনেক হল ব্যবসায়ীদের। সেই বিপ্লব ঘটাতে বিদেশি সিনেমার আমদানী শুরু হয়। ব্যবসাও ভালো চলে কিন্তু হলের আর উন্নতি হয় না। ভাঙা সিট বদলে ভাল সিট, ফ্যান, পর্দা ও সাউন্ড সিস্টেমের কিছুরই পরিবর্তন হয় না। আর সিনেপ্লেক্স থেকে একটা টিকিটের কয় ভাগের কত টাকা প্রযোজক পান সেই হিসাব করে কেন কখনও কেউ কথা বলেনি আমি সেটা ভেবেই অবাক হই। যে হারে ভাগ হয় তাতে খুব ভালো চললেও একশো সিনেমার মধ্যে ১-২ টা ছাড়া বাকি সিনেমার টাকা হল থেকে ওঠা সম্ভব না।’
মিশুক বলেন, ‘আজকের সীমান্ত সম্ভারের ৪টা ৪০ মিনিটের দেয়ালের দেশের শোর অগ্রিম টিকিট সেল। রিলিজের পর থেকে দেয়ালের দেশ নিয়ে মানুষের আগ্রহ ও প্রশংসা পুরোটাই অর্গানিক ছিল। সাধারণত বসুন্ধরা শাখায় সবচেয়ে বেশি সেল হয় তবুও গত সপ্তাহে বসুন্ধরা শাখা থেকে কোন অজানা কারণে দেয়ালের দেশের শো বন্ধ করা হয়। অদ্ভুত মজার ব্যাপার হচ্ছে, সিনেপ্লেক্সের ওয়েব সাইটে সেল রিপোর্ট দেখা যায়, এবং সেখানে রোজ দেখা যাচ্ছিল গত সপ্তাহে দেয়ালের দেশ একাধিক সিনেমার চেয়ে শো কম নিয়েও সেল বেশী। তবুও কি জাদুবলে উইকলি সেল রিপোর্ট তারা পাবলিসড করে সেখানে দেয়ালের দেশকে সেই সকল সিনেমার পেছনে ফেলে যে সিনেমার সেল দেয়ালের দেশ এর চেয়ে কম। আজকে বসুন্ধরা শাখায় কাজলরেখার শো হাউজফুল তবুও পরবর্তী সপ্তাহ থেকে রাজকুমার, দেয়ালের দেশ, কাজলরেখা, ওমরসহ অন্য সিনেমার শো বন্ধ করে দেন স্টার সিনেপ্লেক্সে।’
পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করেন এভাবে, ‘অবস্থাটা এখন এরকম, আমার গরু আমি ঘাস খাওয়াবো নাকি লাঠিচার্জ করবো আমার মর্জি! সিনেমা নিয়ে এত বড় বড় বক্তব্য আপনারা যারা দেন তা স্রেফ ভন্ডামী। ব্যবসাটাই এখানে মুখ্য। বিশ্বকাপ নিয়ে নির্মিত যে চলচ্চিত্র আমদানি করে আনা হলো এবং প্রথম দিনের পরে তার সেল রিপোর্ট দেখেন এবং তৃতীয় সপ্তাহে এসে বাংলা সিনেমার সেল রিপোর্ট দেখেন তাহলে দেখবেন তৃতীয় সপ্তাহে এসেও বাংলা সিনেমা শো সংখ্যা কম নিয়েও নতুন সিনেমার চেয়ে সেল রিপোর্ট বেশি আছে। ঈদের সিনেমা হিসেবে সেল রিপোর্ট এতটাও খারাপ ছিল না যে সবগুলো শো বন্ধ করে দিতে হবে। মিনিমাম শো রাখার যৌক্তিকতা ছিল।’
এই মুল্লুকে বাংলা সিনেমার কখনও জয় হয়নি আর আপনারা কথা বলতে না শিখলে কখনো জয় হবেও না— উল্লেখ করে এ নবাগত নির্মাতা লেখেন, ‘বাংলা সিনেমার কফিনের লাস্ট পেরেক মারতে বাকি।’
এ দিকে ‘ওমর’ নির্মাতা মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজের ফেসবুক পেজে ট্যাগ করা এক পোস্টে লেখা হয়েছে, ‘বসুন্ধরা স্টার সিনেপ্লেক্সে ওমরের ৪টা ৪০ মিনিটের শো হাউজফুল।’
নির্মাতা ছাড়াও সিনেমা সংশ্লিষ্ট অনেকেই স্টার সিনেপ্লেক্সের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
বিষয়টি নিয়ে প্রতিক্রিয়া মাল্টিপ্লেক্সের ডেটা ট্র্যাক করে এমন ফেসবুক পেজ বাংলা মুভি রিভিউ লিখেছে, “এখনো লাখে কালেকশন আসছিলো ‘রাজকুমার’ ও ‘কাজলরেখা’ সিনেমার। সেখানে সিনেপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ নিজেদের লাভের জন্য ঈদের সব সিনেমাকে নামিয়ে দিলো! ব্যাপারটা আসলেই খারাপ হয়েছে।”