স্বপ্নের ঘরে প্রেতচর্চা
স্বপ্নের ঘর
ধরণ : হরর-সাসপেন্স ড্রামা
পরিচালক : তানিম রহমান অংশু
প্রযোজনা : তাকী খান ফিল্মস
কাস্ট : আনিসুর রহমান মিলন (সীমান্ত), জাকিয়া বারি মম (মারিয়া), শিমুল খান (মিস্টার ডি সুজা), কাজী নওশাবা আহমেদ (মিস ডি সুজা), আফরান অনিক (শোভন খান), মেরিলিন বিশ্বাস (শিলা), মেহেদী হাসান পিয়াল (পুলিশ ইন্সপেক্টর) প্রমুখ।
মুক্তি : ২১ ডিসেম্বর ২০১৮
নামকরণ : ছবির পুরো গল্পটিই এক অদ্ভুত বাড়িকে ঘিরে। নানারকম ভুতুড়ে ঘটনার জন্য এই বিলাসবহুল বাড়িটি কুখ্যাত। তবে শখ হিসেবে সীমান্তের স্ত্রীর মারিয়ার এই বাড়িটিই খুব পছন্দের, তাদের কাছে এতো বড় বাড়িতে থাকা স্বপ্নের মতো। তাই নামানুসারে আমার কাছে “স্বপ্নের ঘর” নামটি ভালোই লেগেছে।
কাহিনী, চিত্রনাট্য ও সংলাপ : ছবিটির গল্প লেখক ও অনুবাদক অনীশ দাস অপু একটি জনপ্রিয় বিদেশি উপন্যাসের ছায়া অবলম্বনে তৈরি করেছেন। চিত্রনাট্যও তিনিই লিখেছেন। বইয়ের নামটি আমার সঠিক খেয়াল নেই, যদি কেউ জেনে থাকেন অবশ্যই জানাবেন।
সীমান্ত ঢালিউড ইন্ডাস্ট্রির একজন পরিশ্রমী অভিনেতা। সে নিজেকে সুপারস্টার হিসেবে পরিচিত করার জন্য অনেক কষ্ট করেন, কিন্তু সুপ্রসন্ন ভাগ্যের অভাবে সে তার কষ্ট অনুযায়ী সুফল পাচ্ছে না। তার স্ত্রী মারিয়ার অনেক শখ একটি বড় বাড়িতে থাকার। সে শখ মেটানোর জন্যে তারা এক নতুন বিলাসবহুল বাড়িতে ওঠে, সেই বাড়ির মালিক হলেন রবার্ট ডি সুজা ও তার স্ত্রী। এরপরই একের পর এক ভুতুড়ে কান্ড ঘটতে থাকে সীমান্ত-মারিয়া দম্পতির জীবনে। এগুলো ঠিক কী কারণে হচ্ছে, এর পেছনের প্রেক্ষাপট কী এবং গল্পের শেষ পরিণতি কী হয়… তা এ ছবির বিষয়বস্তু।
হরর জনরার গল্পে কারিগরি দিকটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এদিকে ধরা খেলে সে ছবি যতই ভালো হোক তা দর্শককে আকৃষ্ট করতে পারে না। এ ছবির কারিগরি দিক কেমন, সে ব্যপারে পরে আসছি।
কথা বলা যাক ছবির চিত্রনাট্য নিয়ে। সবমিলিয়ে স্ক্রিনপ্লে মোটামুটি ভালোই লেগেছে, তবে প্রথমার্ধে গল্প অনেক ধীরগতির। অবশ্য কিছু ক্ষেত্রে এই ধীরগতির প্রয়োজন ছিল, ছবিতে সাসপেন্স তৈরী করতে সাহায্য করে এসব জিনিস। আবার কিছু ক্ষেত্রে এই ধীরগতির কারণেই ধৈর্যের পরিচয় দিতে হয়েছে।
এছাড়া ছবির শেষ দৃশ্যের আগে যে ক্লাইম্যাক্স দেখানো হয়েছে সেটা কেন জানি খুব একটা জমেনি। মানে গল্পটি দর্শক হিসেবে আমাকে এতোটাই গভীরে নিয়ে গিয়েছিল, সেই জটিল গল্পের এতো সহজ সমাধান কেমন যেন ক্লিশে লেগেছে। এ ব্যাপারে বেশি কিছু বলতে চাই না তাহলে স্পয়লার হয়ে যাবে। বাকিটা ছবি দেখেই যাচাই করবেন। এটা ছাড়া বাকিসব ঠিকঠাক।
ছবিতে ডায়ালগ গুলো বেশ ভালো ছিল, বিশেষকরে, শিমুল খানের ‘মিস্টার ডি সুজা’ চরিত্রটিতে বেশ শক্তিশালী কিছু ডায়ালগ আছে যা ছবিটিকে জমিয়ে তোলে।
এ অংশ পাবে ১০০ তে ৬০
অভিনয় : সবচেয়ে ভালো লেগেছে জাকিয়া বারি মম’র অভিনয়। যদিও অন্যরা কেউই খারাপ করেনি, তবে তার পর্দায় উপস্থিতি অন্যদের তুলনায় আকর্ষণীয় ছিল। এছাড়া শিমুল খান এবং আনিসুর রহমান মিলনও বেশ ভালো অভিনয় করেছেন। ভবিষ্যতে নায়ক-ভিলেন রূপে এজুটিকে আবারো বড়পর্দায় দেখলে ভালোই লাগবে।
কাজী নওশাবা আহমেদের চরিত্রটি এ ছবিতে রহস্যে ঘেরা, পুরো ছবিতে একরকম কিন্তু ছবির ক্লাইম্যাক্সে আরেকরকম! তাই তার চরিত্রটি সঠিক আন্দাজ করা যায় না, যেভাবেই যুক্তি দেওয়া হোক সবক্ষেত্রেই সঠিক মনে হবে। তার অভিনয়ও ঠিকঠাক ছিল।
এছাড়াও অন্যান্যদের মধ্যে আফরান অনিকের অভিনয় নজর কেড়েছে। তার অভিনয়ে আমাদের খুব পরিচিত একজনের বাচনভঙ্গি, চলাফেরা স্পষ্ট হয়ে ওঠে; সম্ভবত তিনি এই চরিত্রটি করতে গিয়ে তাকেই ফলো করেছেন। তার নাম আমি বলবো না, আপনারা নিজেরাই যাচাই করে নিবেন।
এ অংশ পাবে ১০০ তে ৮০
কারিগরি : আগেই বলেছি, হরর ছবির জন্য এই ডিপার্টমেন্টটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আর এই অংশের কাজ আমার কাছে দারুণ লেগেছে। কী সিনেমাটোগ্রাফি, কী এডিটিং, কী কালার প্যালেট, কী ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক! গা ছমছমে ভাব আনার জন্য যা যা দরকার সব ছিল। আর যে ঘরে শ্যুট করা হয়েছে সেই সেটের লাইটিং ব্যাপক লেগেছে! কেমন যেন একটা আবছা নীল এবং হালকা হলুদ রঙের আভা দেখা গেছে পর্দা জুড়ে, চোখের দারুণ প্রশান্তি দিয়েছে এই বিষয়গুলো। হ্যাঁ এডিটিং এবং ভিএফএক্সে কিছু দূর্বলতা ছিল বৈকি, সেটাও ঐ ক্লাইম্যাক্স সিনে। এছাড়া আর কোনো জায়গায় এমন দূর্বলতা দেখিনি।
এ অংশ পাবে ১০০ তে ৮৫
বিনোদন : বিনোদনের ক্ষেত্রে ভালো-খারাপ মিলিয়ে বলতে হবে। ছবিটি ভয় পাওয়াতে খানিকটা সময় নিয়েছে। ধীরে সুস্থে গল্পের ভিতরে নিয়েছে। অর্থাৎ স্ক্রিনপ্লে অনেকটা স্লো। তবে ভয় পাওয়ার উপাদান যথেষ্ট আছে ছবিতে; তবে ছবিতে আমি থ্রিলের অভাব বোধ করেছি। আরো বেশি সাসপেন্স উপাদান রাখলে ভালো লাগতো।
ছবিতে মোট গান রয়েছে দুইটি; গানগুলি গেয়েছেন যথাক্রমে তাহসান-কণা এবং ন্যানসি। গানগুলি মোটামুটি ভালো লেগেছে।
এ অংশ পাবে ১০০ তে ৫০
ব্যক্তিগত : আমাদের দেশে মানসম্পন্ন হরর ছবি বলতে এক “রাজবাড়ী”ই আছে, এছাড়া বাকি একটাও কোনো জাতের না। সেটাও প্রায় পঁয়ত্রিশ বছর আগের তৈরী। এতো বছরেও আমাদের ভালো হরর ছবি না আসা খুবই দুঃখজনক ব্যাপার। তবে আমি মনে করি এই ছবিটি ভবিষ্যতে এই ইন্ডাস্ট্রির ভুতের ছবিগুলোর জন্য একটা দিকনির্দেশনা হিসেবে কাজ করবে, যা খুবই ভালো দিক।
সবমিলিয়ে বলবো এক্সপ্রেরিমেন্ট হিসেবে “স্বপ্নের ঘর” টিপিক্যাল হরর ঘরানার হলেও বেশ উন্নত মেকিং এর ছবি। গল্পের গতি যদি প্রথমার্ধে আরেকটু দ্রুত করা যেত কিংবা শেষ ক্লাইম্যাক্সে আরো জমজমাট কিছু দেখানো যেত তবে ছবিটি আরো ভালো হতো।
রেটিং : ৭.৫/১০
ছবিটি কেন দেখবেন : এতোদিন তো “দ্য নান”, ” দ্য কনজুরিং”, “টাম্ভাদ” সহ নানা হলিউড এবং বলিউড হরর মুভির স্বাদ নিয়েছি। একবার দেশী পিউর হরর মুভির স্বাদ নিয়ে দেখুন, হতাশ হবেন না আশা করি।