Select Page

স্বপ্নের নায়িকার ফিরে আসার অপেক্ষায়

স্বপ্নের নায়িকার ফিরে আসার অপেক্ষায়

parvin sultana ditiপারভিন সুলতানা দিতি

১৯৮৪ সালের নতুন মুখের সন্ধানে বাংলা চলচ্চিত্র পেয়েছিল একজন সুন্দর মুখশ্রীর সাথে অভিনয় জানা এক মেয়ের, এক নায়িকার।
বাংলা সিনেমার সফল নায়িকাদের মধ্যে একজন।

২ দশক রাজত্ব করেছেন আমাদের চলচ্চিত্রে। প্রতিযোগিতা করে টিকে থেকেছিলেন পুরাতনদের সাথে নতুনদের সাথে। থেমে যান নি।
যখন দিতি আমাদের সিনেমায় এসেছেন তখন আমাদের সিনেমায় বড় তারকা হিসেবে ছিলেন শাবানা ববিতার মত তারকারা।
সেখান থেকে নতুন মুখ হিসেবে নিজের জন্য জায়গা করে নিয়েছেন। কিছুটা সময় লেগেছিল। কিন্তু নিজের অবস্থান তৈরিতে তা তেমন বেশি ছিলনা।

যখন তার সিনেমা দেখি তখন তিনি বাংলা সিনেমার বড় ষ্টার। অন্তত আমাদের মত তরুনদের কাছে।
তার সাথে যার টক্কর চলত তিনি ছিলেন সুজাতা ববিতার ছোট বোন চম্পা।
আমাদের সময়টা আসলে খুবই উপভোগ্য ছিল। ৯০ দশক নিয়ে আমি তাই সবসময় উতফুল্ল থাকি। কারন এই দশকে যত ভাল কমার্শিয়াল মুভি দেখেছি তার কোন তুলনা নাই।

শাবানা ববিতা রোজিনাদের পরে চম্পা আর দিতিই ছিলেন তখন সর্বশেষ তারকা আমাদের চলচ্চিত্রে।

ইলিয়াস কাঞ্চনের সাথে দিতির জুটির ভক্তের সংখ্যা নেহায়েত কম ছিলনা তখন।

কাঞ্চন তখন সুপারষ্টার।
আর তার সাথে দিতি মানেই জমজমাট ছবি।

দিতি প্রথমদিকে সিনিয়র নায়কদের সাথে অভিনয় করলেও সবশেষে কাঞ্চনের সাথেই জুটি গড়ে নিয়েছিলেন।
এরইমধ্যে কয়েকটা সিনেমায় একসাথে অভিনয় করতে গিয়ে রিয়েল লাইফের জুটি হয়ে গিয়েছিলেন সোহেল চৌধুরির সাথে।

এরবছর দুয়েক পরেই আমাদের চলচ্চিত্রে নতুনদের আগমন শুরু হল। শাবনাজ-নাইম-সালমান শাহ-মৌসুমী-শাবনূর-ওমর সানী।
কিন্তু জনপ্রিয়তায় তেমন ভাটা পরেনি। কাঞ্চন মান্নার সাথে নিয়মিত জুটি বেধে অভিনয় চালিয়ে গিয়েছেন দিতি।

আমি টিভিতে উসিলা মুভি প্রথম দেখেছিলাম।যেখানে দিতির সাথে ছিলেন জাফর ইকবাল।

সিনেমাতে প্রথম কোনটা দেখেছি খেয়াল নেই।
বেনাম বাদশা দিয়ে নয়ত সৎ মানুষ দিয়েই সিনেমাতে দিতির সাথে আমার প্রথম দেখা হয়।
তারপরে বাঁচার লড়াই চরম আঘাত মুক্তিচাই সৈয়দ হারুন কাঞ্চন দিতিকে নিয়ে সেই মুভিগুলো একটাও মিস করিনাই।

যেই সৎ মানুষ সিনেমাতে দিতির বাবা থাকে হুমায়ুন ফরীদি সেই ফরীদিই সৈয়দ হারুনের এক মুভিতে দিতির প্রেমিক!!!

ঐ সময় হাসি এসেছিল। পরে বুঝেছিলাম অভিনয়ের ক্ষেত্রে এমন হয়।

দিতি কাঞ্চনের সাথে জুটি হিসেবে বেশী মুভিতে অভিনয় করলেও অথবা সফল হইলেও মান্নার সাথেও সমানভাবে সফল ছিলেন।

ওই সময়ে মান্না কাঞ্চন দিতি চম্পার মধ্যে খুব বর রকমের প্রতিযোগিতা ছিল।
এরকম প্রতিযোগিতা এর পরে আমি আর দেখিনাই।

সালমান সানী বা মৌসুমী শাবনুরের মধ্যেও প্রতিযোগিতা ছিল তবে মান্না কাঞ্চন বা দিতি চম্পার মত এতটা হাই ছিল বলে মনে হয়না আমার।

যদিও কাঞ্চনের তুলনায় মান্না কিছুটা ম্লান ছিল। কিন্তু প্রতিযোগিতা কম হইতোনা যখন মান্না চম্পা জুটি হিসেবে কাঞ্চন দিতি জুটির মুখোমুখি হইত।

সালমান শাহ মৌসুমিদের সময়েও কাঞ্চন দিতি অথবা মান্না দিতির সিনেমাগুলোর ব্যবসাই প্রমাণ করে আমাদের চলচ্চিত্রের দিতির জনপ্রিয়তা কেমন ছিল। কতটুকু সফল ছিল দিতি। মান্নার সাথেও সমান্তরালে হিট মুভি উপহার দিয়ে গিয়েছেন তিনি। মান্নার সাথে তার সর্বশেষ মুভি ছিল শেষ প্রতীক্ষা।আমার যতটূকু মনে পরে। আমি এইটাই দেখেছিলাম। এরপরে আর কোন মুভির কথা মনে আসতেছেনা।

দিতির গালে তিলটাই অন্য সব নায়িকা থেকে তাকে আলাদা করে দিয়েছিল।
অন্যরা যেখানে নকল তিল লাগাইত সেখানে দিতির বেলায় এরকম ঝামেলাই ছিলনা।
সৎ মানুষ সিনেমার দিতিকে দেখলে আপনার ভালো না লেগে যাবেইনা। এতটা উচ্ছল ছিল দিতি।দারুন স্মার্ট ও ছিল তখনকার হিসেবে।

কিন্তু বয়সের একটা হিসাব তো থাকেই।
আমার মনে হয়েছে দিতির জায়গাটা দখল করে নিয়েছিল মৌসুমী।
কারন কাঞ্চনের সাথে কিছু মুভিতে দিতিকে যেরকম গেটয়াপে দেখেছিলাম পরবর্তীতে কাঞ্চনের সাথে মৌসুমীকেও একইরকম গেটয়াপে দেখেছি আমি।মৌসুমীর বয়স মৌসুমীকে দিতির জায়গা নিতে সহায়তা করেছে। আর দিতির বয়স দিতিকে জায়গা ছেড়ে দিতে বাধ্য করেছিল।

মৌসুমীকে দেখেও তখন দিতিকেই মনে পরত নিশ্চয় দর্শকদের। আর শেষ প্রতীক্ষায় দিতিকে দেখে আমি নিজেও কান্না করেছিলাম।
সিনেমাহলেই কেঁদেছিলাম।
ভেবেছিলাম আহা কোন মেয়ের যেন এমন না হয়। শেষ প্রতীক্ষা বড়ই কষ্টের ছিল আমার কাছে।

সময়ের সব বড় পরিচালক জনপ্রিয় পরিচালকদের সাথে কাজ করেছেন দিতি। আমি আগেও বলেছি বাংলা সিনেমায় কাঞ্চন দিতি অনেক জনপ্রিয় সব গান উপহার দিয়েছে আমাদের।

যারা দিতির সিনেমা দেখেছেন তারা আমার সাথে একমত হবেন নিশ্চয়।
দিতির জনপ্রিয় গানের লিষ্ট দিয়েই একটা বিশাল পোষ্ট দেওয়া যাবে। সময় হইলে একদিন সেটাও করব। এখানে না হয় অন্য কোথাও।

বয়স ৩৫ হওয়ার পরে আর নায়িকা চরিত্রে মানায়না। আমাদের সিনেমার দর্শক ও মেনে নেয়না।
একসময় দিতি সিনেমার বাইরে চলে গেলেন। সন্তানদের সময় দিলেন। সোহেল চৌধুরির অকাল মৃত্যু তার উপর দায়িত্ব বাড়িয়ে দিয়েছিল।

এরপরেও রিল লাইফের সফল জুটি ইলিয়াস কাঞ্চনের সাথে রিয়েল লাইফে এক হওয়ার একটা চেষ্টা হয়েছিল। তারা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিল। কিন্তু সেখানে বেশীদিন থাকতে পারেন নি।
রিল লাইফে সফল হইলেও রিয়েল লাইফে কাঞ্চন দিতি জুটি একদম ই সফল ছিলেন না।
আলাদা হয়ে গিয়েছিলেন।

অনেকদিন পরে আবার সিনেমাতে দিতি ফিরে এসেছিলেন। তবে এবার আর নায়িকা চরিত্রে নয়। মা ভাবী হয়ে। সেখানেও তিনি দারুন সফল ছিলেন।
কারন মা ভাবীর চরিত্রে নায়িকা দোয়েলের পরে দিতিকেই অনেকটা ইয়ং লাগত। সুচরিতা ববিতারা কিছুটা বয়ষ্ক হয়ে গিয়েছিলেন তখন।

আমাদের স্বপ্নের নায়িকা দিতি আজ অসুস্থ্য। দ্বিতীয়বারে মত অস্ত্রোপাচার করা হয়েছে।
আমি হসপিটাল থেকে ফিরে বাসায় এসে জানতে পেরেছিলাম দিতির অসুস্থতার কথা। মনটা খারাপ হয়ে গিয়েছিল।

পর্দার নায়িকাদের বাস্তবে অসুস্থ্য দেখতে ভালো লাগেনা।
পর্দার মত বাস্তবেও দিতি আবার ফিরে আসুক স্বাভাবিক জীবনে সেই কামনা করছি। মহান রাব্বুল আলামিন তাকে সম্পূর্ন সুস্থ্য করে দিক সেই শুভকামনা করে এখানেই ইতি টানছি পারভীন সুলতানা দিতিকে নিয়ে আমার আজকের এই লেখার।

ফিরে এসো স্বপ্নের নায়িকা।


Leave a reply