স্বাগতম ‘বিজলী’
বাংলাদেশে এর আগে সুপারম্যান থেকে শুরু করে কিংকং, আলীবাবা— বিদেশি সুপারহিরো থেকে কিংবদন্তির নায়কদের দেখা গেছে সিনেমায়। এবার এলো ‘বিজলী’, একদম দেশীয় সুপারহিরোইন। সদ্য মুক্তি পাওয়া অরিজিন পর্ব দেখে বলতে ইচ্ছে করবে অনেকের, ‘স্বাগতম বিজলী’।
আগেই বলে নিই— এ সিনেমায় নতুন কোনো কাহিনি পাবেন না। তারপরও স্বাগতম কেন? কারণ হলো, সাদামাটা একটা গল্প তার ওপর ‘সুপার হিরোইন’-এর মোড়কে, খুবই বিশ্বস্তভাবে দেখানো হয়েছে। অর্থাৎ, সিনেমায় গরু গাছে উঠলেও তার লজিকটা প্রায় ঠিকঠাক মতো এসেছে। তবে কিছু প্রশ্নও জোরধার থেকেই যায়। ‘বিজলী’কে নিয়ে তার পালক বাবা কার ভয়ে পালিয়েছেন? পুরো গল্প বলেছে একটা কথা, অন্যদিকে শেষের ভিডিওটা বলছে অন্য কথা। এখানে এসে ভিলেন জেরিন খানের বিজলীকে ধাওয়া করার গল্পটা ঠিক জমেনি। এমনকি তার অতিমানবীয় ক্ষমতারও। এই প্রশ্নও থাকে ব্ল্যাক মাস্ক বিজলীর ঠিকানা কীভাবে পেল।
গল্পের মূল কি পয়েন্ট ছিল কোল্ড ফিউশনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন। এ কারণে বিজলীর ক্ষমতাকে ব্যবহার করতে চান জেরিন খান। এর যুক্তিসঙ্গত ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা আছে ছবিতে। সাধুবাদ! আর যেহেতু অরিজিন স্টোরি, তার বাড়তি কোনো দিকে মনোযোগের সুযোগ ছিল না তেমন— মানতেই হয়। তবে রান টাইম হিসেব করলে আরেকটু খোলাসা হতে পারত। মোটের ওপর গল্প ঝুলে যায়নি বা মেদবহুল হয়নি।
‘বিজলী’তে পরিচালক ইফতেখার চৌধুরী ভারত-বাংলাদেশের একঝাঁক মুখ উপস্থাপন করেছেন। সেখানে বাংলাদেশের ইলিয়াস কাঞ্চন, দিলারা জামান, মিশা সওদাগর, জাহিদ হাসান, আনিসুর রহমান মিলনের মতো শক্তিমান তারকাও আছে। এর মধ্যে শেষ দুইজনকে দেখা গেছে ক্যামিও রোলে। অন্যদিকে মিশাকে দীর্ঘ ক্যামিওতে দেখা গেছে। যদিও সিনেমার গল্প বলছে আগামীতে জমবে মিলন ও মিশার সঙ্গে বিজলীর লড়াই। এর মধ্যে যা দেখেছি— প্রতিটি চরিত্রের এন্ট্রিতে দর্শকের হাততালি! উপভোগ্য!
ববির যা ট্র্যাক রেকর্ড। খুব একটা ভালো অভিনয় করেন না তিনি। তবে এ সিনেমায় দারুণভাবে উতরে গেছেন। সংলাপ প্রক্ষেপণে আরেকটু সতর্ক হওয়া দরকার। তবে দরকারি ইমোশন পাওয়া গেছে তার অভিনয়ে। দেখতেও ভালো লেগেছে। সাথে ‘বিজলী’র প্রযোজক হিসেবে এক্সটা মার্কস থাকবে ঝুলিতে।
নায়ক ছিলেন ভারতীয় সিনেমা রণবীর। তার অবশ্য খুব বেশি কিছু করার ছিল না। বিজলীর পেছন পেছন চড়কির মতো ঘোরা ছাড়া। অন্যদের মধ্যে ইলিয়াস কাঞ্চন-শতাব্দী রায় অনবদ্য। তবে তাদের আরো অভিনয়ের সুযোগ ছিল।
সিনেমার চিত্রগ্রহণ ভালো। ঝকঝকে তকতকে। তবে সিনেমাটোগ্রাফির নির্দিষ্ট কোনো ধরন ছিল না। যা গল্পের একটা নিজস্ব ভাষা তৈরি করে। আবহসঙ্গীতও মানানসই। পাঁচটির তো গান ছিল। ‘পার্টি পার্টি পার্টি’ ও স্যাড সং ছাড়া কোনোটিই উপভোগ্য নয়। এর মধ্যে আইসল্যান্ডে শুট করা গানও ছিল। দারুণ লোকেশন, দারুণ দৃশ্যায়ন। নায়ক-নায়িকার অভিব্যক্তিতে কৃত্রিমতা ছিল। সবই মানা যায়। কিন্তু ‘ব্যাং ব্যাং’ সিনেমার সুর নকল করা গানটি কোনো আবেদনই তৈরি করতে পারেনি। পুরো খরচ জলে গেল। এখানে বলতে হয়— এত সস্তা গানের জন্য কেন বিদেশি গীতিকার-সুরকার-গায়কদের দ্বারস্থ হন দেশি নির্মাতারা! আফসোস!
সিনেমার লোকেশন ভালো। কিন্তু একমাত্র ‘সিলেট’ ছাড়া কোনো রেফারেন্স নেই স্থান। দার্জিলিং-কে বাংলাদেশ দেখানোটা জমেনি।
আর থাকে স্পেশাল ইফেক্টস। বাংলাদেশি সিনেমা হিসেবে দুর্দান্ত হয়েছে। এ নিয়ে সমালোচনা নয়। তবে শেষ ক্লাইম্যাক্সে আরো অ্যাকশন দরকার ছিল। সম্ভবত বাজেটের একটা ব্যাপার ছিল। জেরিনের সঙ্গে আরেকটু ফাইট থাকতে পারব।
সব মিলিয়ে বাংলাদেশি সুপারহিরোইন ‘বিজলী’ দারুণ কিছু করে দেখিয়েছে। এটা নিশ্চয় অন্যদেরও টেস্ট বদলাতে সাহায্য করবে। আর আশা করা যায়, সিনেমার দ্বিতীয় কিস্তি আরো দুর্ধর্ষ কিছু উপহার দেবে…।