Select Page

বিজলী : রিমেম্বার, ইটস এ বাংলাদেশি ফিল্ম!

বিজলী : রিমেম্বার, ইটস এ বাংলাদেশি ফিল্ম!

নাম : বিজলী
ধরন : সাইন্স ফিকশন সুপারহিরো ফিল্ম
পরিচালক : ইফতেখার চৌধুরী
অভিনয় : ইয়ামিন হক ববি (বিজলী), রনভীর (রনি), শতাব্দী রায় (ডা. জেরিনা হোসেন), ইলিয়াস কাঞ্চন (ডা. আলম), টাইগার রবি (ব্ল্যাক মাস্ক), মিশা সওদাগর (নাদিম চৌধুরী), আনিসুর রহমান মিলন (মি. গ্রে), জাহিদ হাসান (সাজ্জাদ চৌধুরী), শিমুল খান (ডা. ইমরান), পার্থ সারথী (হাবু), রাজা দত্ত (ভিকি), সীমান্ত আহমেদ (বাবু), দিলারা জামান (বিজলীর দাদী) প্রমুখ।

নামকরণ : একজন সাধারণ মানুষের অসাধারণ সুপারপাওয়ার এবং তাকে ঘিরে ঘটে যাওয়া ঘটনাবলী নিয়ে গড়ে উঠেছে ‘বিজলী’র গল্প। তাই এ গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্রের নামানুসারে এছবির নামকরণ করা হয়েছে।

কাচিস (কাহিনী+চিত্রনাট্য+সংলাপ): ছবির কাহিনী বর্তমান সময়, অর্থ্যাৎ ২০১৮ কে ঘিরেই গড়ে উঠেছে, যার সূত্রপাত ঘটে প্রায় ২০ বছর আগে একটি ষড়যন্ত্রের কারণে। কাহিনী অনুসারে চিত্রনাট্য বেশ গোছানোই মনে হয়েছে, পুরো ১২৫ মিনিট একটি সাসপেন্স ধরে রেখেছিল যার সুরাহা ছবি শেষেও হয়নি। এতে বোঝা যায় এছবির দ্বিতীয় কিস্তি আসবে। ছবির সংলাপগুলো মোটামুটি ছিল। তবে এ সংলাপে একটা মহামারী আকারের ভুল কানে ধরা পড়েছে। বর্তমান পৃথিবীতে জনসংখ্যা প্রায় ৭০০ কোটি, সেক্ষেত্রে যদি সাড়ে সাতশো কোটিও বলা হতো, তাতেও কোনো আপত্তি থাকতো না। বলা হয়েছে ২০১৮ সালে এপৃথিবীতে সাড়ে সাত লক্ষ কোটি মানুষের বাস, can you imagine that?

এ অংশ পাবে ১০০ তে ৪৫।

টিমওয়ার্ক : জাহিদ হাসান, মিশা সওদাগর, শিমুল আহমেদ, শতাব্দী রায়, ইলিয়াস কাঞ্চন, মিজু আহমেদ, আমির সিরাজী, আহমেদ শরীফ, আনিসুর রহমান মিলন, টাইগার রবি, শিমুল খান, দিলারা জামান…. যে ১২ জনের নাম বললাম এরা সবাই এদেশের পর্দাকাঁপানো এবং গুণী অভিনেতা। এদের সবাইকে একটা ছবিতে নিয়ে আসা চাট্টিখানি কথা নয়! আমি মনে করি, বিগত ২০ বছরের মধ্যে এটি সবচেয়ে বড় মাল্টিকাস্টিং দেশি মুভি। এদের অভিনয় গুণ নিয়ে আলাদা করে কিছু বলার নেই, তবে ‘বিজলী’র ইলিয়াস কাঞ্চনের অভিনয় চোখে প্রশান্তি আনার মতো। ভবিষ্যতে তার দ্বারা আমরা আর কোনো ‘বাংলার ফাটাকেস্ট’ চাই না, ‘বিজলী’ মতো পাওয়ারফুল সাপোর্টিং অ্যাকটিং চাই। শতাব্দী রায় এ ছবিতে একজন সায়েন্টিস্ট এবং একই সাথে একজন ডাক্তারের রোল প্লে করেছেন, ট্রেলারে তাকে দেখে হতাশ হলেও ছবিতে তার অভিনয় হতাশা দূর করেছে। টাইগার রবির রোলটি একটু কম গুরুত্বপূর্ণ হলেও তিনি একদম ফাটিয়ে দিয়েছেন। তার বডি ল্যাংগুয়েজ দূর্দান্ত, মনে শিহরণ জাগানোর মতো জাহিদ হাসান, শিমুল খান, আহমেদ শরীফ, আমির সিরাজী এবং মিজু আহমেদের রোলগুলো ছোট-ছোট, আর তারা যে মাপের অভিনেতা এতে তাদের এই ক্যারেক্টারগুলোতে মানিয়ে নেওয়ার দিক থেকে কোনো জড়তা চোখে পড়েনি। তবে দিলারা জামানের জন্ম তারিখ মিলিয়ে নাতনি কে চিনতে পারা বেশ দৃস্টিকটু লেগেছে, যদিও এটা অভিনয়ের দোষ নয়! আনিসুর রহমান মিলন এবং মিশা সওদাগরের ক্যারেক্টার এখনো রিভিল হয়নি, এদের নিয়ে হয়তো ‘বিজলী’ দ্বিতীয় কিস্তি বের হবে।

বাকি রইলো এছবির প্রধান ২টি চরিত্র। ‘বিজলী’ চরিত্রে ববি অনেক কষ্ট করেছেন, তার অ্যাকশন সিনগুলো এককথায় দূর্দান্ত হয়েছে। মাহি এবং পরী মনির পর আমরা তৃতীয় আরেকজন অ্যাকশন গার্ল পেলাম। অভিনয়ের দিক থেকে বরাবরই তার একটা দুর্বলতা ছিল, এ ছবিতে তুলনামূলক উন্নতি হয়েছে, তবে আরো যত্নের প্রয়োজন। কলকাতার নতুন হিরো রনভীরের অভিনয় অনেক দুর্বল, তার চেহারার এক্সপ্রেশন আরো বেশি দুর্বল। তার ফিটনেস ভালো এবং অনেক ভালো নাচতে পারেন তিনি; তবে সেটা নিশ্চয়ই পর্দা কাপানোর জন্য যথেষ্ট নয়।

এ অংশ পাবে ১০০ তে ৭০।

কারিগরি : এ ছবিতে সর্বাত্মক সদ্ব্যবহার করা হয়েছে এর বৈচিত্র্যময় লোকেশনে। বাংলাদেশ, ভারত, থ্যাইল্যান্ড ও আইসল্যান্ডের অনেক-অনেক রেয়ার লোকেশনে দৃশ্যধারণ করা হয়েছে, যেখানে এদেশের পরিচালকেরা বাজেট স্বল্পতার কারণে শুট করার চিন্তা কল্পনাও আনেন না। সিনেমাটোগ্রাফি প্রশংসা করার মতো কিছু হয়নি, তবে ভালো হয়েছে এবং তা ছবিটা সুন্দর করে ফুটিয়ে তুলবার জন্য যথেষ্ট। আর এডিটিং ফুল মার্কস পাওয়ার দাবি রাখে, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট অনুসারে। ভিএফএক্স-এ কিছু ভুল-ত্রুটি রয়েছে, তবে সেটা মার্জনীয়। অন্তত এ ছবির ভিএফএক্স আমাকে ‘পরবাসিনী’র মতো হতাশ করেনি, বরং বেশ ভালোই উপভোগ্য হয়েছে। অ্যাকশন দৃশ্য তুলনামূলক কম থাকলেও যা ছিল তা বেশ ভালো। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক একদমই ভালো হয়নি। এই দিকটায় বেশ বড় ত্রুটি আছে। আমি সবসময়ই যে কথাটা বলে আসছি, বাংলাদেশের মুভির কোয়ালিটি খারাপ হওয়ার পেছনে মধ্যম মানের ক্যামেরা দিয়ে শুট করা অনেকাংশে দায়ী, ‘বিজলী’ দেখলে এই ক্যামেরার কোয়ালিটির পার্থক্য দর্শকের চোখে খুব সহজেই ধরা পড়বে। উন্নত মানের ক্যামেরা দিয়ে শুট হওয়ায় একদম ঝকঝকে-তকতকে একটি ছবি হয়েছে ‘বিজলী’।

এ অংশ পাবে ১০০ তে ৭৫।

বিনোদন : ছবিতে রয়েছে ৫টি গান, যার সবগুলোই বেশ ভালো। এর মধ্যে ‘পার্টি পার্টি পার্টি’ শুধুমাত্র ইউটিউবেই মাত্র ৪ মাসে ৮০ লক্ষবারের বেশি দেখা হয়েছে। এছাড়াও বাকি গানগুলো মিউজিক কম্পোজ অনেক ভালো হয়েছে। তবে বলিউডের শিল্পী সুনিধি চৌহানের গাওয়া ’এই মন পেতে ;চাই’-এর মিউজিকটি ২০১৪ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত হিন্দী মুভি ‘ব্যাং ব্যাং’-এর ‘উফ’  গানের মিউজিকের সাথে অনেক মিল। বেশ অনেকটাই কপি করে কম্পোজ করা হয়েছে। এই গানটির লোকেশনের ক্ষেত্রেও ২০১৫ সালের হিন্দি মুভি ‘দিলওয়ালে’র ‘গেরুয়া’ গানের সাথে মিল রেখে শুট করা হয়েছে। এ ছবিতে শুরু হতেই বেশ কিছু ভালো ভিএফএক্স ব্যবহার করা হয়েছে, সাথে অ্যাকশন সিনগুলো তো রয়েছেই। এছাড়াও রয়েছে কোলকাতার পার্থ সারথী এবং বাংলাদেশের সীমান্ত হোসেনের মন ভালো করা কমেডি। সব মিলিয়ে বিনোদনে ভরপুর একটি কমপ্লিট মাসালা প্যাকেজ হলো ‘বিজলী’।

এ অংশ পাবে ১০০ তে ৮০।

ব্যক্তিগত : গতবছর যখন বলাকায় ‘পরবাসিনী’ দেখতে যাই, মোটামুটি ৭৫% এক্সপেক্টেশন নিয়ে গিয়েছিলাম নতুন কিছু একটা পাওয়ার। শুনেছিলাম সেখানে প্রায় ২৫ মিনিটের একটি ভিএফএস ওয়ার্কস রয়েছে, তাই আগ্রহটাও অনেক বেশি ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত চুড়ান্ত হতাশ হয়ে হল থেকে বের হয়েছিলাম। এবারও হলমুখী হওয়ার আগে বারবার আমার সেই হতাশাজনক দিনটার কথাই মনে পড়ছিল। তবে এবার আমি পুরোপুরি না হলেও ৭৫% সন্তুষ্টি নিয়ে ঘরে ফিরেছি, এবং আমি হলফ করে বলতে পারি এটি ‘পরবাসিনী’ তুলনায় অনেক ভালো।

রেটিং :  ৩.৫/৫

ছবিটি কেন দেখবেন : এখানে কিছু কথা বলে নেওয়া ভালো। হলিউডের ‘দ্য অ্যাভেঞ্জারস্’ (২০১২) মুভিটির বাজেট ছিল ২২২ মিলিয়ন ডলার (১৮২৬ কোটি টাকা প্রায়)। বলিউডের ‘রা.ওয়ান’ (২০১১) এর বাজেট ছিল ১৩০ কোটি রুপি, ‘আ ফ্লাইং জাট’ (২০১৬) এর বাজেট ছিল ৩৯ কোটি রুপি; ‘কৃশ ৩’ (২০১২) এর বাজেট ছিল ৯৪ কোটি রুপি। এখন এই ছবিগুলো কেমন হয়েছে তা আপনারা জানেন। ‘বিজলী’ মুভির বাজেট অফিসিয়ালি জানানো হয়নি, তবে ধারণা করা যায়, এর বাজেট হবে ৭-৮ কোটি কিংবা বড়জোড় ১০ কোটি। তাই বিনীত অনুরোধ থাকবে, ৪০ কোটি রুপির সাথে ১০ কোটি টাকার তুলনায় যাবেন না, বেহুদা ট্রল বানাবেন না। এ দেশের ফিল্মের অবস্থা কেমন তা একটা সদ্য আদর্শ লিপি পড়তে বসা ছেলেও জানে। এমন একটা মরতে বসা ইন্ডাস্ট্রিতে এসে ববি ১০ কোটি টাকা জলে ফেলার মতো রিস্ক নিলেন, অন্তত সেই চেষ্টাকে সাধুবাদ জানাতে হলেও এ ছবি আমাদের হলে গিয়ে দেখা উচিত। আর এটি এতটা বোরিং কিংবা ফালতু হয়নি, সবার ভালোলাগার মতো করেই তৈরি করা হয়েছে।

হলে গিয়ে ‘বিজলী’ দেখুন এবং ২ ঘণ্টা আনন্দে সময় কাটান।


মন্তব্য করুন