স্বাধীনতার পাঁচ দশকে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের উত্থান-পতন
২০২১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালিত হয়েছে। স্বাধীনতা-উত্তর এই দীর্ঘ পঞ্চাশ বছরে দেশের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন পরিবর্তন এসেছে। এই পরিবর্তনের ছোঁয়া চলচ্চিত্রের বাজারেও লেগেছে। ৩৫ মিমি থেকে ডিজিটালে রূপান্তর, চলচ্চিত্রে রাজনীতির বিকাশ, হাল প্রযুক্তির সিনেপ্লেক্স ও মাল্টিপ্লেক্সের সংখ্যা বৃদ্ধি, অন্যদিকে নিয়মিত চলচ্চিত্র প্রেক্ষাগৃহ হ্রাস দিয়ে আলোচনা ও সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।
এ আলোচনায় দশক অনুসারে সংক্ষিপ্তাকারে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ইতিহাস তুলে ধরা হলো। প্রাথমিকভাবে লেখাটি তথ্যগতভাবে অসম্পূর্ণ হওয়ার দোষে দুষ্ট হলেও ধীরে ধীরে পূর্ণাঙ্গ রূপ লাভ করবে আশা করি।
১৯৭১-১৯৭৯: মুক্তিযুদ্ধ, পারিবারিক ও সামাজিক ধারার সফলতা
বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের পূর্বলগ্নে প্রখ্যাত সাংবাদিক ও লেখক শহীদুল্লাহ কায়সার অপহৃত হন। দেশ স্বাধীনের পর জানুয়ারি মাসের শেষদিকে তাকে খুঁজতে গিয়ে নিখোঁজ হন লেখক ও চলচ্চিত্রকার জহির রায়হান। জহির রায়হানকে অখণ্ড পাকিস্তানের সবচেয়ে সম্ভাবনাময় চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবে গণ্য করা হতো। জহির রায়হানকে হারানোর মধ্য দিয়ে নব্য স্বাধীন বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্পে অপূরণীয় ক্ষতি হয়। কারণ তার হাত ধরে নির্মিত হয়েছিল পাকিস্তানের প্রথম রঙিন চলচ্চিত্র ‘সঙ্গম’ (১৯৬৪) এবং প্রথম সিনেমাস্কোপ চলচ্চিত্র ‘বাহানা’ (১৯৬৫)। এ ছাড়া তিনি ‘কখনো আসেনি’ (১৯৬১) আর ‘সোনার কাজল’ (১৯৬২) এর মতো শৈল্পিক সব চলচ্চিত্র পরিচালনা করেছেন। চমৎকার নির্মাণ শৈলীর জন্য তার ‘কাঁচের দেয়াল’ (১৯৬৩) চলচ্চিত্রকে ভারতীয় বাঙালি পরিচালক ঋত্বিক ঘটকের চলচ্চিত্রগুলোর সঙ্গে তুলনা করা হয়। আইয়ুব খানের সামরিক শাসন নিয়ে তার নির্মিত ব্যঙ্গধর্মী ‘জীবন থেকে নেয়া’ (১৯৭০) বিখ্যাত ভারতীয় চলচ্চিত্র নির্মাতা সত্যজিৎ রায়ের প্রশংসা কুড়িয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে নির্মাণ করেছিলেন প্রামাণ্যচিত্র ‘স্টপ জেনোসাইড’ ও ‘এ স্টেট ইজ বর্ন’। এ ছাড়া তিনি সমমনা চলচ্চিত্রকারদের নিয়ে গড়ে তুলেছিলেন সিনে ওয়ার্কশপ গোষ্ঠী।
যাই হোক, জহির রায়হানের অন্তর্ধানের পর সিনে ওয়ার্কশপ গোষ্ঠীর অন্য সদস্য আমজাদ হোসেন, রহিম নওয়াজ, নুরুল হক বাচ্চু, মুস্তাফা মেহমুদরা তাদের কাজ চালিয়ে যান। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর প্রথম মুক্তি পায় মানুষের মনের অন্তর্দ্বন্দ্বের গল্প নিয়ে নির্মিত মুস্তাফা মেহমুদের ‘মানুষের মন’। সদ্য স্বাধীন দেশের নির্মাতা দেশের এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের প্রেক্ষাপট নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে পিছিয়ে থাকেনি। আলমগীর কবির নির্মাণ করেন প্রামাণ্যচিত্র ‘লিবারেশন ফাইটার্স’ ও ‘ডায়েরিজ অব বাংলাদেশ’ এবং বাবুল চৌধুরী নির্মাণ করেন ‘ইনোসেন্ট মিলিয়নস’। এই সময়ে যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে নির্মিত বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রগুলো হল চাষী নজরুল ইসলামের ‘ওরা ১১ জন’, সুভাষ দত্তের ‘অরুণোদয়ের অগ্নিসাক্ষী’, আলমগীর কবিরের ‘ধীরে বহে মেঘনা’, খান আতাউর রহমানের ‘আবার তোরা মানুষ হ’, নারায়ণ ঘোষ মিতার ‘আলোর মিছিল’ এবং হারুনর রশীদের ‘মেঘের অনেক রং’।
‘ওরা ১১ জন’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন ১১ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং ছবির প্রযোজক মাসুদ পারভেজ (সোহেল রানা) ও পরিচালক চাষী নজরুল ইসলামও বীর মুক্তিযোদ্ধা। এতে যুদ্ধে ব্যবহৃত অস্ত্রও ব্যবহার করা হয়। অন্যদিকে, ‘অরুণোদয়ের অগ্নিসাক্ষী’তে দেখা যায় পাকিস্তানি বাহিনীর নৃশংসতা, ধর্ষণ, শরণার্থীশিবিরে আশ্রয় গ্রহণ এবং যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পলায়নপর এক অভিনেতার আত্ম-উপলব্ধি ও একজন ধর্ষিতাকে স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ। আর ‘ধীরে বহে মেঘনা’ বাংলাদেশের সাংবাদিক-মুক্তিযোদ্ধা ও যুদ্ধে শহীদ ভারতের এক বৈমানিকের প্রেমিকার সম্পর্কের মধ্য দিয়ে দুই দেশের সম্পর্ককে চিত্রিত করে। ‘আবার তোরা মানুষ হ’ যুদ্ধ-উত্তর দেশে অর্থ-সংকট ও বৈষম্য ও উত্তরণের প্রচেষ্টার বর্ণনা দেওয়া হয়। ‘আলোর মিছিল’ যুদ্ধ-উত্তর সামাজিক অবক্ষয়, সততা ও দায়বদ্ধতার চিত্র তুলে ধরে। ‘মেঘের অনেক রং’ মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রথম রঙিন চলচ্চিত্র। এতে যুদ্ধে ধর্ষিতা এক নারী ও তার সন্তানের নিদারুণ কষ্টের বর্ণনা তুলে ধরা হয়। সাধারণভাবে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে সবচেয়ে প্রশংসিত চলচ্চিত্র এটি। আর মূল চরিত্রে আদিবাসী নারীর উপস্থিতি ছবিটিকে আরও গুরুত্ববহ করে তুলেছে।
মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্রগুলোর পাশাপাশি পারিবারিক, সামাজিক, প্রণয়ধর্মী ও জীবনীনির্ভর চলচ্চিত্রগুলো সাফল্য অর্জন করতে শুরু করে। ‘অশ্রু দিয়ে লেখা’ ও ‘অবুঝ মন’ ছবিগুলোর বাণিজ্যিক সফলতার ধারাবাহিকতায় পারিবারিক ও সামাজিক চলচ্চিত্র নির্মাণে আগ্রহী হয়ে ওঠে পরিচালকেরা। এই ধারাবাহিকতায় সাফল্য লাভ করে ‘সুজন সখী’, ‘এক মুঠো ভাত’, ‘অশিক্ষিত’, ‘বধূ বিদায়’, ‘মাটির ঘর’ প্রভৃতি চলচ্চিত্র। এ ছাড়া আমজাদ হোসেনের ‘নয়নমনি’, ‘সুন্দরী’, ও ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’ চলচ্চিত্রে গ্রামীণ সমাজের শোষণ, নিপীড়ন ও কুসংস্কারের প্রভাব দেখা গেছে। জীবনী চলচ্চিত্রের মধ্যে সৈয়দ হাসান ইমামের ‘লালন ফকির’, মহিউদ্দিনের ‘ঈশা খাঁ’ উল্লেখযোগ্য। এ ছাড়া ১৯৭৩ সালে ‘রংবাজ’ চলচ্চিত্রের মধ্য দিয়ে জহিরুল হক প্রথাগত মারপিটধর্মী চলচ্চিত্র নিয়ে আসেন ঢাকাই চলচ্চিত্রে। এটি ঢাকার ছবিকে বদলে দেয়। ১৯৭৪ সালে মুক্তি পায় কাজী আনোয়ার হোসেনের গোয়েন্দা চরিত্র অবলম্বনে ‘মাসুদ রানা’, পরিচালনা ও অভিনয়ে ছিলেন সোহেল রানা। সিনেমাটি নানা কারণে আলোচিত হলেও সারা বিশ্বের জনপ্রিয় এ ধারা বাংলাদেশ সে অর্থে বিকশিত হয়নি। এ ছাড়া রোমানা আফাজের বিখ্যাত ‘দস্যু বনহুর’ ১৯৭৬ সালে পর্দায় আসলেও পরবর্তী এ ধারাও সফল হয়নি।
এসবের বাইরে গিয়ে ব্যতিক্রমী ও কালোত্তীর্ণ চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন আলমগীর কবীর। তার ‘ধীরে বহে মেঘনা’র পাশাপাশি ‘সীমানা পেরিয়ে’, ‘রূপালী সৈকতে’ ও ‘সূর্যকন্যা’ শিল্পমান বিচারে সেই সময়ের চলচ্চিত্রগুলো থেকে কয়েক ধাপ এগিয়ে ছিল। এই সব চলচ্চিত্রে প্রগতিশীল জীবনযাপন ও রাজনৈতিক দর্শন রয়েছে, যা দর্শক-সমালোচকদের নজর কেড়েছে। এর মধ্যে ‘রূপালী সৈকতে’র মতো মহাকাব্যিক কাজ বিরল।
সাহিত্যনির্ভর চলচ্চিত্রের মধ্যে ‘তিতাস একটি নদীর নাম’, ‘বসুন্ধরা’, ‘সারেং বৌ’ ও ‘সূর্যদীঘল বাড়ী’ নির্মাণগুণে উল্লেখযোগ্য। ঋত্বিক ঘটক তার ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ চলচ্চিত্রে তিতাস ও তিতাসের তীরবর্তী গ্রামীণ জীবনযাত্রার চিত্রায়ণ দেখিয়েছেন। এটি ব্রিটিশ ফিল্ম ইনস্টিটিউটের জরিপে চলচ্চিত্র বোদ্ধা ও সমালোচক এবং দর্শক উভয়ের দৃষ্টিতে বাংলাদেশের সেরা চলচ্চিত্র। সুভাষ দত্ত ‘বসুন্ধরা’ নির্মাণ করেছেন আলাউদ্দিন আল আজাদের ‘তেইশ নম্বর তৈলচিত্র’ উপন্যাস অবলম্বনে। এতে একজন চিত্রকরের তার স্ত্রী ও সন্তানের প্রতি ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ দেখা যায়। এ ছবির মধ্যে অভিষেক হয় ঢাকাই সিনেমার প্রথম সুপারস্টার ইলিয়াস কাঞ্চনের। শহীদুল্লাহ কায়সারে উপন্যাস অবলম্বনে আব্দুল্লাহ আল মামুনের নির্মিত ‘সারেং বৌ’ চলচ্চিত্রে একজন সারেং-এর স্ত্রীর সংগ্রামী জীবন, সমাজের নিপীড়ন, স্বামীর প্রতি সততা ও সর্বোপরি প্রলয়ংকরী প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলার খণ্ডচিত্র পাওয়া যায়। অন্যদিকে আবু ইসহাকের উপন্যাস অবলম্বনে শেখ নিয়ামত আলী ও মসিহউদ্দিন শাকেরের নির্মিত ‘সূর্যদীঘল বাড়ী’ নিম্নবিত্ত ও শোষিত গ্রামীণ সমাজের জীবনযাপনের চিত্র। প্রথমবার সরকারি অনুদান পাওয়া এ ছবি ওই দশকের অন্যতম আলোচিত ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র। এ ছাড়া সুভাষ দত্ত আশরাফ সিদ্দিকীর ‘গলির ধারের ছেলেটি’ গল্প থেকে নির্মাণ করেন শিশুতোষ ‘ডুমুরের ফুল’।
এই দশকে চলচ্চিত্রের বিভিন্ন শাখায় অবদানের জন্য দুটি গুরুত্বপূর্ণ পুরস্কারের প্রবর্তন হয়। প্রথমটি বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি কর্তৃক প্রদত্ত বাচসাস পুরস্কার, যা ১৯৭৪ সাল থেকে প্রদান করা হয়। প্রথমবার এই পুরস্কার লাভ করে ‘আবার তোরা মানুষ হ’। অন্যটি হলো বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রদত্ত দেশের চলচ্চিত্র শিল্পের শীর্ষ পুরস্কার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। এটি ১৯৭৬ সাল থেকে প্রদান শুরু হয়। প্রথমবার এই পুরস্কার লাভ করে চর দখল, ধনী-গরিব বৈষম্য ও দুই ভাইয়ের মধ্যে দ্বন্দ্ব ও এর অবসান নিয়ে নারায়ণ ঘোষ মিতার নির্মিত ‘লাঠিয়াল’।
এ দশকে বাংলা চলচ্চিত্রে ওয়েস্টার্ন ঘরানার অ্যাকশন যুক্ত হয়। যার প্রাধান্য পরবর্তী দশকগুলোতেও অব্যাহত থাকে। ১৯৭৭ সালে দেওয়ান নজরুলের হিন্দি ‘শোলে’ ছবির রিমেক ‘দোস্ত দুশমন’ দিয়ে এ ধারার সূচনা বলে জানা যায়। এরপর তার হাত ধরে ‘আসামী হাজির’, ‘বারুদ’সহ অভিনব সব ছবি নির্মিত হতে থাকে।
১৯৮০-১৯৮৯ : সাহিত্য-নির্ভর ও সামাজিক-অ্যাকশন ধারার বিকাশ
এই দশকের শুরুতে দুটি শিশু কেন্দ্রিক চলচ্চিত্র ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। সেগুলো হল ‘ছুটির ঘণ্টা’ ও ‘এমিলের গোয়েন্দা বাহিনী’। ঈদের ছুটিতে স্কুলের বাথরুমে আটকে পড়ে সেখানে দীর্ঘ ১১ দিন কাটিয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ার মর্মান্তিক গল্প নিয়ে আজিজুর রহমান নির্মাণ করেন ‘ছুটির ঘণ্টা’। অন্যদিকে এরিখ কাস্টনারের গোয়েন্দা উপন্যাসের ছায়া অবলম্বনে সরকারি অনুদানে বাদল রহমান নির্মাণ করেন ‘এমিলের গোয়েন্দা বাহিনী’। এমিল নামের এক কিশোর তার হারিয়ে যাওয়া টাকা উদ্ধার করতে একদল কিশোরকে নিয়ে অভিযান শুরু করে। আগে ‘ডুমুরের ফুল’ নামে একটি শিশুতোষ চলচ্চিত্র নির্মিত হলেও এটি বাংলাদেশের প্রথম সার্থক শিশুতোষ চলচ্চিত্র। এটি শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রসহ পাঁচটি বিভাগে পুরস্কার লাভ করে। এই ধারাবাহিকতায় সি বি জামান নির্মাণ করেন ‘পুরস্কার’। সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক রচিত চলচ্চিত্রটিও শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রসহ পাঁচটি বিভাগে পুরস্কার লাভ করে।
এই দশকে একাধিক সাহিত্য-নির্ভর চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। তন্মধ্যে অন্যতম হল চাষী নজরুল ইসলামের ‘দেবদাস’। এটি ঢাকাই চলচ্চিত্রে অপরাজেয় কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের কালজয়ী উপন্যাস ‘দেবদাস’-এর প্রথম চলচ্চিত্রায়ণ, যাতে প্রধান তিনটি চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন বুলবুল আহমেদ, কবরী ও আনোয়ারা। এরপর একই নির্মাতা শাকিব খান, অপু বিশ্বাস ও মৌসুমীকে নিয়ে ২০১৩ সালে দ্বিতীয়বার এই চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। ‘দেবদাস’-এর পর এই দশকে শরৎচন্দ্রের একাধিক রচনা নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে, সেগুলো হল ‘চন্দ্রনাথ’, ‘রামের সুমতি’, ‘চাঁপা ডাঙ্গার বউ’, ‘পরিণীতা’, ‘শুভদা’, ‘রাজলক্ষ্মী শ্রীকান্ত’, ও ‘বিরাজ বৌ’। এছাড়া বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের বিষবৃক্ষ উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত হয়েছে ‘বিরহ ব্যথা’। এই চলচ্চিত্রগুলো একাধিক বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেছে।
সালাহউদ্দিন জাকী তার ‘ঘুড্ডি’ চলচ্চিত্রে একজন মুক্তিযোদ্ধা ও বর্তমানে বেকার কিন্তু প্রগতিশীল যুবকের বয়ানে রাজনৈতিক দর্শন, গভীর জীবনদর্শন সমৃদ্ধ সংলাপ দিয়ে গতানুগতিক বাংলাদেশি চলচ্চিত্র থেকে আলাদা করতে পেরেছেন। আমজাদ হোসেন পূর্বের দশকের মতো এই দশকেও ‘জন্ম থেকে জ্বলছি’, ‘দুই পয়সার আলতা’ ও ‘ভাত দে’ চলচ্চিত্র দিয়ে আলোচনায় ছিলেন। ‘দুই পয়সার আলতা’ ও ‘ভাত দে’ দুটি চলচ্চিত্রেই সহায় সম্বলহীন তরুণীর সমাজে ঠিকে থাকার সংগ্রামের চিত্র। আলমগীর কবীর ‘মোহনা’ ও ‘মহানায়ক’ দিয়ে পর্দায় নিয়মিত ছিলেন। এর মধ্যে দ্বিতীয় ছবিটির স্টাইলে বাণিজ্যিক প্রভাব বিদ্যমান। এছাড়া আখতারুজ্জামানের ‘প্রিন্সেস টিনা খান’, শেখ নিয়ামত আলী ‘দহন’, আফতাব খান টুলুর ‘দায়ী কে’, কবীর আনোয়ারের ‘তোলপাড়’, শিবলী সাদিকের ‘ভেজা চোখ’, শফিকুর রহমানের ‘ঢাকা ’৮৬’, মতিন রহমানের ‘রাঙ্গা ভাবী’, ও মালেক আফসারীর ‘ক্ষতিপূরণ’ ঢাকাই চলচ্চিত্রকে সমৃদ্ধ করেছে।
তোজাম্মেল হক বকুলের ফোক-ধারার ‘বেদের মেয়ে জোছনা’ সর্বকালের সর্বোচ্চ আয়কারী বাংলাদেশি চলচ্চিত্র। এটি রাজকুমার ও বেদের মেয়ের প্রেম, তাদের বিচ্ছেদ ও মিলনের গল্প। এটি ব্যবসা সফলতার পাশাপাশি সমালোচকদেরও নজর কাড়ে। ব্রিটিশ ফিল্ম ইনস্টিটিউটের জরিপে এটি সমালোচকদের দৃষ্টিতে পঞ্চম স্থান লাভ করে। এপার বাংলার সফলতার ধারাবাহিকতায় পশ্চিমবঙ্গেও চলচ্চিত্রটির পুনর্নির্মাণ হয়। এই দশকে নির্মিত লোককাহিনিভিত্তিক উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র হল সফদার আলী ভূঁইয়ার ‘রসের বাইদানী’, আজিজুর রহমানের ‘রঙিন রূপবান’, হারুনর রশীদের ‘রঙিন গুনাই বিবি’, ময়মনসিংহ গীতিকা অবলম্বনে শামসুদ্দীন টগরের ‘মহুয়া সুন্দরী’ এবং মনসামঙ্গল অবলম্বনে চাষী নজরুল ইসলামের ‘বেহুলা লখিন্দর’, যা ছিল জহির রায়হানের ক্লাসিক ‘বেহুলা’র এক ধরনের ব্যর্থ রিমেক।
বাণিজ্যভাবে রমরমা এই দশকে অ্যাকশনে ব্যাপক পরিবর্তন আনেন শহীদুল ইসলাম খোকন। সোহেল রানার এ শিষ্য নিজের তৃতীয় ছবি ‘লড়াকু’ দিয়ে বাজিমাত করেন। এ ছবিতে অভিষেক হয় রুবেলের। এরপর কুংফু নির্ভর ছবিতে নতুন যুগের সূচনা করে খোকন-রুবেল জুটি। রুবেল হয়ে যান তরুণদের ট্রেন্ড সেটার।
১৯৯০-১৯৯৯ : নতুন মুখ ও কপি চলচ্চিত্রের জনপ্রিয়তা
চলচ্চিত্রে নতুন মুখের আগমন অভিনব কোন ট্রেন্ড নয়। তবুও ১৯৯০-এর দশকের নবীনদের আগমন দর্শক ও চলচ্চিত্র বোদ্ধাদের মাঝে ইতিবাচক সাড়া ফেলে। এহতেশামের ‘চাঁদনী’ চলচ্চিত্র দিয়ে আগত নতুন জুটি নাঈম-শাবনাজের জনপ্রিয়তা তৎকালীন প্রতিষ্ঠিত অভিনেতা-অভিনেত্রীদের থেকে কোন অংশে কম ছিল না। এহতেশামকে বলা হতো নতুন তারকা তৈরির কারিগর। তার হাত ধরেই আগত অনেক অভিনয়শিল্পী পরবর্তীকালে চলচ্চিত্রশিল্পে তারকাখ্যাতি উপভোগ করেছেন। নাঈম-শাবনাজ তার ব্যতিক্রম নয়। এই জুটির ‘চোখে চোখে’, ‘দিল’, ‘লাভ’, ‘টাকার অহংকার’ ও ‘ফুল আর কাঁটা’ ব্যবসায়িক দিক থেকে সফল হয়। তবে জনপ্রিয়তার শীর্ষে থাকা অবস্থায় তারা বিয়ে করে চলচ্চিত্রকে বিদায় জানান। একই সময়ে এহতেশাম নিয়ে আসেন শাবনূরকে। শাবনূর তার প্রথম চলচ্চিত্রে নাঈম-শাবনাজদের থেকে জনপ্রিয়তা অর্জনে পিছিয়ে থাকলেও পরবর্তী এক দশকের বেশি সময় বাংলা চলচ্চিত্রের শীর্ষ অভিনেত্রীর স্থান অধিকার করেছিলেন, পেয়েছেন একাধিক পুরস্কার ও সম্মাননা।
নতুন মুখের সফলতার ধারাবাহিকতায় শুরু হয় নতুনদের রাজত্ব। পুরোনোদের পাশাপাশি নতুনদের চলচ্চিত্র হিট হতে থাকে। এর মধ্যে সোহানুর রহমান সোহান ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ চলচ্চিত্রের মধ্য দিয়ে নিয়ে আসেন সালমান শাহ-মৌসুমী। অকালপ্রয়াত সালমান শাহ মাত্র চার বছরের কর্মজীবনেই তার অভিনয় দক্ষতা, স্টাইল ও ফ্যাশন-সেন্স দিয়ে তৎকালীন ও পরবর্তী প্রজন্মের কাছে স্টাইল আইকন হয়ে রয়েছেন। তাকে বর্তমান একাধিক জনপ্রিয় অভিনেতা আইডল হিসেবে দেখেন এবং তার স্টাইল অনুসরণের চেষ্টা করেন। তার অভিনীত ‘স্বপ্নের ঠিকানা’, ‘সত্যের মৃত্যু নাই’, ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ বাংলাদেশের শীর্ষ দশ ব্যবসাসফল চলচ্চিত্রের অন্তর্ভুক্ত। অন্যদিকে একই চলচ্চিত্র দিয়ে আগমন করা প্রিয়দর্শিনী অভিনেত্রী মৌসুমী তার অভিনয় দক্ষতা ও রূপ-সৌন্দর্য দিয়ে দর্শক টেনেছেন।
এ ছাড়া এ দশকে আগত নবীনদের মধ্যে ওমর সানী, আমিন খান, অমিত হাসান, রিয়াজরা প্রথম ছবিতে পিছিয়ে পড়লেও পরবর্তীকালে একাধিক হিট চলচ্চিত্র উপহার দেন। এদের মধ্যে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছেন রিয়াজ। বাণিজ্যিক ও শৈল্পিক দুই ধারাতেই তিনি সফল হন। বাকিরা অল্প সময়ে মানহীন ও দুর্বল গল্পের চলচ্চিত্র এবং খল চরিত্রে অভিনয় করে হারিয়ে গেলেও রিয়াজ দীর্ঘদিন মান ধরে রেখে সকল ধরনের চলচ্চিত্রে অভিনয় করে দর্শকদের আস্থার প্রতীক ছিলেন।
বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ প্রযোজনায় গৌতম ঘোষ নির্মাণ করেন ‘পদ্মা নদীর মাঝি’ ও বাসু চ্যাটার্জী নির্মাণ করেন ‘হঠাৎ বৃষ্টি’। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত ‘পদ্মা নদীর মাঝি’ ছবিটি জেলেজীবনের দুঃখ-দুর্দশার চিত্র। এটি শৈল্পিক মান ও অভিনয় দক্ষতা দিয়ে সমালোচকদের নিকট থেকে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া লাভ করে। অন্যদিকে সুস্থ বিনোদনধর্মী প্রেমের গল্প নিয়ে নির্মিত ‘হঠাৎ বৃষ্টি’ ছবিটি দুই বাংলায় ব্যাপক সাড়া ফেলে।
এই দশকের নবীনদের আগমনের পাশাপাশি বিদেশি চলচ্চিত্রের অফিশিয়াল ও আনঅফিশিয়াল পুনর্নির্মাণ জনপ্রিয়তা লাভ করে। বলিউডের ‘কেয়ামত সে কেয়ামত তক’-এর অফিশিয়াল রিমেক ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’-এর মধ্য দিয়ে এই ট্রেন্ড শুরু হয়। এরপর নির্মাতারা মৌলিক গল্পের ছবি নির্মাণের ঝুঁকিতে না গিয়ে বিদেশি এসব ছবির রিমেকে মগ্ন হন। যদিও এর আগে থেকে ঢালিউডে নকল গল্পের অসংখ্য ছবি তৈরি হয়েছে। তবে এবার অফিশিয়াল ও আনঅফিশিয়াল তর্কটি যুক্ত হয়।
নকল বা রিমেক ছবি নির্মাণ করে জনপ্রিয়তা লাভ করলেও কয়েকজন নির্মাতা তখনো মৌলিক ছবি নির্মাণ করে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন। স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ তার প্রিয়বন্ধু আনিস সাবেতের মৃত্যুর খবর শোনার পর চলচ্চিত্র নির্মাণে আগ্রহী হন। তার নির্মিত প্রথম চলচ্চিত্র ‘আগুনের পরশমণি’। স্বাধীনতা যুদ্ধকালে এক গেরিলা যোদ্ধার একটি পরিবারে আশ্রয়গ্রহণ, যুদ্ধযাত্রা ও তার মর্মান্তিক পরিণতির গল্প তুলে ধরা হয় সরকারি অনুদানের এ ছবিতে। এই চলচ্চিত্র সম্পর্কে নির্মাতা কবীর আনোয়ার বলেন, “এতোবড় মাপের ছবি বাংলাদেশে আগে কখনো হয়নি, জানি না সামনে কেউ আসবেন কিনা এরকম ছবি বানানোর মেধা নিয়ে।” এছাড়া একই দশকে তার নিজের উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’ সমালোচকদের প্রশংসা অর্জন করে এবং ব্রিটিশ ফিল্ম ইনস্টিটিউটের জরিপে সমালোচকদের দৃষ্টিতে সেরা চলচ্চিত্রের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়।
কাজী হায়াৎ তার চলচ্চিত্রে সামাজিক অনাচার ও সমস্যাবলির চিত্রায়ণ দেখান। তার নির্মিত ‘দাঙ্গা’, ‘দেশপ্রেমিক’, ‘আম্মাজান’ চলচ্চিত্রগুলো সেসবের গভীর চিত্রায়ণ। শেষটি ঢালিউডের অন্যতম আইকনিক চলচ্চিত্র। কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেনের দুটি সৃষ্টিকর্ম থেকে আখতারুজ্জামান নির্মাণ করেন ‘পোকা মাকড়ের ঘর বসতি’ এবং চাষী নজরুল ইসলাম নির্মাণ করে ‘হাঙর নদী গ্রেনেড’। দুটিই সরকারি অনুদানে নির্মিত। ‘হাঙ্গর নদী গ্রেনেড’ যুদ্ধের সময়ে দুই মুক্তিযোদ্ধাকে বাঁচাতে এক মায়ের তার একমাত্র সন্তানকে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সামনে তুলে ধরার গল্প। বিখ্যাত ভারতীয় চলচ্চিত্র নির্মাতা সত্যজিৎ রায় ১৯৭৫ সালে এই উপন্যাস পড়ার পর এটি অবলম্বনে চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে ইচ্ছা পোষণ করে সেলিনা হোসেনকে চিঠি লিখেছিলেন। কিন্তু বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অবস্থার কারণে সেটি হয়ে ওঠেনি। এছাড়া নাসিরউদ্দিন ইউসুফের ‘একাত্তরের যীশু’, শেখ নিয়ামত আলীর ‘অন্য জীবন’, মোরশেদুল ইসলামের ‘দুখাই’ ও ‘দীপু নাম্বার টু’, এবং তানভীর মোকাম্মেলের ‘নদীর নাম মধুমতী’ ও ‘চিত্রা নদীর পাড়ে’ নির্মাণগুণে ও শিল্প দক্ষতায় এগিয়ে ছিল।
এ দশকেই অভিষেক হয় ঢাকাই সিনেমায় দীর্ঘ সময় রাজত্ব বিস্তারকারী শাকিব খানের। যদিও মান বিচারে তার উল্লেখযোগ্য ছবি হাতে গোনা। নৃত্য পরিচালক আজিজ রেজার ছোট ভাই পরিচয়ে তিনি চলচ্চিত্র জগতে আসেন এবং দীর্ঘ সময় ধরে ঢালিউডের শীর্ষস্থানে অবস্থান করেন।
২০০০-২০০৯ : চলচ্চিত্রে অশ্লীলতা ও উত্তরণের প্রয়াস
নতুন শতাব্দীতে প্রবেশ করে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের দৃশ্যপট পাল্টে যায়। এক দশক আগে একটু একটু করে এ প্রবণতা শুরু হলেও এই সময়ে সিডি-ভিসিডির আগমনে দর্শক হলবিমুখ হতে থাকে এবং দর্শক টানতে নির্মাতারা চলচ্চিত্রে অশ্লীলতা, অশ্লীল গান-অঙ্গভঙ্গির ব্যবহার শুরু করে। এই সব ছবির মান অত্যন্ত নিম্ন ও গল্পহীন। মাত্রাতিরিক্ত মারপিট, সহিংসতা, অশ্লীল ও অসংযত সংলাপ ছিল এই সময়ের চলচ্চিত্রের মুখ্য বৈশিষ্ট্য। ‘কাটপিস’-এর প্রবল ব্যবহারের ফলে পারিবারিক সিনেমা কেন্দ্রিক দর্শকেরা আরও বেশি সিনেমা হল থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে শুরু করে। অশ্লীল সিনেমা কেন্দ্রিক প্রতিষ্ঠান রাতারাতি ফুলেফেঁপে উঠলেও ধরাশায়ী হয় পুরোনো প্রতিষ্ঠানগুলো।
এই সময়ে কোণঠাসা হয়ে পড়েন আমজাদ হোসেন, শহীদুল ইসলাম খোকন, এজে মিন্টুর মতো নামী পরিচালকেরা। আবার অভিজ্ঞ পরিচালকদের মধ্যে মালেক আফসারী, মনতাজুর রহমান আকবর, বদিউল আলম খোকনরা এই স্রোতে গা ভাসান। অশ্লীলতার ফলে চলচ্চিত্র দুই ভাগে বিভক্ত হয়। প্রথমটি মূলধারার, অন্যটি বিকল্প ধারার। মূলধারার পরিচালকদের মধ্যে কাজী হায়াৎ একাই যুদ্ধ চালিয়ে যান। তিনি অশ্লীলতার মধ্যেও ‘ইতিহাস’, ‘অন্ধকার’, ‘অন্য মানুষ’, ‘সমাজকে বদলে দাও’-এর মতো সামাজিক প্রতিরোধমূলক চলচ্চিত্র নির্মাণ করে গেছেন।
২০০৭ সাল পরবর্তী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আগমনের পর তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে চলচ্চিত্রে অশ্লীলতা রোধ করতে টাস্কফোর্স গঠন করা হয়। এর মধ্যে একাধিক হলের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগে লাইসেন্স বাতিল, অশ্লীল পোস্টারের জন্য কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি হয়। এছাড়া চলচ্চিত্র ফিল্ম ফেডারেশন মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে।
যাই হোক, এই দশকের বাংলাদেশি চলচ্চিত্রের জন্য বড় অর্জন ছিল তারেক মাসুদের ‘মাটির ময়না’ ছবির জন্য কান চলচ্চিত্র উৎসব থেকে ডিরেক্টর্স ফোর্টনাইট পুরস্কার লাভ। এটি মুক্তিযুদ্ধের পূর্বে গণ-অভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপটে তারেক মাসুদের ছেলেবেলার অভিজ্ঞতা নিয়ে নির্মিত। প্রাথমিক পর্যায়ে ছবিটি বাংলাদেশে প্রদর্শনে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল। একই সময়ে ভিন্ন স্বাদের গল্প নিয়ে আসেন মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। তার ‘ব্যাচেলর’ ছবিটিতে ব্যাচেলর জীবনের সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনার গল্প তুলে ধরেন সহজ ও সাবলীল ভঙ্গিমায়, যা দর্শক ও সমালোচক উভয়কে আকৃষ্ট করে। এক সময় আন্তর্জাতিক স্তরে বাংলাদেশের মুখ হয়ে ওঠেন তিনি। মূলত টেলিভিশনে নতুন ধারার গল্প রীতি তৈরি করে চলচ্চিত্রে থিতু হন ফারুকী, যেখানে তার শিষ্যরা রাজত্ব করছে এখন।
সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ’র উপন্যাস অবলম্বনে তানভীর মোকাম্মেল নির্মাণ করেন ‘লালসালু’। গ্রামীণ সমাজে ধর্মীয় কুসংস্কার ও ভণ্ডামির চিত্রায়ণ এটি। চাষী নজরুল ইসলাম ফোক গীতিকবি হাছন রাজার জীবনী নিয়ে নির্মাণ করে ‘হাছন রাজা’। হুমায়ূন আহমেদ এই দশকের ভিন্ন দর্শনের ও ম্যাজিক রিয়েলিজম নির্ভর ‘দুই দুয়ারী’ এবং যুদ্ধকালীন একদল আশ্রয়প্রার্থীর নৌযাত্রার গল্প নিয়ে ‘শ্যামল ছায়া’ নির্মাণ করেন। ‘শ্যামল ছায়া’ ছবিটি অস্কারের বিদেশি শাখায় মনোনয়নের জন্য পাঠানো হয়। চলচ্চিত্রের দুঃসময়ে হুমায়ূন আহমেদের ‘শ্যামল ছায়া’র মত একই ধরনের গল্প নিয়ে তৌকীর আহমেদ ‘জয়যাত্রা’ দিয়ে তার পরিচালনায় যাত্রা শুরু করেন। আমজাদ হোসেনের কাহিনি নিয়ে নির্মিত তার প্রথম চলচ্চিত্র দিয়েই বাজিমাত করেন তৌকীর এবং এর জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র ও পরিচালক বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। তার দ্বিতীয় চলচ্চিত্র ‘দারুচিনি দ্বীপ’ একদল তরুণের সমুদ্রযাত্রার পূর্ব-প্রস্তুতির গল্প। এটিও শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রের পুরস্কার লাভ করে।
অশ্লীলতায় ছেয়ে যাওয়া এই সময়ে হলবিমুখ দর্শককে হলে ফিরিয়ে আনে ‘মনপুরা’। গিয়াসউদ্দিন সেলিমের গ্রামীণ, পারিবারিক ও নিটোল প্রেমের ছবি দিয়ে সমালোচক ও দর্শকদের মনে দাগ কেটে যায়। চলচ্চিত্রের পাশাপাশি এর গানগুলোও থেকে যায় দর্শকের মুখে মুখে। ঢাকাই ইন্ডাস্ট্রিতে স্থায়ী স্থান পাওয়া ছবিটির রিমেক হয় কলকাতায়। এ সময় ‘হৃদয়ের কথা’ মতো অল্প কয়েকটি সুস্থ ধারার ছবি জনপ্রিয়তা পায়। এ ছাড়া আবু সাইয়ীদের ‘নিরন্তর’সহ কিছু শৈল্পিক ছবি দর্শকের মন কাড়ে। এ দশকের ইমপ্রেস টেলিফিল্ম টেলিভিশনের জন্য চলচ্চিত্র নির্মাণ করে আলোচিত-সমালোচিত হয়। কিন্তু এ সময় প্রতিষ্ঠানটি হয়ে পড়ে শৈল্পিক ছবির অন্যতম ঘর।
২০০২ সালে মুক্তি পায় ‘মনের মাঝে তুমি’। যৌথ প্রযোজনার সিনেমাটি সারা দেশে তুমুল জনপ্রিয়তা পায়। কিন্তু লক্ষণীয় বিষয় হলো, আগের দশকের ‘হঠাৎ বৃষ্টি’সহ ভারতের সঙ্গে নির্মিত বেশির ভাগ যৌথ ছবি বাংলাদেশে জনপ্রিয় হলেও সে দেশে খুব একটা সাড়া পায়নি। একই দশকে মুক্তি পাওয়া এ কে সোহেল পরিচালিত ‘খায়রুন সুন্দরী’কে ধরা হয় ‘বেদের মেয়ে জোছনা’র মতো তোলপাড় করা ছবি। এরপর নতুন করে ফোক ধাঁচের কিছু ছবি তৈরি হলেও বাজার পায়নি।
এ দশকে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো মাল্টিপ্লেক্সের সূচনা। ২০০৪ সালে রাজধানীর বসুন্ধরা সিটিকে যাত্রা করে স্টার সিনেপ্লেক্স। তাদের হাত ধরে সিনেমার দেখায় নতুন রূপান্তর ঘটে। তবে নতুন মাল্টিপ্লেক্স পেতে আরও এক দশক অপেক্ষা করতে হয়।
২০১০-২০১৯ : ডিজিটাল আন্দোলন ও খুঁড়িয়ে চলা
এই দশক থেকে ডিজিটাল চলচ্চিত্রের পুরোদমে যাত্রা শুরু হয়। এর আগেও কিছু ডিজিটাল ছবি নির্মিত হলে সেগুলো আলোচিত ছিল না। বিশেষ করে নুরুল আলম আতিকের ‘ডুবসাঁতার’ স্বীকৃতি না পাওয়া দুঃখজনক। জাজ মাল্টিমিডিয়া ‘ভালোবাসা রঙ’ ছবি দিয়ে এই আন্দোলনকে বেগবান করে এবং নিজেদের অর্থায়নে শতাধিক হলে ডিজিটাল প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করে। তারা একে একে নির্মাণ করে ‘অন্যরকম ভালোবাসা’, ‘পোড়ামন’, ‘অগ্নি’, ‘দেশা দ্য লিডার’, ‘রক্ত’, ‘পোড়ামন ২’, ‘নবাব’, ‘দহন’সহ একাধিক হিট চলচ্চিত্র। এরপর অতি অল্প সময়ে সনাতনী পদ্ধতিতে চলচ্চিত্র প্রদর্শন বন্ধ হয়ে যায়। যদিও মফস্বলে ঘুরে-ফিরে ডিজিটালে রূপান্তরিত অশ্লীল চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হতে থাকে।
‘গৌরবময়’ অতীতের শত শত প্রডাকশন হাউস বন্ধ হয়ে যাওয়ার প্রেক্ষিতে একমাত্র জাজের আধিপত্য চোখে পড়ে এ দশকে। প্রদর্শন ব্যবস্থার আধুনিকায়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখা সত্ত্বেও ভারসাম্যহীন ‘যৌথ প্রযোজনা’ ও নানা কারণে প্রতিষ্ঠানটি বিতর্কিত হয়। দশকের শেষ দিকে এসে বিপর্যয়ের মুখে পড়ে।
এই দশকে বিকল্প ধারার চলচ্চিত্রগুলোই আলোচনায় ছিল। ‘একাত্তরের যীশু’ নির্মাণের দীর্ঘ বিরতির পর নাসিরউদ্দিন ইউসুফ চলচ্চিত্র নির্মাণে আসেন ‘গেরিলা’ দিয়ে। সৈয়দ শামসুল হকের ‘নিষিদ্ধ লোবান’ অবলম্বনে নির্মিত চলচ্চিত্রটিতে পশ্চিম পাকিস্তানের সেনাবাহিনী ও রাজাকারদের বর্বরতা, পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের প্রতিরোধ ও স্বাধীনতার দাবির চিত্রায়ণ রয়েছে। ছবিটি দেশে বিদেশে একাধিক পুরস্কারের ভূষিত হয়। মোস্তফা সরয়ার ফারুকী ‘টেলিভিশন’ ছবি দিয়ে প্রযুক্তির গুরুত্ব তুলে ধরেন, যা দেশে-বিদেশে প্রশংসিত হয়। অন্যদিকে তার ‘পিঁপড়াবিদ্যা’ ছবিটি মিশ্র থেকে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া লাভ করে। তার ‘ডুব’ ছবিটি হুমায়ূন আহমেদের জীবনীর চিত্রায়ণের দাবিতে তার দ্বিতীয় স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন ফারুকীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিল করেন। গাজী রাকায়েত তার ‘মৃত্তিকা মায়া’ ছবি দিয়ে সর্বোচ্চ ১৭টি বিভাগে জাতীয় পুরস্কার পেয়ে রেকর্ড করে।
মোরশেদুল ইসলাম যথাক্রমে মুহম্মদ জাফর ইকবালে উপন্যাস অবলম্বনে ‘আমার বন্ধু রাশেদ’ এবং হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাস অবলম্বনে ‘অনিল বাগচীর একদিন’ নির্মাণ করে। দুটিই মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে নির্মিত। প্রথমটি এক কিশোর মুক্তিযোদ্ধার গল্প, অপরটি একজন সাধারণ অফিস কেরানির গল্প। ছবি দুটি বেশ প্রশংসা লাভ করে। মাসুদ পথিক নির্মলেন্দু গুনের কবিতা অবলম্বনে ‘নেকাব্বরের মহাপ্রয়াণ’ ও চিত্রকর শাহাবুদ্দিন আহমেদের চিত্রকর্ম নারী ও কবি কামাল চৌধুরী কবিতা যুদ্ধশিশু অবলম্বনে ‘মায়া দ্য লস্ট মাদার’ নির্মাণ করে প্রশংসিত হন। আবু শাহেদ ইমনের ‘জালালের গল্প’ জালালের জীবনের শৈশব, কৈশোর ও তরুণ বয়সের চিত্রায়ণ। এটিও দেশে-বিদেশে একাধিক চলচ্চিত্র উৎসবে স্বীকৃতি লাভ করে।
এই সময়ের আরও দুটি আলোচিত চলচ্চিত্র হল ‘অজ্ঞাতনামা’ ও ‘আয়নাবাজি’। বিদেশ থেকে আসা লাশের পরিচয় বিভ্রাট নিয়ে তৌকীর আহমেদের নির্মিত ‘অজ্ঞাতনামা’ হলে মুক্তি পাওয়ার পর দর্শকের সাড়া না পেলেও অনলাইন প্ল্যাটফর্মে আসার পর দর্শক এর ভূয়সী প্রশংসা করে। অন্যদিকে, দণ্ডপ্রাপ্ত আসামির পরিবর্তে ভাড়ায় জেল খাটার অভিনব গল্প নিয়ে অমিতাভ রেজার নির্মিত প্রথম চলচ্চিত্র ‘আয়নাবাজি’ ব্যবসায়িক ও সমালোচকদের দৃষ্টিতে এই বছরের অন্যতম সফল চলচ্চিত্র। আয়না চরিত্রে চঞ্চল চৌধুরীর অভিনয়, চমৎকার গল্প, এবং গল্পের বাঁক ছবিটিকে আকর্ষণীয় করে তুলেছে। ছবিটি দক্ষিণ ভারতে রিমেকও হয়। দীপংকর দীপনের ‘ঢাকা অ্যাটাক’ বাণিজ্যিক ধারার চলচ্চিত্রের মোড় পাল্টে দেয়। সিরিয়াল খুন ও পুলিশি তদন্ত-বোমা বিস্ফোরণ রোধ এবং খল চরিত্রে নতুনত্ব নিয়ে আসা তাসকিন আহমেদের অভিনয় মুক্তির প্রথম দিন থেকেই দর্শক টানে।
হুমায়ূন আহমেদের মিসির আলী সিরিজের প্রথম উপন্যাস নিয়ে নির্মিত ‘দেবী’ ছবিটিও দর্শক টানে। হুমায়ূন-পাঠকেরা হলে দেখতে যান তাদের প্রিয় লেখকের রহস্যধর্মী উপন্যাসের চলচ্চিত্রায়ণ। তৌকীর আহমেদ ভাষা আন্দোলনের গল্প নিয়ে নির্মাণ করে ‘ফাগুন হাওয়ায়’, যা মিশ্র প্রতিক্রিয়া লাভ করে, তবে ভাষা আন্দোলন নিয়ে প্রথম পূর্ণাঙ্গ প্রয়াস হিসেবে আলোচিত হয়। অন্যদিকে তানিম রহমান অংশু নির্মাণ করেন সার্ফিং নিয়ে বাংলাদেশের প্রথম চলচ্চিত্র ‘ন ডরাই’। এটি এক নারী সার্ফারের বিবাহ-পরবর্তী স্বামীর সংসারে দুঃখপূর্ণ জীবনের চিত্র তুলে ধরে। এছাড়া আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ সাদের ‘লাইভ ফ্রম ঢাকা’ ছবিটি মুক্তির আগেই দেশের বাইরে বিপুল প্রশংসা লাভ করে। কিন্তু দেশের মুক্তির পর অল্পসংখ্যক দর্শকের কাছে সেটা উন্মোচিত হয় এবং তাদের কাছে প্রশংসিত হলে অধিকাংশ দর্শকই হলে গিয়ে ছবিটির স্বাদ নিতে পারেনি। এছাড়া ইমতিয়াজ বিজনের ‘মাটির প্রজার দেশে’, নূর ইমরান মিঠুর ‘কমলা রকেট’ ছবিগুলো দর্শক না টানলে সমালোচকেরা এর প্রশংসা করেন। গিয়াসউদ্দিন সেলিম দীর্ঘ বিরতি ভাঙেন ‘স্বপ্নজাল’ দিয়ে। দুই ধর্মের দুই তরুণ-তরুণীর প্রেমের গল্প নিয়ে নির্মিত ছবিটি তার পূর্ববর্তী ছবির মত দর্শক টানতে ব্যর্থ হয়।
এ দশকে একের পর এক সিনেমা হল বন্ধের খবর আসে। গুটি কয়েক মাল্টিপ্লেক্স বা পুরোনো হলের সংস্কার হলেও প্রায় দেড় হাজার সিনেমা হল থেকে নেমে আসে শ’খানেকে।
২০২০-২০২১ : করোনার ধকল ও অতঃপর
২০২০-এ এসে চলচ্চিত্রশিল্প নতুনভাবে যাত্রা শুরু করবে এই ভাবনা ছিল সকলের মনে। বেশ কিছু চলচ্চিত্র মুক্তির পূর্বেই আলোচনায় ছিল। কিন্তু কোভিড-১৯ বৈশ্বিক মহামারির কারণে ২০২০ সালে অনান্য শিল্পখাতের মতো চলচ্চিত্র শিল্পেও ব্যাপক ধস নামে। সিনেমা হল বন্ধ থাকায় চলচ্চিত্র মুক্তির পরিমাণ কমে যায়। বছরের সবচেয়ে আলোচিত চলচ্চিত্র ‘ঊনপঞ্চাশ বাতাস’। ডার্ক-সায়েন্স ফিকশন-রোমান্টিক ঘরানার ছবিটি দর্শক সমালোচকসহ বিনোদন মাধ্যমের অনেকের প্রশংসা লাভ করে। করোনার কারণে ৭ মাস সিনেমা হল বন্ধ থাকার পর হল খোলা হলে ছবিটি দেখতে হলমুখী হয় দর্শক। বছরের আরেকটি প্রশংসিত ছবি হল ‘গণ্ডি’। বন্ধুত্বের সঙ্গে বয়সের কোন সম্পর্ক নেই সেটাই ছবিটির উপজীব্য ছিল। দর্শক-সমালোচকেরাও গ্রহণ করেছিল ছবিটি।
স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষে তার জীবনী নিয়ে নির্মিত হয় একাধিক চলচ্চিত্র। তন্মধ্যে রয়েছে ‘টুঙ্গিপাড়ার মিয়া ভাই’, ‘আগস্ট ১৯৭৫’ ‘চিরঞ্জীব মুজিব’। টুঙ্গিপাড়ার মিয়া ভাই’ শেখ মুজিবের কৈশোরের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলি নিয়ে নির্মিত। ‘আগস্ট ১৯৭৫’ বিভিন্ন দলিল-দস্তাবেজ অনুসারে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডের পরবর্তীদিনের ঘটনাবলির চিত্রায়ণ। অন্যদিকে, ‘চিরঞ্জীব মুজিব’ শেখ মুজিবুর রহমানের ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ অবলম্বনে নির্মিত হয়। এছাড়া নির্মাণাধীন রয়েছে ভারতীয় পরিচালক শ্যাম বেনেগালের পরিচালনায় ‘বঙ্গবন্ধু’ ছবিটি।
স্বাধীনতার পঞ্চাশতম বছরে এসে এখন পর্যন্ত আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশীয় চলচ্চিত্রের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় অর্জন ’রেহানা মরিয়ম নূর’-এর কান চলচ্চিত্র উৎসবের মূল প্রতিযোগিতা পর্বে অংশগ্রহণ। কান চলচ্চিত্র উৎসবের লাল গালিচা এবং প্রদর্শনীতে নজর কেড়েছেন পরিচালক সাদ ও অভিনেত্রী বাঁধন। এ ছাড়া রেজওয়ান শাহরিয়ার সুমিতের ‘নোনা জলের কাব্য’ দেশ-বিদেশে প্রশংসিত হয়েছে। এখনো পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি বিদেশি তহবিল পাওয়া ছবিও এটি। এ ছাড়া বুসানে ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে প্রদর্শিত হয়েছে মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর প্রথম ইংরেজি ভাষার সিনেমা ‘নো ল্যান্ডস ম্যান’ ও মোহাম্মদ রাব্বী মৃধার ‘পায়ের তলায় মাটি নাই’।
করোনা মহামারির কারণে ঘরবন্দী মানুষের বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম হয়ে ওঠে ওটিটি প্ল্যাটফর্ম। আই থিয়েটার, বঙ্গ, বিঞ্জ, চরকি এসব ওটিটি প্ল্যাটফর্মগুলো দর্শক টানতে শুরু করে। ২০২১ সালে এসে পুনরায় হল খুলে দিলেও হল সংখ্যা কমে যাওয়ার ফলে চলচ্চিত্র মুক্তি পেলেও সেগুলো আশানুরূপ ব্যবসা করতে পারছে না। তবে দর্শকদের জন্য আশার বিষয় হল রাজশাহী, বগুড়া ও চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সিনেপ্লেক্স নির্মাণ। এর মাধ্যমে নড়বড়ে এই চলচ্চিত্রশিল্প কতটা এগিয়ে যেতে পারবে সেটাই এখন দেখার বিষয়।