‘স্বামীবৃত্তান্ত’ নিয়ে শামসুর রহমানকে চিঠি লেখেননি রোজিনা!
লেখক আনিসুল হকের নামে প্রচারিত একটি লেখা নিয়ে বছর খানেক ধরে আলোচনায় আছেন ৮০ দশকের জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা রোজিনা। যেখানে বলা হয়, প্রায় তিন দশক আগে তৎকালীন সাপ্তাহিক বিচিত্রায় একাধিক বিয়ে সংক্রান্ত একটা সংবাদের প্রতিবাদ জানিয়ে পত্রিকাটির সম্পাদক কবি শামসুর রাহমান বরাবর চিঠি লিখেছিলেন তিনি।
পুরনো সেই চিঠির ব্যাপারে জানতে চাইলে রোজিনা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চিঠিটি এখনো দেখি নাই। তবে আপনিসহ দুয়েকজনের কাছে শুনেছি, আমার নামে একটা চিঠি ভাইরাল হয়েছে। কে বা কারা এটা করেছে সেটা জানি না। সবাই যা বলছে, তাতে এটা অনেক পুরনো একটা ঘটনা। আমার জানা মতে, আমি কোনো পত্রিকা বরাবর কোনো চিঠি লিখি নাই। সেই সময়ে আমার অ্যাসিস্ট্যান্ট, সেক্রেটারি বা কোনো ভক্ত শুভাকাক্সক্ষী এমন কোনো চিঠি লিখেছিল কিনা সেটাও আমার মনে নেই।’
একাধিক বিয়ে সংক্রান্ত খবরের বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দিলে রোজিনা বলেন, ‘আমি সিনেমা ছেড়েছি সেই ১৯৯৩ সালে। তখন আমি ক্যারিয়ারের তুঙ্গে অবস্থান করছিলাম। আমি বলব আমার স্বর্ণ সময়েই আমি সিনেমা ছেড়েছি। আর ক্যারিয়ার তুঙ্গে থাকা অবস্থায় আমার নামে প্রচুর গুজব, গুঞ্জন এগুলো হরহামেশাই পত্রিকাগুলো ছাপত। সেগুলো দেখেও না দেখার ভান করতাম। আমার একাধিক বিয়ের গুঞ্জন যেমন প্রকাশ হয়েছে তেমনি আমার একাধিক সন্তানের খবরও প্রকাশ করেছে অনেক পত্রিকা। এমনকি আমার আড়াই/তিন মাসের ছোট্ট ভাইকেও সেই সময়ে আমার সন্তান হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিয়ে গুঞ্জন বেরিয়েছিল পত্রিকার পাতায়। তো এসব নিয়ে তো মাথা ঘামাইনি কখনো। চিঠি লেখার তো প্রশ্নই ওঠে না।’
লেখক, কবি ও সাংবাদিক আনিসুল হকে ‘কবি শামসুর রাহমানকে যে অসাধারণ উত্তর দিয়েছিলেন নায়িকা রোজিনা’ শিরোনামের লেখাটি প্রকাশ করেছে রম্য বিষয়ক লেখার পোর্টাল ইয়ার্কি।
লেখাটি পড়ুন—
কবি শামসুর রাহমান তখন সাপ্তাহিক বিচিত্রার সম্পাদক। বিচিত্রায় প্রচ্ছদকাহিনি বের হলো: রোজিনার স্বামীবৃত্তান্ত।
চিত্রনায়িকা রোজিনা তখন বাংলাদেশের এক নম্বর চলচ্চিত্র অভিনেত্রী । বিচিত্রা লিখল, রোজিনার গোটা তিনেক স্বামী ছিল, একজন ছিলেন রাস্তার ধারের সন্ন্যাসী টাইপ ফকির। তাঁর ছবিও ছাপা হলো। কাবিননামা ইত্যাদি।
রোজিনা সেই প্রচ্ছদকাহিনির একটা অপূর্ব প্রতিবাদ করেছিলেন। আমি স্মৃতি থেকে বলছি।
রোজিনা লিখলেন:
প্রিয় কবি শামসুর রাহমান,
আপনি বাংলাদেশের প্রধান কবি। আপনি দৈনিক বাংলা এবং বিচিত্রার সম্পাদক। আপনি জাতির বিবেক। আপনার জ্ঞান, বিদ্যা, বিবেচনা, সহৃদয়তার ওপরে নির্ভর করে আছে পুরো দেশ। আমিও।
আমি একজন খেটে খাওয়া মানুষ। আমি একজন শ্রমজীবী নারী। আমি রোজ কাক-ভোরে বিছানা ছাড়ি। স্নান করে মেকাপ করতে বসি। সকাল নটার মধ্যে আমি সেটে গিয়ে উপস্থিত হই। দুই শিফটে শুটিং করি। হাজার হাজার পাওয়ারের আলোয় আমার চামড়া ঝলসে যায়, চোখ পুড়ে আসে। গনগনে সূর্য আর সোলার পাঞ্জার প্রচণ্ড তাপের মধ্যে গরমে আমি কাজ করি। শীতের রাতে যখন সবাই কাঁপে, আমাকে হয়তো পুকুরের জলে নেমে শুটিং করতে হয়। রাত ১২টায় শুটিং শেষ হলে আমি বাড়ি ফিরি। মেকাপ তুলি। সবকিছু সেরে ঘুমুতে যাই যখন, তখন সমস্ত চরাচর ঘুমিয়ে পড়েছে। আজ আমি বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের একজন সেবক। নিজে নিজে সংগ্রাম করে সাধনা করে পরিশ্রম করে গ্রাম থেকে এই পর্যন্ত উঠে এসেছি।
আপনি বাংলাদেশের প্রধান কবি, আপনি আমার সাধনার কথা বলতে পারেন। আপনি আমার শ্রমের কথা বলতে পারেন। আপনি আমাদের চলচ্চিত্রের শিল্প, আমার অভিনয়ের দোষত্রুটি নিয়ে কথা বলতে পারেন। সেসবের কিছুই না করে আপনি একজন শ্রমজীবী নারীর ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন করেছেন। এটা কি আপনি সঙ্গত বলে মনে করেন? এই প্রতিবেদনের সত্য-মিথ্যা নিয়ে আমি কথা বলতে আসিনি। আমার একটাই জিজ্ঞাসা। সম্পূর্ণ নিজের শ্রমে দিনরাত নিজেকে উজাড় করে দিয়ে যে শিল্পীটি বাংলাদেশের চলচ্চিত্র জগতে সামান্য একটু জায়গা করে নিয়ে নিজেকে ঢেলে দিচ্ছে, তার ব্যক্তিগত জীবন অনুসন্ধান করা কি বাংলাদেশের প্রধান কবির বিবেকের কাছে সঙ্গত বলে মনে হয়েছে?
আমি বাংলাদেশের প্রধান কবির শিক্ষার কাছে, রুচির কাছে, বিবেকের কাছে শুধু এই প্রশ্নটি করলাম। আমার আর কিছু বলবার নেই।
(এটা কিন্তু আমি স্মৃতি অবলম্বনে বানিয়ে লিখলাম)