হাউজফুল-রেকর্ড শোর পরও এত কম আয় ‘জাওয়ান’-এর!
সিঙ্গেল স্ক্রিন বাঁচানোর কথা বললেও ভারতীয় সিনেমার ফায়দা পুরোপুরি লুটছে মাল্টিপ্লেক্সগুলো। ‘জাওয়ান’-এর রেকর্ড পরিমাণ শো ও দিনের পর দিন হাউসফুলের গল্প বলা হলেও সপ্তাহ শেষে দেয়া হিসাব অবাক করল। যেখানে রায়হান রাফীর ‘সুড়ঙ্গ’ সপ্তাহ শেষে স্টার সিনেপ্লেক্সে আড়াই কোটি টাকার টিকিট বিক্রির ঘোষণা দেয়, সেখানে সব মিলিয়ে ‘জাওয়ান’-এর আয় নাকি অর্ধ কোটি বা ৫০ লাখের মতো!
প্রথম আলো এক প্রতিবেদনে খোঁজ-খবর নিয়ে জানাচ্ছে, ৮ সেপ্টেম্বর মুক্তির পর বাংলাদেশে ‘জওয়ান’-এর আয় অর্ধকোটি টাকা ছাড়িয়েছে।
ভারতে মুক্তির এক দিন পর আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের ৪৬টি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় ছবিটি। প্রথম দিন থেকে ২৫৩টি করে শো চলছে। গতকাল (১৫ সেপ্টেম্বর) থেকে স্টার সিনেপ্লেক্স ও লায়ন সিনেমাসে সিনেমাটির শোর সংখ্যা বেড়েছে। প্রথম সপ্তাহে স্টার সিনেপ্লেক্সের সাতটি শাখায় প্রতিদিন শো ছিল ৪০টি। এই সপ্তাহে বেড়ে ৫৫টি হয়েছে। সব মিলিয়ে দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে সারা দেশে শোর সংখ্যা ২৫৩টি থেকে বেড়ে ২৭৩টি হয়েছে। শো বাড়লেও হলসংখ্যা অপরিবর্তিত থাকছে।
গত বৃহস্পতিবার দুপুরে ছবির অন্যতম আমদানিকারক পরিচালক অনন্য মামুন প্রথম আলোকে জানান, এর আগে আমদানি করা পাঠান ছবির এক সপ্তাহের আয় ছিল (গ্রস সেল) প্রায় ২৫ লাখ টাকা।
একই সময়ে ‘জওয়ান’-এর আয় প্রায় ৫৫ লাখ টাকা। মামুন বলেন, ‘দ্বিতীয় সপ্তাহে এসে নতুন করে কিছু সিঙ্গেল হলের চাহিদা থাকলেও ওই সব হলের পরিবেশ ও সার্ভারের অভাবে ছবি দিতে পারিনি। তবে দর্শক–চাহিদার কারণে স্টার সিনেপ্লেক্স ও লায়ন সিনেমাসে শোর সংখ্যা বাড়াতে হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, যেসব সিঙ্গেল হলে শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র, সাউন্ড সিস্টেম, পর্দা ও সিট ভালো, সেখানে ছবিটি বেশ ভালো যাচ্ছে।
এদিকে সিঙ্গেল হলের মালিকেরা জানিয়েছেন, ‘জওয়ান’ ‘মন্দের ভালো’। রাজশাহীর রাজতিলক সিনেমা হলের মালিক সাজ্জাদ হোসেন গতকাল দুপুরে প্রথম আলোকে জানালেন, তাঁদের ৫০০ আসনের মিলনায়তনে মুক্তির প্রথম দিনে হাউসফুল গেলেও বাকি দিনগুলোয় ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ দর্শক আসন পূর্ণ হয়েছে। যশোরের মণিহার সিনেমা হলের মালিক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক জিয়াউল ইসলাম জানালেন, মুক্তির পর এক দিনও হাউসফুল না গেলেও শুরু থেকে বিক্রি সন্তোষজনক। তাঁদের ১ হাজার আসনের মিলনায়তনে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ আসন পূর্ণ হয়।
ময়মনসিংহের ছায়াবাণী, রংপুরের শাপলা, শ্রীপুরের চন্দ্রিমা, মানিকগঞ্জের নবীন, সাভারের সেনা অডিটরিয়াম—এই পাঁচ হলে ছবিটির বুকিং এজেন্টের দায়িত্বে আছেন কামাল হোসেন। তিনি জানালেন, জওয়ান এসব হলে ভালো যাচ্ছে। এ পর্যন্ত এই ৫ হলে প্রায় ১৫ লাখ টাকার টিকিট বিক্রি হয়েছে।
ঢাকার মধুমিতা হলে দর্শক টানার জন্য টিকিটের দাম কমিয়েছে কর্তৃপক্ষ। মুক্তির প্রথম দুই দিন খুব একটা ভালো না গেলেও তৃতীয় দিন থেকে দর্শক বেড়েছে হলটিতে। গতকাল বিকেলের দিকে হলটির কর্ণধার ইফতেখার নওশাদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘মুক্তির প্রথম দুই দিন কিছুটা দর্শক–খরা ছিল। টিকিটের মূল্য ৩০০, ২০০ ও ১০০ টাকা থেকে কমিয়ে ২০০, ১২০ ও ৭০ টাকা করা হয়েছে। এর পর থেকে দর্শক কিছুটা বেড়েছে। সন্ধ্যা ও নাইট শোতেও দেড় শ থেকে দু শ করে দর্শক হচ্ছে। আশা করছি, আজ (গতকাল) নাইট শো পর্যন্ত এক সপ্তাহের টিকিট বিক্রি প্রায় পাঁচ লাখ টাকা হতে পারে।’
ওপরের ছয় হলের হিসাব থেকে বোঝা যাচ্ছে, এখান থেকেই এক সপ্তাহে (গ্রস) এসেছে ২০ লাখ টাকার মতো।
এদিকে ‘জাওয়ান’ মুক্তির পর ফেসবুক ভিত্তিক পেজ বাংলা মুভি রিভিউ ঢাকার মাল্টিপ্লেক্সগুলোর ওয়েবসাইটে প্রাপ্ত বুকিং দেখে প্রতিদিন টিকিট বিক্রি হিসাব প্রকাশ করে। এতে দেখা যায়, মুক্তির প্রথমদিন (৮ সেপ্টেম্বর) স্টার সিনেপ্লেক্স, ব্লকবাস্টার সিনেমাস ও লায়ন সিনেমাসে আয় ৫০ লাখ ছাড়িয়ে! দ্বিতীয় দিনে ছিল ৪০ লাখের বেশি। তবে অনেক দর্শক জানিয়েছেন ওয়েবসাইটে হাউসফুল দেখানোর পরও তার কাউন্টারে গিয়ে টিকিট পেয়েছেন। আবার ঢাকার বাজারে চালু গুজব হলো- সিনেমা হল হাউসফুল দেখিয়ে ব্যবসা বাড়ানোর কৌশল করছে অনেক সিনেমা।
এদিকে গত কোরবানির ঈদের সপ্তাহ শেষে আংশিক সেল রিপোর্ট প্রকাশ করেন ‘সুড়ঙ্গ’-এর প্রযোজক শাহরিয়ার শাকিল। তিনি দাবি করন প্রথম সপ্তাহে সিনেপ্লেক্সে ছবিটির প্রায় আড়াই কোটি টাকার টিকেট বিক্রি হয়েছে। ওই সিনেমার পরিবেশক ছিল অনন্য মামুনের প্রতিষ্ঠান।
ওই সময় শাকিল বলেন, ‘আমাদের জানামতে স্টার সিনেপ্লেক্সে এটি একটি রেকর্ড। তাই আনন্দের খবরটি আমরা সবার সঙ্গে শেয়ার করে নেওয়ার জন্যই প্রকাশ করেছি। আস্তে আস্তে অন্যান্য হলের সেল রিপোর্টও প্রকাশ করবো।আর সিনেমা তো ব্লকবাস্টার।’
এ সব বিবেচনায় নিলে আয়ের তথ্য নিয়ে যথেষ্ট রহস্য রয়ে গেছে। প্রশ্ন হলো, এর সমাধান করবে কে?