১০০% হালাল ঢাকা
কয়দিন আগে আমার এক বন্ধুর সাথে কথা হইতেছিলো। আমার কাছে তার প্রশ্ন, আমি যৌনতা নিয়া এত লেখালেখি করছি, গে লেসবিয়ান নিয়া আমার কোন আলাপ নাই কেন!
আমি আকাশ থাইকা পইড়া বললাম, কই আমার যৌনতা নিয়া লেখা!
সে বললো, সানজানা গল্পে।
আমি আবার মাননীয় স্পিকার হইয়া গেলাম!
সানজানা গল্পে রেপ নিয়া কথা আছে। রেপ তো ভায়োলেন্স!
সে তখন তার প্রশ্নের সপক্ষে নানা যুক্তি দিতে শুরু করলো। কোনটাই আমার কাছে গ্রহণযোগ্য মনে হইলো না বইলা আলাপে আগ্রহ হারায় ফেললাম।
রেপ যৌনতা না ভায়োলেন্স, নাকি দুইটাই, সেটা আপাতত আমার প্রসঙ্গ না। এখন আমি একটা সিনেমা নিয়া আলাপ করতে চাই। এমন না, কেউ আমাকে ঐ ছবি নিয়া লিখতে বলছে। কিন্তু ছবি দেইখা আমি এতটাই ওভারহুইলমড (বাংলায় কী বলা যায়, আপ্লুত! না হতবিহ্বল!) হয়া পড়ছি যে লেখার জন্য হাত নিশপিশ করতেছে।
ফিল্ম রিভিউ কেমনে লিখতে হয় আমি ঠিক জানি না। রিভিউ শেষে স্পয়লার হইয়া যায় কিনা সেটা নিয়া একটা ভয়ও থাকে। তবে এই ছবি নিয়া আমার লেখা যদি একজনকেও ছবিটা দেখতে হলে নিয়া যায় তাইলেই আমি খুশী।
একজন বিরাট (ফিল্ম) ক্রিটিক এবং মেকারের লেখা কিছু রিভিউ এককালে পড়ছিলাম। খুব ইন্সপায়ারিং লাগছিলো। এত দরদ নিয়া উনি লিখতেন! আদর মাখায় কথা বলতেছেন বইলা মনে হইতো। আর প্রতিটা ছবিই দেখতে ইচ্ছা হইতো। সেরকম কিছু একটা লিখতে ইচ্ছা করতেছে।
লাইভ ফ্রম ঢাকা দেখতে গেছিলাম আমার বোনকে নিয়া। আমার বোন ঢাকার বাইরে থাকে বইলা সে ঢাকায় আসলে তার অনেক দর্শনার্থী (আসলে বন্ধুবান্ধব, শুভাকাঙ্খী, পিচ্চি হইলে পচায়া দর্শনার্থী বলাই যায়) থাকে। এমন কিছু বাচ্চাকাচ্চা আমাদের সাথে ছিলো। ইন্টারভ্যালে বাইর হইয়া তাদের একজন বললো, ইরানি ছবির মতন। সেটা সে খুব পজেটিভ অর্থেই বলছে।
এই রকম মন্তব্য পরেও শুনলাম। এমনকি ইটালিয়ান নয়র ফিল্মের মতন বইলাও শুনলাম। ফেমিনিজম থাইকা নিয়া ফিল্ম পর্যন্ত সব তত্ত্বেরই নানা স্কুল থাকে, ওয়েভ থাকে। ক্রিটিকের একটা কাজ নিশ্চয়ই ছবির তাত্ত্বিক বিশ্লেষণও। আমি পারসোনালি সিনেমার ইতিহাস এবং ওয়েভগুলা ঠিকঠাক জানি না বইলাই সম্ভবত, লাইভ ফ্রম ঢাকা দেইখা আমার কোন ইজম মনে পড়ে নাই (রিয়েলিজম/নিও রিয়েলিজম এইসব)।ছবি শেষ হইলেও আমি টাশকি খায়া ছিলাম। হাততালি দিতেও ভুইলা গেছিলাম। আমার উচ্ছ্বাস কারো কাছে বাড়তি মনে হইলে আমার করার কিছু নাই।
কেউ যদি জিগায়, কী এমন আছে এই ছবিতে! আমার বলার কিছু থাকবে না। ধরেন আপনে রানতে জানেন না, কিন্তু খাইতে পছন্দ করেন। পোলাওয়ে আদা বেশি হইছে না বেরেস্তা কম হইছে সেটা আপনে বলতে পারবেন না, কিন্তু স্বাদ হইছে কিনা সেটা আপনে ঠিকই বলতে পারবেন। আমার দশা অনেকটা সেরকম।
বরং সিনেমাটায় কী কী নাই সেটা আমি বলতে পারি। লাইভ ফ্রম ঢাকায় কোন কালার নাই, কোন গান নাই, কোন বিখ্যাত নায়ক নায়িকা নাই। লাইভ ফ্রম ঢাকায় কোন আলগা মিউজিকও নাই, ছবির একমাত্র মিউজিক হইলো আজান।
আমার বোন শিক্ষকতা করে। তার কাছে শুনছি, ঠিকঠাক উদ্ধৃতি দিতে পারবো না, তবে, কথার মূলভাব হইলো সত্যিকারের আর্ট কাউরে ডিমোনাইজ করে না। লাইভ ফ্রম ঢাকা ছবিতে কেউ নায়ক না, কেউ ভিলেন না। কাউরে ব্লেম করা যায় না, কোন ঘটনা বাড়তি মনে হয় না। কারোর ওপর কোন মাহাত্ম্য/দোষগুণ আরোপ করা হয় নাই। জীবনের গতিতে ঘটনা ঘটতে থাকে।
ছবিটা দেখতে গিয়া আমি একটা বেআইনি কাজ করছি। কিছু ছবি তুলছি। এর মধ্যে দুইটা ফ্রেমের ভিজুয়াল অ্যানালাইসিস কইরা স্বচ্ছন্দে প্রমাণ করা সম্ভব বাংলাদেশের কোন বাংলা ছবিতে ম্যাসকুলিনিটির এই রিপ্রেজেন্টেশন আপনি দেখেন নাই।
সিনেমায় ফেমিনিনিটি এবং ফিমেল বডির রিপ্রেজেন্টেশন নিয়া যত আলাপ আছে, ম্যাসকুলিনিটি নিয়া তত আলাপ নাই। সব সময় সমাজের সব ক্ষেত্রেই যে কোন বিষয়ে বলা হয় নারীপ্রশ্ন, অ্যায ইফ ক্রাইসিসটা কেবল নারী নিয়া! এই ধারণা থাইকা বাইর হইতে পৌরুষ নিয়া বেশি বেশি আলাপ জরুরি বইলা আমার মনে হয়।
পশ্চিমে ফিল্ম থাইকা নিয়া ফেমিনিজম, সব ক্ষেত্রেই ম্যাসকুলিনিটির কনস্ট্রাকশন নিয়া আলাপ শুরু হইছে। লাইভ ফ্রম ঢাকা ছবিতে ম্যাসকুলিনিটি কেমনে দেখানো হইছে এইটা নিয়া নিশ্চয়ই ভবিষ্যতে ফিল্ম স্টাডিজের স্টুডেন্টরা কাজ করবেন।
রেপ যৌনতা না ভায়োলেন্স এই আলাপটা শুরুতে কেন করলাম এবার বলি। লাইভ ফ্রম ঢাকা দেইখা কেউ জঁরা নিয়া নানা বাহাস করতে পারে। এটা নির্ভর করে কোন জায়গা থাইকা আপনি ফিল্মটা দেখতেছেন তার উপ্রে। আমার মনে হইছে এটা একটা ১০০% অনেস্ট, পিওর আর হালাল ছবি। যেমন রেপ আমার কাছে ১০০% অনেস্ট, পিওর আর হালাল ভায়োলেন্স।
*প্রথম প্রকাশ: দেশ রূপান্তর, ১ এপ্রিল ২০১৯