১০ কোটির ‘অপরাধী’, গায়ক পেলেন মাত্র ৫০ হাজার টাকা!
সাম্প্রতিক সময় সবচেয়ে আলোচিত বাংলা গান ‘অপরাধী’। ইতিমধ্যে শুধু ইউটিউবেই দেখেছেন ১০ কোটির বেশি শ্রোতা। দুই-আড়াই মাস সময়ের মধ্যে এমনটা ঘটেছে। শুনলে আবাক হবেন এত সফল গান থেকে শিল্পী আরমান আলিফ পেয়েছেন মাত্র ৫০ হাজার টাকা।
জানা যায়, শুধু ইউটিউব থেকেই প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ঈগল মিউজিক আয় করেছে প্রায় কোটি টাকা। এছাড়া অন্যান্য মাধ্যম তো রয়েছে। কিন্তু গানটির গায়ক আরমান আলিফকে দেওয়া হয়েছে মাত্র ৫০ হাজার টাকা। জাগো নিউজকে এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন আরমান।
তবে ঈগল মিউজিকের কর্ণধার কচি আহমেদ নিজেকে ‘ক্লিন ইমেজের সংগীত প্রযোজক’ দাবি করে এক কোটি টাকা আয়ের বিষয়টি নাকচ করে দেন কালের কণ্ঠের কাছে। কিন্তু জানালেন না আয়ের প্রকৃত তথ্য!
আরমান বলেন, ‘নতুন সংগীতশিল্পীরা যেভাবে শুরু করে আমার শুরুটাও ছিল সে রকম। আমি শুনেছি এই বিশাল পরিমাণ ভিউয়ের কারণে কোম্পানির আয় হবে কোটি টাকার মতো। তবে সেসব নিয়ে আমি মাথা ঘামাতে চাই না।’ কেন? এই প্রশ্নের জবাবে আরমান আলিফ বলেন, আসলে তাদের (প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান) সাথে আমার আর কোনো সম্পর্ক নেই।
কারণ হিসেবে তরুণ এই শিল্পী জানালেন, তাকে দুই কিস্তিতে শুধু ৫০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। এরপর তার সাথে কেউ কোম্পানির আর কেউ যোগাযোগ করেনি। আর তিনিও চান না সে সব নিয়ে ভাবতে। বললেন, সামনে আমি নতুন গান নিয়ে আসছি। গানের নাম ‘নেশা’।এটি প্রকাশ করব আমার নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেল থেকে। এটি প্রযোজনা করবে আমার ব্যান্ড। লিখেছি আমি, সুরও করেছি আমি।
তবে এ প্রসঙ্গে ঈগল মিউজিকের কর্ণধার কচি আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, আরমান আলিফকে সম্মানী বাবদ ৫০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। এটা এককালীন পরিশোধ করা হয়েছে। প্রতিটি শিল্পীর সঙ্গে ঈগল মিউজিকের এমনই চুক্তি থাকে। আর আমি জানি না কোত্থেকে কোন অ্যানালিটিকসে এই তথ্য পেয়েছে।
আরমান বলেন, গানটি ঈগল মিউজিকে জমা দেওয়ার সময় কোনো টাকার কথা উল্লেখ ছিল না। একজন নতুন হিসেবে আমি তাদের কাছে গিয়েছিলাম। তারা গানটি প্রকাশ করবেন বলে রাজি হয়েছিলেন। গানের চুক্তির সময় আমাকে বলা হয়েছিল আমার যখন টাকার প্রয়োজন হবে তখন চাইলে সেটা আমাকে দেওয়ার চেষ্টা করবেন তারা। তাদের আশ্বাসে একরকম ভালোবেসেই গানটি দিয়েছি এখানে। পরে দুই কিস্তিতে ৫০ হাজার টাকা আমি পেয়েছি। আর কোনো টাকা পাইনি।
গান প্রকাশের চুক্তির সময়ের কথা উল্লেখ করে আরমান আলিফ বলেন, ‘তাদের কথায় বোঝা যাচ্ছে গানটি আমি বিক্রি করে দিয়েছি। আসলে এতকিছু তো বুঝিনি আগে। আমি তিনটা কাগজে স্বাক্ষর করেছিলাম। ওখানে কোনো টাকার অ্যামাউন্ট লেখা ছিল না। আমি একজন নতুন শিল্পীর মতোই অত কিছু না ভেবে বিশ্বাস করে স্বাক্ষর করে দিয়েছিলাম। এটাই আমার ভুল ছিল।’
ঈগল মিউজিকের কর্ণধার কচি আহমেদ বলেন, মিউজিক ভিডিও নির্মাণ করতে খরচ হয়েছে আড়াই লাখ টাকা। দুটি মিউজিক ভিডিও করা হয়েছিল। প্রথমটি বাদ দিয়ে দ্বিতীয় মিউজিক ভিডিওটি নির্বাচন করা হয়। যেহেতু আমাদের সাথে সকল শিল্পীর একই ভাবে চুক্তি হয়, সেভাবেই আমি আর্থিক ক্ষতির ঝুঁকি নিয়ে এই গানের মিউজিক ভিডিও নির্মাণ করি।
উল্লেখ্য, অপরাধী গানটি শুধু বাংলাদেশেই নয় ভারতের পশ্চিমবঙ্গেও তুমুল উন্মাদনা সৃষ্টি করেছে। আরমান আলিফ ঢাকার বাসিন্দা ৷ ঢাকার কমার্স কলেজের সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র। পড়াশোনা আর গান-বাজনা একই সঙ্গে চলছে।
হিট গান বা অ্যালবাম থেকে শিল্পীর লাভবান না হওয়ার ঘটনা বাংলাদেশে আগেও ঘটেছে। এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ দিলরুবা খানের ইতিহাস সৃষ্টিকারী অ্যালবাম ‘পাগল মন’। প্রযোজক কোটি টাকা আয় করলেও এই শিল্পী প্রায় কিছুই পাননি। একই ঘটনা ঘটে মুজিব পরদেশীর ক্ষেত্রেও।