
৩২ বছরে ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’
১৯৯৩ সালের ২৫ মার্চ মুক্তি পেয়েছিল ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত।’ সুপারহিট এ ছবিটির মাধ্যমে সালমান শাহ-মৌসুমী দুজনেরই সফল যাত্রা হয় ইন্ডাস্ট্রিতে। প্রিয় জুটি সালমান শাহ-মৌসুমী আর প্রিয় ছবিটি নিয়ে এ আয়োজন।

ভালোবাসার অনেক নাম
ভালোবেসে যারা পাখির কলতান বা নদীর স্রোতের মতো বয়ে যেতে পারে তাদের জন্যই ভালোবাসা। আবার কথায় বলে ‘ভালোবাসা ভালোবাসে শুধুই তাকে/ ভালোবেসে ভালোবাসায় বেঁধে যে রাখে’।তার মানে বেঁধে রাখার একটা বিষয় আছে এতে। কত গল্প, কত স্মরনীয় নাম এতে। লাইলী মজনু, শিরি-ফরহাদ, চণ্ডিদাস-রজকিনী, রাধা-কৃষ্ণ, রোমিও-জুলিয়েট।এত নামের পরে আরো কত জানা-অজানা নাম আছে তার হিশেব নেই। এত নামের মাঝে রাজ-রেশমী মিশে থাকল ভালেবাসার অমর ইতিহাসে যারা একজন আর একজনের মাঝে মিশে গেল অনন্তকালের জন্য।
ভালোবাসা ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’
ভালোবাসাকে কেয়ামত থেকে কেয়ামত সহস্র সময় ধরে ভাবার অবকাশ আছে। তাইতো ছবিতে নামটা এল হিন্দি ‘কেয়ামত সে কেয়ামত তক’ এর অফিসিয়িাল রিমেক হিসেবে সিনেমাটি নির্মাণ হল বাংলা ভাষায়। ছবির নামে টাইম স্পেসটা বলে দেয় অমর ভালোবাসার কথা বলতে এসেছে ছবিটি। ছবিটিকে আমার দেশের সংস্কৃতিতে দেখতে পেরে ধন্য মনে করি। হিন্দির আমির খান-জুহি চাওলা-র থেকে আমাদের দুটি মিষ্টি ছেলেমেয়ে সালমান শাহ-মেীসুমীর রোমান্স কোনো অংশে কম না বরং আমাদের ভাষা, আমাদের কথা বলা, আমাদের আবেগ, আমাদের গান বা গায়কীতে, অভিনয়ে এ ছবি অসাধারণভাবে ন্যাচারাল। সালমান-মেীসুমীর রোমান্সে ছবিটি আজো দর্শককে মুগ্ধ করে রেখেছে।
বাবারা চায় ছেলেরা নাম করুক
‘বাবা বলে ছেলে নাম করবে’ গানে গানে হ্যান্ডসাম সালমান শাহ যখন কথাগুলো বলে যায় কথাগুলো বুকে এসে লাগে আর শান্তি দেয়। সব বাবাই চায় ছেলেরা নাম করুক। ছেলের নামে তাদের নাম ফুটে উঠুক দিকে দিকে। কোনো এক খুশির মুহূর্তকে সঙ্গী করে ছেলেকে জড়িয়ে ধরুক বুকে। গান গাওয়ার সময় রাজিবের অসাধারণ এক্সপ্রেশন তাই বলে।সালমানের ইনোসেন্ট এক্সপ্রেশন দেখতে দেখতে আপনার আমার চোখ দুটোও জুড়ায়। গীটারের ঝংকারে তালে তালে হালকা চালে নাচটা অনুভব করতে পারলে আরো বেশ লাগে।

‘শুনব না কারো কথা যে আর
মন্দ বলুক সমাজ’
সমাজকে ভয় করে কেউ কোনোদিন ভালোবাসা আটকে রাখেনি। সমাজের বাধাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়েই যারা ভালোবাসতে জানে তারা ভালোবেসেছে কালে কালে। রাজ-রেশমীও তাই করেছে। অতঃপর ভালোবাসার শুরু। ‘তুমি আমারই বলব শতবার’ এ কথাটাই যথেষ্ট সমাজকে দেখানোর জন্য। ভালোবাসার মানুষকে নিজের করে ভাবতে আগে জানতে হয়, শিখতে হয় তবেই সামনে এগিয়ে যাবার পালা আসে।
এখন তো সময় ভালোবাসার :
মেীসুমী বনের মধ্যে গানে গানে বলে-
‘এখন তো সময় ভালোবাসার
এ দুটি হৃদয় কাছে আসার
তুমি যে একা আমিও যে একা
লাগে যে ভালো
ও প্রিয়’
ভালোবাসলে ‘প্রিয়, প্রিয়তম ‘ এ কথাগুলো বলতেই হয় নয়তো যাকে ভালোবাসা যায় তার মন গলে না। কিন্তু সালমান যে চুপি চুপি ভালোবাসত সেটা মেীসুমী জানতই না তাই মনটা যে গলাই ছিল তা কে জানত! হঠাৎ সালমান যখন বলল-
‘কি ছোঁয়া আমাকে দিলে তুমি
রাতদিন তোমাকে ভাবি আমি’
গালে হাত রেখে মেীসুমী বুঝে নিল সব তো ঠিকই আছে। তারপর শুধুই ভালোবাসা।
সমাজ-সংসার ও ভালোবাসার চিরন্তন বাধা
একমাত্র পারিবারিক বাধাই ভালোবাসার অনেক অনেক সম্পর্ককে শেষ করে দিয়েছে। মিলন ঘটেনি অনেকের।বাধাগুলো আসে পরিবারের কর্তাদের কাছ থেকে। তাই রাজিব-আহমেদ শরীফ দ্বন্দ্ব অবধারিত হল। তারা তাদের সন্তানদের ভালোবাসার মাঝে দেয়াল তুলল। তাদের জন্যই সমাজ-সংসারকে মেনে নিয়ে ভালোবাসার পরিণতিতে দুজনকেই জীবন উৎসর্গ করতে হল। জীবন চলে গেলেও ভালোবাসা চলে যায়নি।
ভালোবেসে ঘর ছাড়ে অনেকেই :
ভালোবেসে ঘর ছেড়ে অনেকেই পাহাড়ে, প্রান্তরে ছুটেছে। নিজেদের একটা ‘ভালোবাসার ঘর’ বানিয়ে থাকতে চেয়েছে। সালমান-মেীসুমীও ছুটেছে।তাদের ভালোবাসার ঘরে তারাই রাজা-রাণী। কাঠ কেটেছে, ছাউনি দিয়ে ঘর তুলেছে, ক্লান্তিতে ঘাম জমলে আলতো করে মুছে দিয়েছে, দুজনাকে দুজন আদর করেছে। ভালোবাসাকে অনুভব করতে আর কী চাই!…
একা আছিতো কী হয়েছে!
একা থাকা মানেই একা থাকা নয় যদি ভালোবাসা যায়। কারণ যাকে ভালোবাসি সে তো কাছেই আছে। স্পর্শে আছে, ভাবনায় আছে। বুকের বামপাশটায় হাত দিলে তাকে অনুভব করা যায়। অতঃপর-
‘সবই তো আছে আমারই কাছে
এই তুমি আছ হৃদয়ে আছ’
হৃদয় ভালো থাকলেই ভালোবাসা থাকে ভালো।
সালমান-মেীসুমী রোমান্সের গভীরতা
প্রথম সবকিছুর মধ্যে একটা সজীবতা থাকে। জুটি নিয়ে অনেক কথা হয়, বিতর্ক হয়। কিন্তু সালমান শাহর মত চিরসবুজ অভিনেতা, মেীসুমীর মত চিরসবুজ অভিনেত্রী তাদের প্রথম যাত্রা যখন শুরু করল সেটার আয়োজন এবং ছবি মুক্তির পরে গ্রহণযোগ্যতা যেভাবে গড়িয়েছে, আজো যেভাবে এ সিনেমার জন্য ভক্ত-দর্শকের অসীম আগ্রহ দেশের অলিতে-গলিতে তাকে ইতিহাস ছাড়া আর কিছুই বলা যায় না। এমন ইতিহাস দেশের সিনেমার ইতিহাসে নেই। অন্য অনেক জুটি আছে কিন্তু সালমান শাহর শুরুটা মেীসুমীর সাথেই তাই শুরুর যে মাহাত্ম্য সেটা আর কোনোকিছুর সাথে মেলে না। কথা হচ্ছে একটা ইতিহাস যেখানে নতুন করে শুরু হল অন্যকিছু সেখানে ততটা গভীরতা পায় না। সালমান শাহ-মেীসুমী জুটির বিচার-বিশ্লেষণ করতে এ ছবির মূলটাকে যদি ধরি এভাবে, আমির খান তো অনেকের সাথেই জুটি বেঁধেছে, সফলও হয়েছে কিন্তু আমির-জুহি যে রেকর্ড বা ইতিহাস গড়েছে সেটা কি অন্য কোনো জুটির সাথে মেলে? মেলে না, মেলানো যায়ও না। সালমানও মেীসুমীর সাথে প্রথমেই ইতিহাস গড়েছে জুটির জন্য, ছবির জন্য, অভিনয়ের জন্য।দুজনের রোমান্স, হাসি, কান্না, উৎসর্গ এসব প্রথম জুটির ইতিহাসের দিক থেকে যেভাবে দর্শককে টেনছে সেটার তুলনা আর কারো সাথে করাটা কি বোকা”মি নয়!এত কথারও তো দরকার নাই, যদি কারো প্রথম সন্তান হবার আগের মুহূর্তটাকে বলতে বলা হয় সেটা তো কটপ শ্রেষ্ঠ অনুভূতি হবে কারণ তারা জানে প্রথমবার মা-বাবা হবার অনুভূতি কতটা গভীর। টটসালমান-মেীসুমী জুটি তো সেটাই দিয়েছে দর্শককে যেখানে প্রথম প্রেম, প্রথম সন্তানের মত চিরন্তন গভীর অনুভূতি আছে।
‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ দেশের সিনেমার ইতিহাসে একটা ইতিহাস।অনেক ইতিহাসের মধ্যে এটা বড় ইতিহাস।সালমান-মেীসুমী সে ইতিহাসের দুটি উপাদান।এ সিনেমার তেইশ বছর পূর্তিতে সবচেয়ে প্রিয় নায়ক সালমানকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি, প্রিয় মেীসুমীকে জানাই প্রাণঢালা শুভেচ্ছা।
পৃথিবী যাবতীয় ভালোবাসার গল্পগুলো ভালো থাকুক। যাবতীয় প্রেমিক-প্রেমিকা সুখী হোক।ভালোবাসার জয় হোক ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’।