৫ কোটিতে নির্মাণ করা হচ্ছে সংগ্রাম- মনসুর আলী
বাংলাদেশি বংশোদ্ভব ব্রিটিশ পরিচালক মনসুর আলী নির্মাণ করছেন মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র ‘সংগ্রাম’ । আগামী ডিসেম্বরে ছবিটি বাংলাদেশে মুক্তি পাবে। এরপর আন্তর্জাতিকভাবে লন্ডনসহ বিভিন্ন দেশে মুক্তি পাবে। সম্প্রতি তার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আদর রহমান। বণিক বার্তার সৌজন্যে সাক্ষাতকারটি বিএমডিবি-র পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো-
ব্রিটেনে কত দিন ধরে আছেন?
আমার জন্ম বাংলাদেশে। দুই বছর বয়সে পরিবারের সঙ্গে ব্রিটেন চলে আসি। ইস্ট লন্ডনে বড় হয়েছি। পড়াশোনা করেছি ফিল্ম অ্যান্ড টিভি প্রডাকশনের ওপর। ২০০৩ সালে নিজের প্রডাকশন হাউস নির্মাণ করি। এরপর থেকেই চলচ্চিত্রের সঙ্গে জড়িয়ে আছি।
‘সংগ্রাম’ এখন কোন পর্যায়ে?
তিন বছর ধরে সংগ্রামের কাজ চলছে। বর্তমানে ছবিটির ৯০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। প্রথমে ছবির বেশ খানিকটা অংশ ধারণ করা হয় সিলেটে। আর কিছু দিন আগে যুক্তরাজ্যে ছবির বাকি অংশের কাজ সম্পন্ন করা হয়।
ছবির কলাকুশলীদের সম্পর্কে বলুন।
ছবিটির বাজেট ৪ মিলিয়ন পাউন্ড (প্রায় ৫ কোটি টাকা)। এটি তৈরি হয়েছে বাংলাদেশ, ভারত, যুক্তরাজ্যসহ আন্তর্জাতিক একটি টিমের তত্ত্বাবধানে। একজন ব্রিটিশ বাংলাদেশি হিসেবে আমি সবসময় চাই, আমার দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামকে নিখুঁতভাবে পর্দায় উপস্থাপন করতে। সেই লক্ষ্যে আমার পরিকল্পনা ছিল একটি আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন টিমের সঙ্গে কাজ করার, যারা আমার স্বপ্নকে সুন্দরভাবে বাস্তবায়ন করতে পারবে। সংগ্রামের পরিচালক, প্রযোজক ও মূল চিত্রনাট্যকার হিসেবে আমিই কাজ করছি। এ ছবির স্ক্রিপ্ট এডিটর হিসেবে আমার সঙ্গে কাজ করছেন বিলি ম্যাকিনন, যিনি এর আগে ‘পিয়ানো’ এবং কেট উইন্সলেট অভিনীত ‘হিডিয়াস কিঙ্কি’ ছবিতে কাজ করেছেন। ছবির মূল দুই চরিত্রের নাম ‘আশা’ ও ‘করিম’। দুটি চরিত্রে অভিনয় করছেন বাংলাদেশের রুহি ও আমান। আমান অভিনয় করেছেন তরুণ মুক্তিযোদ্ধা চরিত্রে। আর তার প্রেমিকা হিন্দু বাড়ির মেয়ে আশা চরিত্রে অভিনয় করেছেন রুহি। করিমের বৃদ্ধ বয়সের চরিত্রটিতে অভিনয় করেছেন অনুপম খের। তার মুখ থেকেই শুরু হবে এ ছবির গল্পের বয়ান।
চলচ্চিত্রটি নির্মাণের পেছনে আপনার অনুপ্রেরণা কী ছিল?
আমার ইচ্ছা ছিল একটা গল্প বলার। আমি সবসময় দেখতাম বাংলাদেশ নিয়ে পশ্চিমা বিশ্ব কিছু নেতিবাচক ধারণা পোষণ করে। যেমন— দরিদ্রতা, নিরক্ষরতা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রভৃতি। তাই আমি পশ্চিমা বিশ্বের মানুষের এ ধারণা বদলাতে চেয়েছি। আমি চেয়েছি বাংলাদেশের প্রকৃতি ও সুন্দর দিকগুলো সবার সামনে তুলে ধরতে। বাংলাদেশের জন্ম, এর ইতিহাস আর সেই সঙ্গে সুন্দর একটি প্রেমের গল্প। এ গল্পের জন্য আমি ১৫ বছর ধরে বাংলার ইতিহাস নিয়ে পড়াশোনা করছি।
সংগ্রামের মুক্তি প্রক্রিয়া সম্পর্কে বলুন।
চলচ্চিত্রটি আমরা সবার আগে বাংলাদেশে মুক্তি দেব। আশা করছি, এটা এ বছরের ডিসেম্বরেই মুক্তি দিতে পারব। এরপর লন্ডনে প্রিমিয়ার হবে। ধারাবাহিকভাবে মুক্তি দেয়া হবে ইউরোপ ও আমেরিকায়। এ বছরের কান উৎসবেও আমি গিয়েছি। সংগ্রাম নিয়ে অনেক চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্বের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা এ ছবি সম্পর্কে আমাকে ইতিবাচক মন্তব্য দিয়েছেন, যা নিয়ে আমি আশাবাদী।
এ চলচ্চিত্র নিয়ে আপনার প্রত্যাশা কী?
দেখা যাক কী হয়। প্রত্যাশা তো অনেক।
বাংলাদেশের বাণিজ্যিক চলচ্চিত্র বর্তমানে যে সময় পার করছে তা থেকে ‘সংগ্রাম’ কি দর্শককে ভিন্ন কিছু দিতে পারবে?
আমি যতটুকু উপলব্ধি করতে পারছি তা হলো, সময় বদলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দর্শকের রুচিও বদলে যাচ্ছে। আমাদের চলচ্চিত্রগুলো আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন না হলেও আমাদের দর্শক কিন্তু আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র দেখছে। তাদের দেশী চলচ্চিত্রের দিকে টানতে হলে আমাদেরও আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্রের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলতে হবে, সেই মানের চলচ্চিত্রও নির্মাণ করতে হবে। বাংলাদেশের নির্মাতা ও শিল্পীদের অসামান্য মেধা, কিন্তু আমাদের দেশে ইন্ডাস্ট্রির সাপোর্ট কম। আমরা সেই অভাবটুকুও পূরণ করতে পারলে অন্য কিছু নিয়েই আমাদের দেশের চলচ্চিত্রকে ঘাবড়াতে হবে না।
আপনার সামনের কাজ সম্পর্কে বলুন।
একটি সুপার ন্যাচারাল থ্রিলার মুভি প্রজেক্ট হাতে আছে। এটা নির্মাণ করা হবে ইংরেজি ভাষায়। ২০১৪ সাল নাগাদ শেষ হবে এর কাজ। আর ডিসেম্বরে বাংলাদেশে এসে আরো একটি বাংলা চলচ্চিত্রের কাজে হাত দেব, যার কিছুই এখনো চূড়ান্ত হয়নি।
সূত্র: বণিক বার্তা