Select Page

৬ সেপ্টেম্বর ১৯৯৬: কী ঘটেছিল সেদিন?

৬ সেপ্টেম্বর ১৯৯৬: কী ঘটেছিল সেদিন?

সালমান শাহ ভক্তদের জন্য শোকের দিন ৬ সেপ্টেম্বর। ২৭ বছর আগের এই দিনে চলে গেছেন তাদের প্রিয় নায়ত। সে দিন আসলে কী ঘটেছিল? হত্যা না আত্মহত্যা? আত্মহত্যা হলে কীসের প্ররোচণায় নিজের হাতে প্রাণ দিলেন সালমান? হত্যা হলে মোটিভ কী, কেই বা হত্যাকারী? নানা প্রশ্ন এখনো ঘুরপাক খায়। কোন কোন ক্ষেত্রে এটি প্রমাণ বা অপ্রমাণের বিষয় নয়— তার চেয়ে বেশি বিশ্বাস-অবিশ্বাস, ভক্তি-ভালোবাসার বিষয়। সেই প্রশ্ন ও উত্তর পেছনে রেখে জেনে নিই সেই দিনের ঘটনাক্রম।

১৯৯৬ সালের ৫ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় ‘প্রেম পিয়াসী’ ছবির ডাবিং করতে যান সালমান শাহ। সেখানে তার সহশিল্পী ছিলেন নায়িকা শাবনূর। কিছুক্ষণ পর সালমান তার বাবা কমরউদ্দিন চৌধুরীকে ফোন করে বলেন, তার স্ত্রী সামিরাকে নিয়ে এফডিসির সাউন্ড কমপ্লেক্সে আসার জন্য।

শ্বশুরের সঙ্গে সাউন্ড কমপ্লেক্সে এসে সামিরা দেখতে পান সালমান ও শাবনূর ঘনিষ্ঠভাবে খুনসুটি করছেন। সালমান প্রায়ই এ ধরনের খুনসুটি করতেন। এতে উত্তেজিত হন সামিরা। কিছুক্ষণ পর কমরউদ্দিন চলে গেলে সামিরাও দ্রুত গাড়িতে ওঠেন। অবস্থা খারাপ দেখে একই গাড়িতে ওঠেন সালমান শাহ ও চিত্র পরিচালক বাদল খন্দকার। সালমানের সঙ্গে কথা বন্ধ করে দেন সামিরা। তাকে বোঝাতে থাকেন বাদল। বেরিয়ে যাওয়ার সময় সালমান এফডিসির প্রধান ফটকের সামনে নেমে আড্ডা দেন, যা এর আগে কখনো করেননি।

রাত ১১টার দিকে নিউ ইস্কাটন রোডের ইস্কাটন প্লাজার বি-১১ নম্বর ফ্ল্যাটে পৌঁছে দিয়ে বিদায় নেন বাদল খন্দকার। সামিরাও তখন ঘরে। সাড়ে ১১টার দিকে সালমান বেডরুমে গিয়ে টিভি দেখেন। তখনো তাদের মধ্যে কথা বন্ধ। ১২টার দিকে সালমানের মোবাইলে একটি ফোন আসে। তিনি বাথরুমে গিয়ে কথা বলে বেরিয়ে টিভি বন্ধ করে অডিও ক্যাসেট ছাড়েন। এ সময় আরও একটি ফোন আসে। এ নিয়ে দুজনের মধ্যে কথা কাটাকাটি শুরু হয়। উত্তেজিত হয়ে সালমান মোবাইল ফোনসেটটি ভেঙে ফেলেন। ক্ষুব্ধ সামিরা ব্যাগ গুছিয়ে ধানমন্ডি ২৭ নম্বরে ফুফুর বাসায় যাওয়ার জন্য রওনা হন। সালমানের পিএ আবুল ইন্টারকমে দারোয়ানকে গেট না খুলতে নিষেধ করেন। সামিরা ফিরে এলে সালমান তাকে ফুফুর বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।

৬ সেপ্টেম্বর সকালে ‘তুমি শুধু তুমি’ ছবির শুটিংয়ে যাওয়ার কথা থাকলেও সালমান ঘুমাতে থাকেন। বাজারে পাঠানো হয় তার দেহরক্ষী দেলোয়ারকে। এ সময় কমরউদ্দিন তার ছেলের ফ্ল্যাটে আসেন। সালমানকে বলেন, মা, ভাই ও তাকে নিয়ে সিলেটে যাবেন। এ সময় সিদ্দিক নামের এক প্রযোজকও আসেন। কমরউদ্দিন ও সিদ্দিক চলে যাওয়ার পর সামিরা তার বেডরুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। বেলা ১১টার দিকে সালমান ঘুম থেকে উঠে দুই কাজের মেয়ের একজনকে ডেকে চা ও পানি খান। কিছুক্ষণ পর ড্রেসিংরুমে ঢুকে ভিতর থেকে দরজা লক করে দেন। ঢোকার আগে আবুলকে বলে যান, তাকে যেন কেউ ডিস্টার্ব না করে।

সাড়ে ১১টার দিকে আবুল সামিরাকে জাগিয়ে বলেন, অনেকক্ষণ আগে ড্রেসিংরুমে ঢুকলেও তার কোনো সাড়াশব্দ পাওয়া যাচ্ছে না। সামিরা দরজার ডুপ্লিকেট চাবি খুঁজতে থাকেন। পৌনে ১২টায় ডুপ্লিকেট চাবি দিয়ে আবুল ও সামিরা ড্রেসিং রুমের দরজা খুলে দেখেন ফ্যানের সঙ্গে গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলে আছেন সালমান। সামিরা ও দুই কাজের মেয়ে সালমানকে উঁচু করে ধরেন। পাশের বাসার কাজের মেয়ে দড়ি কেটে সালমানকে নামিয়ে আনেন। দড়িটি ছিল ব্যায়ামের যন্ত্র থেকে বের করা। নামানোর পর পাশের বাসার কাজের মেয়েটি বলে, ‘শরীর এখনো গরম। উনি মরেননি।’ তখন মাথায় ও গায়ে তেল মালিশ করা হয়। এ সময় মে ফেয়ার বিউটি পারলার থেকে সামিরার বান্ধবী রুবি এসে শুশ্রুষায় অংশ নেন। হাউজিং কমপ্লেক্সের ম্যানেজারও আসেন।

দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে চলচ্চিত্রের প্রোডাকশন ম্যানেজার সেলিম এসে সালমান শাহকে মরার মতো পড়ে থাকতে দেখে সালমানের বাবা কমরউদ্দিনকে খবর দেন। খবর পেয়ে কমরউদ্দিন, সালমানের মা নীলা চৌধুরী, ভাই শাহরান ছুটে আসেন ঘটনাস্থলে। তারা গিয়ে তাকে হাসপাতালে নেওয়ার জন্য লিফট দিয়ে নামাতে যান।

এ সময় লিফটের যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে ১৫ মিনিট দেরি হয়। পরে তাকে নামিয়ে হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানকার চিকিৎসকরা তাকে ভর্তি করতে অস্বীকৃতি জানালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

সালমান শাহর বাবা কমরউদ্দিন চৌধুরী রমনা থানায় অপমৃত্যু মামলা করেন। পরবর্তী সময়ে মা নীলা চৌধুরী সালমানের স্ত্রী, শ্বশুর, শাশুড়িসহ কয়েকজনকে আসামি করে আদালতে হত্যা মামলা করেন। নীলা চৌধুরী অভিযোগ করেন, সামিরার সঙ্গে ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের অবৈধ সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল এবং এ দুজন মিলে সালমানকে হত্যা করেছে। সামিরা পাল্টা অভিযোগ করেন, নীলা চৌধুরীই আজিজ মোহাম্মদ ভাইসহ অনেক পুরুষকে তার বাড়িতে নিয়ে আসতেন এবং এটা নিয়ে সালমান ও তার বাবা নীলার ওপর ক্ষুব্ধ ছিলেন। এ ছাড়া সামিরা পুরো ঘটনার জন্য সালমান-শাবনূরের প্রেমকেও দায়ী করেন। সালমানভক্ত এবং তারই ঘনিষ্ঠজনদের মতে এটি ছিল একটি পরিকল্পিত হত্যাকান্ড।

বাংলাদেশ প্রতিদিনের প্রতিবেদন থেকে


Leave a reply