Select Page

মানহীন রিমেক গান: পূর্বসুরীদের সৃজনশীলতা নিয়ে টানাটানি না করে মৌলিক কিছু দিন

মানহীন রিমেক গান: পূর্বসুরীদের সৃজনশীলতা নিয়ে টানাটানি না করে মৌলিক কিছু দিন

বলিউডের একদল প্রতিষ্ঠিত প্রযোজক-পরিচালক প্রায় তিন দশক ধরে বিভিন্ন রকমের ট্রেন্ড ফলো করে ব্যবসা করে আসছে। যখন থেকে দুচোখে চলচ্চিত্র বোঝার আলাদা ধরনের দৃষ্টিকোণ তৈরি হয়েছে তখন থেকে দেখে আসছি, কখনো তারা দেদারছে আমেরিকান ছবির নকল করেছেন, কখনো তারা কোরিয়ান ছবির নকল করেছেন, কখনো তারা আইটেম সং এর ট্রেন্ড সেটআপ করেছেন, কখনো তারা জনপ্রিয় ছবির সিক্যুয়েল তৈরি ধুম সৃষ্টি করেছেন। এগুলো ঐ একদল গোষ্ঠীর বাইরে বাকিদের খুব একটা ফলো করতে দেখা যেতো না।

আর আমাদের দেশের একদল প্রতিষ্ঠিত প্রযোজক-পরিচালক গণ তাদের সেই ট্রেন্ড দেখেদেখে আমাদের এখানে তৈরি করতেন। যেহেতু দেখেদেখে তৈরি করতেন, তাই আমাদের এই ধারা তৈরি করতে চার/পাঁচ বছর সময় লাগতো। আর আমরা কেন জানি জাতি হিসেবে ভারতীয় সংস্কৃতির প্রতি অত্যধিক আকর্ষিত হই, তাই আমরাও অতীতে এগুলোকে দু’হাত ভরে গ্রহণ করতাম। তারা যখন ইরোটিক/অর্ধনগ্ন ঘরানার ছবি বানিয়ে ভরপুর সাফল্য পেলো, কয়েক বছর পর আমরাও শুরু করলাম। তারা যখন রাইট কিনে রিমেক করা শুরু করলো, আমরা গরিব তাই রাইট না কিনেই শুরু করলাম। তারা যখন আইটেম সং এর রেওয়াজ তুললো, এর কয়েক বছর পর আমরাও তুললাম। তারা যখন সিক্যুয়েল তৈরির ট্রেন্ডে গা ভাসালো, আমরাও টুকটাক ভাসালাম। আর এখন বলিউডে ট্রেন্ড চলছে রিমেক এবং রিক্রিয়েট গানের। কাকতালীয়ভাবে এবারও আমরা এই ট্রেন্ডে গা ভাসাচ্ছি…

বলিউড খুবই বড় এবং জনপ্রিয় এক‌টি ইন্ডাস্ট্রি। প্রতিবছর এই ইন্ডাস্ট্রিতে আড়াইশো ছবি মুক্তি পায়, আর তাদের কাছ থেকে কম করে হলেও ত্রিশ থেকে চল্লিশটি মানসম্পন্ন ছবি পাওয়া যায়। বিপরীতে আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে গড়ে মাত্র পঞ্চাশটির মতো ছবি মুক্তি পায়, আর গতবছর আমি ঠিকঠাক দশটা ছবি খুজেঁ পাইনি, যার দরুণ “সেরা দশ” সংক্রান্ত কোনো লেখা লিখিনি। তাও যদি আমরা বলিউডের কাছ থেকে ভালো কিছু গ্রহণ করি তবে আমাদের ইন্ডাস্ট্রির উপকার কিছু হলেও হতে পারতো। কিন্তু অতীত হতে এখন পর্যন্ত আমরা যা নিয়েছি তা গৎবাঁধাই প্রমাণিত হয়েছে। যেই ট্রেন্ড নিয়ে ওখানকার সচেতন দর্শকরা দিনের পর দিন টি-সিরিজ সহ অন্যান্য মিউজিক কোম্পানিদের গালাগাল দিচ্ছে, আমরা আবার সেটাই গ্রহণ করছি।

রিক্রিয়েশন কিংবা রিমেক সম্পূর্ণ খারাপ এক‌টি নীতি ঠিক সেটা বলছি না। একটা নির্দিষ্ট লিমিট পর্যন্ত সেটা উপযোগী। সেই সাথে যথেষ্ট দক্ষ গীতিকার, সুরকার এবং সংগীতশিল্পীদেরও নিতে হয়, যেনো তারা অতীত এবং বর্তমান দুই ধরনের শ্রোতাদের সন্তুষ্ট করতে পারে। “অনেক সাধনার পরে”, “বেপরোয়া মন”, “টিকাটুলির মোড়”, “ওহে শ্যাম” কিংবা “পাগল মন”; এরকম গানগুলি যেমন মানসম্পন্ন তেমনি জনপ্রিয়।

কিন্তু বলিউড এই রিক্রিয়েশনকে একদম নোংরামির পর্যায়ে নিয়ে গেছে। আর আমাদের চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্টদের চোখে তো ভালো বিষয়গুলি নজরে পড়বে না, তারা ঐ খারাপটাই ট্রেন্ড হিসেবে নেয়। তাই এখানেও সেটা শুরু হয়ে গেছে। সবশেষ “তুমি আমার জীবন” গানটি খুবই বাজেভাবে রিক্রিয়েট করা হলো। আজ “তোমায় দেখলে মনে হয়” গানটির রিক্রিয়েশন শুনে মনে হলো এন্ড্রু কিশোরের প্রবীণ শ্রোতারা এই গান শুনলে মানসিকভাবে দূর্বল হয়ে যাবেন। শোনা যাচ্ছে এরকম গান সামনে আরো আসবে…

চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্টদের কাছে আমার একটাই অনুরোধ, ভালো কিছুর ট্রেন্ড তৈরি করুন। রিমেক/রিক্রিয়েশন করলে এমনভাবে করুন যেনো শিল্প ও বিনোদন দুইটিই বজায় থাকে। এটা করতে না পারলে, পূর্বপুরুষদের ক্রিয়েটিভিটি নিয়ে টানাটানি না করে মৌলিক কিছু দিন। শিল্পীদের প্রধান কাজ শিল্পের উৎকর্ষ সাধন করা।


Leave a reply