Select Page

বিটিভির ‌’সোনালি যুগের’ মুক্তিযুদ্ধের নাটকগুলো

বিটিভির ‌’সোনালি যুগের’ মুক্তিযুদ্ধের নাটকগুলো

নব্বই দশকের শেষ পর্যন্ত দেশে বিনোদনের হাতেগোনা মাধ্যমের একটি ছিল বাংলাদেশ টেলিভিশন বা বিটিভি, যাকে বলা হয় সরকারি প্রচারমাধ্যমটির সোনালি যুগ। আর দেশীয় একমাত্র চ্যানেলটির নিয়মিত অনুষ্ঠানসূচিতে প্রধান আকর্ষণ ছিল সাপ্তাহিক নাটক ও পাক্ষিক আকারে প্রচারিত দুটি ধারাবাহিক নাটক। এর মাঝে বিজয় দিবস, স্বাধীনতা দিবস বা ঈদে বাড়তি পাওনা ছিল বিশেষ নাটক। তার মধ্যে বিজয় বা স্বাধীনতা দিবসের নাটক হতো মুক্তিযুদ্ধনির্ভর নাটক; যা এখনো হয়। অবশ্য অন্যান্য সময়ে বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের গল্প উঠে এসেছে।

সম্প্রতি বিটিভিতে প্রচারিত মুক্তিযুদ্ধের নাটক নিয়ে একটি লেখা প্রকাশ করে ফেসবুকভিত্তিক রেট্রো ইউফোরিয়া। মূল লেখক কাজল রিপন। ওই লেখা থেকে বিটিভিতে প্রচারিত মুক্তিযুদ্ধের নাটকের তথ্য বিএমডিবির পাঠকের সামনে তুলে ধরা হলো। আমরা এখানে তথ্যগত দিকগুলো তুলে ধরলাম, যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে গুরুত্ববহ হতে পারে। তবে বিএমডিবি বাড়তি কোনা যাচাই করেনি। একইসঙ্গে রাজনৈতিক মতার্দশ বিবেচনায় আনেনি—

স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ টেলিভিষনে প্রচার হওয়া প্রথম নাটকটিই ছিল মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে, নাম ‘বাংলা আমার বাংলা’। ড. ইনামুল হকের লেখা নাটকটি প্রযোজনা করেছিলেন আবদুল্লাহ আল মামুন। ১৯৭২ সালে ‘জনতার কাছে আমি’ নামে মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে আরেকটা নাটক বেশ আলোচিত হয়। আমজাদ হোসেন রচিত ও মুস্তাফিজুর রহমান পরিচালিত সেই নাটকে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ-বিপক্ষের চিত্র তুলে ধরা হয়েছিল নাটকীয়ভাবে।

১৯৭৩ সালে নাজমা জেসমিন চৌধুরীর লেখা ও আবদুল্লাহ ইউসুফ ইমামের প্রযোজনায় ‘প্রতিদ্বন্দ্বী’ নাটকটাও দর্শকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে।

তবে পরবর্তী লম্বা সময়ের কোনো নাটকের উল্লেখ নেই সেই লেখায়। ওপরের তিনটি নাটকের পর আছে ‘নয়ন সন্মুখে তুমি নাই’ র কথা। ১৯৮০ সালে প্রচারিত আল মনসুর রচিত ও  মুস্তাফিজুর রহমান প্রযোজিত এ নাটকের শুরুতে আহসান আলী সিডনী ও দিলশাদ খানমের পরিচয়, প্রণয় এবং তারপর পরিণয়ের পালা। ঠিক তখনই দেশে শুরু হয়ে যায় স্বাধীণতা যুদ্ধ। বিয়ে হয়না, মেয়েটি বাসরঘরে বসে থাকে অনন্ত অপেক্ষায়। দেশমাতার ডাকে যুদ্ধে চলে যান সিডনী। অপারেশন চলাকালীন গ্রামে দিলশাদদের বাড়ীতে আশ্রয় নেয় একদল মুক্তিযোদ্ধা। আহসান আলী সিডনীকে চিনে ফেলেন দিলশাদ ও তার বাড়ীর লোকজন। সেই অবস্থায়ই বিয়ের আয়োজন ঘটে। বীর মুক্তিযোদ্ধা সিডনী তার নববিবাহিতা স্ত্রী দিলশাদ খানমকে বাসর রাতে কিছু বু/লেট ছাড়া কিছুই উপহার দিতে পারেন না।

মমতাজউদদীন আহমদ রচিত ও আবদুল্লাহ আল মামুন প্রযোজিত ‘একটি যুদ্ধ এবং অন্য একটি মেয়ে’ ১৯৮২ সালের বিজয় দিবসে প্রচারিত হয়। এ নাটকে গ্রামের মেয়ে চম্পার ভালোবাসার মানুষ আফজাল হোসেন স্বাধীনতার ডাকে যুদ্ধে যায়, কথা দিয়ে যায়, ফিরে এসে স্বাধীনদেশে চম্পাকে বউ করে ঘরে তুলবে। যুদ্ধের ময়দানে আফজালের সাথে পরিচয় ঘটে শিক্ষিত তরুণ আল মনসুরের। আফজাল তাকে স্বপ্নের কথা বলে। কোন এক অপারেশনে গুলিবিদ্ধ সহযোদ্ধাকে ফেলে চলে যেতে বাধ্য হয় মনসুর। যুদ্ধে শেষে সবাই ফিরে আসে বিজয়ী যোদ্ধার বেশে, কিন্তু আফজাল ফেরে না। চম্পা পথের পানে চেয়ে চোখের জল ফেলে। কুচক্রী রাজাকার হানিফ সংকেত চম্পাকে জোর করে বিয়ে করতে চায়। সেই দুঃসময়ে, আফজালের মৃত্যুর খবর নিয়ে আসে তার সহযোদ্ধা মনসুর । চম্পার কষ্টের সাথী হতে চায়। একসময় চম্পার মন গলে যায়। ওরা বিয়ে করে। নতুনবউ নিয়ে আল মনসুর বেড়াতে যায়। পথে দেখা হয় একজন খোঁড়া পাগলের সাথে। ছোট ছোট বাচ্চারা যাকে পেছন থেকে ঢিল ছুড়ছিল। চম্পা ও আল মনসুর তাকে দেখে আঁতকে ওঠে। যুদ্ধে পায়ে গুলি লেগেছিলো, আফজাল মরেনি।

১৯৮৪ সালে মমতাজ উদ্দীন আহমেদের রচনা ও মোস্তফা কামাল সৈয়দের প্রযোজনায় প্রচার হয় ‘এই সেই কণ্ঠস্বর’। এ নাটকে মুক্তিযুদ্ধ ও প্রেম দুটো বিষয়কেই সমান্তরালভাবে তুলে ধরা হয়। অভিনয় করেন আফজাল হোসেন ও সুবর্ণা মুস্তাফা।

মোর্শেদ চৌধুরীর রচিত ও  বরকত উল্লাহর প্রযোজিত ‘এরা ছিল এধারে’ আরেকটি উল্লেখযোগ্য নাটক। যুদ্ধ চলাকালীন ভার্সিটি বন্ধ হয়ে যায়। ফরীদি ঢাকায় আত্মীয়ের বাসায় আশ্রয় নেন। এ বাসার বাচ্চা ছেলেটিকে গান শেখান ফরীদি– বিচারপতি তোমার বিচার করতে পারে আজ জেগেছে সেই জনতা। বাচ্চা মেয়েটিকে নাচ শেখান এবং একটা লালশাড়ি কিনে দেন। এ বাসায় ফরীদির কাজিন লুবনা আহমেদ তাকে মন থেকে পছন্দ করে। ধীরে ধীরে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েন ফরীদি, গোপনে। গেরিলা যোদ্ধা ফরীদি মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্র ও তথ্য সরবরাহ করেন। একসময় পাকবাহিনীর দোসররা তাকে সেই লালশড়িটা দিয়ে চোখ বেঁধে নিয়ে যায়। পরে তার লাশ পাওয়া যায় চোখ বাঁধা অবস্থায়।

‘সাত আসমানের সিঁড়ি’ ১৯৭১ এর পটভূমিতে নির্মিত স্মরণীয় একটা নাটক। খ্যাতিমান নাট্যকার কাজী মাহমুদুর রহমানের লেখা এবং স্বনামধন্য প্রযোজক মুস্তাফিজুর রহমানের কালজয়ী সৃষ্টি। যুদ্ধে জয়লাভ করে আহত অবস্থায় ফিরে আসে সৎ সাহসী বীর মুক্তিসেনা হুমায়ুন ফরীদি। এরই মধ্যে তার পছন্দের মানসী সুবর্ণা মুস্তাফাকে জোরপূর্বক বিয়ে করে এবং সম্পত্তি ভোগদখল করে রাজাকার সৈয়দ আহসান আলী সিডনী। সাত আসমানের সিড়িতে দাঁড়িয়ে অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে রাজাকার। আর জীবন যুদ্ধে হেরে যায় একজন মুক্তিযোদ্ধা ফরীদি, পিঠে কুঁজ নিয়ে হেটে বেড়ায় শহরের পথে পথে।

ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধ বিশাল ক্যানভাসে নির্মিত হয় ‘খোলা দুয়ার’। মামুনুর রশীদ রচিত এবং মুস্তাফিজুর রহমান প্রযোজিত নাটকটি প্রচরিত হয় ১৯৮৩ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি। অভিনয় করেছিলেন সৈয়দ আহসান আলী সিডনী, চম্পা,  রাইসুল ইসলাম আসাদ, আলেয়া ফেরদৌসী, মেহফুজ, শাহরে বানু, আবুল হায়াত প্রমুখ। নজরুল ইসলাম বাবুর লেখা ও আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের সুর করা কালজয়ী গান ‘সবকটা জানালা খুলে দাও না’ এই নাটকেই প্রথম শোনা যায়।

হাবিবুল হাসানের রচনা ও আবদুল্লাহ আল মামুনের প্রযোজনায় ‘আমার দ্যাশের ল্যাগি’ নাটকচি প্রচার হয় ১৯৮৪ সালের স্বাধীনতা দিবসে। বিশেষ করে আল মনসুরের প্রাণবন্ত অভিনয় ভোলার নয়। সেই নাটকে তার খুরধার সংলাপ ছিল ‘দেশের জন্য আমি শহীদ হইয়া যাইবো, দেশের মাটির সাথে পানির সাথে মিশিয়া যাইবো’।

সৈয়দ শামসুল হক রচিত, আবদুল্লাহ আল মামুন নির্দেশিত ও মোস্তফা কামাল সৈয়দ প্রযোজিত থিয়েটার পরিবেশিত ‘পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়’ বিটিভিতে প্রদর্শিত হয় ১৯৮৩ সালের ২৫ মার্চের কালরাতে।

ড. রাজীব হুমায়ুন রচিত ও খ ম হারূন প্রযোজিত কালজয়ী নাটক ‘নীলপানিয়া’। এখানে মুক্তিযুদ্ধকে রূপক অর্থে সাইক্লোন বোঝানো হয়েছে। সন্দ্বীপের মানুষের জীবন সংগ্রাম, প্রকৃতির সঙ্গে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ নিয়ে আঞ্চলিক ভাষায় নির্মিত এ নাটকে অভিনয় করেছিলেন লাকী ইনাম, খালেদ খান, ড. ইনামুল হক, আতাউর রহমান প্রমুখ।

‘স্বর্ণতোরণ’। কাজী মাহমুদুর রহমান রচিত ও আতিকুল হক চৌধুরী প্রযোজিত ১৯৮৯ সালের নাটকটি ছিল গৎবাঁধা গল্পের বাইরে। এখানে ঘটনা, আবহ, চরিত্রসমূহ ব্রিটিশ আমলের শেষ ভাগে, পাকিস্তান আমলের শুরু থেকে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে এক বৃদ্ধার অতীত ও বর্তমান সময়ের সকল জীবন যন্ত্রণা। তার স্বামী পুলিশ কর্মকর্তা, যিনি ছিলেন বৃটিশ আমলে দারোগা, স্বাধীনতাকামী বিপ্লবীদের হত্যাকারী, পাকিস্তান আমলের এসপি, সকল রাজনৈতিক আন্দোলন প্রতিহতকারী এবং মুক্তিযুদ্ধে পাক হানাদার বাহিনীর সহযোগী। নিজের বাড়ির গৃহকর্মীকে মুক্তিযুদ্ধে গোপনে অংশগ্রহণের দায়ে হত্যার চেষ্টা করেছিলেন,  জীবনভর স্ত্রীকে মানসিক নির্যাতনের শিকারে পরিনত করেছিলেন। অথচ স্বাধীন দেশে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তার অবদান ও আত্মত্যাগের বানোয়াট কাহিনী লিখে তিনিই হলেন পুরস্কৃত । এইসব নিয়ে তার স্ত্রীর মৌন প্রতিবাদ, আত্মত্যাগ ও  স্বপ্নের অপমৃত্যু নিয়ে  ‘স্বর্ণতোরণ’ নাটকটি।

মাহবুব জামিল রচিত ও খ ম হারূন প্রযোজিত মর্মস্পর্শী ঘটনা নিয়ে তৈরী হয়েছিল নাটক ‘হৃদয়ে যাতনা যখন’। পাকবাহিনীর হাতে বন্দী মুক্তিযোদ্ধা স্বামীকে নির্যাতন থেকে বাঁচাতে তার স্ত্রী অবলীলায় নিজের সম্মানকে আত্মাহুতি দেয় হা/নাদার বাহিনীর মেজরের কাছে। দেশ স্বাধীন হবার পর স্বামী ফিরে আসে কিন্তু স্ত্রী ততক্ষণে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। সেই বীরঙ্গনা নারী চরিত্রে অভিনয় করেন তারানা হালিম। মাহবুব জামিল রচিত ও খ ম হারূন প্রযোজিত আরেকটা নাটক ‘অচেনা বন্দর’। প্রচার হয় ১৯৯১ সালের বিজয় দিবসে। একজন প্রকৌশলীর যুদ্ধে অংশগ্রহণ এবং ফিরে এসে স্ত্রী-সন্তানকে হারিয়ে নিঃস্ব জীবন যিপনের করুণ চিত্র ফুটে উঠেছে।

‘স্মৃতি বর্তমান’ নামে শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের ভিন্ন ভিন্ন কাহিনী যোগ করে ব্যতিক্রমী ধারার একটা বিশেষ নাটক উপহার দিয়েছিলেন খ ম হারূন।

১৯৮৫ সলে বেগম মমতাজ হোসেন রচিত ও খ ম হারূন প্রযোজনায় প্রচার হয় মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিতে রচিত প্রথম সিরিজ নাটক ‘শুকতারা’। এ বিষয়ে কাজল রিপন লেখেন, “ধারাবাহিকটির কারণে প্রযোজকের চাকরী পরয্নত হুমকির সন্মুখীন হয়েছিলো কিন্তু সততা,  আন্তরিকতা এবং কিছু সৎলোকের সহযোগিতায়  নাটকটি  চুড়ান্ত পরিণতি পায়।”

৯০ দশকে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক আরওকিছু ধারাবাহিক নাটক  প্রচারিত হয়। যেমন সাইফুল বারীর লেখা ও জিয়া আনসারীর প্রযোজনায় ‘জোনাকী জ্বলে’ এবং আমজাদ হোসেনের লেখা ও জিয়া আনসারীর প্রযোজনায় ‘উঠোন’ এবং ‘জন্মভূমি’। এর মধ্যে ‘উঠোন’ অসমাপ্ত থকে যায়।

১৯৮৯ সালে আহমেদ মুসা রচিত ও আতিকুল হক চৌধুরী প্রযোজিত মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী পটভূমিতে রচিত আলোচিত নাটকের নাম ‘চানমিয়ার নেগেটিভ পজিটিভ’। নামভূমিকায় হুমায়ুন ফরীদি,  চরিত্র ছিল এক ছিচঁকে চোরের, যে নানা কারণে চুরি ছেড়ে দিলেও কাউকে তা বিশ্বাস করাতে পারছিল না, ‘কালো খাতা’ থেকে নাম কাটাতে পারছিল না। এ অবস্থায় মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয় এবং এক পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধারা চানমিয়াকে ধরে চরম শাস্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। চানমিয়া অনেক বলে-কয়ে আত্মরক্ষা পাওয়ার পর জীবন দেশের কাজে উৎসর্গের সিদ্ধান্ত নেয়। মুক্তিযুদ্ধে  বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে চানমিয়া। অপারেশন থেকে ফেরার পথে নৌকা ডুবে গেলেও সে একাই তার লিডারকে কাঁধে নিয়ে সাতরে নদী পার হয়। যে স্বপ্ন নিয়ে যুদ্ধে করে, স্বাধীন দেশে সে সুস্থ জীবন ফিরে পায়নি। বড় চোরেরা তখন গিলে খাচ্ছে ছোট চোরদের – বড়মাছের যেমন খেয়ে ফেলে ছোট মাছগুলোকে।

৯০ দশকের আগে-পরে আরো কিছু আলোচিত মুক্তিযুদ্ধের নাটক প্রচারিত হয়। যেমন  মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময় নিয়ে লেখা ‘শীতের পাখি’। আখতার ফেরদৌস রানা রচিত ও আলীমুজ্জামান প্রযোজিত এ নাটকের সেরা সম্পদ ভিন্নধরনের গল্প, সমৃদ্ধ সংলাপ সর্বোপরি হুমায়ূন ফরীদির অভিনয়। নাটকে আরও ছিলেন গোলাম মুস্তাফা, ফেরদৌসি মজুমদার, খালেদ খান এবং শম্পা রেজা। মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে না পারা এক ব্যার্থ তরুণের ভেতরে জমে থাকা কষ্টের অসধারন বহিঃপ্রকাশ ঘটান হুমায়ুন ফরীদি।

মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিতে নির্মিত আখতার ফেরদৌস রানার লেখা নাটকের মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য ‘শীতের পাখি’, ‘জীবন ঘষে আগুন’, ‘আমি শিমুলের কাছে’, ‘একটি নীল জামা’, ‘বিহঙ্গ’, ‘হরফ’, ‘বাঙলা’ ও ‘চোর না ডাকাত’। ১৯৮৮ সালের ২১ নভেম্বর সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে বিটিভি আয়োজিত বিশেষ অনুষ্ঠানে প্রচার হয় মেজর আখতার ফেরদৌস রানা রচিত এবং শেখ রিয়াজউদ্দীন বাদশার প্রযোজিত নাটক ‘দিন বদলের দিন’। দেশের সাতজন বীরশ্রেষ্ঠ মুক্তিযোদ্ধার বীরদর্পে শহীদ হওয়ার মর্মস্পর্শী কাহিনী, একাত্তুরের সেইদিনগুলোর দুঃসহ স্মৃতি জীবন্ত করে তুলেছে। অভিনয়ে ছিলেন হুমায়ুন ফরীদি, ডালিয়া রহমান, রওশন জামিল প্রমুখ।

বিটিভিতে প্রচারিত মুক্তিযুদ্ধের নাটকের মধ্যে সবিশেষ উল্লেখযোগ্য কিছু নাম যুগে যুগে স্মরণীয়। যেমন কাজী মাহমুদুর রহমান রচিত ও শেখ রিয়াজউদ্দিন বাদশা প্রযোজিত নাটক  ‘সন্ধান’, আবদুল্লাহ আল মামুন রচিত ও প্রযোজিত ‘আয়নার বন্ধুর মুখ’. মামুনুর রশীদ রচিত ও আবদুল্লাহ আল মামুন প্রযোজিত ‘আদম সুরত’ আজিজ মিসির রচিত ও জিয়া আনসারী প্রযোজিত সিরিজ ‘কোনো এক কুলসুম’, আতিকুল হক চৌধুরী রচিত ও প্রযোজিত ‘কম্পাস’, ‘পটভূমি পরিচিতি’, ‘নীল নকশার সন্ধনে’, সেলিনা হোসেন রচিত ও জিয়া আনসারী প্রযোজিত ‘যাপিত জীবন’, আরেফিন বাদল রচিত ও আলী ইমাম প্রযোজিত ‘ঐ আসে আমীর আলী’, মামুনুর রশীদ রচিত ও মুস্তাফিজুর রহমান প্রযোজিত ‘ধল প্রহর’, জিয়া আনসারীর ‘জীবনের অপর পাতায়’, হুমায়ুন আহমেদের ‘করোটি’, আহমেদ ইউসুফ সাবেরের ‘ঘরের চাবি’, মইনুল আহসান সাবেরের ‘কবেজ লেঠেল’, রাবেয়া খাতুনের ‘বাগানের নাম মালনীছড়া’, খ ম হারূনের ‘ভয়ংকর সুন্দরদিন’, সেলিনা হোসেনের ‘আত্মাহুতির পালা’ এবং রাজিয়া মজিদের ‘জোৎস্নায় শূন্য মাঠ’ সহ আরো অনেক।


Leave a reply