এই ঈদের মুক্তিপ্রাপ্ত ৩ টি সিনেমা ও আমাদের ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে কিছু কথা
এবারের ঈদের মুক্তিপ্রাপ্ত তিনটা সিনেমাই দেখলাম। বিভিন্ন জনের বিভিন্ন রকম তর্ক বিতর্কও দেখলাম। দেখার পর আমার নিজের কিছু পর্যবেক্ষণ ও মতামত শেয়ার করার লোভ সামলাতে পারলাম না –
১। অমুক সিনেমা একদমই চলছে না এই রকম পোস্ট দেখে বিরক্ত হইসি ভীষণ। ঈদে কোন সিনেমা হলেই খরা যায় নাই। কমবেশি প্রত্যেকটা সিনেমা হলেই দর্শক ছিল এবং আমি অনেকের সাথেই কথা বলেছি, যারা আগে একসময় সিনেমা দেখতেন ভীষণ, মাঝখানে হলে আসা বন্ধ করে দিচ্ছিলেন, কিন্তু এখন আবার হলে আসা শুরু করছেন। আবার নতুন প্রজন্মের অনেকেই হলে আসা শুরু করছে। এটা আমাদের সিনেমার জন্য অবশ্যই একটা বড় আশীর্বাদ।
২। ঢাকাইয়া মাল অরিজিনাল – শাকিব খানের মত ভালো অভিনয় এই মুহূর্তে অন্য কেউই করতে পারছেন না। অন্য অভিনেতারা নিয়মিত উন্নতি করছেন, আমি আশা করবো একসময় তারাও ইন্ডাস্ট্রিতে একটা বিশাল জায়গা করে নিবেন। কিন্তু শাকিব খান একজন প্রতিষ্ঠিত জাত অভিনেতা। একটা সাধারণ টিপিকাল সিনেমাকেও তিনি একাই টেনে নেবার ক্ষমতা রাখেন। কিন্তু আমি শাকিব খানের দেবদাসও দেখসি। তাই আমি বুঝি না আর কতদিন শাকিব একই রকম সিনেমা করে যাবে!!!! শাকিব খানের সবচেয়ে বড় ফ্যান হতে পারত নতুন প্রজন্ম। কিন্তু সেটা কি হয়েছে? যদি না হয়, কেন হয় নি? যাই হোক আমি সামনে মেন্টাল, সম্রাট, পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেম কাহিনি-২ এরকম কিছু মুভির জন্য অপেক্ষা করছি, যেগুলোতে আশা করি শাকিব আমাকে হতাশ করবেন না।
৩। আমি মাহিতে মুগ্ধ। আমি প্রতিটি সিনেমাতেই মাহির উন্নতি দেখতে পারতেসি। অগ্নি ২ তে মাহি অনেক ভালো অভিনয় করসে। তার ফাইটিং স্টাইল ছিল দুর্দান্ত। আমরা একজন ভালো একশন ল্যাডি পেয়ে গেছি বাংলা সিনেমায়। এখন পরিচালকদের দায়িত্ব হল মাহিকে সঠিক ভাবে ব্যবহার করা। আরেফিন শুভ বেছে বেছে এখন সিনেমা করে। আশা করি মাহিও সেরকম খুব ভেবে চিন্তা করে সিনেমা করবে এখন থেকে।
৪। অগ্নি ২ জাজের জন্য আশীর্বাদ হলেও আমাদের ইন্ডাস্ট্রির জন্য শতভাগ আশীর্বাদ নয়। অগ্নি ২ দেখে প্রতি মুহূর্তে একটা জিনিস অনুধাবন করেছি, আমাদের ইন্ডাস্ট্রির ভালো নায়কের অপ্রতুলতা আছে। ১-২ জন ভালো নায়ক দিয়ে ইন্ডাস্ট্রি চলতে পারে না। আমাদের অনেক নায়কের তুলনায় ভারতীয় নায়কেরা ভালো নাচে, তাদের স্টাইল ও অভিনয় বেশি সাবলীল। তাই আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে ১-২ জন স্টাইলিস্ট নায়ক দিয়ে চলবে না। যেমন ইমন, শুভ, শিপন ইত্যাদি এদেরকে সামনে প্রচুর পরিশ্রম করতেই হবে। তা না হলে আমাদের নায়কেরা ভাতে মরবে আর ভারতীয়রা সব সিনেমা বগলদাবা করবে। তাই আমাদের ভালো নায়ক দরকার আরও ।
৫। ইমন ও মিমকে আমরা সঠিক ভাবে ব্যাবহার করতে পারি নি এখনও। পদ্ম পাতার জলে তাদের অভিনয় আমার ভালো লেগেছে। কিন্তু আমাদের পরিচালকেরা নতুন নায়কদের উপর আস্থা রাখেন না। আমাদের তন্ময় তানসেনদের মত পরিচালক, পদ্ম পাতার জলের মত সিনেমা আরও বেশি করে দরকার যেগুলোতে কাজ করে অভিনেতারা আরও চ্যালেঞ্জ ফীল করবে, অনেক কিছু শিখতে পারবে, নিজেকে গড়ে নিতে পারবে। প্রশ্ন হল আমাদের প্রযোজকেরা কি আদৌ এমন সিনেমা গুলোতে ইনভেস্ট করবে?? নাকি শুধু তামিল তেলুগুর নকল সিনেমা গুলোই শুধু বিনিয়োগ পাবে ও মুক্তি পাবে?
৬। মিশা সৌদাগরকে আমার ভীষণ ভালো লাগে। তার একটা আলাদা স্ট্যান্ডার্ড আছে। কিন্তু তিনি অনেক গড়পড়তা সিনেমাতেও ভিলেনের অভিনয় করেন। তারেক আনাম, শহিদুজ্জামান সেলিম এরা কিন্তু খুব হিসাব নিকাশ করে কিছু সিনেমায় অভিনয় করেন এবং এরা কিন্তু বেশ ভালো করছেন। এই ঈদেও এই দুইটি মানুষের অভিনয় আমার ভালো লেগেছে পদ্ম পাতার জলে। তাই মিশা ভাইকে বলব আপনিও ভাই একটু বেছে বেছে সিনেমা করেন। সব সিনেমা আপনার কোয়ালিটির সাথে যায় না।
৭। এই ঈদে শুভ, অনন্ত কে খুব মিস করসি। শুভর মুসাফির আর অনন্তর স্পাই এর জন্য অপেক্ষা করছি। আশা করি তারা সামনে ভালো কিছুই উপহার দিবেন ।
৮। আমাদের প্রযোজকেরা অসৎ পথ কবে ছাড়বেন জানি না। অগ্নি ২ ঈদের প্রথম দিনে ২ কোটি টাকা উপার্জনের সংবাদ ভুয়া হবার সম্ভাবনা বেশি । ২০০ এর বেশি হলে মুক্তি না দিলে বাংলাদেশে একদিনে ২ কোটি উপার্জন করা মোটামুটি অসম্ভব। তবে হয়ত সিনেমাটা প্রথম ৩ দিনে প্রায় ৩ কোটি উপার্জন করেছে। এটা অসম্ভব না, হলেও হতে পারে। কিন্তু জাজের তিন দিনে ৫ কোটি উপার্জনের দাবি হাস্যকর।
সবশেষে বলব ছোট্ট একটা ইন্ডাস্ট্রি। নিজেদের মধ্যে কামড়া কামড়ি না করে সবাই মিলে চলি, লাভটা ইন্ডাস্ট্রিরই হবে। আর নিজেদের ভিতর মারামারি করলে একসময় কেউ টিকবে না, কেউই না। সব ধ্বংস হয়ে যাবে – তিতা লাগলেও এটাই সত্যি কথা ।
ভয়ংকর অবস্থা আপনার ভাষার! গুরুচণ্ডালীর বিষয়টা আমাকে যথেষ্ট বিরক্ত করে দিল!
পোস্টটা সম্ভবত আরও কোন সিরিয়াস বিষয় নিয়ে ছিল । একজন গুরুচণ্ডালী এক্সপার্ট হবার জন্য আপনাকে অভিনন্দন ।