Select Page

ব্ল্যাক মানিঃ অসাধারণ কাহিনী, অনবদ্য নির্মাণ

ব্ল্যাক মানিঃ অসাধারণ কাহিনী, অনবদ্য নির্মাণ

Black Money (1)ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে টাকার স্বপ্ন দেখে সায়মন। আর মিশা সওদাগরের টাকাপয়সার অভাব নেই। সে এখন চায় রাজনৈতিক প্রতিপত্তি। তাই একশো কোটি টাকা ব্ল্যাকমানির বিনিময়ে বিরোধী দলীয় প্রার্থীকে হাত করে, নির্বাচনে জিতে সংসদ সদস্য হতে চায় সে। কিন্তু ঘটনাচক্রে সেই টাকা এসে পড়ে সায়মনের হাতে। তারপর?

এমনই কাহিনী ব্ল্যাকমানির। আমি ভারতীয় ছবি দেখি না তাই কাহিনী কোন ভারতীয় ছবির নকল তা জানা নেই। কিন্তু এটা বলতে পারি, এই ছবির কাহিনী অধিকাংশ সাউথ ইন্ডিয়ান ছবির মত ‘বস্তাপচা’ না। কাহিনীতে যথেষ্ট ডেপথ আছে। আছে দারুণ নভেলটি। অসাধারণ সব টুইস্ট। বাংলা ছবিতে এমন টুইস্ট এন্ড টার্ন সচরাচর দেখা যায় না। এবং সেসব টুইস্টের সাথে যদি একটু আধটু দেশীয় ফ্লেভারের ড্রামা মেলোড্রামা জুড়ে দেয়া যায় তাহলে তো কথাই নেই! মূলত আমার কাছে মনে হয়েছে সায়মন বা মিশা না, কাহিনীই এই ছবির সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক। তাই তিনটে ঘন্টা চমৎকার একটা গল্পকে রূপালী পর্দায় উপস্থাপন হতে দেখার আশায় যে কেউ দেখে ফেলতে পারেন ছবিটি।

পরিচালক ইতোমধ্যে বেশ সমালোচিত নকল কাহিনীর জন্যে। আমি আর সেদিকে না যাই। আমার মতে, কাহিনী যেখান থেকেই নকল হোক, সুন্দর মেকিং এর জন্য পরিচালক প্রশংসার দাবিদার। খুব বেশি আশা নিয়ে ছবিটি দেখতে যাইনি। সেজন্যেই বোধহয় ছবির মেকিং সহজেই আমাকে মুগ্ধ করেছে। খুব বিগ বাজেটের ছবি না। লোকেশনও সব দেশী। নায়ক তেমন জনপ্রিয় নন। এত নেগেটিভিটি সত্ত্বেও যেভাবে সুন্দর একটা গল্পকে পর্দায় ফুটিয়ে তুলেছেন পরিচালক, তা নিঃসন্দেহে ভাল লাগার মত।

চিত্রনাট্য প্রথম অর্ধে জায়গায় জায়গায় খাপছাড়া লেগেছে। এবং আপাতদৃষ্টিতে কোন কারণ ছাড়াই ফার্স্ট হাফ মাত্রাতিরিক্ত বড়। অনেক অংশ বাদ দিলেও চলত। এ দায় সম্পাদকের ঘাড়েও বর্তায়। তবে সেকেন্ড হাফ নেয়ার পারফেক্ট। এত চমৎকারভাবে সেকেন্ড হাফে ছবির মূল কাহিনি বিন্যাস হয়েছে, তা অসাধারণ। দর্শক দম ফেলার সুযোগই পাবে না।

তবে গান এই ছবির মাইনাস পয়েন্ট। ‘লাভ মানে কি’ আর সায়মন কেয়ার রোমান্টিক ট্র্যাক, এই দুটো বাদে বাকি সব গানই বাজে। এবং তারচেয়েও বড় কথা, সেগুলো একেবারেই অপ্রাসঙ্গিক। একটা সুন্দর কাহিনীর ছবিতে অযথা ছয়টা গান দিয়ে ছবির রানিং টাইম বিচ্ছিরি রকমের বড় করে দেয়া বোকামি। তবে এই ছবির উল্লেখযোগ্য দিক হল সংলাপ। এই ছবির কিছু কিছু সংলাপ সত্যিই সুন্দর। বাণিজ্যিক ধারার ছবিতে এরকম ভাল সংলাপ কমই চোখে পড়ে।

অভিনয়ে সায়মন বেশ ভাল। তার যে চরিত্র, তাতে তার ওভারএক্টিং এর সুযোগ ছিল। কিন্তু সে যে অরিজিনালিটি মেনটেনের চেষ্টা করেছে সেটা একটা ইতিবাচক দিক। বাণিজ্যিক ছবি মানেই যে নায়কের ওভারএক্টিং নয়, এটা বোঝার জন্য নায়ক, পরিচালক উভয়কেই ধন্যবাদ। সত্যিকারের রোমান্টিক সিন ছবিতে মাত্র একটাই ছিল এবং সেখানে সায়মনের অভিনয় নজর কেড়েছে। রোমান্টিক হিরো হিসেবে তার ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল। মিশা সওদাগর বরাবরের মত অসাধারণ। তিনি না থাকলে কাহিনী এতটা জমত কিনা সন্দেহ। কেয়াকে ভাল লেগেছে। তার অভিনয়ের জায়গা কম ছিল। কিন্তু সেখানেও তার পরিমিতিবোধ এবং বিশেষভাবে তার চমৎকার লুক নজর কেড়েছে। মৌসুমী সম্পর্কে কিছু বলার নেই। তার হাইট এমনিতেই এদেশী বাণিজ্যিক ছবির উপযোগী নয়। নায়ক নায়িকার মাথা একই উচ্চতায় দেখতে এদেশী দর্শক অভ্যস্ত নয়। এছাড়া তার শারীরিক স্থূলতাও দৃষ্টিকটু। অভিনয়, লুক, গেটআপ – তিন বিভাগেই তার অনেক উন্নতি করতে হবে।

সবমিলিয়ে বলব ব্ল্যাকমানি মোটের উপর ভাল একটা ছবি। সবচেয়ে বড় কথা, এন্টারটেইনিং। ছবি দেখতে গিয়ে দর্শক একটিবারও বোর ফিল করবে না। ছবি দেখার পর কারো মনে হবে না যে টাকা জলে গেছে। আমার ব্যক্তিগত মত, ঈদে মুক্তিপ্রাপ্ত সবচেয়ে বেশি আলোচিত দুইটা ছবির চেয়ে ব্ল্যাকমানি ভাল।


Leave a reply