Select Page

বন্ধুত্বের দুই সিনেমায় জাফর ইকবাল

বন্ধুত্বের দুই সিনেমায় জাফর ইকবাল

JAFOR

জাফর ইকবালকে বলা হয় চিরসবুজ নায়ক। সকল ধরনের চরিত্রে মানানসই এ নায়কের মূল শক্তি কিন্তু স্টাইলিশ অভিনয় ও আবেগের যথাযথ ব্যবহার। তাই রোমান্টিক ইমেজটি বরাবরই ছিল। একই সঙ্গে অন্য নায়কদের সঙ্গে সমানতালে অভিনয়ে দক্ষতা ছিল। দর্শক ইমোশন যায় না— এমন চরিত্রে সাধারণত প্রথম সারির নায়করা অভিনয় করেন না। অথচ জাফর ইকবাল চরিত্রের দৃঢ়তা ধরতে পারতেন চমৎকারভাবে। বন্ধু দিবসে তেমন দুটি সিনেমার কথা তোলা যায়।

বন্ধুত্ব নিয়ে নির্মিত সিনেমা দুটি হল ‘বন্ধু আমার’ ও ‘ভাই বন্ধু’। দুটি সিনেমার একাধিক গানই জনপ্রিয়। দুটি সিনেমার আরেকটি মিল হল— প্রধান অভিনেতার একজন অন্ধ।

ভাই বন্ধু : সিনেমাটির নির্মাতা প্রখ্যাত অভিনেতা ও পরিচালক দারাশিকো। জাফর ইকবাল ছাড়া আরও অভিনয় করেছেন ইলিয়াস কাঞ্চন, দিতি, সুনেত্রা ও সোহেল চৌধুরী। এক অন্ধ গায়ক ও মারকুটে যুবকের কাহিনী নিয়ে নির্মিত হয়েছে সিনেমাটি। ‘ভাই বন্ধু’ মুক্তি পায় ১৯৮৬ সালে।

JAFOR-1

অন্ধ জাফর ইকবালের সঙ্গে ঘটনাসূত্রে পরিচয় ইলিয়াস কাঞ্চনের। অন্ধ হওয়ার কারণে জাফর ইকবালের প্রতিভার সদ্গতি হচ্ছিল না, রাস্তার ধারে বসে গান গেয়ে টাকা কামায়। নাছোড়বান্দা কাঞ্চন তা-ই করে ছাড়বে। অবশেষে অভিনব সুযোগ মেলে। মঞ্চের পেছনে বসে গান গাইবে জাফর ইকবাল, মঞ্চে লিপসিং করবে ইলিয়াস কাঞ্চন। রাতারাতি তারা হিট হয়ে যায়। যদিও দর্শক জানত না আসল গায়কের খবর। এক সময় অপারেশনের মাধ্যমে চোখ ফিরে পায় জাফর ইকবাল। এবার তার ইচ্ছা দর্শকের সামনে গান করার। শুরু হয় বন্ধুত্ব ও স্বার্থপরতার দ্বন্দ্ব। এখানে এসে দর্শকের আবেগ জাফর ইকবালের পক্ষে থাকে না। কিন্তু দুর্দান্তভাবে সিনেমার শেষে তা ফিরে আসে। সবার মন তার জন্য খারাপ হয়ে যায়। তবে শেষ দৃশ্যটি বেশি মেলো-ড্রামাটিক।

কাহিনী ও অভিনয়ের পাশাপাশি অসাধারণ কিছু গান সিনেমাটিকে দর্শকদের কাছে স্মরণীয় করে রেখেছে। গাজী মাজহারুল আনোয়ার ও মনিরুজ্জামান মনিরের কথায় গানের সুর করেছেন আলাউদ্দিন আলী। উল্লেখযোগ্য গান হলো ‘ভেঙ্গেছে পিঞ্জর মেলেছে ডান।’, ‘সত্য কী মিথ্যা কী?’ ও ‘অন্ধ হয়ে থেকো না কেউ’। এর মধ্যে প্রথম গানটি এখনো মানুষের মুখে মুখে ফেরে।

বন্ধু আমার : ‘একটাই কথা আছে বাংলাতে, মুখ আর বুক বলে এক সাথে, সে হলো, বন্ধু বন্ধু আমার’ এ গানটি এখনো বন্ধুকে নিয়ে লেখা বাংলা চলচ্চিত্রের অন্যতম সেরা গান। গানটিতে দেখা যায় জাফর ইকবাল ও ফারুককে। সিনেমাটিতে গানটির দুটি ভার্সন আছে। ছোটবেলা ও বড়বেলার।

আগের সিনেমার চেয়ে এবারের সিনেমার চরিত্র খানিক বিপরীতে। ‘ভাই বন্ধু’ ছিল নিচুতলার মানুষের প্রতিষ্ঠার গল্প। এ সিনেমায় ফারুক অন্ধ ও গরিব। জাফর ইকবাল ধনীর ছেলে। তবে দু’জনের গলায়ই সুর থাকে। আওকাত হোসেন পরিচালিত সিনেমাটি মুক্তি পায় ১৯৯২ সালে। চলচ্চিত্রটির জনপ্রিয়তা জাফর ইকবাল দেখে যেতে পারেননি। মুক্তির দু’মাস মাস আগে তিনি মারা যান।

JAFOR-2

সিনেমাটিতে অন্য দুটি চরিত্রে অভিনয় করেন রোজিনা ও সুনেত্রা। সমাজের দুই শ্রেণীর দুই কিশোরের বন্ধুত্ব, সে স্মৃতি বয়ে বেড়ানো, ফিরে পাওয়া ও নিজেকে বিলিয়ে দেওয়া এ সিনেমার উপজীব্য। এখানেও অন্ধ বন্ধুটি চোখ ফিরে পায়। চলচ্চিত্র চিত্রায়িত হয়েছে বাংলাদেশ-ভারতের চমৎকার লোকেশনে। আছে বিভিন্ন ধরনের জীবজন্তুর ব্যবহার। ‘বন্ধু আমার’র সুর ও সঙ্গীতায়োজন করেছিলেন বাপ্পী লাহিড়ী। গানের শিল্পীও ভারতীয়। চলচ্চিত্রটির আরও দুটি উল্লেখযোগ্য গান হলো ‘ভালবাসি ভালবাসি’ ও ‘হাওয়াই জাহাজে উড়ে ঘুরে’।

তথ্যসূত্র : ফজলে এলাহি, হাবিবউল্যাহর ফেসবুক নোট ও ব্লগ এবং বাংলা মুভি ডেটাবেজ। (মূল লেখকের আদিত্য আকবরের অনুমতিক্রমে প্রকাশিত)


Leave a reply