Select Page

পদ্ম পাতার জল: ভালোবাসার রাজসিক মহাকাব্যের তিলোত্তমা দৃশ্যায়ন

পদ্ম পাতার জল: ভালোবাসার রাজসিক মহাকাব্যের তিলোত্তমা দৃশ্যায়ন

poddo_patar_jolআজকে সকালে ঘুম থেকে উঠার পর মনে হল সকালটা উপভোগ করা যেতে পারে পদ্ম পাতার জল দেখে। তাই ছুটে গেলাম বলাকাতে মর্নিং শো দেখতে। সিনেমা শেষ হতে হতে দুপুর হয়ে গেলেও সময়টা স্মরণীয় হয়ে রইল আর আমি ভেসে গেলাম পদ্ম পাতার জলে ।

কোন ধরণের কাহিনী কে সিনেমায় তুলে ধরা সবচেয়ে কঠিন? আমাকে প্রশ্ন করা হলে আমি বলব একটা মহাকাব্য কে দৃশ্যপটে তুলে ধরা সবচেয়ে চেলেঞ্জিং। সেই কঠিন কাজটাই চমৎকার ভাবে করে দেখালেন পরিচালক তন্ময় তানসেন

প্রায় একশো বছরের পূর্বের ঘটনা। পদ্ম পাতার জল শুরু হয়েছে একজন জমিদারের খেয়ালীপুত্র ইমনের মাধ্যমে, কবিতাই যার জীবন। বাবার আদেশে পড়াশোনা করতে ঢাকায় আসে ইমন। এখানে পরিচয় হয় দুই বন্ধুর সাথে। তাদের পাল্লায় পরে বাইজিপারায় গিয়ে নর্তকী বিদ্যা  সিনহা মিমের সাথে পরিচয় হয়। পরিচয় থেকে কবিতার বিনিময় আর কবিতা থেকে ক্রমেই হৃদয় বিনিময়। মিম চায় বাইজি মহল থেকে মুক্তি পেতে। মুক্তি পাবার কাঁটা হয়ে দাঁড়ায় আরেক জমিদারপুত্র অমিত হাসান। ইমন কি পারবে মিমকে মুক্ত করতে? আর মুক্ত করার পর কি মিলন হবে দুটি প্রাণের? নাকি পদ্ম পাতার জলের মত ভেসে যাবে দুজনে সব বন্ধন পেরিয়ে? জানতে হলে দেখতে হবে পদ্ম পাতার জল ।

Poddo-Patar-Jol-4

পদ্ম পাতার জলের কাহিনী কোন সাধারণ কাহিনী ছিল না। এটা ছিল প্রেমের মহাকাব্য। এরকম একটা মহাকাব্য কে এত সুন্দর করে দৃশ্যপটে তুলে আনার দুঃসাহস দেখানোর জন্য দুইজন মানুষকে আমি বাহবা দিবো।

প্রথম জন হল লতিফুল ইসলাম শিবলী। যদিও তিনি গীতিকার হিসেবে পরিচিত, এই সিনেমার কাহিনী, চিত্রনাট্য ও সংলাপ তার লেখা। প্রতিটি সংলাপ কানে ঝংকার তুলেছে, এখনও কানে বেজে যাচ্ছে।

আর পরিচালক তন্ময় তানসেন অসাধারণ। প্রতিটি দৃশ্যকে তিনি সাজিয়েছেন কবিতার মত করে। একদণ্ড পর্দা থেকে চোখ তুলতে পারিনি। সিনেমার লোকেশন গুলো সত্যি অসাধারণ। প্রতিটি দৃশ্য যেন পটে আকা ছবি। প্রত্যেক অভিনেতার থেকে সেরাটা তুলে এনেছেন তিনি। একশো বছর আগের গল্প পর্দায় দেখানো এত সহজ না। কিন্তু তিনি যেভাবে সিনেমার সেট ডেকোরেশন করেছেন সেটা  শুধুই চোখে তৃপ্তি দেয় না, প্রাণেরও তৃষ্ণা মেটায়।

Paddo-Patar-Jal

এই ছবির প্রাণ হল সংলাপ, গান, লোকেশন, নাচ। কিন্তু সবচেয়ে বড় প্রাণ হল বিদ্যা সিনহা মীম। শেষ কবে বাংলা সিনেমায় এত অসাধারণ ক্লাসিক্যাল ড্যান্স দেখেছিলাম ঠিক মনে পরছে না। মিমের অভিনয়, সংলাপ প্রক্ষেলন, নৃত্য সহ সবকিছু দর্শকের প্রাণ হরণ করে নিবে।

ইমনের কণ্ঠ এমনিতেই সুন্দর। তার গলায় কবিতা শুনে মনে হচ্ছিল শুনতেই থাকি। এই সিনেমায় আমার তার অভিনয়ও ভীষণ ভালো লেগেছে।

images (2)

ইমনের বাবার চরিত্রে তারিক আনাম বেশ ভালো করেছেন । অমিত হাসান তার চরিত্রে একটু দুর্বল ছিলেন। আবু হেনা রনি কে মোটেও জোকার লাগে নি, কিন্তু ইমনের বন্ধুর চরিত্রে তাকে বেশ ভালো লেগেছে।

কিন্তু দ্বিতীয় অর্ধের সময় শহিদুজ্জামান সেলিমের অভিনয় দেখে আমি ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। লোকটা জন্মগত অভিনেতা। সিনেমার কাহিনীর মোড় ঘুরিয়েছেন তিনি, যেভাবে ইমনের সাথে মাইন্ড গেম খেলেছেন, সেটা বোধহয় বাংলা সিনেমার দর্শক আর কখনও উপভোগ করার সুযোগ পায় নি। মূল ভিলেনের খেতাব অমিত হাসানের থেকে রীতিমত ছিনিয়ে  নিয়েছেন তিনি। অনেকদিন মনে থাকবে তার করা সরফরাজ খানের চরিত্রটি।

images (3)

সিনেমার গানগুলো ভীষণ সুন্দর। গানের লোকেশন, গানের দৃশ্য সেট আপ মুগ্ধ করেছে। ক্লাসিক্যাল ড্যান্সের কোরিওগ্রাফি যিনি করেছেন তিনি অসাধারণ করেছেন। তবে এই সিনেমার এত বিশাল ক্যানভাস কে বানিয়েছেন জানি না। যিনি বানিয়েছেন মনোমুগ্ধকর বানিয়েছেন । কস্টিউম ডিজাইনও ভীষণ চমৎকার ছিল ।

ছবির সিনেমাটোগ্রাফি  বেশ চমৎকার হয়েছে । ফ্রেম টু ফ্রেম দক্ষ হাতের কাজ লেগেছে ।

কিন্তু সিনেমায় নিপুণের নাচে অংশ না নিলেই ভালো হত। আর চিরকুটের কাছ থেকে আরও ভালো ব্যাকগ্রাউন্ড সঙ্গীত আশা করেছিলাম।

যাই হোক স্টোরি লাইন শক্তিশালী থাকায় আর কিছু মেধাবী মানুষের হাতে পরে পদ্ম পাতার জল শেষ পর্যন্ত চমৎকার একটি মেলোড্রামা সিনেমা হয়েছে। দেখার মত একটি সিনেমা এটি, আশা করি সব দর্শকই এটাকে উপভোগ করবেন।

আমি এই সিনেমাকে দশে নয় দিবো। আর তন্ময় তানসেন ও লতিফুল ইসলাম শিবলী দের মত মেধাবী মানুষদের হাত ধরেই আমাদের সিনেমা এগিয়ে যাক, এটাই কামনা করি।

বাংলা সিনেমার জয় হোক ।


Leave a reply