Select Page

অঞ্জলী: গান হিট, ছবি ব্যর্থ

অঞ্জলী: গান হিট, ছবি ব্যর্থ

গত শতকের শেষ দশকের শুরুর দিকের ঘটনা। স্বৈরাচার এরশাদ সরকারের পতন ঘটিয়ে দেশে তখন জনগণের ভোটে নির্বাচিত বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে গণতান্ত্রিক সরকারের শাসনকাল মাত্র ১ বছর পেরিয়েছে। দেশে কোন অস্থিরতা নাই। সেই সময় বাংলাদেশের ব্যান্ড সংগীতের অন্যতম জনপ্রিয় ও সেরা ব্যান্ড ফিডব্যাক এর ভোকাল মাকসুদুল হক দেশে ও কলকাতায় বেশ জনপ্রিয় এক কণ্ঠ।

একদিন টেলিভিশনের পর্দায় ‘অঞ্জলী’ নামের মুক্তি প্রতিক্ষিত একটি সিনেমার ট্রেলার প্রচারিত হলো। সেই ট্রেলারে লিকলিকে পাতলা গড়নের নতুন এক নায়ক বৃষ্টিতে ভিজে গাইছে ‘তোমাকে দেখলে একবার/ মরিতে পারি শতবার’ কথায় একটা গান। গানটিতে গায়কের কণ্ঠ শুনেই কান খাড়া হয়ে বোঝার চেষ্টা করলাম। মুহূর্তেই চিনে ফেললাম আরে এতো আমাদের ফিডব্যাকের ভোকাল মাকসুদের কণ্ঠ। তাহলে মাকসুদ সিনেমাতে গান গাইছে!! পরেরদিন স্কুলে বন্ধুদের সবাই সিনেমার ট্রেলার নিয়ে গল্প মশগুল। মাকসুদ সিনেমায় গান গাইছে দেখতেই হবে ছবিটা।

দুদিন পর বিটিভিতে ‘অঞ্জলী’ সিনেমার আরেকটা ট্রেলার প্রচারিত হলো। এবারের ট্রেলারে নতুন অচেনা নায়কটির পেছনে বসে মোটরবাইকে শাবনাজ (যে নায়িকাটি কদিন আগে ‘চাঁদনী’ নামের সিনেমা দিয়ে ঝড় তুলেছিলো) শহরের রাস্তায় ঘুরছে আর দুজনের কন্ঠে ‘লোকে বলে পাগলামি/ আমি বলি ভালোবাসা/ দুটি দেহ তুমি আমি/ এক মন এক আশা’ এমন কথার একটি গান। এই গানেও দেখি মাকসুদ আর নারী কণ্ঠ সামিনা চৌধুরী। এই ট্রেলার দেখে অস্থিরতা আরও বেড়ে গেলো। নাহ, সিনেমাটা দেখতেই হবে। কোনভাবেই মিস দেয়া যাবে না। রেডিওতে প্রতিদিন দুপুরে কান পেতে শুনতাম ‘অঞ্জলী’ সিনেমার বিজ্ঞাপন। রেডিওর বিজ্ঞাপন শুনে নায়কের নামটি জেনে গেলাম সুস্ময়।

অবশেষে সপ্তাহখানেক পর দারাশিকো পরিচালিত ‘অঞ্জলী’ মুক্তি পেলো আর প্রথম দিন থেকেই সিলেটের নন্দিতা সিনেমা হলে প্রদর্শিত হতে লাগলো। সারা সিলেট শহরের বড় রাস্তার ধারে দেয়ালে দেয়ালে সুস্ময় ও শাবনাজের ছবি সম্বলিত বিশাল পোস্টার (নিচের ছবিতে)। ছবির পোস্টার ও মাকসুদ সামিনার কন্ঠের গান অপেক্ষার বাধ ভেঙে দিলো। শুক্রবার বিকেলেই সবাই মাঠের ফুটবল খেলা ছেড়ে চলে গেলাম নন্দিতা সিনেমা হলে। গিয়ে দেখি হলের সামনে আমাদের সমবয়সী পোলাপান ও সপরিবারে আসা মহিলা দর্শকরা মিলেমিশে একাকার। কার আগে কে টিকেট কেটে হলে ঢুকবে হুলুস্থুল কারবার।

সিনেমার গল্পটি দুই পরিবারের দ্বন্দ সংঘাতের মাঝে দুই তরুণ তরুণী প্রেমের গল্প। হুমায়ুন ফরীদি ও দারাশিকো’র দ্বন্দ্ব। ফরীদি দারাশিকো’কে পাগল বানিয়ে সব সম্পত্তি দখল করে। দারাশিকো জানে তার স্ত্রী ও সন্তান মারা গেছে। দারাশিকো’র স্ত্রী সন্তান প্রবীর মিত্রের আশ্রয়ে থাকে। ফরিদীর মেয়ে অঞ্জলী (শাবনাজ) ও দারাশিকো’র ছেলে সুস্ময়ের মাঝে প্রেম। ফরীদি এই সম্পর্ক মেনে নেয় না। এমন টানাপোড়েন শেষে সুস্ময় ও শাবনাজের মিলনাত্মক পরিণতিতে ছবিটির সমাপ্ত। বলতে গেলে গতানুগতিক এক প্রেম কাহিনী দেখলো দর্শক যার মধ্য নতুনত্ব ছিলো শুধু মাকসুদের দুটি গান।

গীতিকার মনিরুজ্জামান মনিরের লেখা ও আলাউদ্দিন আলীর সুরে সিনেমার গানগুলো ছিলো দারুণ যার মধ্য মাকুসুদুল হকের কন্ঠে গান দুটো ছিলো সুপারহিট, যা আজও সেদিনের শ্রোতারা মনে কর।

ছবিটির নায়ক সুস্ময় ছিলো পরিচালক ও অভিনেতা দারাশিকো’র সত্যিকারের সন্তান। সুস্ময়কে সেদিন দর্শকরা গ্রহণ করেনি যার ফলে ট্রেলার দেখে প্রচন্ড আগ্রহ নিয়ে হলে যাওয়া দর্শকরা প্রচন্ড হতাশ হয়ে ফিরে। মাকসুদুল হকের কন্ঠের একটি ও মাকসুদ সামিনার দ্বৈত কণ্ঠের একটি মোট দুটি গান বাদে দর্শকদের কাছে চমকপ্রদ কিছু ছিলো না। সুস্ময়ের অভিনয় ছিলো খুবই দুর্বল। সিনেমাটি প্রথম দুদিন যে দর্শক পেয়েছিলো তা ধরে রাখতে পারেনি যার ফলে দারাশিকো’র প্রযোজিত ও পরিচালিত ‘অঞ্জলী’ ব্যবসায়িকভাবে ব্যর্থ হয়। উল্লেখ্য যে এই সিনেমাটির ব্যর্থতার পর দারাশিকো আর কোন সিনেমা প্রযোজনা ও পরিচালনা করেননি।


মন্তব্য করুন