
রিভিউআকা: মানুষের সেবায় নিয়োজিত অ্যাটেনশন সিকার❗
আকা; পরিচালনা: ভিকি জাহেদ; অভিনয়: আফরান নিশো, মাসুমা রহমান নাবিলা, ইমতিয়াজ বর্ষণ ও আজিজুল হাকিম; প্লাটফর্ম: হৈচৈ
[স্পয়লার নেই]
আবুল কালাম আজাদ একটি কুরিয়ার অফিসে চাকরি করে। তার স্বপ্ন গায়ক হওয়া। কিন্তু বাস্তবতার কঠিন দেয়ালে স্বপ্নটা বারবার ধাক্কা খেয়ে ফিরে আসে। ঘটনাক্রমে আজাদের মন ভরে ওঠে এক ভয়ংকর মানসিকতায়—খুনের ইচ্ছা। চেষ্টা করেও সে নিজেকে এই অন্ধকার থেকে দূরে সরাতে পারে না, বরং সমাজের বাস্তবতা তাকে সেই দিকে আরও ঠেলে দেয়। ধীরে ধীরে সে হয়ে ওঠে দেশের মানুষের আস্থার আরেক নাম। তবে শেষ পর্যন্ত আজাদ কি ধরা পড়বে? উত্তর লুকিয়ে আছে ভিকি জাহেদ পরিচালিত, আফরান নিশো, মাসুমা রহমান নাবিলা ও ইমতিয়াজ বর্ষণ অভিনীত ৭ পর্বের ওয়েব সিরিজ ‘আকা’-তে।

২০২৩ সালে হইচই-তে মুক্তি পাওয়া ‘সাড়ে ষোলো’-এর পর প্রায় দুই বছর ধরে কোনো নতুন কাজে দেখা যায়নি আফরান নিশোকে। অপরদিকে, ভিকি জাহেদও গতবছর হইচই-এর ওয়েব সিরিজ ‘রুমি’-র পর আর নতুন কোনো সিরিজ বানাননি। দীর্ঘ বিরতির পর এই অভিনেতা-পরিচালক জুটি আবারও একসাথে ফিরেছেন হইচই-এরই ‘আকা’ সিরিজের মাধ্যমে। এর মধ্য দিয়ে তারা প্রমাণ করেছেন—পরিচালক ও অভিনেতা হিসেবে একসাথে তারা সবসময়ই কিছু আলাদা এবং স্মরণীয় উপহার দিতে জানেন।
‘আকা’ মূলত একটি সোশ্যাল থ্রিলার, যা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দর্শকদের আগ্রহ ধরে রাখার মতো একটি ওয়েবসিরিজ। বিশেষত প্রথম চারটি এপিসোড দর্শককে দৃঢ়ভাবে আটকে রাখবে। ভিকি জাহেদ এখানে যেই ওয়ার্ল্ডটা নির্মাণ করেছেন, সেটি একেবারেই বাস্তব ও আমাদের চারপাশের সাথে ভীষণ রিলেটেবল। তার উপর কাব্যিক সব সংলাপ সিরিজটিকে আরও গভীর করেছে। এই ওয়ার্ল্ডে আকা এবং আজাদ চরিত্রগুলো যেনো বেশ শক্তিশালীভাবেই ফিট হয়েছে। এখানে, আজাদের বিষণ্ণতা কিংবা তার মানসিক দোদুল্যমানতা—সবকিছুই সংলাপের মাধ্যমে নিখুঁতভাবে মানিয়ে গেছে। এছাড়াও ভিকি জাহেদ সিরিজজুড়ে তার নিজস্ব নির্মাণশৈলী বজায় রেখেছেন। সিরিজে থ্রিল যেমন ছিল, তেমনি রোমান্টিক মুহূর্তগুলোতেও একধরনের মিষ্টি আবহ টের পাওয়া গেছে। কিছু ডিটেইলিং বেশ নজর কেড়েছে, বিশেষ করে খুনি চরিত্রের অপরিপক্বতা তুলে ধরার বিষয়টি প্রশংসার দাবিদার। সব মিলিয়ে, ভিকি-নিশো জুটির ওটিটিতে কামব্যাক বেশ সফলই বলা যায়।
এই সিরিজে আফরান নিশো আজাদের চরিত্রে দুর্দান্ত। চরিত্রের ভিতরের দ্বন্দ্ব-বিষণ্ণতা এবং প্রত্যাবর্তনটাকে তিনি যথাযথভাবে তুলে ধরেছেন। তার কণ্ঠে কাব্যিক সংলাপগুলো এক অন্যরকম আবহ তৈরি করেছে। নিশোর পাশাপাশি নাবিলাও চমৎকার অভিনয় করেছেন। নিশো-নাবিলার কেমিস্ট্রি ছিল ভীষণ মিষ্টি। অবশ্য নাবিলা এমনিতেও বেশ মিষ্টি, নাবিলার সংলাপ বলার ধরণটিও বেশ মুগ্ধ করেছে। এছাড়াও, আজিজুল হাকিম (নিশোর চাচার ভূমিকায়) যথাযথ, আর ইমতিয়াজ বর্ষণও এই ক্যাট-অ্যান্ড-মাউস চেজে সঠিক ভারসাম্য এনেছেন।

এই সিরিজের কারিগরি দিকগুলোতে ভালো কাজ হয়েছে। বিদ্রোহী দীপনের সিনেমাটোগ্রাফি এবং সুন্দর কালার গ্রেডিং সিরিজের ওয়ার্ল্ডটাকে যথেষ্ট বাস্তবসম্মত করেছে। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকও টানটান উত্তেজনা তৈরি করতে সাহায্য করেছে।
এবার নেগেটিভ দিকগুলোতে আসি। এই সিরিজের অন্যতম নেগেটিভ পয়েন্ট হচ্ছে-সিরিজটা অনেক ক্ষেত্রেই আফরান নিশোর লাস্ট রিলিজ ‘দাগি’র সাথে সামঞ্জস্য তৈরির জায়গা করে রেখেছে। যেহেতু নিশো ‘দাগি’ শেষ করেই এই সিরিজ শুরু করেছিলেন, তাই অনেক সময় তার লুক বা আবহে ‘নিশান’ চরিত্রের ছায়া পড়েছে। শুরুর কিছু অংশে ‘দাগি’-র ফিল স্পষ্টভাবে এসেছে। এছাড়া সিরিজের শেষদিকে কিছুটা তাড়াহুড়ো চোখে পড়েছে। এই জায়গায় আরও সময় দিলে ভালো হতো। হয়তো সেটি দ্বিতীয় সিজনের জন্য জমা রাখা হয়েছে—তবে সিজন টু যেন দ্রুতই আসে, সেটাই প্রত্যাশা। অবশ্য প্রত্যাশা রাখাটাও বোধহয় ভুল হবে। হইচই তো এক সিজন রিলিজ করে কুম্ভকর্ণের মতো ঘুমিয়ে পড়ে।
তো সব মিলিয়ে ‘আকা’ আমার কাছে একটি এনগেজিং সোশ্যাল থ্রিলার ওয়েবসিরিজ। ভিন্ন স্বাদের কিছু দেখতে চাইলে হইচই-তে ‘আকা’ অবশ্যই দেখতে পারেন।