Select Page

আরেক আক্ষেপ অমিত হাসান

আরেক আক্ষেপ অমিত হাসান

তাকে নিয়ে লিখতে গিয়ে প্রথমেই মনে আসে কি কি লিখব না। লেখার কি অনেক আছে তাকে নিয়ে? অনেকের কাছে মনে হতে পারে কিন্তু মন সায় দেয় না।

জন্ম ৯ সেপ্টেম্বর ১৯৬৮, টাঙ্গাইলের আদালাতপাড়ায়। পুরো নাম খন্দকার সাইফুর রহমান। অমিত হাসান অজু নামেও পরিচিত। এফডিসির ‘নতুন মুখের সন্ধানে’-র মাধ্যমে ১৯৮৬ সালে আগমন ঘটে।

অমিত হাসান মোটাদাগে একটা আক্ষেপের নায়ক। তার কাছ থেকে পাওয়ার মতো অনেককিছু ছিল কিন্তু হয়নি। অভিনেতা হিশাবে তার সমসাময়িকদের থেকে পিছিয়ে থাকলেও অবস্থান ছিল। নায়ক হয়ে সাফল্য দেখিয়েছে। প্রথমদিকের অমিত, মাঝের অমিত আর বর্তমান অমিতের মধ্যে তিন ধরনের বিবর্তন ঘটেছে-
* নায়ক অমিত
* নিজের মূল্য না বোঝা অমিত
* খলনায়ক অমিত
তিন বিবর্তনে তার ক্যারিয়ার তিনটা মোড়ে বিভক্ত হয়ে এক দিক থেকে ভালো হয়েছে তাকে আলাদাভাবে চেনার সুযোগ হয়েছে।

প্রথমদিকের নায়ক অমিত পরিচ্ছন্ন ছিল। তখন সুদর্শন লুকের সাথে ফিটনেসও ভালো ছিল। ‘চেতনা’ ছবিতে অমিত, মিশা নায়ক ছিল, তাদের দুজনেরই প্রথম ছবি। ‘অমর সঙ্গী’ দ্বিতীয়। তার সময়ের প্রধান সারির নির্মাতাদের ছবিতে অভিনয় করেছে। জসিম, শাবানা, ইলিয়াস কাঞ্চন, মান্না তাদের ছবিতে দ্বিতীয় নায়কের ভূমিকায় কাজ করেছে। জসিমের সাথে ‘ভালোবাসার ঘর’-এ ছিল ভাই। শাবানার সাথে ‘হিংসা’-তে ছিল ভাই, ‘বাংলার মা, শাসন’ এগুলোতে ছেলে। ইলিয়াস কাঞ্চনের সাথে ‘বেঈমানী, আসামী গ্রেফতার, জবর দখল’-এ ভাই, ‘আত্মত্যাগ’-এ বন্ধু, বাপ্পারাজের সাথে ‘প্রেমের নাম বেদনা’-তে বড়ভাই, ‘প্রেমের সমাধি’-তে দ্বিতীয় নায়ক, ‘চাকরানী, ভুলোনা আমায়, পাগলীর প্রেম’-এ বন্ধু। রিয়াজের সাথে ‘তুমি শুধু তুমি, তোমার জন্য পাগল, জামাই শ্বশুর’-এ বন্ধু। এভাবে তার ক্যারিয়ারে হিরোইজমের ধারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

অমিতের নায়িকাভাগ্য বেশ ভালো। জুটি ছিল মৌসুমী, শাবনূর, শাহনাজ, শাবনাজ, পপি, কাজল-দের সাথে। শাবনূরের সাথে ‘প্রেমের অহংকার, বিদ্রোহী প্রেমিক, শেষ ঠিকানা, ভুলোনা আমায়, তুমি শুধু তুমি, পাগলীর প্রেম, রঙিন উজান ভাটি, বিদ্রোহী প্রেমিক, প্রেমের অহংকার, সৈনিক, আত্মসাৎ, চিরঋণী’ ছবিগুলো বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। বলতে গেলে সালমান শাহ-র অসমাপ্ত ‘শেষ ঠিকানা, তুমি শুধু তুমি’ ছবিগুলোতে পরে অমিত নায়ক হয় সেগুলো তার ক্যারিয়ারের ইউটার্ন ছিল। মৌসুমীর সাথে ‘আত্মত্যাগ, মৌসুমী’ ছবি দুটি মিউজিক্যাল দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। শাহনাজের সাথে খুবই উল্লেখযোগ্য জুটি তার। তাদের পর্দা রসায়ন চমৎকার ‘জ্যোতি, আত্মত্যাগ, হিংসা, আসামী গ্রেফতার’ ছবিগুলোতে এ জুটি অসাধারণ। শাবনাজের সাথে ‘প্রেমের সমাধি, আশার প্রদীপ, ডাক্তারবাড়ি’ মানসম্মত ছবি। পপির সাথে ‘ভালোবাসার ঘর, এতটুকু আশা’ জনপ্রিয় ছবি। কাজলের সাথে ভালো জুটি ছিল। তাদের ‘বেঈমানী, বাবা কেন চাকর’ উল্লেখযোগ্য ছবি। এছাড়া অরুণা বিশ্বাসের সাথে।

 

অমিতের ছবির জনপ্রিয় কিছু গান –
* আমি পাথরে ফুল ফোটাব – শেষ ঠিকানা
* ভালোবাসার পাঠশালা নাই – প্রেমের অহংকার
* বিদ্রোহী প্রেমিক আমি – বিদ্রোহী প্রেমিক
* চারিদিকে শুধু তুমি – মৌসুমী
* রূপসী এই বুকে জ্বেলেছ আগুন – আত্মত্যাগ
* ষোল থেকে সতেরো – আত্মত্যাগ
* তুমি যদি ভালোবাসো স্বর্গে আমি যাব না – বাংলার মা
* বিদেশ গিয়া বন্ধু – রঙিন উজান ভাটি
* দিনের কথা দিনে ভালো – রঙিন উজান ভাটি
* একদিকে পৃথিবী একদিকে তুমি যদি থাকো – ভুলোনা আমায়
* পাষাণ পৃথিবী যত দাও যন্ত্রণা মোরে – আশার প্রদীপ
* আশা আমার ভালোবাসা – শেষ ঠিকানা
* চক্ষু দুইটা বাত্তি কইরা – শেষ ঠিকানা
* পৃথিবীর জন্ম যেদিন থেকে – জ্যোতি
* আমার সুখের কলসি – জ্যোতি
* তুমি আমার বাড়ি তুমি আমার ঘর – হিংসা
* রুবি ও আমার জান – শাসন
* তোমাকে নিয়ে আমি বাঁধব সুখের ঘর – ভালোবাসার ঘর
* জীবনে প্রথম প্রেম তুমি – বিদ্রোহী সন্তান
* তুমি ছাড়া কাটে না – ভালোবাসার ঘর
* আমি বধূ সেজে থাকব – বাবা কেন চাকর
* পিছু নিয়েছে কিছু লোক – বেঈমানী
* ওগো দুষ্টু ছেলে কেন ভয় দেখালে – বেঈমানী
* তোমাকে দেখার পরে এই জানলাম – আগুন জ্বলবেই
* দোল দোল দুলুনি – অমর সাথী

অমর নায়ক সালমান শাহ-র নিজের কণ্ঠে গাওয়া ‘রজনীগন্ধা, তুমি যে আমার’ গানের লিপ দিয়েছে অমিত হাসান। গানটি সালমান গেয়েছিল ‘ঋণশোধ’ ছবির জন্য। অকালমৃত্যুতে ছবিটি করতে না পেরে পরে অমিত হাসানের লিপে ব্যবহৃত হয় ‘আলী কেন গোলাম’ ছবিতে।

অভিনয়ের দিক থেকে ‘শেষ ঠিকানা, রঙিন উজান ভাটি, জ্যোতি, তুমি শুধু তুমি, আশার প্রদীপ, বেঈমানী, ভালোবাসার ঘর, শাসন’ ছবিগুলো উল্লেখযোগ্য।
অমিতের মাঝের সময়টা গড্ডলিকা প্রবাহে গা ভাসানো ছাড়া কিছু না। অশ্লীল সময়ে অনেক মানহীন ছবিতে অভিনয় করেছে।

বর্তমান অমিত হাসানের দুইটি রূপ আছে-
* দেশীয় ছবির খলনায়ক
* তথাকথিত যৌথ প্রযোজনার ছবির খলনায়ক

দ্বিতীয়টাতে তার কাজ করা নিয়ে নৈতিকতার সমস্যা সম্পর্কে সমালোচনা হয়েছে। দেশীয় ছবিতে এ পর্যন্ত ‘ভালোবাসার রং, ফুল অ্যান্ড ফাইনাল, হিরো দ্য সুপারস্টার, প্রেম প্রেম পাগলামি, সুলতানা বিবিয়ানা, বসগিরি, রাজনীতি’ এরকম আরো কিছু ছবিতে খলনায়ক ছিল। খলনায়কের ভূমিকায় তাকে কতটুকু যুৎসই লাগে সেটা নিয়েও মিশ্র সমালোচনা আছে। তার খলনায়ক হবার সিদ্ধান্তও ঠিক ছিল বলে মনে হয় না।

অমিত হাসান নিজেকে বিভিন্নভাবে চেনানোর চেষ্টা করলেও তার প্রথমদিকের দারুণ হিরোইজমের ইমেজটা নিয়ে আক্ষেপ হয়। ঐ ধারাটা পরবর্তীতে ধরে রাখতে পারলে তার সমসাময়িক অনেকের মতো সেও কিংবদন্তি কাতারে পৌঁছে যেত। কিন্তু প্রতিভা থাকলেও সবাই সব হতে পারে না এটা চিরন্তন সত্য।


মন্তব্য করুন