Select Page

ঈদুল ফিতর ২০২১ : সেরা দশ নাটক-টেলিছবি

ঈদুল ফিতর ২০২১ : সেরা দশ নাটক-টেলিছবি

লাবনী: গোবেচারা ছেলে তামিম ফুটপাত থেকে একটা ছেঁড়া বই কিনে আনে, যার মলাট নেই, সব পৃষ্টাও নেই। যখন পড়তে থাকে আশ্চর্যজনকভাবে বইয়ের গল্পের মতো তার আশপাশে ঘটনা পড়তে থাকে, প্রভাব পড়তে থাকে তার জীবনেও। রহস্যময় হতে থাকে তার জীবন! মারুফ রেহমানের উপন্যাস অবলম্বনে বঙ্গ বব আয়োজিত গোলাম কিসলু হায়দার নির্মিত দারুণ এক গল্পের টেলিফিল্ম ‘লাবনী’। উপন্যাস দারুণ, তবে উপভোগ্য করার জন্য প্রয়োজন যথাযথ চিত্রনাট্য, সেটা নির্মাতা খুব ভালোভাবেই করেছেন। আবহসংগীত দারুণ, সঙ্গে জীবনানন্দ দাশের বিখ্যাত কবিতার ব্যবহার টেলিফিল্মকে আরো ক্ল্যাসিক করে তুলেছে। বাংলা নাটকে অন্যতম সেরা ফিকশন হয়ে থাকবে এই লাবনী। প্রধান ভূমিকায় মনোজ প্রামাণিক অসাধারণ অভিনয়, টয়া চলনসই। শাহাদাত হোসেন বেশ গুরুত্ব পেয়েছেন, আছেন তাহমিনা মৌ।

মরণোত্তম: স্কুলের প্রধান শিক্ষক আজিজ মাস্টার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অনশনে বসেছেন এমপিওভুক্তির দাবিতে,কিন্তু পেছনের ঘটনা অন্য। গ্রাম্য রাজনীতি, দেশপ্রেম, সামাজিক সচেতনতা সব মিলিয়ে দারুণ বক্তব্যের টেলিফিল্ম ‘মরণোত্তম’। জনপ্রিয় ঔপন্যাসিক সাদাত হোসাইনের উপন্যাস অবলম্বনে বঙ্গ বব আয়োজিত সঞ্জয় সমদ্দারের নির্মাণে গল্পটা ভীষণ প্রাসঙ্গিক, যার চিত্রনাট্য করেছেন ইশতিয়াক অয়ন। ইলিয়াস কাঞ্চন, শহীদুজ্জামান সেলিমের অভিনয়ের পাশাপাশি মুগ্ধ করেছে ইমতিয়াজ বর্ষণের অভিনয়। আরো আছেন সুজন হাবিব, মাহিমা, ইফতেখার ইমাজ। এই ধরনের কাজ সব সময় ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ, অশেষ ধন্যবাদ।

যদি আমি না থাকি: বিশিষ্ট শিল্পপতি মারা গেছেন, পুরো বাড়িতে শোকে আচ্ছন্ন। কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই শুরু হয় তার সম্পত্তির হিসাব। ছেলে, ভাই, কাছের মানুষেরা যেন অন্যরকম হয়ে উঠে। আশিকুর রহমানের পরিচালনার ওয়েব ফিকশন ‘যদি আমি না থাকি’ খুবই প্রশংসিত হয়েছে, এইরকম গল্প বেছে নেয়ার জন্য। মুখ্য ভূমিকায় তারিক আনাম খান সব সময়ই ভালো অভিনয় করেন, মনিরা মিঠুও আছেন। তবে সেরা দুই তারকা হলেন ইরফান সাজ্জাদ ও অপর্ণা ঘোষ। আরো ছিলেন অর্চি, মাসুম বাশার, মিলি বাশার, সমু চৌধুরী, শেলী আহসান। কনক আদিত্যের গাওয়া ‘ধরো যদি আমি না থাকি’ গানটা মন ছুঁয়ে যায়।

গরম ভাতের গন্ধ: মোশাররফ করিম কোনো কিছুতেই ভাত খেতে চায় না, সদ্য বিবাহিতা স্ত্রী মমর এই নিয়ে বেশ অভিযোগ। তবে একদিন রহস্য জানা যায়, সামনে চলে আসে এক হৃদয় বিদারক কাহিনী। ইসরাত আহমেদের গল্পে সকাল আহমেদের এই নাটক বেশ ভালো লেগেছে। মোশাররফ করিম ও সাবেরী আলম দুর্দান্ত।

মিস্টার কে: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের অধ্যাপক আনামকে প্রায় কিডন্যাপের মতো করেই নিয়ে আসা হয় বিশেষ কাজের জন্য। কাজ হলো একজন শিল্পপতির বিদেশের ব্যাংকে রাখা টাকার লকারের পাসওয়ার্ডের জন্য। এটা অসম্ভব ব্যাপার, কিন্তু আনাম নিজের ‘অনুমান বিদ্যা’ দিয়ে বের করার চেষ্টা করেন পাসওয়ার্ড। মাহবুব মোর্শেদের ‘নোভা স্কশিয়া’ অবলম্বনে ওয়াহিদ তারেকের নির্মাণগুণে দারুণ টেলিফিল্ম ‘মিস্টার কে’। ওয়াহিদ তারেকের চিত্রনাট্য, পার্থ বড়ুয়ার অভিনয় প্রাণ দিয়েছে। শাহেদ কে দেখা গেছে অনেকদিন বাদে, সঙ্গে সুষমা সরকার ও অর্ষা।

একুটুখানি: অভিনেতা হিসেবে জিয়াউল হক পলাশকে ভালো না লাগলেও নির্মাতা হিসেবে পছন্দের তালিকায় চলে এলেন। বিশেষ ধন্যবাদ দিতে হয় বৃষ্টির দৃশ্যটার জন্য, গানটাও সুন্দর। ঈদের এত নাটকের ভিড়ে তাহসানকে পছন্দ মতো এই নাটকেই পেলাম, তানজিন তিশাও ভালো করেছে। এমনকি পকেটমারের চরিত্রে থাকা ছেলেটাও।

অহং: অহং মানে আমিত্ব, অহংকার। এই আমিত্ব যখন মনে দানা বাঁধে তখনই জটিল হয়ে উঠে জীবন। অপূর্ব- তিশা-শিহাব শাহীন ত্রয়ী প্রত্যাবর্তনের নাটক। স্বামী-স্ত্রীর সংসারের গল্প, ভালোবাসা-মান-অভিমানের গল্প। অসাধারণ কিছু না হলেও দেখতে ভালো লেগেছে। অপূর্ব-তিশার পাশাপাশি আলো ছড়িয়েছে রাশেদ মামুন অপু।

রাত গভীর হয়: স্বামীর অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে বাবার বাড়ি চলে আসে তিশা, যার এক সময় প্রেম ছিল চাচাতো ভাই মোশাররফ করিমের সঙ্গে সে এখন চেয়ারম্যান। গয়না চুরির মিথ্যা অভিযোগে মোশাররফ করিমের কাছে তিশার বিচার চায় স্বামী। সাজিন আহমেদের রচনায় সকাল আহমেদের পরিচালনায় মোশাররফ করিম-তিশা জুটির বেশ ভালো নাটক। শুধু এই দুইজন নয়, শেলী আহসান ও শিল্পী সরকার অপুও দারুণ করেছে, ভালো লেগেছে সংলাপে ঠিকঠাক গ্রাম্য ভাষার টান। শেষ দৃশ্যটাও দারুণ।

চরের মাস্টার: সরকারের ডিজিটাল উন্নয়ন নিয়ে রাহিতুল ইসলামের উপন্যাস অবলম্বনে বঙ্গ বব আয়োজিত ভিকি জাহেদের এই টেলিফিল্মের গল্প সাধারণমানের। অবশ্য বিশেষ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত গল্পের ধারা খুব জোরালো হয় না, তবে নির্মাণ চমৎকার। মাসুম আজিজকে দেখা গেল অনেকদিন পর, লুৎফর রহমান জর্জ ও শাহবাজ সানি ভালো করেছেন। সাফা মোটামুটি, তবে একজনের কথা বলতেই হয়, মুখ্য অভিনেতা খায়রুল বাশার, এত ভালো অভিনয় করেছেন, আরেকবার মুগ্ধ হলাম। বিদ্রোহী দিপনের সিনেমাটোগ্রাফি, অর্পণের আবহসংগীত অন্যতম প্রাপ্তি।

এন্টি হিরো: তাহসান-তানজিন তিশার সংসার জীবনে হানা দেয় তিশার পূর্ব প্রেমিক, তাহসান ব্যাপারটা কীভাবে ম্যানেজ করে এই নিয়ে নাজিম উদ দৌলার এই গল্প। সঞ্জয় সমদ্দারের সঙ্গে তাহসানের একটি ভালো কাজ, শেষের টুইস্ট গল্পকে জমিয়ে ফেলেছে, বেশ উপভোগ্য। অভিনয়েও তাহসানকে ভালো লেগেছে, অর্ণব অন্তুও আগ্রহ ধরে রেখেছে। তানজিন তিশা অবশ্য কম গুরুত্ব পেয়েছেন।

আরো কিছু: পাশের বাসার ছেলেটা, ব্রেকিং নিউজ, রক্ত, তাকে ভালোবাসা বলে, সাদা মানুষ, আলীবাবা ও চালিচার, শহরে টুকরো রোদ, মায়া, ৩০০ টাকার প্রেম ১০০ টাকা ও ভাড়ুয়া।


Leave a reply