![অনুদান পাওয়ার সাত বছর পর মুক্তি পাচ্ছে ‘আজব কারখানা’](https://i0.wp.com/bmdb.co/wp-content/uploads/2024/06/ajob_karkhana1_bmdb_image.jpg?resize=150%2C150&ssl=1)
ওটিটি ও সিনেমায় দর্শক বাড়ার বছর ২০২২
বাংলাদেশের মিডিয়ার জন্য ২০২২ একটি ভীষণ আশা জাগানিয়া বছর। ওটিটি আর সিনেমায় দর্শক সমাগম বেড়েছে …
![](https://i0.wp.com/bmdb.co/wp-content/uploads/2022/12/bangla_movie_ott_bmdb_image.jpg?resize=851%2C457&ssl=1)
নুহাশ হুমায়ূন নিজেকে অন্য লেভেলে নিয়ে গেছেন- নিজের রাস্তায় হেঁটে, নিজের মত করে কনটেন্ট বানিয়ে। ভ্যারিইটিতে আজকাল নুহাশকে নিয়ে নিউজ হওয়া ডালভাত মনে হয়। ওটিটি মানেই যেখানে বেশিরভাগের কাছে থ্রিলার আর রক্তারক্তি, সেখানে নুহাশ কাজ করেছেন হরর জনরা নিয়ে দেশী ভূতের গল্পে। ‘পেট কাটা ষ’ বানিয়ে এমন এক স্ট্যান্ডার্ড সেট করে দিয়েছেন, যে স্ট্যান্ডার্ড নিকট ভবিষ্যতে কেউ টপকাতে পারবে বলে মনে করি না। ‘মশারি’ আর ‘ফরেনার্স’ অনলির একের পর এক সাফল্য তো বলাই বাহুল্য। রিজ আহমেদ, জর্ডান পিলের মত মানুষেরা নুহাশের কাজের এক্সিকিউটিভ প্রোডিউসার হন, লাইভে রিজ আহমেদ নুহাশের সাথে ২০ মিনিটের মত আড্ডা দেন- নিজের সময়ে এসব দৃশ্য দেখা একই সাথে বিস্ময়ের ও আনন্দের।
নুহাশের কাজ হুলুর মত প্ল্যাটফর্মে গিয়েছে বলে তার প্রশংসা করতে হবে- এমনটা না কিন্তু। হুলুতে অন্যান্য যে কনটেন্ট রয়েছে, নুহাশের ‘ফরেনার্স অনলি’ সেসব কনটেন্টের স্ট্যান্ডার্ডের হয়েছে বলে আলোচনাটা জরুরি তার কাজ নিয়ে। কীভাবে এই স্ট্যান্ডার্ড অর্জন করা যায় তা নিয়ে ভাবা জরুরি।
আন্তর্জাতিক মহলে আরেকজন প্রশংসা কুড়ানো পরিচালকের নাম যুবরাজ শামীম, ‘আদিম’ সিনেমা দিয়ে যিনি ইতিমধ্যে অনেক সাফল্য কুড়িয়েছেন বিভিন্ন ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে। প্রচন্ড খাটাখাটনি করে সিনেমাটা বানিয়েছেন তিনি, সেই সিনেমার এমন রিকগনিশন পাওয়াটা আনন্দ দেয়।
একের পর এক হল বন্ধ হতে হতে যেখানে দমবন্ধ হওয়ার জোগাড়, সেখানে স্বস্তির নিঃশ্বাস নিয়ে এলো পরাণ আর হাওয়া। তারমানে সব সিনেমাই এই দুটো সিনেমার মত ব্যবসা করবে, এমন আশা করাটা বোকামি। আবার এরকম ব্যবসা না করলেই সিনেমাটা মন্দ- তা ভাবাও ভুল। যেমন আমার কাছে বছরের অন্যতম ‘সৎ’ সিনেমা মনে হয়েছে ‘কুড়া পক্ষীর শূন্যে উড়া’। প্রথমবারের মতো স্বাধীন বাংলা ফুটবল কেন্দ্র নিয়ে কাজ হচ্ছে ‘দামালে’, র্যাবের দস্যু নিধন নিয়ে কাজ হচ্ছে ‘অপারেশন সুন্দরবনের’ মতো সিনেমায়, ‘পাপপুণ্য’ সিনেমায় দুই জেনারেশনের অভিনেতা অভিনেত্রী কাজ করছেন আর দীর্ঘদিন পর আফসানা মিমি কাজ করছেন, নির্মলেন্দু গুণের সাহিত্য নিয়ে ‘দেশান্তরের’ মতো সিনেমা হচ্ছে- এগুলোও আশার ব্যাপার। বৈচিত্র্যতা গুরুত্বপূর্ণ। ইন্ডাস্ট্রি হতে হলে সব ধরনের সিনেমা লাগবে। আর আমাদের এটাও বুঝতে হবে, সিনেমা কীভাবে হিট বা ব্যবসাসফল করতে হয়, এটা জেনে গেলে পৃথিবীতে কোন সিনেমাই আর ফ্লপ হতো না। এই বিদ্যা আজ পর্যন্ত কেউ ১০০% শিখে উঠতে পারেনি৷ কিছু জিনিস ভাগ্যের উপরও ভীষণ নির্ভর করে। নিশ্চয় সময় একদিন সঠিক বিচার করবে।
![](https://i0.wp.com/bmdb.co/wp-content/uploads/2022/05/paap_punno_chanchal_chowdury_bmdb_image.jpg?resize=853%2C504&ssl=1)
ভালো কাজের দিক থেকে ওটিটিতে এগিয়ে আছে হইচই বাংলাদেশ। ‘দৌড়’, ‘কাইজার’, ‘কারাগার’- বেশ আলোচিত তিন কন্টেন্ট। রাজশাহীর লোকাল ভাষায় নির্মিত ‘শাটিকাপ’ নতুন এক রাস্তা খুলে দিয়েছে। একটি জেলা থেকে যদি এই ধরনের কনটেন্ট আসতে পারে, তাহলে দেশের বাকি জেলায় না যেন এমন কত কত কনটেন্ট বানানোর মানুষ লুকিয়ে আছে৷ দরকার শুধু প্ল্যাটফর্ম আর তাদেরকে খুঁজে বের করে আনার সদিচ্ছা। দেশে প্রথমবারের মত কোন অভিনয়শিল্পী অটিস্টিক চরিত্রে মনকাড়া অভিনয় করেছেন, যেখানে শেষে ভিলেন এসে আবার সব মনোযোগ কেড়ে নেন- সিরিজের নাম ‘সিন্ডিকেট’। হাইপারলিংকের ‘ক্যাফে ডিজায়ারের’ মত গল্প এই দেশে হবে, কয়েক বছর আগেও ভাবনায় ছিল না। একই গল্পে এর আগে বিভিন্ন ইন্ডাস্ট্রিতে কনটেন্ট নির্মিত হলেও নির্মাণ আর গল্পবয়ানে ভালো লেগেছে বিঞ্জের ‘মায়াশালিক’।
উপরে উল্লেখিত প্রতিটি কনটেন্ট আপনার অপছন্দের হতে পারে, তাতে কোন সমস্যা নাই। নিজের অপছন্দ প্রকাশেও কোন সমস্যা নেই। তবে শুধু ভাবুন, ৫ বছর আগেও কি আমরা ভেবেছিলাম এই দেশে এক বছরে এতগুলো কনটেন্ট হবে এই ভ্যারিয়েশনের? দূর দূরান্ত পর্যন্ত এসব আমাদের কল্পনাতেও ছিল না৷ তবে এখন এমন অনেক কিছুই শুরু হয়েছে, যা কেউ ভাবেনি আগে।
সামনে আরও হবে৷
হতাশার জায়গা হয়েছে ইউটিউব। গুটিকয়েক ভালো যা নির্মাতা আছেন, সবাই ওটিটিতে মুভ করার কারণে ইউটিউবের অবস্থা ভয়াবহ। ট্রেন্ডিং এ এমন সব কনটেন্ট থাকছে আজকাল, যার অনেকগুলোর নাম মুখেই আনা সম্ভব। অথচ ম্যাস অডিয়েন্সের সর্বাধিক এক্সেস এই মাধ্যমে। ম্যাসের রুচি ভালো না, নিম্নরুচির সব- এটা বলা সহজ আর অনেকাংশে সত্যি। তবে রুচি চেঞ্জ করার দায়িত্ব কি কেউই নেবে না? আরেক মাধ্যমে চলে গেলেই কি সমাধান হয়ে যাবে? কেউ কি ভাববো না ম্যাস পিপলের কথা?
২০২৩ এ খেলা আরও জমবে। ওটিটি থেকে আরও বিস্ময়কর সব কন্টেন্ট পেতে যাচ্ছেন। আরও অনেক ওটিটি প্ল্যাটফর্ম আসতে যাচ্ছে। তবে ঠিকঠাক এক্সিকিউশন না হলে, কোয়ালিটির দিকে নজর না দিলে বেশিরভাগই মুখ থুবড়ে পড়বে। ই টিকেটিং, অদ্ভুত সব চাপিয়ে দেয়া নীতিমালা, পর্দায় সব চরিত্রকে ‘ভালো’ দেখাতে হবে এমন অদ্ভুত মামাবাড়ির আবদার, বুকিং এজেন্টদের দৌড়াত্ম, শুটিং এর ঠিকঠাক পরিবেশ, প্রফেশনালিজম, লেখকদের সম্মাননা ও সম্মান দেয়া, সত্যজিতের পরে আমিই ডিরেক্টর আর বাকিসব বা* বানায়- এরকম অদ্ভুত ইগোইস্টিক ধ্যানধারণা, নতুন লেখক ডিরেক্টরদের সুযোগ দেয়া- এসব ব্যাপারে গলার রগ ফুলিয়ে কথা বলতে হবে আমাদের, আমরা ভিন্ন ঘরানার সিনেমাতে বিশ্বাস করলেও। বেসিক জিনিস ঐক্য না এলে আমাদের সকল দেখাসাক্ষাৎ এর আয়োজন শুধুমাত্র সেলফি তোলা পর্যন্তই সীমাবদ্ধ থাকবে।
২০১২ থেকে সিনেমা নিয়ে লেখা শুরু করি। এখন তো নিজেও কাজ করছি৷ সবসময়ই শুনতাম- শেষ। এই জায়গা শেষ। আর কিছুই হবে না, ধ্বংস সব।
সেই ধ্বংস শুনতে শুনতে যদি ২০২২ এ এসে অনেককিছু এভাবে ঘুরে দাঁড়াতে পারে, তবে সামনে এই ধ্বংসস্তূপ থেকেই সৃষ্টি হবে আরও নতুন সভ্যতার।