Select Page

কর্পোরেট টাই-আপ হলে ছবির টাকা ফেরতের রিস্কটা কমে যায় – সাক্ষাতকারে রাজিবুল হোসেন

কর্পোরেট টাই-আপ হলে ছবির টাকা ফেরতের রিস্কটা কমে যায় – সাক্ষাতকারে রাজিবুল হোসেন

Razibul Hossainরাজিবুল হোসেন একাধারে শিক্ষক ও চলচ্চিত্র নির্মাতা। সাম্প্রতিক সময়ে তিনি নির্মাণ করছেন তারুণ্য নির্ভর ‘সবকিছু পেছন ফেলে’ শিরোনামের চলচ্চিত্র। এর ব্যতিক্রমধর্মী প্রচারণা ইতিমধ্যে দর্শকদের নজর কেড়েছে। অ্যাডভেঞ্চারধর্মী এই চলচ্চিত্রকে আকর্ষণীয় ও পেশাদারসম্পন্ন করা তোলার জন্য চেষ্টার কমতি রাখেননি রাজিবুল। সেই সব জানতেই বিএমডিবি-র পক্ষ থেকে তার সাথে কথা বলেছেন নাজমুল হাসান দারাশিকো, ওয়াহিদ সুজন ও মিজানুর রহমান। সেই সাক্ষাতকারের কিছু অংশ পাঠকদের সামনে হাজির করা হলো-

আপনি একাধারে শিক্ষক ও চলচ্চিত্র নির্মাতা। এখনকার ব্যস্ততা নিয়ে কিছু বলুন?

শিক্ষকতার সাথে আমি জড়িত। পার্টটাইম-ফুলটাইম। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, ড্যাফোডিল ও ইউল্যাবে আমি পড়িয়েছি। ইদানিং আমি গড়েছি এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব মিডিয়া এন্ড কমিউনিকেশন বাংলাদেশ। বিভিন্ন ইউনিভার্সিটিতে এডুকেশন সাপোর্ট দিচ্ছি। আমার ছবি ‘সব কিছু পেছন ফেলে’ এর ব্যানারেই তৈরী হচ্ছে। কেন এখান থেকে করছি? বাংলাদেশে কমার্শিয়াল ফিল্ম অনেকদিন ধরে হচ্ছে। কিন্তু সুনির্দিষ্ট কোনো স্টাকচার গড়ে উঠেনি। ডিরেক্টর স্বতপ্রণোদিত হয়ে গল্প বেছে নেয়। যেটা হিট করে বা করে না। আমরা এই ফিল্মে হলিউডের কমার্শিয়াল ফিল্মের স্টাকচার ফলো করছি। আমাদের এখানে ফিল্ম বলতে ডিরেক্টরের নাম শুনি। কিন্তু হলিউডে খুব কমই ডিরেক্টরের নাম শোনা যায়। কিন্তু ঐগুলো প্রডিউসার বেজড ছবি। বাংলাদেশের অর্থে প্রযোজক নয়। প্রডিউসার হলো সেই ব্যক্তি যিনি একটা বিজনেস আইডিয়া প্রডিউস করেন। তার আইডিয়া বেইজ করে স্ক্রিপ্ট রাইটার, ডিরেক্টর ঠিক করা হয়, মাকের্টিং প্লান করা হয়। আমাদের ছবির ক্ষেত্রে অডিয়েন্স রিসার্চ করেছি। তার উপর ভিত্তি করে আইডিয়া ডেভেলপ করেছি।

তাইলে আপনি স্ট্রাকচারে গুরুত্ব দিচ্ছেন?

সিনেমা একটা স্ট্রাকচারাল ফ্যাক্ট। তার মানে এই নয় আমার মাথায় যা আসছে তাই লিখব। অডিয়েন্সের ডিমান্ড ও ডিজায়ার আপনার সামনে থাকে- তখন বুঝতে পারবেন আপনার ছবি কোন জায়গাটায় কি কি সিকোয়েন্স থাকবে। চেন্নাই এক্সপ্রেস বা স্লামডগ মিলিওনিয়ার- যেকোনো ছবি দেখবেন একটা স্ট্রাকচার ফলো করে। স্ট্রাকচারটা সেম। আমরা সে ধরনের স্ট্রাকচার ফলো করেছি। আমাদের ছবির শুরু করার আগে ফুজি ফিল্মকে নিয়েছি। এটা গ্লোবাল ব্র্যান্ড। একে দেখতে হবে বাংলা ছবিতে একটা কপোররেট টাইআপ। যেটা ইন্ডিয়া ও হলিউডে দেখবেন। বাংলাদেশে আমরা এতে বেঞ্চমার্ক। এতে অনেকে যুক্ত হবে। কর্পোরেট টাই আপ হলে ছবির টাকা ফেরতের রিস্কটা কমে যায়। এখানে কর্পোরেট ইন্টারেস্টের বেসিসে টাকা উঠে আসে।

কিন্তু একটা ক্রিয়েটিভ ওয়ার্কে এটা কি ক্রিয়েটিভিকে নষ্ট করে না?

এর সাথে ক্রিয়েটিভ ওয়ার্কের কোনো সম্পর্ক নাই। আপনি একজন ডিরেক্টর হিসেবে স্ক্রিপ্ট কম্প্রোমাইজ করছেন না। আমি বড়ো কোম্পানির হয়ে কাজ করেছি। সে অভিজ্ঞতা এখানে কাজে লাগছে। বাংলাদেশে সবাই সিনেমাকে আর্ট হিসেবে দেখে- আমরা একটা ব্র্যান্ড হিসেবে দেখছি। যেমন-লাক্স একটা ব্র্যান্ড। আমাদের ছবি ব্র্যান্ড হিসেবে নিজের আইডেন্টিটি নিয়ে দাঁড়াবে।

কর্পোরেট জায়গা থেকে কাজ কম্প্রোমাইজ করা লাগে না? করলে আসলেই কি ক্রিয়েটিভির সাথে কন্ট্রাডিক্ট করে না?

ক্রিয়েটিভ কাজে কম্প্রোমাইজ আসলে লাগে না। আপনি যে জামা পড়ছেন সেটা কোনো না কোনো কোম্পানীর। সেখানে সিনেমায় দেখাচ্ছি কোন কোম্পানীর জামা আপনি পড়ছেন। এটা হলো লাইফ স্টাইল প্রেজেন্ট। আমরা কয়েকটা কর্পোরেটকে এক্ই ছাতার নিচে দেখাচ্ছি। সিনেমা দেখার সময় আপনি কখনো ভাবেন না জেমস বন্ড টাকার বিনিময়ে ওই গাড়িটা চালাচ্ছে না। এটি গল্পের ক্ষতি করে না। বাংলাদেশের সিনেমায় একটা হওয়া উচিত।

প্রোডাক্ট কিভাবে নির্ধারণ করেন?

ঐ যে বললাম সেইম টার্গেট গ্রুপ। কোনো কোম্পানির প্রোডাক্টের টার্গেট গ্রুপ যারা তাদের জন্য এই ছবি হলে তারা তো আসবে। আমরা এই ছবি তরুণদের জন্য বানিয়েছি।

আপনার কথা থেকে মনে হচ্ছে গতানুগতিক যারা ছবি দেখে তাদের জন্য নয়। যারা বাইরের ছবি দেখেন তাদের জন্য। এমন কাজ আগেও হয়েছে। কিন্তু সেগুলো খুব একটা সফল হয়নি। এই জায়গা কি বলবেন?

আমি একজন এডুকেটর। সিনেমা নিয়ে পড়াই। এনাইলসিস করি। অডিয়েন্সও এনালাইসিস করি। আমাদের কমন ধারনা যারা বাংলা ছবি দেখে তারা অধিকাংশ রিকশাওয়ালা বা লেবার। কেন তার সিনেমা দেখে? সারাদিন পরিশ্রম শেষে বিনোদনের জন্য দেখে। তাইলে এরা আমাদের ইনভেস্ট ফ্যাক্টর। কিন্তু যাদের মোবাইল, ল্যাপটপ বা বাইরে গিয়ে ছবি দেখার অপশন আছে…। এখন ভালো ছবি (ভালো ছবি বলতে মধ্যবিত্তের ছবি বুঝাচ্ছি না) বা কোয়ালিটি ছবি- যেটা ইমেজ বা শ্রবণে ভালো, একটা গল্প থাকবে। সেটা সবাই দেখবে। কারণ ৯০ ভাগ মানুষের ভালো-মন্দের ধারনা এক। আমাদের ছবি করেছি তরুণদের জন্য। যাদের বয়স ১৫ থেকে ২৫। তারা কি হলে যায়? খুব কমই যায়। আরেকটি জিনিস তারুণ্য কি বয়স দিয়ে মাপা যায়। পঞ্চাশ বছরের কেউও এই মাইন্ডসেটের হতে পারে। তারাও আমাদের ছবি দেখবেন।

আপনার ছবিতে কিছু সারপ্রাইজের কথা শোনা যাচ্ছে?

আমাদের ছবিতে পাঁচজন নতুন ছেলে মেয়ে অভিনয় করছেন। তেমনি পাঁচজন সেলিব্রেটিও আছে। তারা পাঁচটা ক্যাটাগরির অডিয়েন্সকে প্রেজেন্ট করবে। এই মুহুর্তে তাদের নাম বলব না। প্রোমাশন শুরু করলে গ্রাজুয়ালী বলব। তবে এটা দর্শকদের অনেকদিনের আকাঙ্খা পূরণ করবে।

ছবির গল্প সম্পর্কে কিছু বলুন-

মোটাদাগে সব আছে এমন কয়েকজন- যাদের টাকা পয়সা আছে, সোশ্যাল স্টাস্টাস- এভরিথিং আছে কিন্তু লাইফ নাই। তাদের একটি করে টিকেট দেয়া হবে- যার নাম ডেস্টিনেশন আননোন। ওরা জানবে না কোথায় হবে, কি হবে, কি করবে এবং সত্যিকার অর্থে বলছি আমাদের মেইন কাস্টরা এখনো গল্পটা জানে না। এই গল্পটা আসলে সকলের। ছবি শেষ হওয়া মানে পারফরমারদের একটা জার্নি শেষ হবে। দর্শকদের নতুন একটা জার্নি শুরু হবে। এটা একটা অ্যাডভেঞ্চার ছবি। বাংলাদেশে সে অর্থে কোনো অ্যাডভেঞ্চার ছবি হয়নি। এই ছবি বাংলাদেশকে পজেটিভ ইনস্পায়ারিং হিসেবে ব্র্যান্ড করছি।

কাস্টিং কিভাবে করলেন?

মুথে মুথে বলা থেকে ফেসবুকসহ নানাভাবে ক্যাম্পেইন করেছি। তারপর ধাপে ধাপে তাদের বাছাই করে নিয়েছি। লম্বা সময় ট্রেইন করেছি। তারা কেউ পারফরমার না। আমাদের তাদের ক্যারেক্টর হিসেবে সিলেক্ট করেছি। বলে রাখি এটি একটি প্রিকুয়েল ফিল্ম।

অন্য প্রসঙ্গে যাই। ডিজিটাল ফিল্ম বলে নতুন বিষয় বাংলাদেশে শুরু হচ্ছে। এটা আপনি কিভাবে দেখছেন?

আপনারা জানেন কিনা জানি না। বাংলাদেশের বিসিএস গাইড খুললে আমার ও আমার প্রথম ছবি ‘বালুঘড়ি’র নাম জানবেন। এটা বাংলাদেশের প্রথম ডিজিটাল ছবি। যেটা ২০০৬ সালে বানিয়েছি।

আমরা তো জানি প্রথম তারেক মাসুদ বানিয়েছেন?

আমি আসলে শিক্ষক। প্রথম-দ্বিতীয় বা তৃতীয় হবার জন্য বানাইনি। যারা গবেষক তারাই আসলে খুজেঁ বের করবে কে প্রথম। এটা ৯৬ মিনিটের ছবি। ২০০৭ সালে সাউথ এশিয়ান ফিল্ম ফেস্টিভেলে ইন্টারন্যাশনাল প্রিমিয়ার হয়েছিল। আর বাংলাদেশে বাংলা ভাইয়ের সময়ে ২০০৫ সালে রাজশাহীতে প্রিমিয়ার করি।

সেন্সর হয়েছিলো কি?

সেন্সর বোর্ডে আইন তো হয়েছে ২০০৯ সালে। এর আগে লোকাল অথরিটির কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে প্রদর্শন করতাম। ২০০৮ সালে গোয়াতে সাউথ এশিয়ান ফিল্ম ফেস্টিভালে দ্বিতীয় ছবি ‘ঊনাদিত্যে’র প্রিমিয়ার হয়। আমি কিন্তু তারেক মাসুদের মতো ডিজিটালে বানিয়ে ফিল্মে ট্রান্সফার করতে চাইনি। ডিজিটাল ছবি ডিজিটালিই ডিস্ট্রিবিউট হবে। আমি এতে সময়ের বাহন মাত্র।

আর ‘সব কিছু পেছন ফেলে’?

এটা আমার পঞ্চম ছবি। ২০১২ সালে বানিয়েছি ‘মৃত্যুপাড়ের বাড়ি’। তারপরে ‘মি এন্ড নেচার’ নামে ছোট ডকুমেন্টারি করেছি। এখন যে ছবির কাজ করছি তার জন্য চ্যালেঞ্জ হলো বেশি দর্শককে তুষ্ট করা। কমার্শিয়াল স্টাকচারের দিকে এটাও কিন্তু প্রথম। আমার নাম বলার দরকার নেই। এটা চালু হলেই হলো। পরিবর্তনকে সবাই নিতে পারে।

শিক্ষকতা আর পরিচালনা আপনার মধ্যে কি ধরনের মিথস্ক্রিয়া করে?

আমার প্রথম ছবি বানানোর আগে দশবছরের লার্নিং প্রসিডিউর ছিলো। এটা প্লান করেই করেছি। আমার ছবিকেই আমার কথা হিসেবে বেছে নিয়েছি।

বাংলাদেশের মেইনস্ট্রিম ছবির ইতিহাস পঞ্চাশ বছরের। এই ঐতিহ্যের মধ্যে নিজেকে আবিষ্কার করেন?

আমি যখন স্টুডেন্ট ছিলাম- শিবলী সাদিকের অধীনে ট্রেইনিং নিয়েছি। তাই আমার এফডিসি নিয়ে জানা আছে। এছাড়া সো-কল্ড ফিল্ম তাত্ত্বিক বা এলিট ফিল্মমেকারদের হেজিমনি আছে। আমি সেই বিভ্রান্তির মধ্যে নাই। এই বিষয়ে বেশি কিছু বলতে চাই না।

কবে ছবিটি দেখতে পাবো?

এখনো অনেকখানি কাজ বাকি আছে। আশা করছি আগামী বছর দেখতে পাবেন।

বিএমডিবি-কে অনেক সময় দিলেন। অসংখ্য ধন্যবাদ।

আপনাদেরও ধন্যবাদ। শেষে বলব বাংলা মুভি ডেটাবেস একটা অসম্ভব ভালো উদ্যোগ। শুধু এইটুকুই বলব ইতিহাস আপনাদের সঙ্গে আছে, আপনার ইতিহাসের সঙ্গে আছে। আপনাদের জন্য সবসময় আমার দুয়ার খোলা।


মন্তব্য করুন