Select Page

কলকাতার ইন্ডাস্ট্রি দেখে যা শিখতে পারি

কলকাতার ইন্ডাস্ট্রি দেখে যা শিখতে পারি

কলকাতার ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি স্মরণকালের ভয়াবহ ক্রাইসিসের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে পোস্ট কোভিড সময়ে। টালিউড যখনই ক্রাইসিসে পড়েছে তখনই তারা সিনেমার ভেতরে সিনেমা ধাঁচের নস্টালজিক কনটেন্ট সামনে নিয়ে এসেছে। সত্যজিৎ রায়ের ‘নায়ক’ সিনেমাকে দেখুন। নায়ক এমন একটা সময়ে সত্যজিৎ বানিয়েছেন যখন তাকে নিজেকেই একটা ট্রাঞ্জিশন পিরিয়ড অতিক্রম করতে হচ্ছিলো।

গত শতাব্দী আর এ শতাব্দীর যোগসূত্র স্থাপনের সময়ে টালিউড ৩৫মিমি লেন্স কিংবা কৃত্রিম সাউন্ডের নতুন ব্যবহার আয়ত্ত্ব করতে গিয়ে বাজেট যোগান দেওয়ার মতো অবস্থায় ছিলো না। সব মেইকাররাই মুখ থুবড়ে পড়ছিলেন। ঋতুপর্ণ ঘোষ সেসময়ে বানান ‘বাড়িওয়ালী’। বাড়িওয়ালীর ডাবিং নিয়েও কেলেংকারি আছে। সে আলাপ পরে একদিন দিব। অপর্ণা সেন নির্মাণ করেন ‘শুভ মহরৎ’। দু’টো সিনেমাই সিনেমা বানানোর গল্প নিয়েই।

টালিউড সে ক্রাইসিসও অতিক্রম করে গেছে। ২০১১ সালে অনেকটাই ফাঁকা মাঠে এসে গোল করেন সৃজিত মুখার্জী। ‘নায়ক’ এর ইন্সপিরেশনাল ধাঁচেই বানান ‘অটোগ্রাফ’। ‘অটোগ্রাফ’ অটো চয়েজেই বাহবা পেয়েছিলো সাধারণ দর্শকদের। ক্রিটিকরাও খুব বেশি নাড়াচাড়া করেন নি। কারণ টালিউডে তখন গল্পের অভাব।

পরবর্তী সময়ে সৃজিত যা কাজ করেছেন তা গল্পের বিচারে ভালো নয়, সিনেমার বিচারে ভালো। কিন্তু এসভিএফের একচ্ছত্র আধিপত্য, উইন্ডোজের মরাল পুলিশিং ধাঁচের কাজ, কৌশিক গাঙ্গুলির খামখেয়ালী, মিউজিক ইন্ডাস্ট্রিতে অনুপমের আধিপত্য, অঞ্জন দত্তের ফ্রেঞ্চ পপ কালচারকে জোর করে কলকাতায় ঢুকানোর ব্যর্থ কিন্তু অবসেসড প্রচেষ্টা এসব মিলিয়ে টালিউড গত ১০বছর শূণ্যের উপর উড়ে বেড়াচ্ছিলো।

নিজেই নিজেকে শ্রেষ্ঠ বলার এই ১০ বছরটায় টালিউডে কাজ হয়েছে অনেক। সেই সাথে কেবল বাজেট/এসভিএফের প্রোডাকশন/বাঙ্গালি ফেনোমেনার গুরুত্বপূর্ণ অংশ এসব হাইপের উপরেই তারা প্রসব করে গেছেন ফেলুদা-ব্যোমকেশ নিয়ে একের পর এক নতুন প্রোডাকশন। ফলাফল এখন পাচ্ছেন তারা। কলকাতায় কোনো গল্প নেই। কাজের কোনো নতুনত্ব নেই। নতুন কোনো মুখ নেই।

ফলস্বরূপ, গোটা ইন্ডাস্ট্রিই এখন মুখ থুবড়ে পড়েছে। তাদের রুচিশীল কোনো কনটেন্ট নেই, ভায়োলেন্সের নামে যা কিছু ছিলো ওসবও আর বেশি কিছু দিতে পারছে না৷ এসভিএফের প্রতিষ্ঠান হওয়া সত্ত্বেও নামকাওয়াস্তে কিছু কনটেন্ট রেখে তাদেরকে বাংলাদেশ আর মালায়ালাম ইন্ডাস্ট্রিমুখী হতে হচ্ছে। অনেকটাই স্কুলের স্থায়ী শিক্ষক কাজের না, অতিথি শিক্ষক দিয়ে স্কুল চালানোর মতো অবস্থা। এখানে ফেলুদা-ব্যোমকেশ এর কাজ আপ টু দ্যা মার্ক আর হচ্ছে না।

ব্যোমকেশ এর মতো ক্যারেক্টারকে নিয়ে পরকীয়া আর ওপেন সেক্সকে উপজীব্য করে সিনেমা বানাতে হচ্ছে তাদের। কারণ ওই যে, ফ্রেঞ্চ কালচাররে বাদ দিয়ে চিন্তা করতে পারছেন না তারা। অথচ এই গল্পগুলোকে কলকাতার মানুষ রিলেটই করতে পারছেন না। আজ দেখলাম অরিন্দম শীল ‘গ্যাংটকে গন্ডগোল’ নিয়ে ওয়েব ফিল্ম বানাচ্ছেন৷ ব্রো, আপনি যতই বানান, এটা কাজ করবে না। একে তো আপনি, তার উপরে পরমব্রত, দুজনেই আস্থা হারিয়েছেন অভিনেতা হিসেবে। ফেলুদা হিসেবে তো অনেক আগেই৷

টালিউড ডিরেক্টর রেজিমে পরমব্রত একটা অনন্য সংযোজন হতে পারতো। এই লোকের এখনই উচিত অভিনয় বাদ দিয়ে সিনেমা বানানোর কাজ হাতে নেওয়া। ‘লড়াই’, ‘অভিযান’ সে কথাই বলে।

অপ্রয়োজনীয় সত্য কথা বলে ফেলি। এই সেইম ক্রাইসিস বাংলাদেশের ইন্ডাস্ট্রিতেও আসার সম্ভাবনা আছে। একচ্ছত্র ভায়োলেন্স নির্ভর প্রতিটা ওটিটি প্লাটফর্ম এখনো অবধি সে কথাই বলছে। আশা করি ভাববেন আমাদের মেইকাররা।


মন্তব্য করুন