Select Page

গল্প-অভিনয় ‘পাপ পুণ্য’র প্রাণ

গল্প-অভিনয় ‘পাপ পুণ্য’র প্রাণ

গত ২০ মে অনেকটা ‘সম্ভাব্য’ দর্শকের অগোচরেই মুক্তি পেল গিয়াস উদ্দিন সেলিমের ‘পাপ পুণ্য’। অথচ শুরু থেকেই ছবিটা ছিল আলোচনায়, অভিনয়ে দেখা গেছে চঞ্চল চৌধুরী, সিয়াম আহমেদ, আফসানা মিমি, শাহনাজ সুমি, ফজলুর রহমান বাবু, মামুনুর রশীদসহ আরো এক ঝাঁক তারকাকে। প্রচারণাহীন বা ভুল সময়ে মুক্তির কারণে সিনেমা হলে তেমন দর্শক নেই, আমি যেই প্রেক্ষাগৃহে দেখেছিলাম সেখানে শুক্রবার হওয়া সত্ত্বেও তেমন দর্শক ছিল না, এটা হতাশাজনক।

‘পাপ পুণ্য’র গল্প গড়ে উঠেছে গ্রাম্য রাজনীতিকে ঘিরে। চঞ্চল চৌধুরী একজন সৎ চেয়ারম্যান,নিজের সিদ্ধান্তে অটল। যার জন্য চারদিকে শত্রুর সৃষ্টি হয়েছে। তার বাড়িতে আশ্রিতা আফসানা মিমির ছেলে সিয়াম আহমেদ হচ্ছে সার্বক্ষণিক সঙ্গী। চঞ্চল চৌধুরীর তরুণী মেয়ে শাহনাজ সুমির সঙ্গে প্রেম সিয়ামের, এটা মেনে নিতে পারেন না আফসানা মিমি। সিয়ামকে পাঠিয়ে দেয়া হয় বিদেশে। এইটুকু চিরচেনা লাগলেও দ্বিতীয়ার্ধে  গল্প মোড় দেয় অন্যদিকে, চঞ্চল চৌধুরীকে যেতে হয় জেলে। দর্শকেরাও নড়েচড়ে বসবেন।

গিয়াস উদ্দিন সেলিমের ছবিতে অন্যতম আকর্ষনীয় দিক হলো, অভিনয়শিল্পীদের সাবলীল উপস্থিতি। এই ছবিতেও তাই, এই যেমন অনেক বছর অভিনয় করতে এসেও আফসানা মিমি যেন মুগ্ধ করলেন, অথচ এইবারেই প্রথম তিনি মধ্যবয়স্ক মায়ের চরিত্রে অভিনয় করেছেন। সিয়াম আহমেদকে মনে হয় না, এর থেকে আর কোনো ছবিতে দেখতে এতটা ভালো লেগেছে, একটা ন্যাচারাল ভাব ছিল সব সময়। অভিনয়েও ভালো।

ঠিক গ্রামের মেয়ের মতো না লাগলেও শাহনাজ সুমি স্নিগ্ধ, অভিনয় তো ভালোই করে।  ফারজানা চুমকিও নজর কেড়েছেন, এ ছাড়া ফজলুর রহমান বাবু,গাউসুল শাওন, মামুনুর রশীদ সবাই যার যার মত ভালো করেছেন।

সবশেষে চঞ্চল চৌধুরী, যিনি এই ছবির প্রাণ। একজন মধ্যবয়স্ক চেয়ারম্যানের চরিত্রে দ্বিতীয়ার্ধে বলতে গেলে তিনি একাই টেনে নিয়েছেন। তার চরিত্রের যে টানাপোড়েন, যে পাপ পুন্যের বোধ এটাই ছবির মূল উপজীব্য। এছাড়া স্বাগতা,শিমুল, ফারহানা মিঠু এমনকি নির্মাতাকেও দেখা গেছে অতিথি শিল্পী হিসেবে।

গিয়াসউদ্দিন সেলিমের গল্পটা চমৎকার, নির্মানের মুন্সিয়ানা আগের মত চমকপ্রদ না হলেও চলনসই। কিন্তু চিত্রনাট্য ততটা বিকশত হতে পারেনি। বিশেষ করে দ্বিতীয়ার্ধে যখনই গল্পের গতি থাকা দরকার ছিল, তখনই যেন আরো বেশি ধীর গতি হয়ে গেল। যার জন্য দর্শকদের মনোযোগ ছুটে যায়। এছাড়া সিয়াম- সুমির প্রেমের রসায়নটা যেন তাড়াহুড়ো হলো, বরং মিমি-চুমকির যে অংশটা ওটা আরো বেশি আকর্ষনীয় লেগেছে। 

গানগুলো আলাদাভাবে শুনতে ভালো লাগলেও সিনেমায় তেমন প্রভাব ফেলেনি, অন্তত এই ছবিতে এটা বেশ প্রয়োজন ছিল।

কারিগরি দিক থেকে ইমপ্রেস টেলিফিল্মের ছবি সব সময়ই পিছিয়ে, চিত্রগ্রাহক ছিলেন বরকত হোসেন পলাশ।  কামরুল হাসান খসরুর সঙ্গে যে গিয়াসউদ্দিন সেলিমের যে রসায়ন,ওটা খুব দরকার ছিল।

গল্প,অভিনয় এই দুইটাই ‘পাপ পুণ্য’ ছবির প্রধান প্রাণ। বাকি বিষয়ে আরো ভালো হতো, অবশ্যই বলা যায়। একটা আক্ষেপ থেকে গেছে, তবুও দিনশেষে ছিল এটি একটি ভালো প্রচেষ্টা।


লেখক সম্পর্কে বিস্তারিত

চলচ্চিত্র ও নাটক বিষয়ক লেখক

মন্তব্য করুন