Select Page

গোল্ডেন বাঁশ অ্যাওয়ার্ডস ২০২০-২১

গোল্ডেন বাঁশ অ্যাওয়ার্ডস ২০২০-২১

বাংলাদেশে প্রতিবছরই অনেক আজেবাজে সিনেমা নির্মিত হয়! অন্যান্য দেশে এই সব সিনেমার জন্য আলাদারকমের মজার পুরস্কার থাকলেও, আমাদের দেশে নেই যথাযথ স্বীকৃতি বা পুরস্কার। তাই ২০১৪ সাল থেকে আমরা তালিকা তৈরির মাধ্যমে এই সব চলচ্চিত্রকে পুরস্কৃত করা শুরু করি। যার নাম Golden Baash Awards তথা গোল্ডেন বাঁশ অ্যাওয়ার্ডস।

অনলাইন থেকে সংগৃহীত ছবির কোলাজ

করোনাভাইরাসের কারণে ২০২০ সালে খুবই কম চলচ্চিত্র মুক্তি পেয়েছিল। যার জন্য সে বছর আর এই পুরস্কার দেওয়া সম্ভব হয়নি। তাই ২০২০ ও ২০২১ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত যেসব চলচ্চিত্রগুলো আমাদের বিনোদনের নামে বাঁশ দিয়েছে, তাদের দেওয়া হবে এই পুরস্কার –

★ শ্রেষ্ঠ বাজে সিনেমা: তুমি আছো তুমি নেই

২০২০ ও ২০২১ সালে প্রচুর নিম্নমানের চলচ্চিত্র মুক্তি পেয়েছে। তবে এদের মধ্যে “তুমি আছো তুমি নেই” অবশ্যই সবার থেকে এগিয়ে থাকবে। সিনেমা হলে দেখা দর্শকদের এই সিনেমা সরাসরি আশির দশকে নিয়ে গেছে বলা যায়। অর্থাৎ নির্মাণগুণের দিক থেকে এই চলচ্চিত্রটি কম হলেও ৪০ বছর পিছিয়ে আছে। চলচ্চিত্রটির প্রযোজনা করা হয়েছে এস কে ফিল্মস ইন্টারন্যাশনাল থেকে। 

★ শ্রেষ্ঠ বাজে পরিচালক: দেলোয়ার জাহান ঝন্টু (তুমি আছো তুমি নেই)

বাজে চলচ্চিত্রের পরিচালকই যে বাজে পরিচালকের পুরস্কার পাবেন, এটাই অনুমেয়। দেলোয়ার জাহান ঝন্টু বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি চলচ্চিত্র পরিচালনা করেছেন (৬৬টি)। এ রকম রেকর্ড যার দখলে রয়েছে, তিনি এই চলচ্চিত্র মুক্তির সময় বেফাঁস মন্তব্যের মাধ্যমে যেন নিজের সম্মান নিজেই খোয়াতে নেমেছিলেন। তার এই নির্মাণ নব্বই দশকের দর্শকেরও ভাল্লাগবে না, এখনকার দর্শক তো অনেক পরের বিষয়।

★ শ্রেষ্ঠ বাজে অভিনেতা: শান্ত খান (টুঙ্গিপাড়ার মিয়াভাই)

এই অভিনেতা আমাদের আয়োজিত “গোল্ডেন বাঁশ অ্যাওয়ার্ডস ২০১৯” বাজে নবাগত অভিনেতার পুরস্কার পেয়েছিলেন। তাকে এবার দেওয়া হয়েছে বঙ্গবন্ধুর চরিত্র (!) মানে বাছ-বিচার সকল কিছু ঊর্ধ্বে চলে গেছে এমন গর্দভ সমান বিবেচনা। এখানে শান্ত খানের ডাবিং অন্য আরেকজন করে দিয়েছে। তবুও শেষ রক্ষা হয়নি।

★ শ্রেষ্ঠ বাজে অভিনেত্রী: সিমি ইসলাম কলি (নারীর শক্তি)

এই অভিনেত্রী আমাদের আয়োজিত “গোল্ডেন বাঁশ অ্যাওয়ার্ডস ২০১৪” তে বাজে নবাগত অভিনেত্রীর পুরস্কার পেয়েছিলেন। “নারীর শক্তি” চলচ্চিত্রের পুরোটা সময় তিনি পরচুলা মাথায় পরে কাটিয়েছেন। সেই সঙ্গে তার অভিনয়ের এক্সপ্রেশন ছিল খুবই বাজে, যা তাকে এই পুরস্কার নিতে সাহায্য করেছে।

★ শ্রেষ্ঠ বাজে খল অভিনেতা: আবু সাঈদ খান (জয়নগরের জমিদার)

একজন কাহিনিকার হিসেবে আবু সাঈদ খান বাংলা চলচ্চিত্রের বেশ পরিচিত নাম। আশির দশক থেকেই তিনি বাংলা চলচ্চিত্রের গল্প লেখার সঙ্গে যুক্ত। কিন্তু সম্প্রতি তিনি “জয়নগরের জমিদার” চলচ্চিত্রের ভিলেন চরিত্রে এতটা বাজে অভিনয় করেছেন, যা দেখার মতো না। তার চরিত্রের ডাবিং করানো হয়েছে ডাবিং আর্টিস্ট দিয়ে, এতেও তার অভিনয় দুর্বলতা খুবই স্পষ্ট।

★ শ্রেষ্ঠ বাজে পার্শ্ব অভিনেতা: নাদিম (বীর)

“বীর” চলচ্চিত্রে নাদিম অভিনয় করেছিলেন শাকিব খানের বন্ধুর চরিত্রে। শাকিব খান যেখানে চেষ্টা করেছেন যতটা সম্ভব জড়তাহীন অভিনয় করার, সেখানে তার পাশে নাদিমকে দেখে খুবই জড়সড় মনে হয়েছে। মনে হয়েছে তাকে ঘুম থেকে উঠিয়ে জোর করে ক্যামেরার সামনে দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয়েছে।

★ শ্রেষ্ঠ বাজে পার্শ্ব অভিনেত্রী: সিমি ইসলাম কলি (তুমি আছো তুমি নেই)

এই ক্যাটাগরিতেও তিনি অনবদ্য। যেখানে তার সহশিল্পীরা অভিনয় করার টুকটাক চেষ্টা করছিল, সেখানে তার মধ্যে অভিনয় দেখানোর সেরকম কোনো চেষ্টাই ছিল না। “ভেঙেছো পুতুল খেলা” শিরোনামের গানটিতে তার মুখের এক্সপ্রেশন দেখে হলের অনেক দর্শকই ‘আহাহা’ শব্দ করে হেসে উঠেছিল, অথচ গানটির থিম ছিল হৃদয় বিদারক!

★ শ্রেষ্ঠ বাজে নবাগত অভিনেতা: ইউসুফ রনি (রংবাজি দ্য লাফাঙ্গা)

অ্যাকশন হিরো হতে হলে যেসব গুণাবলি থাকা প্রয়োজন, তার কোনো কিছুই নেই এই নায়কের মধ্যে। খলনায়কদের মতো সুবিশাল ভুঁড়ি নিয়ে পর্দায় হাজির হয়েছেন তিনি। এই ভুঁড়ি নিয়ে তিনি মারপিট করেছেন, প্রেম করেছেন, রোম্যান্টিক গানে কোমর দুলিয়েছেন। এককথায় এই পুরস্কার তার প্রাপ্য।

★ শ্রেষ্ঠ বাজে নবাগত অভিনেত্রী: প্রার্থনা ফারদীন দীঘি (তুমি আছো তুমি নেই)

দীঘি শিশুশিল্পী হিসেবে বাংলা চলচ্চিত্রের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। শিশুশিল্পী হিসেবে সর্বোচ্চ জাতীয় পুরস্কার তার দখলে (৩ বার)। অথচ নায়িকা হিসেবে তার অভিষেক হলো খুবই জঘন্যভাবে। অন্য সব অভিনেত্রীদের সঙ্গে যেন তিনি পাল্লা দিয়ে বাজে অভিনয় করেছেন। তাই এই পুরস্কার তার প্রাপ্য।

★ শ্রেষ্ঠ বাজে গান: একটু হালকা মেরেছি ভাই লালপানি (কেন সন্ত্রাসী)

আমার মনটা যে আজ এলোমেলো, কী করি বলো না

চারিপাশে দেখি কত রূপসী ললনা

ওদের মাঝে পাই না খুঁজে আমার প্রিয়ার মুখখানি

একটু হালকা মেরেছি লাল পানি (।।)

“কেন সন্ত্রাসী” চলচ্চিত্রের এই গানটি গেয়েছেন এস আই টুটুল ও ডলি সায়ন্তনী। কথা লিখেছেন এই চলচ্চিত্রের পরিচালক রবিউল ইসলাম রাজ, সুর দিয়েছেন আলী আকরাম শুভ। প্রতিষ্ঠিত সব শিল্পীদের কাছ থেকে এ রকম গু মার্কা কখনোই কাম্য নয়।

★ সবচেয়ে হতাশাজনক সিনেমা: অলাতচক্র

আহমদ ছফা রচিত “অলাতচক্র” অবলম্বনে এই চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করা হয়েছে।, মূল চরিত্রে অভিনয় করেছেন আহমেদ রুবেল ও জয়া আহসান। এ ছাড়া এটি ছিল বাংলাদেশের প্রথম থ্রিডি প্রযুক্তির চলচ্চিত্র। এত কিছু থাকার পরও এই চলচ্চিত্র আমাদের ব্যাপকভাবে হতাশ করে। মূল সাহিত্যের যেরকম আবেদন, তার অর্ধেকও উঠে আসেনি এই চলচ্চিত্রে। 

★ সবচেয়ে বাজে রিমেক: সৌভাগ্য

এফ আই মানিক পরিচালিত এই চলচ্চিত্রের মূল চরিত্রে অভিনয় করেছেন ডিপজল, মৌসুমী, কাজী মারুফ ও তমা মির্জা। এ চলচ্চিত্রটি এ জে মিন্টু পরিচালিত “প্রতিহিংসা” (১৯৮৩) থেকে ব্যাপকভাবে অনুপ্রাণিত। বলা যায় গল্পের মূল প্লটটাই সেখান থেকে নেওয়া। উক্ত চলচ্চিত্রে জসিম খুবই ভালো অভিনয় করেছিলেন, কিন্তু এখানে সেই অর্থে বলার মতো কিছুই নেই।

★  সিরিয়াস প্রেক্ষাপটে উদ্ভট সিনেমা: প্রিয় কমলা

“প্রিয় কমলা” চলচ্চিত্রটি মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপট নিয়ে নির্মিত। মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে একটি প্রেমের গল্পও রয়েছে এখানে। অথচ এর উপস্থাপনা কেমন যেন প্রপাগাণ্ডামূলক। যেন কোনো বিশেষ গোষ্ঠীকে ট্রিবিউট দেওয়ার উদ্দেশ্যে বানানো। মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক চলচ্চিত্রে মুক্তিযুদ্ধের গল্পই উঠে আসা উচিত। মুক্তিযোদ্ধা, হানাদার বাহিনী, দোসর, সাধারণ মানুষ… এদের গল্প উঠে আসা উচিত।

★   বাজে পর্দা জুটি: অপু বিশ্বাসবাপ্পী চৌধুরী (প্রিয় কমলা)

এরা দুজন এবারই প্রথম একসঙ্গে অভিনয় করলেন। বয়সের দিক থেকে বাপ্পী-অপুর মধ্যে খুব বেশি তফাত নেই। অথচ তাদের একসঙ্গে দেখলে মনে হয় অপুর তুলনায় বাপ্পী অনেক ছোট। বাপ্পীর শিশুসুলভ অভিনয় এর অন্যতম একটি কারণ হতে পারে। তবে সব মিলিয়ে এই জুটির রসায়ন আমাদের মোটেও সন্তোষজনক মনে হয়নি।

★   নাম বদনাম অ্যাওয়ার্ড: আমি তোমার রাজা তুমি আমার রানী

এই যুগে এসেও এ রকম সুবিশাল ও উদ্ভট নামের চলচ্চিত্র বানালে, কার শিক্ষাগত যোগ্যতা কত সেই প্রশ্ন ওঠা অস্বাভাবিক কিছু নয়। চলচ্চিত্রটি এক সপ্তাহের বেশি সিনেমা হলে চলেনি।

★   দাঁত ভাঙা অ্যাওয়ার্ড: হিরো আলম (সাহসী হিরো আলম)

যাদের সংলাপ দিতে গিয়ে দাঁত ভেঙে যায় অবস্থা, তাদের দেওয়া হয় এই অ্যাওয়ার্ড। হিরো আলমের অভিনয় দুর্বল তো বটেই, সঙ্গে রয়েছে ডায়ালগ ডেলিভারিতে চরম দুর্বলতা। এ জন্য এমন পুরস্কার তারই প্রাপ্য।

নির্মাতা আর কলাকুশলীদের প্রতি আমাদের অনুরোধ, আপনারা টাকা বা ক্ষমতার অপব্যবহার করে সিনেমার নামে অখাদ্য বানিয়ে দর্শকদের গেলানোর মতো জুলুম করবেন না। দর্শকদের প্রকৃত ভালোবাসা পেতে চাইলে সিনেমাবান্ধব হয়ে উঠুন। সেন্সর বোর্ড পার করে সিনেমা নামের অখাদ্য দর্শকদের কাছে নিয়ে আসার মতো অন্যায় করবেন না প্লিজ।


লেখক সম্পর্কে বিস্তারিত

চলচ্চিত্র বিষয়ক ব্লগার ও ইউটিউবার

মন্তব্য করুন