Select Page

চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রি পরিবর্তনে একজন সুপারস্টারের ভূমিকা

চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রি পরিবর্তনে একজন সুপারস্টারের ভূমিকা

hero-the-superstar-shakib-apu-bobby-bangla-movie-8যখন একটা মুভি দেখার জন্য বসি, সবার আগে খুঁজি গল্পটি। যদি গল্পটি ভাল হয় যদি চিত্রনাট্য ভাল হয় আর যদি সংলাপগুলো ভাল তাহলে তো কোন কথাই নাই। বার বার দেখি। আমি সাধারণত মুভি দেখার ক্ষেত্রে কে অভিনয় করলো সেটা গুরুত্ব দেইনা। কিন্তু একটা ভাল চিত্রনাট্যের ছবিতে যদি পছন্দের কোন নায়ক নায়িকা থাকে তখন সেটা দেখার আনন্দটা অনেক গুনে বেড়ে যায়।

এই যে আমি ভাল গল্পের কথা বললাম। ভিন্ন ধরনের মুভির কথা বললাম সেটা কিন্তু আমার প্রিয় কোন নায়ক নায়িকার ছবিতে পাই যদি সেটা হলিউডের কোন নায়ক বা নায়িকা হয়। এখন যদি বলিউডের দিকে তাকাই তাহলে দেখা যাবে একমাত্র আমির খান ছাড়া অন্য কোন সুপারস্টার ভিন্ন ধরণের মুভি করেন না। যদি আমার প্রিয় নায়ক শাহরুখ খান হয়ে থাকে তাহলে আমি কিন্তু সেই ভিন্ন গল্পের কিংবা একেবারেই গতানুগতিক ধারার বাইরে চলে যাই তাহলে কিন্তু পাব না। আবার আমার প্রিয় নায়ক যদি সালমান খান হয় তাহলে আমি এক বজরাঙ্গি ভাইজান ছাড়া খুব একটা ভিন্ন গল্পের ছবিতে পাবনা। তবুও বলিউডের সুপারস্টার নায়কদের ছবি একটু হলেও ডিফারেন্ট হয়। কিন্তু যদি আমি সত্যিই খুব ভাল ও ভিন্ন ধরণের গল্পের ছবি দেখতে চাই তাহলে আমাকে দেখতে হবে সাধারন কোন নায়ক নায়িকার ছবি কিংবা ইরফান খান, নওয়াজদ্দিনের মত বিখ্যাত অভিনেতাদের ছবি।

এই কথা গুলোর একটিই মাত্র কারন একজন সুপারস্টার যাই করেন তার জনপ্রিয়তার কল্যাণে সেই ছবিটি ভক্ত দর্শকরা লুফে নেয়। এখন যদি সুপারস্টার খুব ভাল মানের ছবি করে তাহলে একজন খুব ভাল অভিনেতা একটি ছবি দিয়ে যে পরিমাণ দর্শক টানতে পারবেন একজন সুপারস্টার অভিনেতা তার চেয়ে হাজার গুন বেশি দর্শক হলে টানতে পারবেন।

এখন যদি বাংলাদেশের দিকে যদি আমি তাকাই তাহলে দেখব বাংলার আলোড়ন সৃষ্টিকারী ছবি মনপুরা বাংলা সিনেমার কোন সুপারস্টার করেননি।করেছেন একজন নাট্য অভিনেতা। নায়িকা চরিত্রেও ছিলনা বাংলার সেরা নায়িকাদের কেউ। ছিল মোটামুটি অচেনা একটি মুখ। যদিও সিনেমাটি ব্লকবাস্টার হয়েছিল কিন্তু সেই সিনেমার নায়ক এরপর আর কোন হিট ছবিও দিতে পারেননি। কিন্তু ছবিটি যদি আমাদের সুপারস্টার করতেন তাহলে গতানুগতিক ধারার বাইরে গিয়ে মৌলিক গল্পের খাটি বাংলাদেশি ছবি আরও হত।এখন আপনার হয়তো প্রশ্ন জাগতে পারে তো আমাদের সুপারস্টার কেন এই ছবিটি করলেন না ? সহজ উত্তর পরিচালক আমাদের সুপারস্টারের কাছে যাননি। এখন যদি বলেন পরিচালক কেন আমাদের সুপারস্টারের কাছে গেলেন না ? সেই প্রশ্নের উত্তরটা আমি আমি এড়িয়ে গেলাম। কারন আমার আজকের আলোচনার সাথে এটা সম্পর্কিত নয়।

আমার আগের একটা লেখায় বলেছিলাম একজন অভিনেতার সীমাবদ্ধতার কথা কিন্তু একজন সুপারস্টার এই সীমাবদ্ধতা গুলো অনেকাংশে কাটিয়ে উঠতে পারেন একটি মাত্র শক্তি দিয়ে; সেটা হলো জনপ্রিয়তার শক্তি। জনপ্রিয়তার শক্তি কেমন তা এই লেখার শুরুতেই বলেছি। এখন আসুন দেখি এই জনপ্রিয়তার শক্তিকে কাজে লাগিয়ে একজন সুপারস্টার কিভাবে চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রি পরিবর্তনে ভূমিকা রাখতে পারেন।

১.পরিচালক সমস্যাঃ

আমাদের বাংলাদেশি চলচ্চিত্রে ভাল পরিচালক নেই। একথা আমরা প্রায়ই শুনি কিন্তু ধরা যাক আমাদের চলচ্চিত্রের একমাত্র সুপারস্টার শাকিব খান যদি সালাউদ্দিন লাভলু ওয়ারিশ ছবিটি করতেন তাহলে বাংলাদেশে ভিন্ন ধারার গল্পের সুচনা শুরু হয়ে যেত। সালাউদ্দিন লাভলু যেহেতু মোল্লা বাড়ির বউ দিয়ে সবার মন জয় করেছিলেন আশা করা যেত যে শাকিব খান কে নিয়ে সালাউদ্দিন লাভলুর ওয়ারিশ ছবিটিও খুব ভাল হত।

শাকিব খান নতুন পরিচালক সোহেল আরমানের এইতো প্রেম ছবিটি করলেন। খুবই ভাল কথা কিন্তু ছবিটির শুটিং শেষ হয়ে মুক্তি পেতে পাচ বছর পার হয়ে গেলে ।অথচ ছবিটি সময় মত মুক্তি দিতে পারলে ছবিটি কমপক্ষে সুপারহিট হতো। কারন ছবির গান ছিল সবার মুখে মুখে। তবে এখানে শাকিব খামখেয়ালি নাকি পরিচালকের ব্যর্থতা তা আমার জানা নেই।

শাকিব খান পাওলি দামের সাথে শুরু করলেন ভিন্ন ধর্মী গল্প নিয়ে ছবি সত্তা অথচ প্রায় দুই বছর হয়ে গেলেও ছবিটির শুটিং শেষ করতে পারেননি ছবিটির পরিচালক হাসিবুর রেজা কল্লোল। এখন যদি শাকিবের ব্যস্ত শিডিউলের অজুহাত দেই তাহলে একটা প্রশ্ন এসে দাড়ায় -তাহলে ঈদুল ফিতর কিংবা ঈদুল আযহাকে লক্ষ করে কিভাবে একটি ছবি নির্মিত হয় ? আরও কিছু ছবি আছে যেগুলোর শুটিং সত্ত্বার অনেক পড়ে শুটিং শুরু হয়েছে।

শাকিব খান দেবদাস হয়েছিলেন খুবই ভাল কথা কিন্তু দেবদাস হতে যে সময় দিতে হয় সেটা কি তিনি দিতে পেরেছিলেন?

সর্বশেষ আসি বর্তমান সময়ের সবচেয়ে আলোচিত তরুণ নির্মাতা আশিকুরের রহমানের অপারেশন অগ্নিপথের ব্যাপারে। এই ছবিটির শুটিং শুরু হওয়ার কথা ছিল মে মাসের ১০ তারিখ থেকে কিন্তু শাকিব খানের শিডিউলের যে অবস্থা পরিচালক ঈদুল ফিতরের পরেও শুটিং শুরু করতে পারবেন কিনা সন্দেহ আছে। তাই এই সুপারস্টারের ভক্তরা মনে করছেন ছবিটি তাদের প্রিয় নায়ক শাকিব খান আসলেই করবেন কিনা।

পরিচালক সম্পর্কিত যে কয়েকটা উদাহরন দিলাম তার কারন হল একজন সুপারস্টার যদি চলচ্চিত্রের পরিবর্তনে বিশ্বাসী পরিচালকদের সাথে ভাল ভাল কাজ করেন তাহলে ইন্ডাস্ট্রি ধীরে ধীরে পরিবর্তিত হয়ে যাবে।

২. ভাল গল্প ,চিত্রনাট্য ও সংলাপের অভাবঃ

আপনারা কি জানেন বাংলাদেশের এখনকার বেশির ভাগ ছবির গল্পকার আব্দুল্লাহ জহির বাবু (অনেকে উনাকে নকল বাবুও বলে থাকেন) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিজ্ঞানে বিএসসি করা ? তাই আমার মনে হয় উনার মেধার অভাব নেই। কিন্তু একজন প্রয়োজক যদি উনাকে নকল গল্প লিখতে বাধ্য করে তখন কি করা ? উনাকেও তো বউ বাচ্চা নিয়ে খেয়ে পড়ে বেচে থাকতে হবে তাই না। এখন আমাদের সুপারস্টার যদি একটি মুভির শুটিং শুরু করার আগে চিত্রনাট্যটি ভাল করে পড়েন এবং চৌধুরী সাহেব আমি গরিব হতে পারি মার্কা গল্পের ছবিতে কাজ না করেন তাহলে প্রযোজক বাধ্য হবেন মৌলিক গল্প লেখাতে। সেটা যদি আব্দুল্লাহ জহির বাবু নাও পারেন তাহলেও সমস্যা নাই। কারন বাংলাদেশে ভাল লেখকের অভাব নাই। আর সুপারস্টারের দাবি পূরণ করতে প্রযোজক নিশ্চয়ই বাধ্য হবেন। এজন্য সুপারস্টারের একটু ইচ্ছাই যথেষ্ট।

৩।নায়িকার অভাবঃ

যদি শাহরুখ খান দিপিকা কিংবা আনুশকার সাথে প্রথম ছবি না করতেন তাহলে হয়তো আমরা দিপিকা কিংবা আনুশকার মত প্রথম সারির নায়িকা পেতাম না । এখন আমাদের সুপারস্টার যদি ডিস্ট্রিবিউশন ,লাকি নায়িকা কিংবা জুটি প্রথায় বিশ্বাস না করে যদি নতুনদের সুযোগ করে দিতেন তাহলে হয়তো আমার আরও কিছু জনপ্রিয় নায়িকা পেতাম ।যদি এক্ষেত্রে আমাদের সুপারস্টার কিছুটা হলেও ভূমিকা রেখেছেন। যেমন সাহারা মিম ,বিন্দু ,শখ ,মাহি , পরিমণি সহ অনেক নতুন নায়িকাদের কিন্তু তিনি তাদের সাথে নিয়মিত ছিলেন না। নিয়মিত থাকলে হয়তো আমরা আরও কিছু জুটি দেখতে পেতাম। আর এক জুটি দর্শক বিরক্তির কারন হত না। আর আশার কথা হল আমাদের সুপারস্টার এখনও দুয়েকজন নতুন নায়িকার সাথে অভিনয় করছেন তার মধ্যে শবনম বুবলি ও শিবা আলি খান অন্যতম।

৪।ভাল সঙ্গীত পরিচালক, অ্যাকশান পরিচালক ,নৃত্য পরিচালক ও অন্যান্য দিকঃ

এইদিক গুলোতে একজন সুপারস্টার সরাসরি কোন ভূমিকা রাখতে পারেন না। ভাল পরিচালকদের সাথে কাজ করলে এইদিক গুলো এমনি ভাল হয়ে যাবে। তবে এক্ষেত্রে সুপারস্টার করনীয় হল যুগের সাথে তাল মিলিয়ে নিজের মেকআপ ,নাচ ও অ্যাকশানে পরিবর্তন আনা। ভিন্নতার দিকে নজর রাখা।

এখন সবার মনে প্রশ্ন জাগতে পারে এইবিষয়গুলোতে তো সব অভিনেতার নজর দেয়া উচিত। আমিও সেটাই মনে করি ।কিন্তু একজন সুপারস্টার তার প্রভাব খাটাতে পারেন যেখানে একজন সাধারন নায়ক/নায়িকা তা পারেনা। তাদের টিকে থাকার জন্য সব ছবিতেই কাজ করতে হয়। আর যখন একটা দেশের সুপারস্টারের ছবি ভাল হয় তখন অন্যরাও ভাল ছবি করার চেষ্টা করে। ইন্ডাস্ট্রিতে একজন সুপারস্টার যে ধরণের ছবি করেন সেই ধরেনের ছবিই বেশি হয়। তাই চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রি পরিবর্তনে একজন সুপারস্টারেরও রয়েছে দারুণ ভূমিকা !

আজ এপর্যন্তই আগামী কোন দিন নতুন কোন বিষয় নিয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করব। আল্লাহ হাফেজ।

 


মন্তব্য করুন