![অনুদান পাওয়ার সাত বছর পর মুক্তি পাচ্ছে ‘আজব কারখানা’](https://i0.wp.com/bmdb.co/wp-content/uploads/2024/06/ajob_karkhana1_bmdb_image.jpg?resize=150%2C150&ssl=1)
চলচ্চিত্র তৈরি করি সারা জীবন বেঁচে থাকার জন্য
প্রথম চলচ্চিত্রে সফলতা পাওয়ার পর পরের ছবিটা অ্যাভারেজ ব্যবসা করে। কিন্তু এর পরেই হঠাত্ থমকে যায় চলচ্চিত্রে তার পদচারণা। সেই প্রশ্নের উত্তরই খোঁজা হয়েছে পরিচালক এস এ হক অলীক-এর কাছে। মোস্তাফিজুর রহমানের নেয়া সাক্ষাতকারটি বিএমডিবি-র পাঠকদের জন্য দৈনিক ইত্তেফাকথেকে সরাসরি তুলে দেয়া হলো-
চলচ্চিত্রে এই হঠাৎ অনুপস্থিতির কারণ কী? এটা কী এক ধরনের ব্যর্থতার ভয়?
না, প্রথম কারণ হচ্ছে বাজার। আমার ছবিগুলো যখন মুক্তি পেয়েছিল তখন আর এখনকার মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে যে এখন হলের সংখ্যা এত কমে গেছে যে যত ভালো ছবি বানানো হোক না কেন ছবি যদি প্রদর্শনের জায়গা না থাকে এবং ওইটার পরিবেশ যদি ভালো না থাকে সেখানে কিন্তু দর্শক যাবে না আর দর্শক না গেলে সেই ছবির টাকাও উঠবে না, টাকা না উঠলে ওই ছবি বানানোর কোনো অর্থ নাই। কারণ, একজন প্রডিউসার যখন টাকা বিনিয়োগ করে প্রথম কারণ হচ্ছে তার টাকার উঠানো। ছবি বানানোর ক্ষুধা অবশ্যই আছে। আর একটা কারণ হচ্ছে ‘আকাশ ছোঁয়া ভালোবাসা’ মুক্তির পর রিয়াজ ভাইয়ের একটা গ্যাপ হয়ে গেল। তখন রিয়াজ পূর্ণিমার একটা ভালো জুটি ছিল আর আমাদের মধ্যে একটা ভালো কেমিস্ট্রি তৈরি হয়ে গিয়েছিল তো একটা গল্প ভাবলেই রিয়াজ-পূর্ণিমার কথা মাথায় আসে। তাদের ছাড়া ছবি বানাবো সেটা মাথায় আসেনি। আর রিয়াজ ভাইও ধীরে ধীরে ব্যবসায় জড়িয়ে গেল তো করব করব করে আর করা হচ্ছে না, সিনেমা হলের কারণ তো আছেই। আর এখন ইচ্ছা হলেও সাহস হচ্ছে না। তবে ছবি করব আর একটু অপেক্ষা করতে হবে।
আপনার দু’টি ছবির একটি ব্যবসায় সফল অন্যটিও আলোচনায়, তবুও কেন এখন সাহস করছেন না?
হ্যাঁ, কারণ তখন চারদিকে অশ্লীল ছবির একটা প্রভাব ছিল, সেই মুহূর্তে আমার ছবি দু’টিতে সুন্দর লোকেশন, সুন্দর গান ছিল এবং আমরাই প্রথম যে ছবি মুক্তির আগে ছবির গানের সিডি বাজারে ছাড়ি। তখন নতুনত্ব ছিল বলেই দর্শক হলে গিয়েছিল আর এখন ডিজিটাল ছবি বানালেও দর্শক নতুন কিছু আশা করবে। আর আমি যদি দিতে না পারি দর্শক আমার কাছ থেকেও নিরাশ হয়ে ফিরে যাবে, দর্শকদের নিরাশ করার চাইতে ছবি না বানানোই ভালো। আর এখন ১ থেকে দেড় কোটি টাকা দিয়ে ছবি বানিয়ে প্রডিউসারকে ফেরত দেওয়া খুব কঠিন।
এখন অনেক নির্মাতাই বলছেন রাজনৈতিক কারণে ছবি বানাচ্ছে না, আপনার ক্ষেত্রে কী তেমন কোনো কারণ আছে?
আজকের কথা চিন্তা করলে রাজনৈতিক কারণ অবশ্যই একটা প্রভাব ফেলে। কিন্তু আমি ব্যপারটা জোর দিয়ে বলব না কারণ আমার বিরতিটা অনেকদিনের।
এখন তো রেড ক্যামেরা, এফথ্রিসহ নানান অত্যাধুনিক ক্যামেরায় কম টাকায় ডিজিটাল ছবি বানাচ্ছে, আপনি কেন বানাচ্ছেন না?
সিনেমা ব্যপারটা অনেক টাকার ব্যপার। জিনিসটা আমি বিশ্বাস করি না যদিও সবাই বলছে ডিজিটাল ছবি মানেই কম টাকার ছবি। এটা একটা ভুল ধারণা। কম টাকায় ছবি বানানো যায় না কোনো দিনই, তবে আবার যেতও থার্টি ফাইভেও যেত, এখনও যায়, ডিজিটালেও যায়। কিন্তু সেই ছবি দর্শক হলে গিয়ে দেখে মজা পাবে না। দুয়েকটা ব্যবসায় সফল হতে পারে তবে সেটা উদাহরণ না এটা মিরাক্কেল। কারণ তারা বিভিন্ন দেশের ছবি দেখে তো ডিজিটাল মানে দর্শকরা সেগুলো আশা করে তাই দর্শকদের ধোঁকা দেওয়া মুশকিল এবং এগুলো ডিজিটালে তৈরি করা সম্ভব। আর যদি কম টাকায় ছবি বানাই সে সব প্রেজেন্টেশন দেওয়া যাবে না। দর্শকদের কাছে ডিজিটাল ছবি মানে যে আগ্রহ তৈরি হবে দর্শক তা না পেয়ে হল থেকে হতাশ হয়ে ফিরে যাবে। তাই এ ডিজিটাল ছবি বানাতে আমি আগ্রহী না।
কিন্তু এখনকার ধোঁকাবাজির ডিজিটাল ছবি তো হরহামেশাই হচ্ছে। এই অল্প বাজেটের নিম্নমানের ছবি কী দর্শকদের আরও বিভ্রান্ত করছে না?
হ্যাঁ, হচ্ছে। আমি বিষয়টির সাথে পুরোপুরি একমত আমার কাছেও অনেক প্রডিউসার আসে বলে যে কম টাকায় ডিজিটাল ছবি তৈরি করে দিতে, দুয়েকটা মিটিং হওয়ার পর কথা আর আগায়না কারণ যখন আমি তাদের বুঝাই ডিজিটাল ছবি বানাতে হলে যেসব প্রেজেন্টেশনের কথা আমি তাদের বুঝাই তা কম টাকায় হবে না। তখন তারা ফিরে যায়।
চলচ্চিত্র পরিচালক এসএ হক অলিক এখন নিয়মিত নাটক নির্মাণ করছেন এটা কী চলচ্চিত্রে ব্যর্থ হয়ে আবার ফের নাটকে নোঙর ফেলানোর মতো? অন্য অনেক স্বনামধন্য চিত্র পরিচালকেরা যা করছেন ।
আমার শুরু কিন্তু নাটাক দিয়েই পরবর্তিতে ছবি বানানো স্বপ্ন থেকে। আমার মেধায় আমি যদি নিয়মিতই ছবি বানাই তবে মনে দাগ কাটার মত ছবি বানাতে পারবো না, এইটা আমার মেধায়। নাটক করি পেট চালানোর জন্য আর চলচ্চিত্র তৈরি করি সারা জীবন বেঁচে থাকার জন্য যাতে মরে গেলেও মানুষ আমাকে মনে রাখে।
সুত্র: দৈনিক ইত্তেফাক