Select Page

চাঁদনীর অভাবনীয় সাফল্য বাংলাদেশের চলচ্চিত্রকে পাল্টে দেয়

চাঁদনীর অভাবনীয় সাফল্য বাংলাদেশের চলচ্চিত্রকে পাল্টে দেয়

চাঁদনী-রিভিউ-পোস্টার-এহতেশাম-শাবনাজ-নাঈম

৯০ দশকের শুরুর দিকে বলিউডের হিন্দি চলচ্চিত্রে অমিতাভ, ধর্মেন্দ্র, জিতেন্দ্র, ঋষিকাপুর, মিঠুন চক্রবর্তীদের মতো পুরাতন মুখগুলোর পাশাপাশি বলিউড ও এই দেশের দর্শকরা পেয়েছিল আমির খান, সালমান খান, রাহুল রায়, অজয় দেবগন, জুহি চাওলা, মাধুরী দিক্ষিত, দিব্য ভারতী’র মতো একবারে নতুন টগবগে তরুণ মুখগুলো। কিন্তু বাংলাদেশের সিনেমার দর্শকরা তখনও রাজ্জাক, আলমগীর, সোহেল রানা, জসিম,ইলিয়াস কাঞ্চন, জাফর ইকবালদের মতো একই মুখগুলো ঘুরে ফিরে বারবার দেখতে দেখতে ক্লান্ত হচ্ছিল।

ঠিক তখনই [১৯৯১] বাংলা চলচ্চিত্রের অন্যতম প্রবাদ পুরুষ , পরিচালক ও ‘ক্যাপ্টেন’ হিসেবে খ্যাত এহতেশাম সাহেব একেবারে অপরিচিত ও টগবগে দুই তরুণ তরুণী নাঈমশাবনাজ’কে নিয়ে নির্মাণ করলেন ‘চাঁদনী’ নামের এক প্রেম কাহিনী নির্ভর চলচ্চিত্র যার অভাবনীয় সাফল্য বাংলাদেশের চলচ্চিত্রকেও পাল্টে দিয়েছিল। প্রবীণ জনপ্রিয় তারকাদের পাশাপাশি শুরু হয় তারুণ্যর জয়গান, চলচ্চিত্রের আকাশে নতুনের কেতন ওড়ে যার ফলশ্রুতিতে আমরা পেয়েছিলাম সালমান শাহ, ওমর সানি, আমিন খান, রিয়াজ, মৌসুমি, শাবনুরদের মতো নতুন কজন সফল তরুণ তারকা যারা আজ অনেকের আইডল হয়ে আছেন ।

‘চাঁদনী’ চলচ্চিত্রটি ছিল গতানুগতিক ধনী গরীবের প্রেম কাহিনী কিন্তু মুক্তি পাওয়ার পর ঢাকায় সফল হওয়ায় তার রেশ গিয়ে পড়ে ঢাকার বাহিরের বড় বড় শহরগুলো সহ মফস্বল শহর ও গ্রাম গঞ্জের সিনেমা হলগুলোতে। সবার মুখে মুখে চাঁদনী ছবির ‘বন্ধুর বাঁশি বাজে রে আমার কানে কানে , ও আমার জান, তোর বাঁশি যেন যাদু জানে রে এবং কতদিন পরে দেখা হলো দুজনাতে গানগুলো ফিরতে থাকে এবং নতুন দুই মুখ নাইম শাবনাজের কথাও দর্শকদের মুখে মুখে ফিরে। দর্শক প্রিয়তা পেয়ে যায় নাইম শাবনাজ। সিলেটের মনিকা সিনেমা হলে সেদিন আমিও পরিবারের সাথে ‘চাঁদনী’ ছবিটি উপভোগ করেছিলাম। পুরো সিনেমা হল ভর্তি ছিল পরিবার নিয়ে আসা দর্শকদের ঢল। সবার একটাই প্রশ্ন ‘কি আছে চাঁদনী ছবিতে’’? ……… নাইম শাবনাজের সাফল্যর ফলে আলমগির , জসিম , সোহেল রানা, কাঞ্ছনদের নিয়ে সামাজিক অ্যাকশন ছবির পাশাপাশি নাইম শাবনাজ’কে দিয়ে পরিচালকরা তৈরি করতে থাকেন একের পর এক রোমান্টিক গল্পের ছবি। নাইম শাবনাজ যখন রোমান্টিক ইমেজের একটি জুটি হিসেবে দাঁড়িয়ে গেছে ঠিক তখনই অন্য পরিচালকরা আরও কিছু নতুন মুখ নিয়ে কাজ করার সাহস দেখালেন এবং সফলও হলেন যার ফলে এলো সালমান শাহ, ওমর সানি, আমিন খান, রিয়াজ , মৌসুমি শাবনুর’রা। এখানে উল্লেখ্ করতে হয় যে এহতেশামের হাত ধরে নাইম শাবনাজ এসেছিল সেই এহতেশামের হাত ধরেই শাবনুর এসেছিলেন ‘চাঁদনী রাতে’ ছবির মাধ্যমে যে ছবির নায়ক ছিলেন সাব্বির। সাব্বির জনপ্রিয়তা না পেলেও শাবনুর ঠিকই জনপ্রিয়তা পেয়ে গিয়েছিলেন।

যে এহতেশামের হাত ধরে একদিন বাংলা চলচ্চিত্রে খান আতাউর রহমান, সুমিতা দেবী, রহমান, শবনম, শাবানা’র মতো তারকারা এসেছিলেন সেই এহতেশামের হাত ধরেই বাংলা চলচ্চিত্র প্রবেশ করেছিল নতুন যুগে । সেদিন এহতেশাম সফল হওয়ায় বাংলা চলচ্চিত্রের পুরো ধারাটাই পাল্টে যায়। প্রবীণ শিল্পিদের অভিনীত দারুন দারুন সব ছবির পাশাপাশি নতুন শিল্পিদেরও দারুন দারুন সব ছবি আমরা সেদিন উপভোগ করেছিলাম । শুধু তাই নয় , রুবেল ও মান্নাকে নিয়েও তৈরি হয়েছিল আলাদা বলয়। সবাই যেন একসাথে জ্বলে উঠেছিলেন। দর্শকরা কোনটা রেখে কোনটা দেখবে সেটা নিয়েই চিন্তায় পরে যেতো । একদিকে আলমগির, সোহেল রানা, জসিম ও কাঞ্চনদের মতো প্রবীণ অন্যদিকে রুবেল ও মান্না ‘র মতো যুবক এবং আরেকদিকে সালমান , সানি’র মতো তরুণদের একের পর এক চলচ্চিত্র মুক্তি পেতো আর দর্শকরাও হুমড়ি খেয়ে সিনেমা হলে যেতো । সিনেমা হলে সিনেমা না দেখলে যেন পেটের ভাত হজম হতো না যা আজ কেবলই এক টুকরো সোনালি স্মৃতি হয়ে আছে । অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাই শ্রদ্ধেয় ক্যাপ্টেন এহতেশামকে যিনি বাংলা চলচ্চিত্রের সেদিনকার সকল দর্শকদের একটি অসাধারন সময়ের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন।।


মন্তব্য করুন