চাষী নজরুল ইসলামের ‘শাস্তি’ যে কারণে করা হয়নি শশীর
শারমীন জোহা শশীর অভিনয় ক্যারিয়ারে একটি মাত্র সিনেমা, ‘হাজার বছর ধরে’। জহির রায়হানের একই নামের উপন্যাস অবলম্বনে নির্মাণ করেছিলেন অভিনেত্রী সুচন্দা। এই একটি ছবিতে দিয়ে এখনো দর্শকদের আচ্ছন্ন করে রাখেন তিনি। এরপর আর বড়পর্দায় দেখা না যাওয়া নিয়ে আফসোস নেই জানালেন। আরো জানান, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গল্প অবলম্বনে নির্মিত চাষী নজরুল ইসলামের ‘শাস্তি’ সিনেমায় প্রস্তাব পেয়েও করেননি।
সম্প্রতি প্রথম আলোকে দেয়া সাক্ষাৎকারে সেই তথ্য জানালেন টিভি পর্দার পরিচিত এই অভিনেত্রী।
‘হাজার বছর ধরে’তে অভিনয়ের পর যে পরিমাণ প্রস্তাব পেয়েছিলাম, সবই যদি করতাম, তাহলে এখন হয়তো নাটকে আমার কাজ করা হতো না। নিয়মিতভাবে হয়তো সিনেমার শিল্পীই থাকতাম- এমনটাই বলছিলেন শশী।
তিনি বলেন, “প্রথমত, তখন আমি অনেক ছোট, মা-বাবাও চাননি বাণিজ্যিক চলচ্চিত্রে কাজ করি। একটু মনে করলেই দেখা যাবে, ২০০৫ সালে যখন আমার অভিনীত ছবিটি মুক্তি পায়, তখন দেশের সিনেমার অবস্থা খুবই খারাপ। কাটপিস আর কাটপিস। এসব দেখে ভয় পাই। আমিও ম্যাচিউরড ছিলাম না। তাই বিরতি পড়ে। আমার আবার এইচএসসির পড়াশোনার চাপ, তারপর নাটকে ব্যস্ত হয়ে পড়া। ওই সময়টায় চাষী নজরুল ইসলাম আঙ্কেলও আমাকে ‘শাস্তি’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাব দেন। চিত্রনায়ক রিয়াজ ভাই একটা বিজ্ঞাপনচিত্রের কথাও বলেছিলেন, সুইজারল্যান্ডে যেটার শুটিং হয় কিন্তু সুচন্দা আন্টি চাননি। তাঁর কথা ছিল, হাজার বছর ধরে মুক্তির আগে নতুন কোনো কাজ নয়। আমিও চেয়েছিলাম, আমার ডেব্যু যেহেতু সুচন্দা আন্টির মাধ্যমে, তাঁর প্রতি সম্মান দেখানো উচিত। তাই সব কাজ ছেড়ে দিয়েছিলাম।”
এখন অনুশোচনা হয়?- এমন প্রশ্নে শশী বলেন, ‘একদমই না। আমি মনে করি, সৃষ্টিকর্তা আমার জন্য যেটা বরাদ্দ রেখেছেন, সেটাই আমার হবে—আজ অথবা কাল। যেটা আমার নয়, শত চেষ্টাতেও আমার হবে না। এটা আমি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি।’
‘লাক্স-আনন্দধারা মিস বাংলাদেশ ফটোজেনিক’ এ অংশ নিয়ে শশীর শোবিজে পরিচয়। তখন তিনি দশম শ্রেণীর ছাত্রী।
এ প্রসঙ্গে শশী বলেন, “এখন যে লাক্স চ্যানেল আই সুপারস্টার হয়, তখন হতো ‘লাক্স-আনন্দধারা মিস বাংলাদেশ ফটোজেনিক’ প্রতিযোগিতা। বিভাগ থেকে প্রথম স্থান অর্জনকারীর নাম ঘোষণা করা হতো। বিভিন্ন বিভাগ থেকে যারা ফার্স্ট হতো তাদের বলা হতো—মিস বরিশাল, মিস রাজশাহী, মিস চট্টগ্রাম, এ রকম। আমাদের রংপুর তখনো বিভাগ হয়নি। রাজশাহী থেকে আবেদন করেছি। আমি মিস রাজশাহী হয়েছিলাম।”
ওই সময়ই ‘প্রথম আলো’য় শশীর মুকুট পরিহিত একটা ছবি ছাপা হয়, যা সুচন্দা দেখেছিলেন। তারপর ‘আনন্দধারা’ অফিসে যোগাযোগ করে তার বাসার ল্যান্ডফোনে ফোন নম্বর সংগ্রহ করেন।
শশী বলেন, ‘যেদিন বাসায় ফোন করেছিলেন সেদিন আব্বুই ফোনটা ধরেন। তারপর সুচন্দা আন্টি আমাকে তার ছবিতে প্রয়োজন, এটা জানালেন। আব্বুও সময় নিলেন। পরে হ্যাঁ বললেন। আব্বু তখন আম্মুকে বলেছিলেন, ও যে এই বয়সে এই সুযোগটা পাচ্ছে, এটা পরে আর পাবে না। এই ছবিটা ওর করা উচিত। এভাবেই আমার জড়িয়ে যাওয়া। মাও আমার অভিনয়ে সাপোর্ট করতেন। তিনিও বাংলাদেশ বেতারে জব করেন। তিনিও থিয়েটারকর্মী। এদের পীড়াপীড়িতে আমার অভিনয়ে যুক্ত হওয়া।’