চোখে লেগে থাকা সিকোয়েন্স – ১
বাংলা চলচ্চিত্রের সাথে আমার সখ্যতা ছেলেবেলা থেকে। তখন থেকেই আমি নিয়মিত বাংলা চলচ্চিত্রের দর্শক, হলে-টিভিতে এবং ইউটিউবে। ভালো ছবি মন্দ ছবি সবই দেখা হয়, কিন্তু শত শত চলচ্চিত্রের মধ্যে সব চলচ্চিত্র কিন্তু মনের গভীরে স্থান পায় না। কিছু সিনেমা স্থান পেলেও তার সব সিকোয়েন্স পছন্দের তালিকায় ঠাঁই পায় না, আবার হয়তো পুরো সিনেমার মধ্যে একটি সিকোয়েন্স চোখে লেগে থাকে বছরের পর বছর। আমার দেখা বাংলা চলচ্চিত্রের প্রিয় সিকোয়েন্সগুলো নিয়ে লিখছি – চোখে লেগে থাকা সিকোয়েন্স, আজ তার প্রথম পর্ব।
এই ঘর এই সংসার
সালমান শাহ অভিনীত এই ঘর এই সংসার সিনেমার কিছু সিকোয়েন্স আজও চোখে লেগে আছে।
১.
সালমানের বাসায় নায়িকা বৃষ্টিকে নিয়ে তার বাবা খলিল হাজির। বিয়ের আয়োজন চলছে। বৃষ্টির সই নেয়া হয়েছে কিন্তু সালমান সই করছে না। সে রাজি নয়। বোন রোজী আফসারী বারবার বলছে সই করতে। শেষে সই করল সালমান। সই করার পরেই রোজী একটা এক্সপ্রেশন দেয় যা অসাধারণ, চোখে লেগে আছে।
২.
প্রথম কাজের টাকা পেয়ে সালমান সবার জন্যই কিছু না কিছু এনেছে। বৃষ্টির জন্য খাবার এনে সালমান বলছে – ‘কুকুর বেড়ালও এ বাড়িতে না খেয়ে থাকে না, এখানে খাবার রইল, ইচ্ছে হলে যেন খেয়ে নেয়’। বৃষ্টি খাবারের প্যাকেটটা হাতে করে তৃপ্তি নিয়ে খায়, এক্সপ্রেশন ছিল চমৎকার।
৩.
আলীরাজ ও তমালিকার মধ্যে বাকবিতণ্ডা চরমে। দলিল পোড়াতে আলমারি ঘাঁটতেই বেরিয়ে আসে লাল শাড়ি যেটা আক্কাস আলির বাড়ি থেকে নিয়ে এসেছে তমালিকা। বলে শাড়িটা তার পছন্দ। আলীরাজ বলে, আক্কাস আলিকে পছন্দ করোনি তো আবার…
৪.
রোজী মারা গেলে আলীরাজ পায়ে পড়ে কাঁদছে। বলছে, ‘তুই তো সংসারটা সাজিয়েছিলি আর একটা নারীকে দ্যাখ সব শেষ করে দিল, নারীতে নারীতে কত তফাত’। সালমান যে শাড়িটা কিনেছিল সেটা তমালিকাকে দিয়ে বলে, ‘এই শাড়িটা নেবে না, খুব সুন্দর।
হাজার বছর ধরে
রিয়াজ-শশী অভিনীত হাজার বছর ধরে সিনেমার সিকোয়েন্স। দুপুরের খাবার খেতে বসেছে রিয়াজ (মন্তু)। খাবার দিল শশী (টুনি)। যেটুকু খাবার ছিল ওটুকু খেয়েই উঠে পড়তে চাইল রিয়াজ। শশী দ্বিতীয়বার থালায় করে ভাত তরকারি নিয়ে এল। বলল, ‘চাইয়া নিতে পারো না?’ রিয়াজ ও শশী অসাধারণ এক্সপ্রেশন দেয় দুজনে দুজনের দিকে তাকিয়ে। যেকোনো চরিত্রের সাথে মিশে যেতে রিয়াজের জুড়ি নেই, শশীও নবাগতা হিশেবে ঐ ছবিতে দারুণ কাজ করেছে। সিকোয়েন্সটা নজরকাড়া।
পোড়ামন
সাইমন সাদিক আর মাহিয়া মাহি অভিনীত সাম্প্রতিক সিনেমা পোড়ামন এর দুটি সিকোয়েন্স।
১:
মাহীকে(পরী) স্কুলে পৌঁছে দেয়ার সময় সাইকেলের টায়ার পাংচার হয়। সায়মনসহ (সুজন) হাঁটতে থাকে। কিছুদূর যেতেই দুজনে দেখতে পায় সায়মনের বন্ধু তার প্রেমিকার হাতে আদর করছে। তা দেখে মাহী তার হাতটা নিজে স্পর্শ করে, সে বুঝে নিতে চায় সায়মনের স্পর্শ। এরপর একদৌড়ে বাড়ি গিয়ে দরজা লাগিয়ে বিছানার বালিশ ধরে শুয়ে পড়ে। মা বলে কিছু হয়েছে কিনা, মাহী বলে, ‘সুজনরে যাইতে কও তো, আমার শরীরটা খারাপ লাগছে’। বয়সের সঙ্গে প্রেম ও সঙ্গীর যে প্রয়োজন সবার জীবনেই সেটা দেখানো হল অপূর্বভাবে।
২:
মাহী টেবিলে পড়ছে। সায়মন তাকিয়ে দেখছে। চমকে যায় মাহী। সায়মন বলে, ‘যদি বই হইতাম তুই সারাক্ষণ আমার দিকে দেখতি’। মাহী বলে, ‘তখন আমারে স্কুলে নিয়া যাইত কে?’ সায়মনের সুন্দর জবাব, ‘এইজন্যই তো মানুষ হইলাম’। বাতি নিভে যায় হঠাৎ। মাহী বলে পরীক্ষায় ফেল করবে পড়তে না পারলে। তখনি সায়মন সাইকেল এনে প্যাডেল মেরে ডায়নামোর সাহায্যে সাইকেলের সামনের লাইটের আলো জ্বালাতে থাকে। কিন্তু চেইন ছিঁড়ে যায়। এরপর সে এক ঝাঁক জোনাকি নিয়ে আসে। দুজনে দৌড়ে যায় উঠোনে। বেজে ওঠে এ সিনেমার হদয়ছোঁয়া গান – জ্বলে জ্বলে জোনাকি .. ভালোবাসাতেই পুড়ে পুড়ে খাঁটি হয় পোড়া মন।
এই সিরিজটার পরের পর্বগুলো পোস্ট করতে পারেন।