Select Page

জানা-অজানার শ্রাবন্তী

জানা-অজানার শ্রাবন্তী

এক.
মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার ২০০৩ এর মহড়া চলছিল তখন বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রে (২০০৪ সালে)। শ্রদ্ধেয় হানিফ সংকেত দা দেশীয় সুর ব্যবহার করে ৫টি জুটি নিয়ে একটি পরিবেশনার পরিকল্পনা করলেন। ছোট ও বড় পর্দা মিলিয়ে ১০ জন তারকা। কবির বকুল ভাই বসলেন কার সাথে কে জুটি হতে পারে?

অমুক অভিনেত্রী বললেন, অমুক’কে আমার সাথে দিন। ওর সাথে আমার জুটি জনপ্রিয়। আরেকজন বললেন, অমুককে আমার সাথে দিন। ও নাচে ভালো। অন্য আরেকজন তড়িঘড়ি করে বললেন, তাহলে আমাকে অমুককে দিন। সবাই যে যার মত নায়ক পছন্দ করে নিলেন। বাকি রইলেন শুধু শ্রাবন্তী। আর নায়কদের মধ্যে রয়ে গেলেন শুধু শাকিব খান। তার সাথে কেউ নাচতে চাইলেন না !!!! কিন্তু শ্রাবন্তী বললেন, ঠিক আছে, আমি এই ছেলের সাথেই নাচবো। কেউ কেউ হাসলেন (!)। এই ছেলে, মানে, শাকিব খান তখন চুপচাপ এক কোণে বসে ছিলেন। শ্রাবন্তী তার কাছে গিয়েই হুংকার, অ্যাই ছেলে, উঠো ! চলো নাচি ! এরপর তো ইতিহাস। পাঁচজন পুরুষ তারকার মধ্যে সবচেয়ে ভালো নাচলেন শাকিব খানই।

দুই.

অপি করিমের সাথে শ্রাবন্তীর নিচের ছবিটি ২০০৩ সালে তোলা। ৫১ বর্তী তখন বেশ জনপ্রিয়। দুজনই অভিনয় করেছেন ঐ মেগা সিরিয়ালে। রোজার দিন ইফতারের পর আশীষ সেনগুপ্তে’র স্টুডিওতে গিয়েছিলাম। রাত ১টা পর্যন্ত চললো ফটোসেশন। তারপর সাক্ষাতকার নেবার পালা। কথাবার্তা যখন শেষ হলো, ঘড়িতে তখন রাত ৩টা। শ্রাবন্তী তখন আমাকে সাহরী করালেন। বাসায় নামিয়ে তারপর একা একা নিজের বাসায় গেলেন।

তিন.

২০০৩ সালে ৫১ বর্তী নাটকের জন্য অপি করিম ও শ্রাবন্তী দুজনই পাঠকের রায়ে মেরিল প্রথম আলো পুরস্কারে মনোনয়ন পেয়েছিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত পুরস্কার হাতে নিয়েছেন অপি করিম।

পরের বছর (২০০৪) অপি করিম একই নাটকের জন্য মনোনয়ন পেয়েছিলেন। আর শ্রাবন্তী পেয়েছিলেন জোছনার ফুল নাটকের জন্য। জোছনার ফুল তখন বেশ জনপ্রিয়। স্বাভাবিকভাবেই শ্রাবন্তীর পুরস্কার পাবার আগ্রহ ও স্বপ্ন ছিল তখন আকাশ ছুঁই ছুঁই।

সেবার অনুষ্ঠানে মাহফুজ (আহমেদ) ভাইয়ের সাথে তার নাচ করবার কথা থাকলেও ট্রাফিক জ্যাম জনিত কারণে শ্রাবন্তী অনুষ্ঠানের আগে তো দূরের কথা, অনুষ্ঠান শুরু হবার ৪০ মিনিট পরও দেখা দিলেন না। ফোনও ছিল বন্ধ। আনিস ভাইয়ের তখন আত্মারাম ছুটে গেছে। বকুল ভাই মাথার চুল ছিঁড়ছেন। শেষ মুহূর্তে খাম খুলে তারা দেখলেন, শ্রাবন্তীই পাচ্ছেন সেবারের শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার। সবার মাথায় হাত। কাকতালীয়ভাবে ঠিক সে মুহূর্তেই শ্রাবন্তী আমাকে ফোন দিলেন, ‘কই রে তোরা। নিয়ে যাস না ক্যান????’ আমি রাগত: স্বরে বললাম, কই আপনি? ও পাশ থেকে তার উত্তর, আরেরর মরার জ্যামে পড়ছি ঘোড়ার ডিম। আমি বাইরে। লাল টুকটুকে বউয়ের মত সাজ দিছি। হি হি হি। নিয়া যা। আমার লজ্জা লাগতেছে। বকুল ভাই বললো, ওরে ঢং করতে মানা করো। রুম্মান দৌড় দাও। আমি এক দৌড়ে হল অফ ফেম মিলনায়তনের বাইরে গেলাম। শ্রাবন্তীর চোখে মুখে তখনো লজ্জা: অই, আমার ছবি তুইলা দে। পরে যদি পুরস্কার না পাইয়া কাইন্দা মেকআপ নষ্ট কইরা দেই? আমি বললাম, ধুরো চলেন !!!!! আপনার পারফরম্যান্স একটু পর। শ্রাবন্তী জেদ ধরলেন, আগে ছবি। তারপর….! আমিও জেদের কাছে মাথা নত করে ০.০১ মাইক্রোসেকেন্ডে এই ছবি তুলে ম্যারাথন দৌড় দিয়ে মিলনায়তনের ভেতরে তাকে নিয়ে গেলাম।

ঠিক যেন সিনেমার মত সিকোয়েন্স: আমি শ্রাবন্তীকে নিয়ে পা রাখলাম, আর সঙ্গে সঙ্গে মঞ্চ থেকে অভিনেত্রী সারা যাকের ও অভিনেতা আবুল হায়াতের (অনুষ্ঠানের উপস্থাপক) কণ্ঠ কানে ভেসে আসলো-শ্রাবন্তী! সবাই শ্রাবন্তীকে খুঁজছেন। সে বছর তারকা জরিপে পাঠকের রায়ে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী শ্রাবন্তী। শ্রাবন্তী কাঁদছেন, ’রুম্মান রে, পরে যাই। একটু কাইন্দা নেই’। আমি ঠেলে পাঠায়া দিলাম। পুরস্কার গ্রহণ শেষ। মঞ্চ থেকে নেমে কারো হাতে ক্রেস্ট দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে আবার ছুটে গেলেন মঞ্চে। মাহফুজ ভাইয়ের সাথে নাচলেন, ওগো সুন্দরী তুমি, রূপের লহরী…তোমায় বউ সাজাইয়া লইয়া যামু আমার বাড়ি / আমি যেমন আছি তেমন রবো বউ হবো না রে……

চার.

হানিফ সংকেত দা আরেকবার (২০০৬ সালে) মেরিল প্রথম আলো পুরস্কার ২০০৫ অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেছিলেন। পরিকল্পনা করলেন, চিঠি নিয়ে একটি পরিবেশনা করবেন। ‘চিঠি’ নিয়ে তিনটি গান থাকবে। একটি গানে নাচবেন শ্রাবন্তী, একটিতে ঈশিতা, একটিতে অপি করিম। তিনটি গানই গাইলেন প্রয়াত শাম্মী আখতার। রাত দিন এক করে মহড়া হয়েছিল বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রে। মূল অনুষ্ঠানের দিন। সব ঠিকঠাক। অনুষ্ঠানের প্রথম পারফরম্যন্স: চিঠির গান। কিন্তু অপি, শ্রাবন্তী, ঈশিতার সহকারী নৃত্যশিল্পীরা কেউ প্রস্তুত, কেউ প্রস্তুত নয়, কেউ সাজগোজে ব্যস্ত। সব মিলিয়ে সমন্বয় করা যায়নি।

শ্রাবন্তী তখন সিঁড়িতে বসে আচার খাচ্ছিলেন। হঠাৎ শুনলেন: মঞ্চে এবার চিঠি নিয়ে গানের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশনা নিয়ে আসছেন অপি করিম, শ্রাবন্তী ও ঈশিতা। বকুল ভাই আর আমি সিঁড়ি থেকে ধাক্কা দিয়ে শ্রাবন্তীকে মঞ্চে ‘ইন’ করালাম। হাতের আচার পড়ে গেল। সহশিল্পীদের ছাড়াই তিনজন আলাদা আলাদা ভাবে নাচ করলেন। নাচ শেষ। মঞ্চ থেকে নেমে তিনজনেরই বিস্ময়-কি করলাম আমরা এটা? হা হা হা !!!!

শ্রাবন্তী কিছুটা অস্বাভাবিক, মানে পাগল। আর দশজনের মত নয়। প্রায়ই অনেক মানুষ তার ওপর বিরক্ত হন। তার সোজাসাপ্টা কথার জন্য হোক কিংবা নির্বোধের মত কিছু সময় প্রতিক্রিয়া দেখানোর জন্য হোক। তবে…..শ্রাবন্তী কখনো কারো ক্ষতি করতে পারে, এটা আমি বিশ্বাস করি না। অন্তত আমি তার জলের মত স্বচ্ছ মনের খোঁজ পেয়েছিলাম। একজন মা হিসেবে তার স্বপ্ন, তার দায়িত্বের কথা কত শুনেছি। (মোহাম্মদ খোরশেদ) আলম ভাইয়ের প্রতি তার ভালো লাগা, ভালোবাসার কথা কত শুনেছি।

আজ শ্রাবন্তীর জন্মদিন। এই বিশেষ দিনে স্বাভাবিকভাবেই ফ্ল্যাশব্যক হচ্ছে একের পর এক ঘটনা। আশা করছি মেঘ কেটে শ্রাবন্তী আবারো আলোর দেখা পাবেন। আমরা বলতে পারবো: অবশেষে তাহারা সুখে শান্তিতে বসবাস করিতে লাগিলেন !!!!

শুভ জন্মদিন ইপসিতা শবনম শ্রাবন্তী।


মন্তব্য করুন