Select Page

দফায় দফায় রিমান্ড, আইনি তর্ক, মিডিয়া ট্রায়াল, প্রতিবাদের পর জামিনে পরী

দফায় দফায় রিমান্ড, আইনি তর্ক, মিডিয়া ট্রায়াল, প্রতিবাদের পর জামিনে পরী

অবশষে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে করা মামলায় পরীমনির জামিন মঞ্জুর করেছেন আদালত। ঢাকার মহানগর দায়রা জজ কে এম ইমরুল কায়েশ আজ মঙ্গলবার এ আদেশ দেন। সংবাদমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন নায়িকার আইনজীবী মুজিবুর রহমান।

৪ আগস্ট বিকেল চারটার পরপরই বনানীর ১২ নম্বর রোডে পরীমনির বাসায় অভিযান পরিচালনা করে র‍্যাব। এ সময় ওই বাসা থেকে বিপুল পরিমাণ বিদেশি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের দামি মদ, মদের বোতলসহ অন্যান্য মাদকদ্রব্য জব্দ করা হয়। এরপর ৫ আগস্ট চার দিন এবং ১০ আগস্ট দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।

১৩ আগস্ট রিমান্ড শেষে তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়। এরপর আবারও ১৯ আগস্ট এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। রিমান্ড শেষে ২১ আগস্ট আবার তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়।

এরপর ২২ আগস্ট পরীমনির পক্ষে তাঁর আইনজীবীরা ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে জামিন আবেদন করেন। আদালত ১৩ সেপ্টেম্বর জামিন শুনানির দিন ধার্য করেন। তবে জামিন শুনানির জন্য ২১ দিন পরে দিন ধার্য করায় ওই আদেশকে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন পরীমনি।

পরীমনির জামিন আবেদনের শুনানি ২১ দিন পর ১৩ সেপ্টেম্বর নির্ধারণ করে মহানগর দায়রা জজ আদালতের দেওয়া আদেশ কেন বাতিল ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল দেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে জামিন আবেদনের শুনানি এগিয়ে (১৩ সেপ্টেম্বরের আগে) দুই দিনের মধ্যে তা করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা–ও জানতে চাওয়া হয় রুলে।

এ সবের মাঝেই পরীমনির বিষয়টি দেশ-বিদেশে আলোচনার ঝড়। বারবার রিমান্ড ও জামিন আবেদন খারজি হওয়ায় মানববন্ধন ও সভা করে প্রতিবাদ জানান অনেকে।

পরী গ্রেপ্তার হওয়ার পরপরই মিডিয়া ট্রায়ালের মাধ্যমে নেতিবাচক প্রচারণা শুরু হয়। তবে পত্রিকায় কলাম লিখে ও টিভি মিডিয়ার টক শোতে এর বিরোধিতা করেছেন অনেকে। সহকর্মীদের একাংশ বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিতে বসে নায়িকার সদস্যপদ স্থগিত করে। যদিও তার পাশে থাকার ঘোষণা দিয়েছেন অনেকে। এমনকি জামিনের একদিন আগে পরীর পাশে দাঁড়ায় পরিচালক সমিতি।

এ দিকে শারীরিক অসুস্থতাসহ চিত্রনায়িকা পরীমনি কয়েকবার রিমান্ডে ও ২৬ দিন ধরে কারাগারে থাকায় তিনি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন বলে আদালতকে জানান পরীমণির আইনজীবী মুজিবুর রহমান।

পরে সংবাদমাদ্যমকে জানান, এতে পরীমনির মুক্তিতে আর কোনও বাধা নেই। আমরা চেষ্টা করব পরীমণিকে যেন আজকের মধ্যে জেলহাজত থেকে বের করে নিয়ে আসা যায়।

তিনি বলেন, আমরা আদালতকে বলেছি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের ধারায় পরীমনি প্রিভিলেজ পাবে। আসামি চিত্রনায়িকা পরীমনি একজন নারী। তার মান-সম্মান রয়েছে, এছাড়া তার বেশ কয়েকটি সিনেমা নির্মাণ-প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। পরিচালকদের সাথে কনট্রাক্ট রয়েছে। সিডিউল ফেঁসে যাচ্ছে। এ মামলার তথ্যগত কোনও প্রমাণ এখন পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে আসেনি।

দেশে আইনের শাসন রয়েছে। আদালতের ওপর আস্থা রাখতে হবে। তার বিরুদ্ধে আইস এলএসডি উদ্ধারের মামলাও রয়েছে। জামিন শুনানি নিয়ে হাইকোর্টের রুল পাওয়ায় নিম্ন আদালত পদক্ষেপ নিয়েছে। সে কারণেই আজ জামিন মঞ্জুর হয়েছে।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর আবদুল্লাহ আবু বলেন, জামিন পাওয়া একটা অধিকার। তবে আমরা জামিনের বিরোধিতা করেছি। আদালত যেটা ভাল মনে করেছেন সেই আদেশ দিয়েছেন। এতে আমাদের কিছু করার নাই।

আবদুল্লাহ আবু বলেন, আমরা আদালতকে বলেছি পরীমসির বাসায় মাদকসহ অন্যান্য জিনিসপত্র পাওয়া গিয়েছে। বর্তমানে মাদক খুবই ভয়াবহভাবে বাংলাদেশে বিস্তার করেছে। সরকার মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছে। এ অবস্থায় তাকে জামিন দেওয়া ঠিক হবে না।

তিনি আরও বলেন, যেহেতু পরীমনি একজন চিত্রনায়িকা, তিনি বিভিন্ন চলচ্চিত্রে অভিনয় করছেন। তিনি অভিনয় করতে না পারলে, সেক্ষেত্রে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। এই দিকগুলো বিবেচনা করে বিজ্ঞ আদালত জামিন দিয়েছেন।


মন্তব্য করুন